নামটা না হয় শেষেই জানাব (প্রথম পর্ব)
নামটা না হয় শেষেই জানাব (প্রথম পর্ব)
গত তিন দিন থেকে পিঠের ডান পাশে ব্যথা।খুব বেশী না হলেও মাঝে মাঝে এক্টু অসহ্য লাগে। মেজাজও কেমন জানি এক্টু খিট খিটে হয়ে গেছে। যখন তখন যাকে তাকে বকা দিচ্ছি। আর রাতে শুলে নানান রকম দুশ্চিন্তা মস্তিষ্কে ভীর করে।
এ ব্যাথাটা আমার আরও একবার হয়েছিল। অত দুশ্চিন্তা হয়নি। তখন আমার স্ত্রীর এক সময়ের কলিক,এখন অনেক গুলো বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে নাম করা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। আমার স্ত্রীকে যে কত শ্রদ্ধা করেন,তা লেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার স্ত্রী ফোন করে দিলে আমি এক বিকেলে ক্লিনিকে উনার সাথে দেখা করতে যাই। আমার স্ত্রীর পিড়াপিড়িতে ডায়াবেটিস থেকে আরম্ভ করে যত রকম টেষ্ট করতে হয় সবই করা হল। তেমনন কোন সমষ্যা নেই। খাবার অনিয়ম ও ভাজা পোড়া খেয়ে গ্যাস বাধিয়েছি তারই জন্য এ ব্যাথা।
এবারো একই ব্যথা কাজেই একই ঔষধ খেলেই হয়, কিন্তু না আমাকে আবার ডাক্তার এর কাছে যেতে হবে। যেহেতু আমি খুলনায় তেমন চেনাজানা কেউ নেই। তাই বৃহষ্পতিবার সন্ধায় আমার এক সহকর্মী সিরিয়াল দিয়ে রাখলেন। আমি সন্ধায় জরুরী এক মিটিং এর জন্য আর যাওয়া হল না। রাতে প্রথম ফোন মেয়ের। ডাক্তারের কাছে যাই নি শুনেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। তোমার চাকরি বড় না....। তারপর ছেলে অতপর বউ। তিনি আবার কাব্য করে ছেলে মেয়েকে ডেকে নালিশ করছেন। তোমাদের বাপ, আমার কথা তো শুনে না।দেখ তোমরা। তোমাদের কথা যদি শুনে। কদিন আগে তার ডাইরেক্টার সাহেব স্বপন কুমার পালের মৃত্যুও তোমার আব্বুকে সচেতন করতে পারল না।
স্বপন কুমার পাল,National Development Engineers এর প্রকেক্ট ডাইরেক্টার। আমার সরাসরি বস। খুব বেশীদিন হয়নি এই কোম্পানিতে। স্বল্প সময়ে আমার সাথে কাজের পরিমান গুরুত্বের জন্য খুব ঘনিষ্ট হতে হয়েছে।
একুশে অক্টোবর উনি খুলনা এলেন,তিনদিনের জন্য।সাথে ম্যাকানিক্যালের জি এম আলাউদ্দিন ভাই, প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর,প্রাঞ্জল। এয়ারে যশোর, যশোর থেকে এয়ার লাইন্সের বাসে খুলনা। খুলনার হোটেল সিটি ইন এ লজিস্টিক ম্যানেজার তিনটি রুম রিজার্ভ করে রেখেছিলেন। সরাসরি উনারা হোটেলেই উঠলেন। আমার গাড়ির ব্যস্ততা কমাতে উনার নির্দেশেই এক্টা গাড়ি উনাদের জন্য রেন্ট এ কার থেকে ভাড়া নেয়া ছিল। দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা সাইটে করা হলেও, যেহেতু উনারা হোটেলে উঠে গেছেন, তাই আমি বললাম,আপ্নারা হোটেলে খেয়ে রেষ্ট করে,তারপর আসেন।
তুমি খেয়েছ,
না খাইনি।
তুমি আস, সাইটে তোমার সাথে খাব।
বলা বাহুল্য একদিন কি মনে হল, বললাম, আমাকে আপ্নি, -সাহেব, না বলে, তুমি করে বললে খুশি হব।
আমাকে খুশি করতেই কিনা, জানি না, আর কখনো আপ্নি বলেন নি।
ড্রাইভারকে পাশে বসিয়ে নিজেই গাড়ী ড্রাইভ করে হোটেলে পৌছলাম। মিনিট দশেক প্রজেক্ট এবং বিকাল চারটায় নির্ধারিত, চাইনিজ কোম্পানি সাংহাই এবং NWPGCL এর PD,XN এর সাথে মিটিং এর বিষয়ে কথা বলে নিচে নেমে এলাম। রিসিপসনে বসে অন্য দুজনকে উনিই ফোন করলেন, তাড়াতাড়ি আসার জন্য।
একজন মহিলা ও একজন পুরুষ আমেরিকান এসে আমাদের পাশের সিটে বসল। সাথে একজন বাংলাদেশী মহিলা। হয়তবা গাইড় হবে। অথবা কোন এন জি ওর বড় কর্মকর্তা। দীর্ঘ সময় আমেরিকান নেভী বাহরাইন এ কাজ করার সুবাদে, এই জাতির বিষয়ে অনেক বাস্তব ধারনা হয়েছে। কাজ আগে, নিজের কাজ নিজে কর, আর সৃং খলাবোধ আমাকে মুগ্ধ করেছে। ইচ্ছা হল কথা বলি।স্থান কাল পাত্র,কোন দিক থেকেই শোভন নয় মনে হল। তাই নিজের ইচ্ছা নিজের মাঝেই পাত্রস্থ করলাম। তবে ক্ষনিকে মন বা মস্তিষ্ক যে সাড়া পৃথিবীর আকাশ পাতাল ঘুরে হাজার লাখ জনের সাথে সাক্ষাত করে আসে,তেমনি অনেক সহকর্মীর সাথে সাক্ষাত করত: সুখ স্মৃতি রোমন্থন করতে লাগললাম।
স্বপ্ন বিলাসী মানূষ আমি,স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি, সকল স্বপ্ন সত্যি হলে স্বপ্ন দেখার মজাই থাকত না। স্মৃতি রোমন্থনও আমার কাছে স্বপ্ন বিলাসের মতই মনে হয়। স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে প্রিয় থেকে প্রিয় মুখগুলো সুখ লহরীতে সুরের মুর্ছনা হয়ে পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে পরশ বুলিয়ে যাচ্ছিল।
আসসালামু আলাইকুম, ভাই কেমন আছেন?
আকাশ থেকে যেন মাটিতে পড়লাম। কল্পনার জগতে চাবুক পড়ল।
জি,এম আলাউদ্দিন হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ওয়ালাইকুম সালাম।
ভাল আছি।
পিডি সার এতক্ষন পেপার দেখায় ব্যস্ত ছিলেন।
প্রাঞ্জল কোথায়?
বলতে বলতে দেখলাম,লিফট থেকে প্রাঞ্জল বেড়িয়ে আসছে।
ওকে দেখে আমরাও উঠে দাড়ালাম।
হাটতে হাটতে প্রাঞ্জলের সাথে কুশলল বিনিময় হল। ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে বলে, পিডি স্যারকে সামনে দিয়ে আলাউদ্দিন,প্রাঞ্জল সহ আমি পিছনে বস্লাম।
প্রাঞ্জল অনেক জুনিয়র হলেও, আলাউদ্দিন আমার ব্যচমেট। তাই সহসাই গল্পে মাতা যায়। এক্ষনেও তার ব্যতিক্রম হল না। আমাদের গল্পের রস আস্বাদন করতে করতে গাড়িটাও প্যাঁ পো আওয়াজে সহযাত্রীদের অভিবাদন করতে করতে গন্তব্যের পথে সাই সাই করে এগিয়ে চলল।
অফিসে যখন পৌঁছলাম,লাঞ্চ সেরে সবাই আপন আপন কাজে চলে গেছে, রেজাউল করিম (প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার), লজিষ্টিক ম্যানেজার, দুই কোক, দুই পিয়ন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। লাঞ্চের সময় অনেক আগেই গত হয়েছে। তাই দেরী না করে সবাই ওয়াস রুমে ডুকলাম। খাবার টেবিলে খাবার প্রস্তুত।বসে গেলাম সবাই।
বাহরাইনে কাজ করার সময় খ্রীশ্চিয়ান এক প্রিচের সাথে আমার ভাল সখ্যতা হয়। কথা প্রসঙ্গে আমার না জানা একটি বিষয় তিনি জানিয়েছিলেন?
প্রশ্নত্তোর হিসেবে বলতে গেলে বিষয়টি এমন,
সময়ের সাথে সম্পর্ক রেখে বাচার জন্য কোন চারটি বিষয় মানুষের জীবনে সবার আগে প্রয়োষের
প্রথমত, বাতাস
একজন মানুষ সর্বোচ্চ একমিনিট বাতাস গ্রহণ না করে বেঁচে থাকতে পারে। জীবন বাচানোর জন্য সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় এই বস্তুটি আল্লাহ, গড, ভগবান যে নামেই ডাকি না কেন তিনি তার সৃষ্টিকে সম্পূর্ণ ফ্রি দান করেছেন।
দ্বিতীয়ত ঘুম, একদিন ঘমু না হলেই মানুষের মন মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, কতদিন পর্যন্ত ঘুম না হলে মানুষ বাঁচে ঠিক ঠাক তা মনে নেই, তবে দ্বিতীয় এই প্রয়োজনীয় বস্তুটিও সৃষ্টি কর্তা সম্পূর্ণ ফ্রি দিয়েছেন।
তৃত্বীয়ত পানি,
পানি পান না করে একজন মানুষ সাত থেকে দশদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তৃত্বীয় প্রয়োজনীয় এই তরল পানীয়টিও সৃষ্টি কর্তা সম্পূর্ণ ফ্রি দিয়েছেন।
চতুর্থ প্র্য়োজনীয় বস্তুটি হল খাদ্য। খাদ্য গ্রহণ ছাড়া একজন মানুষ তিন সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে। তবে আল কোরান ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে ৪১দিন বেঁচে ছিলেন, যা ব্যতিক্রম বা আল্লাহ্ তায়ালার কারিশমা যাই বলি না কেন, খাদ্যই হল মানূষের চতুর্থ প্রয়োজনীয় বস্তু যা মানুষকে শ্রাম দ্বারা অর্জন করতে হয়।
চতুর্থ প্রয়োজনীয় এই বস্তুটির জন্যই মানুষ এত পরিশ্রম করছে। নিজ দেশে, দেশে বিদেশে কাজ করছে। এক জন আর এক জনের সম্পদ লুটছে। একদেশ অন্য দেশ গায়ের জোরে দখল করছে।
তাহলে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় চারটি বস্তুই যদি শ্রম ল ব্দ হতো তবে কি হত তা একমাত্র সৃষ্টি কর্তাই জানেন।
আল কোরানের ভাষ্য মতে ইহুদী জাতির কাছে প্রতিদিন আল্লাহ্ তায়ালা সরাসরি বেহেশত থেকে মান্না সালওয়া নামক খাদ্য পাঠাতেন।কিন্তু প্রতিদিন একই রকম খাদ্য তাদের পছন্দ না হওয়াতে তাদের আবেদনের পরিপেক্ষিতে আল্লাহ তায়াল জমিনে উৎপন্ন খাদ্য তাদের দান করেন। নইলে হয়ত মানব জাতি আজ বেহেশত থেকে পাঠানো খাবারই খেত।
আগের বলেছি দুপুরে খাবার স্ ময় অনেক আগেই গত হয়েছে, তাই আমি টেবিলে র ক্ষতি খাবার গো গ্রাসে গিলতে লাগলাম। সাথী অন্যরাও দেখছি কিমি. যান না, ব্যতিক্রম শুধু পিডি সাব, যা এতক্ষন ল ক্ষ্য করি নাই।
স্যার খাচ্ছেন না কেন?
দাঁতের সমষ্যা ক্ষেতে পারি না। ডাক্তার দেখান না। দেখিয়ে ছিলাম। দাতটা ফেলে দিতে হবে, কিন্তু সময় করতে পারছি না। ঢাকায় ফিরে ডাক্তারের কাছে যাব।
খাবার শেষে খুব একটা সময় হয়নি বিশ্রাম নেবার। চারটায় নির্ধারিত মিটীংয়ে যোগদানের জন্য গাড়ী ষ্টার্ট করলাম। (চলবে)
খুলনা,
নভেম্বর, ১০,২০১৪খ্রীঃ
চলুক
মন্তব্য করুন