একটু একটু করে প্রতিদিন!
গত দু -তিন দিন লেখা হলো না। লেখবো লেখবো করেও আর লেখা হয়ে উঠলো না। আর ব্লগে দেখলাম অনেকের পোষ্ট তাই তেমন জরুরী ভাবলাম না। যখন ব্লগে কেউ লিখে না তখন আমার ইচ্ছে করে সপ্তাহের সাত দিনই লেখি। কিন্তু সব সময় তাও আর হয়ে উঠে না। তবে ঘুরে ফিরে সেই দিনলিপি লেখি বলে আর কোনো লেখার বিষয় যে পাই না ব্যাপারটা এমন না। মাথায় হাজারো বিষয় আসে, অনেক কিছু নিয়েই লিখতে ইচ্ছা করে কিন্তু লেখি না। কি লাভ মাথা খাটিয়ে, এরচেয়ে নিজের যে দিনযাপন তাই ঢুকিয়ে দাও ব্লগে। হেলাল ভাইয়ের এক পোষ্টের উসিলায় গিয়েছিলাম সামহ্যোয়ার ইন ব্লগ। পুরোই হিন্দি চুলের মতো অবস্থা। এত মানুষ লগইন আর অতিথি এত তাও ফার্স্ট দশ পাতায় পড়ার মতো একটা পোষ্ট পেলাম না। মনটা খারাপ লাগলো। নিজের কিছু ভালো লাগার পুরানো পোষ্ট দেখলাম তাতেও দেখি নতুন কোনো উল্লেখযোগ্য মন্তব্য নাই। তাহলে এত লোক ব্লগে করে টা কি? বঙ্গদেশের সব চেয়ে উচু জাতের ব্লগ সচলায়তনে গেলাম। সেরকম মনোমুগ্ধকর লেখা কই? তাঁদের যে বিখ্যাত সব স্যাটায়ার লেখক তারা কেমন জানি নিরামিষ হয়ে গেলো। এত ঘুরে ফিরে সিদ্ধান্ত নিলাম সবাই এখন ফেসবুকেই ব্লগ চর্চা করে, আড্ডা মারে, লাইক বিনিময় করে। লাইকের নেশায় পর্যুদস্ত। সেই তুলনায় ব্লগের গ্ল্যামার সংকট চলছে। আমাদের ব্লগের গ্ল্যামার সংকট আরো বেশী, তাও ভালোই আছে, কেউ কেউ তো লেখা পড়ছে আর আমরা লিখছি। তুলনা করলে খারাপ নাই আমাদের এই চুপচাপ ব্লগটা।
মোদী জিতে গেল নিরঙ্কুশ ভাবে তাতে আমরা কেউ আমোদিত কেউ কেউ বিক্ষিপ্ত। তবে ভারতের ইলেকশন সিস্টেম আমার মন কেড়েছে। লম্বা সময় ধরে নির্বাচন, কত কাদা ছোড়াছুড়ি, মোদীর বাংলাদেশ কার্ড খেলা, বঙ্গদেশের পত্রপত্রিকার শত চেষ্টা মোদী কে হারানোর, স্টারদের উদ্ভট সব নির্বাচনী বক্তব্য। সব কিছু মিলেই দারুন ভাবে নির্বাচনটা হয়ে গেল। সবাই সবাইকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ হলো পালা বদল। ভারতের এই গনতন্ত্রের প্রতি আস্থা দেখে ভাবছিলাম, সারাদিন ভারত চ্যানেল দেখে দেখে সিনেমা গিলেও আমরা তাঁদের মতো গনতান্ত্রিক একটা ব্যাবস্থা অটুট রাখতে পারলাম না। আমরা হাঁটলাম পাকিস্তানের পথেই। এই বছরেই ইলেকশনের নামে কি দারুন যাত্রাপালা হলো আমাদের দেশেই। সয়েই নিলাম আমরা। আমাদের জনগন, শাসক রাজনীতির দল উপদল, মন মানসিকতা কোনো কিছুই গনতন্ত্রের ধারে কাছেও নাই। মোদীকে নিয়ে আমার সবার মতো বিশেষ উচ্ছাস নাই। চায়ের দোকানদার থেকে তার ক্ষমতার মসনদ পাওয়া সবই তার যোগ্যতার ব্যাপার। গুজরাটিরা ব্যাবসায়ী জাতি, সব কিছুই তাঁদের কাছে 'ধান্দা'। মোদী ধান্দায় জয়ী কারন তার সাথে ছিল কর্পোরেট ও কংগ্রেসের দূঃশাসনের ১০ বছর। তাই বাজীতে তিনি জিতে গেছেন। বিবিসিতে শুনছিলাম তার দিল্লীতে আজ আগমন উপলক্ষে রাস্তায় লক্ষ মানুষ স্লোগান দিয়েছে, সুদিন এসে গেছে। শুনছিলাম যখন হাসলাম সুদিন কি এতই সহজ। তবে মোদী নিঃসন্দেহে বিষ্ময়কর মানুষ! একটা খারাপ ইমেজ থেকে কিভাবে উন্নয়নের ঝান্ডা উড়িয়ে পজেটিভ ব্রান্ড বানানো যায় তার এক জলজ্যান্ত প্রমান। বিহারের এক সফল মুখ্যমন্ত্রী ছিল নীতিশ কুমার তার দল ছিল মোদীর জোটে কিন্তু এখন নাই, আসন পেয়েছে এবার দুটো, বামফ্রন্টের ভরাডুবি তো আরো অবাক করা, শতাব্দী, দেব, মুনমুন সেন, পরেশ রাওয়াল, বাবুল সুপ্রিয় স্টারদের জয়। আমি জানি না রাজনীতি আর সিনেমার অভিনয় এই দুটো বিশাল দ্বায়িত্ব কিভাবে এক সাথে মার্জ করা সম্ভব। একজন সংসদ সদস্য ধেই ধেই করে নাচছে মিনিস্কার্ট পড়া নায়িকার সাথে ভাবতেই তো কেমন লাগে। দক্ষিনের স্টাররা এই পথে সবার আগে। শশী থারুরের এক লেখায় পড়েছিলাম, ভারতের রাজনীতিতে সফল হয় দুই শ্রেনীর মানুষ, এক সিনেমার উড়ে এসে জুড়ে বসা স্টার, আর দুই দীর্ঘদিন রাজনীতি করে করে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা অসৎ মানুষেরা। তাই হচ্ছে।
আরেক হুজুগ এসে পড়লো, নাম তার ফুটবল ওয়ার্ল্ডকাপ। ক্রিকেট বাদে এখন কোনো খেলাই আর আমাকে টানে না। ফুটবল তো নাই ই। তবে খোজ রাখি কারন না জানলে কেউ দাম দেয় না আড্ডায়। অলরেডি আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের সমর্থকদের পারস্পারিক চুলোচুলি শুরু হয়ে গেছে। ফেসবুক সেই আগুনে আরো হাওয়া দেয়। চিনে না জানে না শুধু মাত্র সমর্থন ভিন্ন বলে একজন আরেকজন মা বোন তুলে গালি দিচ্ছে। এই দেশে গালিগালাজ এত সস্তায় বিলি হয় তা আমি আগে থেকেই জানতাম, বেহুদা আমরা দোষ দেই রিকশাওয়ালাদের, অনেক রিকশাওয়ালাও এত গালিগালাজ করে না, আমরা যা অযথা করি। জনরুচি আর সাংস্কৃতিক মান আমাদের এখনো মধ্যযুগেরই। আমারও মুখ উত্তম না, কিন্তু আমার গালি এত সস্তা না যে একজন ভুটানের সাপোর্ট করে বলে তাকে দিবো। যাই হোক তাও ফুটবল বিশ্বকাপ তো দেখতেই হবে। মনিটরের ব্যাবস্থা করতে পারলাম না। দেখা যাক সামনে পারবো আশা করি। তাই সবভেবে চিন্তে আমি এবারের বিশ্বকাপে হন্ডুরাসেরই সাপোর্টার, কপালে যা আছে হবে। ইরানেরও সাপোর্ট করতে পারি, হাজার হোক মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই মেজাজ খারাপ।আমাদের বাসার চারতলায় বরিশাল অঞ্চলের কিছু ছেলে ফ্ল্যাটকে মেস বানিয়ে থাকে। তা থাকুক, আমার কি? কোনোদিন কথাই হয় নাই। পোষাক আষাক দেখে মনে হয় ভালোই চাকরী বা ব্যাবসা করে। তা করুক আমি তো জানতে চাই নি। কিন্তু তাঁদের ব্যাপক সমস্যা হলো আমাদের জামা কাপড় সমানে তাদের মনে করে নিয়ে যায়। আমি কিছু বলি নাই এতদিন। কারন পাঞ্জাবী ট্রাউজার তারা দেদারসে নিয়ে যাবার পরে আমি এখন যেদিন কাপড় ধুয়ে শুকানো অবধি সেদিন ছাদ পাহারা দেই। তাও হারায় মেনেই নেই, জামা কাপড় নিয়ে ঝগড়া করার কোনো মানে নাই। কারন বাসায় এর থেকেও দামি দামি জিনিস আছে তা না নিলেই হলো। কিন্তু আমার এক বন্ধু আছে কয়দিন, তার সাধের তোয়ালে নিয়ে গেছে, সে নক করছে তোয়ালে খুজতে যেয়ে তার স্পোর্টস হাফপ্যান্ট খুঁজে পাইছে যা দু দিন থেকে খুজছিলো। আশা করি একদিন তাঁদের বাসা সার্চ করলে আমার হারিয়ে যাওয়া অনেক কিছুই খুঁজে পাবো। এত খবিশ মানবকূল আমার জীবনে আগে দেখি নি!
হলপ্রিন্ট কোয়ালিটির এক সিনেমা দেখছিলাম। অনুপম রায় সেই সিনেমার মিউজিক ডিরেকটর। গান ভালো। কিন্তু সিনেমাটা তেমন না। হলিঊডের গার্ল নেক্সট ডোর থেকে মেরে দেয়া, রাজকুমার গুপ্তর ডিরেকশনে, 'উইন্ডো কানেকশন'। তবে নায়িকা তনুশ্রীর অভিনয় দুর্দান্ত। আর উষ্ণ দৃশ্যে দারুন সাবলীল। কলকাতা আগামী দিনের এক রূপা গাঙ্গুলীকে পেয়ে গেল। বিখ্যাত পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলীর এক পুরাতন টেলিফিল্ম দেখলাম নাম উষ্ণতার জন্য। বড়ই উদ্ভট। মুল চরিত্রের দুই নারীই লেসবিয়ান। রূপা গাঙ্গুলী একজন মুভি নির্মাতা, এক সাবেক যাত্রার পুরুষ প্রিন্সেসকে নিয়ে ডকুমেন্টারী বানাতে গিয়ে আবিস্কার করে, যে প্রত্যেকটা মানুষের নাকি দুই সত্ত্বা, একটা নর আর একটা নারী। ডিসগাস্টিং আইডিয়া। দেখলাম কৌশিক গাঙ্গুলীর ফুল লেংথ সিনে্মা, রং মিলান্তি। এই সিনেমাটা ভালো। এক ঝাক তরুন আর এক নায়িকা নিয়ে করা, শ্বাশতর কি দারুন অভিনয় আর গলা পরিবর্তন। ইউটিউবে দুটো বাংলা নাটক দেখলাম তাহসানের, বুঝলাম না নাটকগুলো না বানালে কি এমন ক্ষতি হতো। হিন্দি চুলের অভিনয়, হিন্দি চুলের স্ক্রিপ্ট। আমি নাটকের টেকনিক্যাল বিষয় বেশী বুঝি না। তবে যাই দেখি টুকটাক এত দায়সারা আর অমনোযোগী হয়ে কাজ দেখে খারাপ লাগে। তাই ভাবছি সামনে যত হিটই হোক, নতুন নাটক আর দেখবো না!
গরমে জীবন অতিষ্ঠ। রাজনীতি, মোদি, গান্ধী, সিনেমা দেখা...কিছুই ভালো লাগে না, কিছুতেই মনে বসে না।
আজকের বৃষ্টিতে ভিজে মন ভালো হয়ে গেল!
!!!!!
ফুটবলের সমবেদনা ক্রিকেটে না এলেই হলো
এইটা স্যাটায়ার করে বলা আপু
লেখাটা অনেক আগেই পড়ে ফেলেছি। কিন্তু সময় পাচ্ছিলামনা বলে আর কমেন্ট দেয়া হচ্ছিলনা। তবে আমি কিন্তু চরম আর্জেন্টিনার সাপোর্টার।
মিল মোহাব্বতের দুনিয়ায় কত কিছুই মিলে যায়
মন্তব্য করুন