আমি কে ?
(এই লেখাটি অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা কথার সংকলন, আমার মনের কথা। যা একটির সাথে সাথে আরেকটির মিল নাও হতে পারে। পাঠক ক্ষমা করে দেবেন।)
চলমান রাজনীতিতে আমার বাবা একজন ঘর ফাটিয়ে দেয়া রাজনৈতিক কর্মী। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে কিনা নিপিড়িত হয়েছিলেন পাকিস্তানিদের হাতে। কোনমতে প্রাণ ফিরে পাওয়া এবং তার রেশ হিসেবে এখন একটু কানে কম শোনা মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের সময় সরকারী অফিসার থাকাকালীন অবস্থা থেকেও নিজ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের যারপর নাই সাহায্য করেছেন। কারন তিনি বিশ্বাস করতেন বাঙালী জাতীর স্বাধীনতায়। ১৯৩৫ সালে জন্মের কারনে দেখেছিলেন বৃটিশ শাষন, দেখেছেন ৫২ র ভাষা আন্দোলন, দেখেছেন শেরে বাংলা এ এ ফজলুল হক থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে কাছ থেকে। উপলব্ধি করেছিলেন তাদের অস্তিত্ব। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে (তার মতে স্বাধীনতা পরবর্তীকালীন সময় , বাকশালের সময় ) দেশের যে লুন্ঠন প্রক্রিয়া চলছিল, তা তিনি কোন মতেই মেনে নিতে পারেন নি। তাই পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে আসা বি এন পি এর প্রতি সর্বাত্বক আস্থা রেখেছেন। তা্ই ছোটবেলায় আমাকে শেখানো হয়েছে আমি বি এন পি করি। আর আমার মায়ের ভাষ্য ছিল , খালেদা জিয়া সুন্দরী , তাকে দেখতে রাজকন্যার মত লাগে, তই আমাকে বি এন পি করতে হবে। তবে এ কথা সত্য যে, ছোটবেলায় খুব কাছ থেকে এই দুই নেত্রীকে দেখতে পেয়েছিলাম, তখন আসলেই খালেদা জিয়াকে স্বপ্নের রাজকন্যা মনে হত। আর শেখ হাসিনা কে দেখতে মনে হত কাজের মহিলা।( সরি ফর ল্যাংগুয়েজ, বাচ্চা কালের ভাবনা ) এই বোধ আমার ছিল ২০০১ সাল পর্যন্ত। কারন তখন নির্বাচনের সময় বি এন পি এর ইলেকশন প্রমোশন এর কাজ করতাম, কিছু টাকা আয় করব বলে। প্রতিদিন ৩০০ টাকা, তখন অনেক টাকা আমার কাছে। আর সেই সুবাদে তৎকালিন ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার চৌধুরী আলমের সাথে ভাল খাতির হয়েছিল। নিউ টেনে পড়া একটা মেয়ে হয়ে তাকে জ্ঞান দিতাম, তার এলাকায় কোথায় কি অন্যায় হচ্ছে তা জানিয়ে। তার আদর ও পেয়েছিলাম, আর সবার মত তিনিও আমাকে পাগলা বলে ডাকতেন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পড়া শুরু করলাম, কমিউনিজমের বই। মন থেকে বিশ্বাস করা শুরু করলাম কমিউনিজম ই একমাত্র পথ আমার অস্তিত্ব যে বাচাতে পারে। কিন্তু কাছ থেকে দেখলাম, তাদের নেতারা যা বলেন তা তারা নিজেরা করেন না। কোন না কোন রাজনৈতিক আশ্রয়ে গিয়ে মুখ লুকান। তাই আর কোন দল নয়। কাউকে ভোট দিব না, সবাই চোর।
যাই হোক ফিরছি বাবার কথায়, বি এন পি করার সুবাদে এবং আওয়ামিলীগকে দুই চোখের এক চোখে দেখতে না পারার কারনে গত ৫ বছর ধরে বাসায়, কখনও আমার দেশ আবার কখনও নয়া দিগন্ত পত্রিকা রাখা হয়। যদিও আগে রাখা হত দিনকাল অথবা ইনকিলাব।কিন্তু বর্তমানে আমি পড়েছি মহা ধর্ম সংকটে। আমার বাসায় আমরা দুটি প্রানী প্রায় প্রতিদিন ই বাসাটাকে বাক রনক্ষেত্র বানিয়ে দিচ্ছি। আমি চাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক, আর ধর্ম নামের এই স্পর্শকাতর বিশ্বাসের নাম দিয়ে রাজনীতি বন্ধ হোক। আল্লাহর নাম নিতে হলে যার যার ঘরে বা মসজিদে বা প্রতি মুহুর্তে নিজেদের অস্তিত্বে আল্লাহর নাম নেয়া হোক ।কিন্তু আল্লাহর নাম দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, লুটপাট করার জন্য ইসলামকে ব্যবহার না করা হোক। কিন্তু আমার বাবা বলছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক, কিন্তু এই বিচারের নামে আওয়ামীলীগ যে প্রহশন শুরু করেছে তা থেকে দেশ মুক্ত হোক।এবং আওয়ামীলীগ ওই সব নাস্তিকদের পক্ষ না নিক ( ধন্যবাদ গোস টু আমার দেশ)। আমি তাকে কোন ভাবেই বোঝাতে পারছি না, এটা নাস্তিকদের আন্দোলন না। তার ধারনা এটা আওয়ামীলীগের চক্রান্ত। হিন্দু রাষ্ট্র ভারতের দালাল হিসেবে দেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দেবে এই সরকার। তাই দেশে মুসলমানদের উপর এই অত্যাচার। আর আমিও সেই দলে আছি বলে, আমিও আওয়ামীলীগ করি। এ আন্দোলন নাকি শুধু তাদেরই। আজ এই ধারনা বহু মুসলমানদের। আজকের সহিংস আন্দোলন এই “ আমি মুসলমান, এবং দেশটাকে হিন্দু রাজ্য বানিয়ে দিচ্ছে তারা” এরকম কথারই বহি:প্রকাশ। ৭-১০ জন বুড়াকে ( রাজাকারকে) বাচানোর জন্য ১৩-১৪ বছরের কিশোর থেকে শুরু করে বড়রা কেন নিজেদের জীবন দেবে? আর এই বুড়ারাই তো ছিল না, মুক্তিযুদ্ধের সময় ম্যাসাকার করা লোকজন কি এই কজন ? আর বাকিরা কোথায় ? এ কথা সত্য যে, এক যুদ্ধাপরাধী কচলিয়ে আওয়ামীলীগ যেভাবে সেফ সাইডে খেলতে চেয়েছে, এই আন্দোলন তাদের এই কচলানোতে হয়তো না বুঝেই একটু সহায়তা করেছে। তাই বলে কি তাদের সব দুর্নীতি আড়াল হবে। অমি রহমান পিয়াল ভাইকে আজ বলতে শুনলাম, তিনি বলছেন, শাহবাগ আন্দোলনে আওয়ামীলীগকে ভোট দেয়া সেই ২ কোটি তরুন প্রজন্মই গিয়েছিল। তাহলে আমি তো গতবার “না ভোট” দিয়েছিলাম, কারন কোন চোরকে ভোট দেব না বলে, তাহলে আমি কেন শাহবাগ আন্দোলনকে মনে ধারণ করি? আমার বাবার মত আমিও কনফিউজড, আমি কে ? তাহলে আমিও কি আওয়ামীলীগ ?
ভালো লিখেছিস, আমি সহজ ভাবে ব্যাপার টা দেখতে চাইতেসি,
১। আমি যুদ্ধাপরাধিদের বিচার চাইতেসি,
২। আমি জামাত কে কখনই খমতায় দেখতে চাইতেসিনা।
৩। বিষ দিয়ে বিষ মার তে হয় সো লিগ দিয়ে জামাত।
৪। লিগ খমতায় থাকাতে তবু সাকা গো আজম রা জেল এ, যারা সর্ব সম্মত ভাবে প্রমানিত রাজাকার, বি, এন, পি খমতায় গেলে যাদের এক টা বাল ও ছেরা সম্ভব না।
৫। কাজ টা তোর বা আমার না কাজ টা সরকারের আমরা প্রেসার গ্রুপ বা ক্যাটালিস্ট, যেই কয়টা হারামি আছে অই গুলারে ঝুলাইতে হইলে এখনি সময়।
৬। আমি লিগ বুঝি না বিমপি অ বুঝিনা সাকা আযম নিযামি র ফাসি চাই
ভালো রাজাকারের ফাসি চাই,
আত্মসীকৃতি রাজাকারের ফাসি চাই,
সব দলের মধ্যে রাজাকার লুকিয়ে আছে তাদেরও ফাসি চাই,
আওয়ামীলীগের মধ্যে কি রাজাকার নাই ?
সব রাজাকার কি বি,এন,পি বা জামায়াত এর মধ্যে ?
যদি দেখতাম আওয়ামী সরকার তাদের দল থেকেও ২ / ১ জন রাজাকার গ্রেফতার করছে তাহলে মনে করতাম সত্যিই আওয়ামীলীগ রাজাকারের বিচার চাই।
আমিও তাই বলি..
ভালো..
ধন্যবাদ
সরল স্বিকারুক্তির ও সাবলীল বর্ণনা। ভালো লেগেছে। অনেক বড় বড় সাফল্যের সাথে কিছু ছোট ছোট ব্যর্থতা থাকে। পিয়াল ভাইয়ের কথাটিও তেমন একটা ছোট ব্যর্থ কথা।
ধন্যবাদ ভাই..
এটা একটি রাজনৈতিক আন্দোলন, কিন্তু রাজনৈতিক দলের আন্দোলন নয়।
আমি সারা জীবন বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি কে ঘৃণা করে দুরে থেকেছি। আমাদের দেশের কোন রাজনৈতিক দলই আমার ভোট পাওয়ার যোগ্য বলে মনে হয় নি কক্ষনো।
কিন্তু শাহবাগে প্রায় প্রত্যেকদিনই যাওয়া হয়েছে,
আমার মত লোক ওখানে কম হবে বলে আমার কখনই মনে হয়নাই।
কথা একটাই,
রাজাকারের ফাঁসি চাই।
এটা একটি রাজনৈতিক আন্দোলন, কিন্তু রাজনৈতিক দলের আন্দোলন নয়।
এটা ভাবতে খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু নানা ধরনের হিন্দি চলচ্চিত্র যেমন নায়ক, সরকার, রাজনীতি এগুলো দেখে আমাদের রাজনীতির চাল ও একই রকম মনে হয়।
মন্তব্য করুন