ছেঁড়া মেঘে ছেঁড়া রূপকথা... (২)
''রাজকন্যা পড়ায় ফাঁকি দিতোনা বাবা?''
''তা দেবে কি করে? ও তো ফাঁকি দেয়া শেখেই নাই, আর তারপরেও যদি ওর কখনো পড়তে ইচ্ছা না করতো ও চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো। আর ও একটু বেশি সময় ধরে পড়াশুনা না করলেই ডাইনীটা ওর জন্যে অনেক কঠিন সব শাস্তির ব্যবস্থা করতো। যেমন সারারাত ধরে ভয়ানক চেহারার রোবট ওকে ভয় দেখাতো, নাইলে ওকে চিরতার রস গেলানো হতো কিংবা ইলিশ মাছের কাঁটা বাছতে দেয়া হতো। ওর তাই না পড়ে উপায়ই ছিলোনা যে।
রাজকন্যার দ্বীপের চারপাশে ডাইনী জাদু দিয়ে এমনি করে রেখেছে যে বাইরে থেকে এই দ্বীপটাকে কেউ দেখতেই পায়না, কেবল রাতের বেলায় বাতিঘরের ঘুরতে থাকা আলোটুকু গভীর সমুদ্রের নাবিকেরা দূর থেকে দেখতে পায়। কিন্তু যতোই ওরা দ্বীপের কাছে চলে আসে ততোই আলোটা যেন ততোই দূরে সরে যায়, তাই এই আলোর নাম ওরা কেউ দিয়েছে মরীচিকা আর কেউ দিয়েছে ভূতের আলো। দিনের বেলা দ্বীপটাকে দেখতে জাদুর মায়ায় বিশাল এক খাড়া হিমবাহের মতো লাগে, তাই সব জাহাজ আর নৌকা তাকে এড়িয়ে যায়। আর তাছাড়া দ্বীপটার জাদু খুব সহজে ভাংগবার নয়; কেমন করে যে ভাংগবে সেইটেই তো কারো জানাও নেই।
তো একদিন হলো কি, ... ''
'' বাবা, রাজকুমারীর কোন নাম ছিলো না?''
'' নাম?? ওর তো নামের দরকার ছিলোনা, ওকে তো কেউ কখনো নাম ধরে ডাকতোই না; তবে তুমি যদি চাও তাইলে ওকে নাম দিতেই পারো। বলো কি নাম চাও?''
''বাহ! তোমার গল্প, আর তুমি ওর নাম না জানোনা? এইটা তুমি বানিয়ে বানিয়ে বলছো বুঝি?''
'' গল্প তো বানিয়েই হয় রে মা। তুমি বলো তুমি কি নাম দিতে চাও রাজকুমারীর''
''তোমার গল্প, তুমিই একটা নাম দাও না বাবা।''
''ঠিক আছে, দিচ্ছি রে মা, ধরে নাও এই গল্পের রাজকুমারীর নাম মেঘ। আচ্ছা গল্পে ফেরত যাই এখন। কি যেন বলছিলাম? ওহ হ্যাঁ... একদিন এক রাজা বেরিয়েছেন প্রমোদভ্রমণে, মানে মজা করার জন্য আর কি। সাথে তেমন লোকজন নেই, শুধু কিছু চাকর আর পাইক পেয়াদা আর আছেন তার রাজসভার কবি যার নাম নীল। নীলের সাথে তার পোষা ময়নাটাও আছে। মনিবের সাথে থেকে থেকে ময়নাটার গানের গলাও বেশ খুলে গেছে। সে প্রায়ই খাঁচা থেকে বের হয়ে আপনমনে গান গাইতে গাইতে আকাশে উড়ে বেড়ায় আর বিকেলের আগেই আবার ফিরে আসে জাহাজে।
সাগরে তখন বেশ আরামদায়ক আবহাওয়া। রোজ রোদ উঠে, সূয্যিমামা মাথার উপরে হাসিমুখে থাকেন সারাদিন, কিন্তু তার রোদটা একটু শীতের চাদর মোড়ানো, তাই তেমন গায়ে লাগেনা, আর থেকে থেকে দখিনা বাতাস বয়ে যায়। রাজা সারাদিন শুয়ে বসে বই পড়েন আর মাঝে মাঝেই কবি নীল কে ডেকে তার গান শোনেন।
রাজা প্রায়ই আপনমনে কি কি সব ভাবেন। সে অনেক অনেক দিন আগের কথা, রানীকে নিয়ে তিনি একবার এইদিকের সমুদ্রে এসেছিলেন, সেই সব দিনের কথা্ তার মনে পড়ে যায় আর তিনি আনমনা হয়ে যান। আজকে নীল যখন তার লেখা নতুন গানটা শোনাতে এলেন, তখনও সেইসব দিনের কথাই তার মনে পড়ছিলো। নীল গান ধরেছেন...
মেঘের বুকের জলকণাদের নরোম তুলোর পথে,
রোদের কণায় স্বপ্ন বুনে রামধনুকের রথে..
আজকে শুধুই তোরই জন্য জুড়েছি এই খেলা;
আপনমনে গল্প করার একলা বিকেল বেলা।
গল্প ফুরোয়, আলো ফুরোয়, সন্ধ্যে এসে নামে
রাতের আঁধার নীল নদীটার পাশেই কেবল থামে।
ছায়ার বুকে ছায়া ঘনায় আকাশপারের দেশে,
তারার চোখের চুপকথাটি রূপকথাতে মেশে।''
হুম! বুঝচ্ছি, বাতিঘরের মানুষ হবার কুনুই চান্স নাই ( কবি নীল এসে পড়েছেন। সুন্দর হচ্ছে।
চলুক................
সুন্দর হচ্ছে। চলুক................
লেখাটা খুব সুন্দর হয়েছে...
গানটা কার লেখা? গানটাও সুন্দর
গানটাও সুন্দর???? কি মজা!!!
চমৎকার হইতেছে...
চলুক
মন্তব্য করুন