ইউজার লগইন

ক্ষয়ে যায় চোখ রঙপেন্সিল হয়ে, বুকে জমে অভিমান!

বরবারের মতো এবারও শিরোনামের সাথে লেখার কোনো মিল নাই। এইটা একটা গানের লাইন। গানটা আমার অসম্ভব প্রিয়। এই গানের আরেক লাইনও আমার একবার পোষ্টের শিরোনাম হয়েছিল- অলিখিত সব স্বপ্নগুলো ভেঙ্গেচুড়ে খানখান। গুগলে সার্চ দিয়ে জানলাম তা গত বছরের জুলাই মাসের। আমি আমার পোষ্ট কখনোই আর ফিরে ফিরে দেখি না। কিছু মনে আসলে গুগল করি, পেয়ে যাই। আর আমার লেখা ঘুরে ফিরে তো সব একই টাইপের। তাই নিজের লেখা দেখে বিগলিত হবার কিছু নাই। আহমদ ছফা প্রথম লেখা ছাপিয়েছিল, ইসলামী একাডেমির পত্রিকায়- সাথে পেয়েছিলেন ৩০ টাকা নগদ। তিনি পাঁচ ছয়বার ডাবলডেকার বাসে সারা শহর ঘুরেছিলেন। নিজের লেখা ছাপানো ও নিজের নাম ছাপার অক্ষরে দেখার এই থ্রিল আমরা সারাজীবনেও পাবো না। কত ব্লগ- পেপারেই না আমাদের লেখা ছাপা হয়, আমাদের কোনো উচ্ছাস থাকে না । শুধু মনে হয় বালের এক লেখা তাও ছাপিয়ে দিলো এরা, ফ্রি লেখা কি আর পায় না!

শিরোনামটা কেমন যেন, মন খারাপের। কিন্তু আমার মন ওতো খারাপ হবার মতো কিছু ঘটে নাই। এভরিথিং অলরাইট, দিনটাও গেল খুব প্রেশাচ। তাও আমার শরীরের কোষে কোষে সবসময়ই কেন জানি মন খারাপের গন্ধ। তাই কাউকে মন খারাপ বললে, সেই পাল্টা প্রশ্ন করে- কবে আর ভালো ছিল? ওসব নিয়ে ভেবে কাজ নাই। প্রয়াত সঞ্জীব গান গেয়েছিলেন- আমি ভালো নেই, ভালো থাকার কিছু নেই। তবুও আমরা থাকি একরকম। আজ আমি যদি শারীরিক ভাবে খারাপ থাকলেও মন মেজাজে খুব ভালো ছিলাম। ঘুম থেকে উঠেই সারপ্রাইজ- বুয়া আসে নাই। শুক্রবার সকালে বুয়া আসেনা, ছুটির দিন বলে কথা। ঠান্ডা লেগে আমার অবস্থাও কাহিল তাও পাত্তা না দিয়ে বের হলাম। কারন দশটায় আমাকে বিজনেস ফ্যাকাল্টির কনফারেন্স হলে থাকতে হবে। ধারনা ছিল এবার হয়তো ছফা স্মৃতি বক্তৃতার সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত অনুষ্ঠানটা আর হবে না। কারন ঈদের আগের দিন ছিল আহমদ ছফার প্রয়ান দিবস। এরপর আরেকটা ঈদ চলে গেল, তাও অনুষ্ঠানের কোনো খবর নাই। ডক্টর সলিমুল্লাহ খানের ফেসবুকের পেইজে দেখলাম, ৩১ শে অক্টোবর প্রোগ্রাম। মনটা ভালো হয়ে গেল। মোবাইলে রিমাইন্ডার দিয়ে রাখলাম, টাইটেল ছিল- ডোন্ট মিস ইট! আমি এখন রিকশায় কম উঠি, বিশেষ করে বিশ টাকার কম যত রিকশা ভাড়ার পথ- এখন সব সময় হাটি। ডাইরেক্ট ইউনিভার্সিটি যাবে এক রিকশা পেলাম ভাড়া চায় ১০০, নব্বই টাকায় হয়তো যেতো। ৯০টাকায় ১৫ কাপ চা খাওয়া যায় মানে চার দিন প্রায় এই হিসেব করে বাসেই গেলাম। শুক্রবারের সকাল ভীড় নেই। রংধনুর হেল্পার টার মেজাজ খারাপ, এক বার জুরাইন থেকে আসা যাওয়া করে ভাড়া তুলেছে মাত্র ৬০০ টাকা। তবুও লোকজন তৎপর কম ভাড়া দিতে, সে বলে উঠছে- আব্বা ডাকলাম আপনারে মাফ চাই, আপনার দোহাই লাগে যেইটা ভাড়া সেটাই দেন। এই কান্ড দেখতে দেখতে আমার পাশে এক যাত্রী আসলো। মধ্যবয়স্ক আংকেল। তিনি খালি আমার গায়ের দিকে আসেন। আমি যেভাবেই বসে আছি সেভাবেই থাকলাম। তিনি দাবী তুললেন- আরেকটু চাপা যায় কিনা, আমি নিরাসক্ত ভাবে বললাম, অবশ্যই যাবে, আমাকে জানলা দিয়ে শুধু লাফটা মারতে হবে।

অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে দেখি পুরো হল ভর্তি মানুষ। এত মানুষ দেখে অবাক হলাম। সাধারনত এই অনুষ্ঠানে গোটা দেড়শো দুইশো লোক হয়। কিছু আসন ফাকা থাকে। কিন্তু আজ সব আসন পূর্ণ। তাও এক মহিলা কোন কারনে জানি বাইরে গেল, আমি তার সিট দখল করলাম। অনুষ্ঠান শুরু হতে হতে দেখি মানুষ দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। শুরু হলো অনুষ্ঠান। স্মৃতি বক্তৃতার প্রবন্ধ পাঠ করবে, সুদীপ্ত হান্নান। ফেসবুকের কারনে আমি উনাকে আগেই দেখেছি। তবে জানতাম না উনার পিএইচডি আহমদ ছফার উপন্যাসের উপরে। যা প্রায় এক যুগ উনি লাগিয়েছেন, জাহাঙ্গীরনগরের ফেলোশীপ পেয়েছিলেন। মানুষের ধৈর্য্য দেখে আমি অবাক হই। যাই হোক সুদীপ্ত হান্নানের আহমদ ছফার উপন্যাস নিয়ে বক্তব্য খুব একটা মনোগ্রাহী ছিল না। আমি এত কিছু ভেবে আসলে ছফা পাঠ করতে বসি না। তাও উনার এই রিসার্চের নিষ্ঠা আর পরিশ্রমের কথা শুনতে ভালো লাগছিলো। আর সব চেয়ে ভালো লাগলো অন্যদের মতো তিনি অযথা বাক্যবাণে ঝাপিয়ে পড়েন নাই। অল্পসময়েই তার প্রবন্ধ নিয়ে কথা বলা শেষ। তারপর আসলো স্মৃতিচারণ আমার সব চাইতে ভালো লাগার পর্ব। এবং প্রথমেই মোরশেদ শফিউল হাসান আসলো। অসাধারণ বক্তব্য। তিনি অবজেক্টিভ ভাবে ছফাকে নিয়ে কথা বলেন সবসময়। দু তিনটে স্মৃতি ও নিজের কয়েক জায়গায় আহমদ ছফাকে নিয়ে অসস্তির কথা জানালেন। তারপর কথা বললেন প্রথম আলোর সোহরাব হাসান, আক্তারুজ্জামান, স্বপন আদনান। ব্যবসায়ী আবদুল হক সবসময়ই ছফা নিয়ে একই কথা বলেন তা এবারো বললেন।। এদের কথা আমার খুব একটা নতুন কিছু লাগে নাই। এইসব কথা আমিও বলতে পারি। আমাকে মুগ্ধ করেছে দীপঙ্কর গৌতমের বলা বিশ পচিশ মিনিট। অসাধারণ সব স্মৃতি। ছফার রাগ, ছফার চা খাওয়া, ছফার লেখার স্টাইল, ছফার লোকজনকে চাকরী দেয়ার স্টাইল, ছফার ব্যাংক একাউন্টহীন জীবন, নানান ইন্টারভিউ দেয়ার গল্প, প্রয়ানে দুদিন আগে তিনি যে মারা যাচ্ছেন তা নিয়ে আলাপ। এক অদ্ভুত বেদনার সুরের সৃষ্টি হলো যেন। প্রয়াত হবার দুদিন আগে সকাল বেলা নাকি দীপঙ্কর গৌতম উনার বাসায় গেল, উনার সাথে ছিল এক ক্যামেরা। ছফা সাহেবকে সকাল সকাল স্নান করা দেখে এবং শুভ্র পাঞ্জাবী পড়া দেখে তিনি বললেন, আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে ছফা ভাই, একটা ছবি তুলি। ছফা সাহেব নাকি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন আর বললেন, দীপঙ্কর তুমিও জেনে গেছো আমি মারা যাচ্ছি। আমি তো ভাবতাম জিনিসটা খালি জানতাম আমি। তারপরের দিনই আহমদ ছফা হাসপাতালে ভর্তি হন এবং দেড়দিন পড়েই মারা যান। সলিমুল্লাহ খানের বক্তব্য বরাবরের মতোই চমক জাগানিয়া। তিনি মুলত কথা বললেন, বাঙ্গালী মুসলমানের মন প্রবন্ধের যারা সমালোচক তাঁদের নিয়ে। কিছু সময় ব্যায় করলেন গৌতম ভদ্রের কপট সমালোচনা নিয়ে। সলিমুল্লাহ খানের স্মরন শক্তি ও বক্তৃতা দেয়ার প্রতিভা দারুন। সলিম ভাইকে সহ্য না করতে পারলেও তার কথা আপনাকে আকর্ষণ করবেই। এবং নির্ভুল নাম তারিখ ঘটনা বলার ক্ষমতা বিস্ময়কর। অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিল আবুল মকসুদ। আমি উনার কথা শুনি নাই। কারন উনার কথা শেষেই খানাদানার ইন্তেজাম, তা নিয়ে ভীড় হুরাহুরি এসব এড়াতে আগেভাগেই হাঁটা দিলাম। ক্যাম্পাস দিয়ে হাটছি, দেখলাম এমন রোদেলা জুম্মার সময়তেও অনেকে প্রেম করছে, হাতে হাত রেখে হাটছে, বেশ দারুন। শাহবাগ থেকে বাসে উঠলাম। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে নেমে আবার হাঁটা। চায়ের দোকানে আসলাম। সকাল থেকে চা এক ফোটাও খাইনি। চা খেয়ে বাসা। বাসায় যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিলো বুয়া আজ আসে নাই। কিন্তু বুয়া এসেছে ও ভালো রান্নাও হয়েছে। যাক খেলাম মোটামুটি। ইউনিস খানের ব্যাটিং দেখছিলাম। দিলাম ঘুম। উঠে দেখি ২৬ টা মিসডকল। নিজেকে ভিআইপি মনে হলো। কাউকেই ব্যাক করলাম না। জেমস আসছে মিরপুর থেকে। দারুন আড্ডা দিলাম নানান বিষয় নিয়ে। জেমসের সাথে আলাপ করা অনেক আরামের। কারন সিনেমা বলেন- রাজনীতি বলেন- সব কিছু নিয়েই তার একটা মতামত আছে। তার মতামত শুনতে ভালো লাগে। এবং আমার ভিন্নমতও সে মন দিয়ে শুনে। রাত আটটা বাজলে, আমার খুব চিতই খেতে ইচ্ছে করে আজকাল। বাসার ভাপা পিঠার তুলনায় দোকানের ভাপা একেবারেই জঘন্য তাই আমি খাই না। আমি চিতই খাই, সরিষা দিয়ে। মনে হয় বেহেশতের খাবার। জেমস আর পুলককেও খাওয়ালাম। আদনান আসলো, শান্ত ভাই আসলো, দারুন আড্ডা জমলো। জানলাম যার বিয়ে আমি আর পুলক মিলে দিয়েছিলাম। তারা লেইম লেইম সব কারনে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অমিত পুলকের বন্ধু, তাই আমার কিছু বলার নাই। আমার বন্ধু হলো আমি অবশ্যই বোঝাতাম, না শুনলে কষে এক থাবড় লাগিয়ে বন্ধুকেই ডিভোর্স দিতাম। যাই হোক রাত বাড়লো। লেখা এখানেই শেষ করি!

পোস্টটি ১৯ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

প্রিয়'s picture


খুব সুন্দর হয়েছে দিনলিপিটা। চমৎকার। Smile

আরাফাত শান্ত's picture


সুন্দর মুন্দর আর কি! দিনলিপি তো দিনলিপি। তুমি আর কয়েকজন পড়ে বলেই লিখি। তবে আজ একজনকে পাঠানো কিছু খুদে বার্তার জবাব না পেয়ে বিষন্ন হয়েছি তা লিখি নি!

প্রিয়'s picture


বিষণ্ণ যেহেতু হয়েই গেছ কি আর করা? লিখে ফেললেই পারতা। বাউণ্ডুলে দেখলে খুব্বই খুশী হইতো। Tongue

আরাফাত শান্ত's picture


কিছু কথা থাক না গোপন!

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


গানটা কার? লিংক দেন।

আরাফাত শান্ত's picture


গানটার লিংক খুজে পাচ্ছি না! প্রেমান্জলী নামে একটা মিসড এলবামের।

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


গানের টাইটেল
আর
গায়কের নাম কি?

আরাফাত শান্ত's picture


তোমার মেইল আইডি দাও। পাঠিয়ে দিচ্ছি Smile

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


ru_6888@hotmail.com

১০

আরাফাত শান্ত's picture


বিষণ্ণ গ্রামীন দিয়ে নেট চালাই আপলোড হয় না, চেষ্টা চলছে কাল থেকে, পাঠাবো সামনেই!

১১

উচ্ছল's picture


আমার শরীরের কোষে কোষে সবসময়ই কেন জানি মন খারাপের গন্ধ।

দারুন বললেন আরাফাত। Laughing out loud
তবে কি জানেন, মানুষ মাত্রই পরিবর্তনশীল। ভালো থাকুন,লিখতে থাকুন।

১২

আরাফাত শান্ত's picture


ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকবেন আপনিও!

১৩

তানবীরা's picture


খুব সুন্দর হয়েছে দিনলিপিটা। চমৎকার।

১৪

আরাফাত শান্ত's picture


ওয়েলকাম ব্যাক আপা। আই মিস ইঊ Smile

১৫

সামছা আকিদা জাহান's picture


এমন খুটিনাটি বিষয় নিয়ে বিশ্লেষন কর যে অবাকই লাগে।

১৬

আরাফাত শান্ত's picture


আপনারা তা সময় করে পড়েন, ভালো বলেন লেখাকে তা নিয়েও আমার অবাক লাগে!

১৭

ফাহিমা দিলশাদ's picture


যে একজনকে পাঠানো কিছু খুদে বার্তার জবাব না পেয়ে বিষন্ন হয়েছেন সে একজনটা কে জানতে ইচ্ছে করছে Laughing out loud

১৮

আরাফাত শান্ত's picture


কিছু কথা থাক না গুপন! Tongue

১৯

প্রিয়'s picture


হাহাহাহাহাহাহাহা। শান্ত তুমি ক্ষুদে বার্তা কারে পাঠাইসো সবাই খালি এইটা জানতে চায় ক্যান? Wink Tongue

২০

আরাফাত শান্ত's picture


জানি না কি কারন? সবাই শুধু গোপন কথা শুনতে চায়!

২১

রুদ্র আসিফ's picture


আপনার গোপন কথা শোনার জন্য অপেক্ষায় আছি..
আরাফাত ভাই Smile

২২

আরাফাত শান্ত's picture


বলবো না, যতখুশী অপেক্ষা করেন Laughing out loud

২৩

রুদ্র আসিফ's picture


:'(

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!