ইউজার লগইন

কেউ চায় না দলছুট শূন্য হোক, এই বাস্তব সব্বাই আঁকড়ে থাক!

খোশমেজাজেই ছিলাম। মামা নেই বাসায়, নেটের স্পিড নেই, ওলোর প্যাকেজ নাই, পকেটে টাকা নাই, তাই টিভি ভরসা। কিন্তু সবকিছুকে স্পয়েল করে দিতে ফেসবুকের কোনো বিকল্প নাই। সেখান থেকেই জানলাম, খুলনা নেভী স্কুলের সন্ধ্যা ম্যাডাম মারা গেছেন। মনটা উদাস হলো। টাইম ট্রাভেলে চলে গেলাম সতেরো- আঠারো বছর আগের দুপুর গুলোয়। ক্লাস ফোরের পরিবেশ পরিচিতি সমাজের মতো নিরীহ বিষয়কে আমাদের জন্য দুর্বোধ্য করে তুলতেন তিনি। লাইন বাই লাইন পড়া ধরতেন, এবং পড়া না পারলে শাস্তি বেঞ্চের উপরে কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকো। সে এক কঠিন সময়, ম্যাডাম খাতায় কত কি ঠিক লিখেও নাম্বার দিতেন ৬৫-৬৬, কাউকে বা করাতেন ফেইল। আমাদের প্রথম স্থানের অধিকারী বর্তমানে ফ্লোরিডার এক ভার্সিটির টিচার শাহারিয়ারের নোট পাবার জন্য সবার তখন কি আকুলতা! আমার অবশ্য ওতো ব্যাকুলতা ছিল না, কারন ছোটবেলা থেকেই আমি জানি আমি তেমন মেধাবী নাই, তাই পড়াশুনায় শ্রম দিয়ে হাতি ঘোড়া অর্জনের চেষ্টা অর্থহীন, চেষ্টা শুধু একটাই ভালো ভাবে পাশ করা, যেনো একই ক্লাসে দুবার থাকতে না হয় আর বিশেষ বিবেচনায় পাশ না হোক। তবু সন্ধ্যা ম্যাডাম কে যে একেবারেই অপছন্দ করতাম তা না, তিনি ক্লাসে প্রচুর গল্প করতেন। এখন সেনা কর্মকর্তা ডলার নামে আমার এক বন্ধু ছিল, সে খুব ভালো গল্প বলতে পারতো। তাকে দিয়ে গল্প বলাতেন। ডলার একদিন ধর্মীয় গল্প বলে ফেললো যা কিছুটা ইসা(আ) কেন্দ্রিক, খ্রিষ্টান ধর্মের কারনে ম্যাডাম একটু কষ্ট পেলেন। তারপর থেকে গল্প বলতো আরেক ছেলে, তার নাম ভুলে গেছি, সিরিয়াস চিকন। সে বেশীর ভাগ গল্পই বলতো হাসির, কিন্তু হাসি পেতো না। আমি তখন পাশের বন্ধুর সাথে গল্প জুড়ে দিতাম। ম্যাডাম বলতো-- আলী আরাফাত জাকারিয়া গল্প বললে সামনে আস, না হলে চুপ থাক। তবে ম্যাডাম সব চাইতে সুইট ছিলেন, পরীক্ষার গার্ড দিতে আসতেন যখন, তেমন কিছুই বলতেন না। বলতেন শুধু- যারা এক্সাম হলে অন্যের সাহায্য নেয়, তারা সারাজীবন অন্যের চাকরই থেকে যায়। আমার চাকর হতেও কোনো আপত্তি ছিল না। ম্যাডাম চলে গেলেন, কত কথা মনে পড়ে গেল অযথাই, মনে পড়ে গেল সেই শান্ত নদীর মতো শহর খুলনার কথা!

চায়ের দোকানে তেমন যাই না, তাই আড্ডা জমে না। তবুও সবার সাথে ব্যাক্তিগত যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করি। এবং তাতে মোটামুটি সফল। বন্ধুরা আমাকে ভালোবাসে, আমার কথার মুল্য দেয়, আমার মতামত শুনে মন দিয়ে এইটাই তো অনেক। কারন আমি তাঁদের মতো কিছুই করি না, কারো কথায় মেজাজ খারাপ হলে দুম করে বলে ফেলি, কারো আচরনে কষ্ট পেলে তার সঙ্গ ত্যাগ করতে সচেষ্ট হই, যাদের ভালো লাগে না তাঁদের উপস্থিতিও সহ্য করতে পারি না। এইসব কারনে আমার সাথে অনেকের সম্পর্কই অবনতি হয়। কারন আমি বিখ্যাত মানুষ অঞ্জন দত্ত নই, অঞ্জন দত্ত এক ইন্টারভিঊতে বলেছিলেন-- আমি যাদের মিডিয়ায় বকা দেই, সিনেমার তীব্র ক্রিটিক হই, বাস্তবে তার প্রতিফলন মোটেই হয় না। কারন আমি জানি কিভাবে সম্পর্ক ভালো রাখতে হয়। আমি অঞ্জন দত্ত নই, তাই আমার ইগোর উড়োজাহাজ আমিই আকাশে উড়াই।

তবুও বন্ধু হয়, নতুন নতুন নানান মানুষের সাথে আমাদের পরিচয় হয়। নানান বন্ধুর সাথে বিভিন্নভাবে মিশি আমরা। অনেকের তো আবার অনেক রকমের বন্ধু, অনেক গুলো সার্কেল। আমার এক বন্ধু ছিল অমি, তার হাফডজন সার্কেল, সবাইকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সময় দিতো। আমি সেরকম না। আমার সার্কেল এখন কমতে কমতে দু তিন ধারায় বিভক্ত, এক- চিটাগাং খুলনার স্কুল বন্ধুরা, দুই- চায়ের দোকানে আমার খোজে আসা ভদ্রলোকেরা। ৩- ব্লগ ফেসবুকের বন্ধুরা। ব্লগের বা ফেসবুকের বন্ধুরাও আবার সবাই বন্ধু না। কারন আমি চ্যাটে আলাপ খুব কম লোকের সাথে করি। অনেকের সাথে বন্ধুত্ব মেইনটেন করা জরুরী ছিল, হয়নি আর। তাই সামাজিক সমঝোতা কিংবা বোঝা পড়াতেও এখন পিছিয়ে আছি। তবে একটা জিনিস আমার আবিষ্কার যে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হবার সাথে সাথে ছেলেদের বিশেষ করে নতুন নতুন নানান বন্ধু হয়, পুরাতন বন্ধুদের বোরিং লাগতে শুরু করে। আমি অবশ্য ঠিক তার উল্টো- নিজের অবস্থা যাই হোক, আমার থেকে অর্থে বিত্তে ক্যারিয়ারে এগিয়ে এমন বাল্যবন্ধুদের সাথে আমি যোগাযোগ করি না। কারন তারা নিজেদের কি ভাবে জানি না, তবে ফোন দিলেই তাঁদের জিজ্ঞাসা আমাকে নিয়ে। জিজ্ঞাসা থাকলে যোগাযোগ রাখ, আমি ফোন দিয়ে কেন আমার খোজখবর বলতে যাবো তোদের, তোরা কি নরেন্দ্র মোদী নাকি। আমার দরকার মেটানোর জন্য অনেক বন্ধু আছে, বেহুদা তোদের মতো বালছালদের ফোন দিবো কেন?

তবে আমার সবসময় ভালো লাগে বড়দের সাথে মিশতে। বড়দের সাথে মিশলে অসীম স্নেহ পাওয়া যায়, ছোট বলে ক্ষমা পাওয়া যায়, আড্ডায় ডাক পাওয়া যায়, নির্দ্বিধায় মনের সব কথা বলে দেয়া যায়। আর সব চাইতে বেশী পাওয়া যায় জীবন সমন্ধে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির আলাপ শুনতে। সমবয়সীরা চিন্তা চেতনায় আমার মতোই কিংবা আমার চেয়েও স্থুল। কিন্তু বড়দের সাথে মিশলে বোঝা যায় আমি যেভাবে চিন্তা করি সেভাবেই সবকিছু নয়। তেমন ভালো লাগে ছোটোদের সাথে মিশতেও। কিছুদিন আগেও আমার বিশাল ছোটভাইয়ের সার্কেল ছিল। এখন সংখ্যা পড়তির দিকে। ছোটদের সাথে মেশার সমস্যা একটাই, এদের ভেতরে অনেকেই বেয়াদব প্রজাতির হয়। মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলে, মনে হয় থাবড়াই। কিন্তু আমি এইসব মারামারিতে নাই। আমি এদের সাথে যোগাযোগই আর রাখি না। ছোটদের সাথে মিশলে সবচাইতে সুবিধা এইসময়ের তরুনদের জীবন কেমন, কি নিয়ে কি ভাবে তারা, তা জানা যায়। তাঁদের ইউনিভার্সিটির পড়াশুনা কেমন, ক্লাসমেটরা কেমন, তাঁদের প্রেম গুলো কি রকমের এইসব নিয়ে তত্ত্ব তালাশ পাওয়া যায়। আর মেলানো যায় আমার সময়ের সাথে। আমি জানি একা থাকা অসাধারণ, নিজেকে নিয়ে নিজের মতো অনেক কিছু করা যায়। তাও মিশামিশিও খারাপ কিছু না। একটু জেনে বুঝে মিশতে পারলে মানুষের সাথে- দেখবেন বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা ও মন মানসিকতার গল্প। আমি অবশ্য কিছুদিন আগেও সবার সাথেই খাতির জমানোর দুর্লভ বিদ্যা শিখে ফেলেছিলাম। এখন তার ইস্তেমালে যাই না। কারন সবার সাথে মিশে আসলে লাভ কম। কারন যতই পাঞ্জাবী পড়ি আর যতই হাটি না কেন- আমার হিমু হবার সাধ নাই।

পোস্টটি ১৯ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

নাজনীন খলিল's picture


আমি অবশ্য কিছুদিন আগেও সবার সাথেই খাতির জমানোর দুর্লভ বিদ্যা শিখে ফেলেছিলাম। এখন তার ইস্তেমালে যাই না। কারন সবার সাথে মিশে আসলে লাভ কম। কারন যতই পাঞ্জাবী পড়ি আর যতই হাটি না কেন- আমার হিমু হবার সাধ নাই।

হিমু হবার দরকারি বা কি তুমি শান্ত ---শান্তই থেকো।

লেখাটা ভাল লাগল।

অনেক শুভেচ্ছা।

আরাফাত শান্ত's picture


অনেকদিন পর আসলেন আপু!
কেমন আছেন? দিনকাল কেমন যায়?

প্রিয়'s picture


আমি পাঞ্জাবীও পড়িনা, হেঁটেও বেড়াইনা। কিন্তু আমার হিমু হতে ইচ্ছে করে। কারণ হিমু শুধু তার ইচ্ছা শক্তি দিয়ে অনেক অসাধ্য সাধন করে ফেলার ক্ষমতা রাখে, যেটা আমার নাই। Sad

আরাফাত শান্ত's picture


আমাকে লোকজন হিমু হিমু করতো আগে, আমি সিরিয়াস বিরক্ত হতাম। কারন অনুমান শক্তির ব্যাবহার, মায়াবী কথাবারতা, দার্শনিকতা, মহা মানুষের ব্যাপার স্যাপার কোনোটাই আমার নাই!

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


ভাবনা জাগানিয়া সহজিয়া লেখা, ভালো লাগলো।

আরাফাত শান্ত's picture


ধন্যবাদ বর্ণ, তোমরা পড়ো বলেই তো লেখি Smile

জ্যোতি's picture


লেখাটা পড়তে গিয়ে আমারও কত কথা অযথাই মনে পড়ে গেলা Sad জীবন কোথা থেকে কোথায় যে ভাসিয়ে নিয়ে চলছে!!

আমি চ্যাটে আলাপ খুব কম লোকের সাথে করি। অনেকের সাথে বন্ধুত্ব মেইনটেন করা জরুরী ছিল, হয়নি আর। তাই সামাজিক সমঝোতা কিংবা বোঝা পড়াতেও এখন পিছিয়ে আছি।

এই লাইনটা খাপে খাপে মিলছে Tongue

আরাফাত শান্ত's picture


ব্লগে কম কম আসেন কেন?

Sports Info24's picture


:)ভালো লিখছেন!

১০

আরাফাত শান্ত's picture


থ্যাঙ্কস এ লট! Smile

১১

সামছা আকিদা জাহান's picture


সবাই বলে ছোট্টজীবন , আসলে জীবন বড় অনেক বড় তার ঘটনা । প্রতিটি মুহূর্ত যদি বিশ্লেষণ করি লিখে শেষ করা যাবে না।

১২

আরাফাত শান্ত's picture


ঠিক বলেছেন আপু।

১৩

রুদ্র আসিফ's picture


আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভাল লাগলো.. Glasses

১৪

আরাফাত শান্ত's picture


ধন্যবাদ আপনাকে!

১৫

ফাহিমা দিলশাদ's picture


আমি কখনোই হিমু নামক চরিত্রটাকে পছন্দ করতাম না। তারচেয়ে আমার তিন গোয়েন্দার কিশোর পাশাকে ভালো লাগত।

১৬

আরাফাত শান্ত's picture


কিশোর খুব ইন্টিলিজেন্ট!

১৭

রুদ্র আসিফ's picture


আমি অঞ্জন দত্ত নই,
তাই আমার ইগোর উড়োজাহাজ আমিই
আকাশে উড়াই

অসামান্য চমৎকার কথা Smile

১৮

আরাফাত শান্ত's picture


থ্যাঙ্কস এ লট!

১৯

রুদ্র আসিফ's picture


Welcome

২০

আরাফাত শান্ত's picture


Smile

২১

তানবীরা's picture


যারা এক্সাম হলে অন্যের সাহায্য নেয়, তারা সারাজীবন অন্যের চাকরই থেকে যায়।

তিনি বোধহয় জানতেন না, না নিলেও তাই থাকে তবে মাইনে কম বেশী হয় এই আর কী

আমি অঞ্জন দত্ত নই, তাই আমার ইগোর উড়োজাহাজ আমিই আকাশে উড়াই।

Glasses

তবে আমার সবসময় ভালো লাগে বড়দের সাথে মিশতে। বড়দের সাথে মিশলে অসীম স্নেহ পাওয়া যায়, ছোট বলে ক্ষমা পাওয়া যায়, আড্ডায় ডাক পাওয়া যায়, নির্দ্বিধায় মনের সব কথা বলে দেয়া যায়। আর সব চাইতে বেশী পাওয়া যায় জীবন সমন্ধে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির আলাপ শুনতে।

Big smile Big smile Big smile

ছোটদের সাথে মিশলে সবচাইতে সুবিধা এইসময়ের তরুনদের জীবন কেমন, কি নিয়ে কি ভাবে তারা, তা জানা যায়।

তুমি কি নিজেকে আর তরুণ ভাবো না? তাহলে আমরা নিজেদের কী ভাববো Sad

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!