বই মেলা প্রিভিউ!
কোনো ভাবেই কেউ আটকাতে পারলো না ফেব্রুয়ারী মাসকে আর, আমি এবার তো ভাবলাম রাজনৈতিক দোলাচলে সব কিছুই আটকে যাবে। কিন্তু আটকানো গেল না ফেব্রুয়ারী মাসকে, তাতে আমি বেজায় খুশী। আমি তো চাই বছরে তিনটা ফেব্রুয়ারী আসুক, তাতে তিনটা বইমেলা হোক। গতবারে বইমেলার শেষ দিনে রাতে যখন রিকশায় বাসায় ফিরছিলাম- একা ভাবছিলাম ফেব্রুয়ারী মাস কেন একত্রিশে হয় না, কেন মেয়াদ বাড়ায় না মেলার কখনো, এইসব যাবতীয় অর্থহীন ভাবনা। কিন্তু আ্মার ভাবনা আমার মতোই ছেলেমানুষ মার্কা। তাই কিছুই হয় না, হবারও কথা না। তবে কাল থেকে ফেব্রুয়ারী এই ভাবতে ভাবতেই আমার মনটা চনমনে হয়ে উঠছে। তবে দুঃখের কথা হলো আমি ঢাকার বাইরে। এখানে অবশ্য আছি স্বর্গ সুখে, কিন্তু মেলা তো কাল শুরু হচ্ছে যেতে পারবো না ভাবতেই সব সুখ মাটি মাটি লাগছে। আমি ঢাকায় যখন থেকে স্থায়ী ভাবে থাকি তার পর থেকে সব মেলাই প্রথমদিনে যাবার একটা বাতিক আছে। প্রাইমিনিস্টার উদ্বোধন করে চলে গেলে, ভিআইপিরা বিদায় নিলে আমজনতাকে লাইন দিয়ে ঢুকানো হয়। সবাই বলে বইমেলার লাইন বিরক্তিকর, লাইন ভেঙ্গে সামনে চলে যায়, আমার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেই ভালো লাগে। মধুর এক অপেক্ষা। প্রথম দিনে মেলায় গিয়ে দেখা যায় অনেক স্টল এখনো রেডী হয় নি, লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গণ অগোছালো, সব কিছুই কেমন জানি অপ্রস্তুত। তাও ভালো লাগে, বই মেলার চেয়ে আনন্দময় স্থান আর কোথাও ঢাকা শহরে আছে কিনা আমি জানি না। যারা টুকটাক বইপড়ুয়া হয়েও মেলায় যায় না তাঁরা বাংলাদেশে আসল বই পাঠের টেস্টটাই মিস করে। বই কেনার টাকা না থাকলেও আমি বই মেলায় সমানে গিয়েছি এককালে। নানান বই দেখার আনন্দ যে এত বিপুল তা বইমেলাতে গেলেই উপলব্ধি করি! বইমেলা নিয়ে আশা করি রাসেল ভাই এবারো অসাধারণ সব পোষ্ট দিবে।
গত কদিন ধরে টিভিতে যে চ্যানেলেই হোক বই মেলা রিলেটেড কোনো রিপোর্ট দেখালেই হা করে তাকিয়ে দেখি। কাল পরশু যেতে পারবো না ভেবেই মনটা উদাস হয়। পরে অবশ্য ভাবলাম ঠিকই আছে, দুর থেকে মেলাকে কেমন ফিল করি তা দেখার একটা চান্স আসলো। চ্যানেল আই অলরেডী তাদের এক কাঠি সরেস বাতেনগিরি শুরু করেছে। রিটন ভাইকে দেখলাম মন্ত্রী, সচিব, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক সবাইকে নিয়ে টকশো শুরু করে দিলেন। মেলা অসাধারণ হবে এই আশ্বাস পেলাম। বাংলা একাডেমী মহাপরিচালক যারা হয় তাদের কথাবার্তা কেন সরকারের চেয়েও বেশি সরকারী হয় তা বুঝে পাই না। এত গন্যমান্য ব্যাক্তির কথা বার্তা যদি আওয়ামীলীগের কর্মীর মতো হয় তাহলে তো বিপদ। তবে এবারের বই মেলা সরকার সাহস করে সোহরাওয়ারদী উদ্যানে বর্ধিত করছে তার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। এই উদ্যোগ আগেও কিছুটা নেওয়া হয়েছিলো 'ধোপে টিকে নি'। এবার বিপুলায়তনে তা হচ্ছে। আমার মনে হয় এবার একটূ সমস্যা হলেও সামনের বার থেকে অসাধারণ একটা মেলা হবে। অমর একুশে গ্রন্থ মেলা সফল হোক,সহী সালামতে ঢাকায় ফিরলে তিন তারিখেই মেলায় যাবো। ২৮ দিনে ১৫-২০ দিন তো যাওয়া হবেই ইনশাল্লাহ। ভাইয়ার কাছে অর্থ চাই নি, আশা করি এবারো মোটামুটি পাবো। তাতে কিছু বইতো কেনাই যাবে। আর অসাধারণ ভাই বোনেরা তো আছেই তাঁরা গতবারের চেয়েও অধিক তৎপরতায় এবার মেলায় বই কিনে দিবেন। এখনো তো বেকারই আছি আফটার অল!
গতবারের বইমেলাটা আসলে চলে গেছে শাহবাগ নিয়েই, দিনগুলো কি অসাধারণ ছিল ভাবতেই ভালো লাগে। শাহবাগ,ছবিরহাট আর বইমেলা এই করেই কেটেছি। আমার মনে আছে ক্লাসে যাবার নাম নিয়ে কতবার বের হয়ে আর যাই নি। হয় মেলায় নয়তো শাহবাগেই। অনেককেই সেবার আমি দেখেছি একবার এসেই শাহবাগে কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে ও মেলায় কিছুসময় থেকেই ফেব্রুয়ারীর দ্বায়িত্ব পালন করেছে, অথচ দুইটা জিনিসই আপনার শত ব্যাস্ততাও বেশী সময় দাবি করে। কারন বাঙ্গালী শহুরে মধ্যবিত্তরা এত বড় একটা আন্দোলন করলো আর আপনি তাতে গেলেন না এরচেয়ে বড় লজ্জার কিছু নাই। আমি এখনো শাহবাগকে ওউন করি ও মনে করি আমার সাম্প্রতিক জীবনে দেখা সব চেয়ে বিশুদ্ধ আবেগের কিছু সেরা দিন হিসেবেই। তখন বইমেলাতে কম গেলেও বইয়ের প্রতি সেই ভালোবাসার জন্যই শাহবাগে থেকেছি। বাংলা বই, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশ এই তিনটের ভেতরে আমার কাছে সব একই মনে হয়। বাংলা লেখার যে আনন্দ তা যারা ফিল করতে পারে না তাঁরা আসলে সেইভাবে দেশকেই ভালোবাসতে পারে না। বাংলায় লেখার সুযোগ এখন খুব বেশি নাই, এম্বিএ বিবিএ সব চলে গেল ভুল ইংরেজী লিখে লিখেই। অনলাইনে কিংবা মোবাইলে যেখানেই বাংলা লিখি তখন তার চেয়ে নৈকট্য আর কোনো ভাষাতেই আমি পাই না। বাংলা ব্লগে এই দিনলিপি লিখছি, বাংলা বই পড়ছি, বইমেলায় যাচ্ছি এইসবই আমার বাংলার প্রতি দায়বদ্ধতার একেকটা জায়গাজমি। আমি হাজারবার দুনিয়াতে আসলেও যেনো আমি এই জায়গা জমিতেই থাকি!
এবারের বইমেলাতে এবির অনেকেরই হয়তো বের হবার কথা, সবার হিসেব জানা নেই, আশাকরি একটা স্টিকি পোষ্টে সব বইয়ের নাম ও প্রকাশনীর তালিকার ব্যাবস্থা করা হবে। তানবীরা আপুর বই বেরুচ্ছে, শুদ্ধস্বর প্রকাশনী থেকে, নাম সম্ভবতঃ একদিন অহনার অভিবাসন। ঝর্নাপুরও দেখলাম বই একটা বেরুচ্ছে শৈলী প্রকাশনী থেকে, নাম ভুলে গেছি। মাসুম ভাইয়ের বইও ধারনা করি বের হবে, লীনা আপুর ভাই মোস্তাক শরীফেরও বই বের হবার কথা। কামাল ভাই এই ব্লগ তো বটেই, বাংলাদেশেরই স্টার লেখক। আশা করি তাঁর নতুন উপন্যাস আর গল্পগ্রন্থে ঝকমক করবে আমার অতি সাধারণ পড়ার টেবিল। আমি খুব কম জীবিত লেখকেই ওউন করি তার ভেতরে আহমাদ মোস্তফা কামাল শীর্ষেই থাকবেন। উনার যেকোনো লেখার বিশাল ফ্যান আমি। আর সব চাইতে আনন্দ লাগে উনার সাথে বইমেলায় ঘুরতে, মাঝে মধ্যেই সেই সুযোগটা আসে। মাসুম ভাইয়ের ব্যাপারেও সেইম, জহুরীরা যেমন মুল্যবান রত্ন চিনে কামাল ভাই সেই ভাবেই বই চিনে। খালি চিনলেও হতো তারপর তিনি পরম স্নেহ ভালোবাসায় সেই বইটা কিনে দেয় আমাকে। আমার আরেক বন্ধু আছে সেও তো অতুলনীয়, এদের দুই জনের প্রযোজনায় গতবারের বইমেলায় এমন সব অসাধারণ বইয়ের মালিক আমি হয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এই লেখা উৎসর্গ করলাম সেই দুই জন মানুষকেই যারা আমাকে স্নেহ করে, না চাইতেই অসাধারণ সব বই কিনে দেয়। দীর্ঘজীবি হন, জীবনে যদি বড় ছোট যা কিছুও হই তাও এই ভালোবাসা যেনো অটুট থাকে! বই বসন্ত দারুণ কাটুক সবার!
অনলাইনে এবার বইমেলার স্বাদ নেবো ভাবছি। আপনার বা ব্লগপতির কাছ থেকে এমন একটা পোস্ট দিলে ভালো হয় যেখানে সবার বইয়ের নামধাম সহ রিভিউ থাকবে। সময় না পেলেও কিনবো, পড়ার জন্য সময় বের করতেই হবে
হুমম, দেখা যাক কী হয়!
বই মেলাতে যতবার ই গিয়েছি এত মুগ্ধতা নিয়ে এসেছি যা আর কোথাও পাইনি।মনে হয়েছে এ এক অন্য জগৎ। চারপাশে শুধু বই আর বই।
হুমম, খুব দারুণ একটা মাস আপু!
বইমেলার প্রতিটি ক্ষণই আলোকজ্জল মুর্হূত নিয়ে আসে ! বই, লেখক, অটোগ্রাফ আর চক্ষোগ্রাফ।
বইমেলা আপনার দারুণ কাটুক!
আমি তো চাই বছরে তিনটা ফেব্রুয়ারী আসুক, তাতে তিনটা বইমেলা হোক।
মেলায় যাই কম কারন টাকা থাকে না বই কেনার!
তাই নাকি? আপসোস!
বই মেলা থেকে আম্মু কবে বই কিনে দিবে আমি তার জন্য অপেক্ষা করি
তাই নাকি? ভালো অভ্যাস তো!
মন্তব্য করুন