আমি অপার হয়ে বসে আছি
গান শুনে মনের পরিবর্তন ঘটে, এটা পুরোনো কথা । অনুভূতির স্কেল কমে বাড়ে গান শুনে । যতক্ষন প্রিয় ব্যান্ডের গান শুনছিলাম, বেশ ভালো ছিলাম । যেই লালন ধরলাম, ব্যাস মন খারাপ হতে লাগলো, অযথাই । উদাস হয়ে ভাবছিলাম মানুষ এতো দৌড়ায় কেন? সবসময় কেবল দৌড়চ্ছে । পরে যখন হুশ হল, আতলামি ছেড়ে আবার গান শুনতে বসলাম । সাথে টুকটাক ফেসবুকে ক্লিক ।
ফ্রেন্ডলিস্টে এক বান্ধবী আছে, এখন দেশের বাইরে । ওর কথা ভাবলাম । কোথাকার মানুষ কোথায় ঘুমুচ্ছে । এই মেয়েটা ছিল প্রেমকুমারী । পিচ্চিকাল থেকে একজনের সাথে প্রেম করেছে । সেই প্রেম চলা অবস্থায় আরো কয়েকজনের সাথে প্রেম করেছে । সবদিক এমন সুন্দর করে সামলে চলা মেয়ে আমার কাছে চরম বিস্ময়ের বস্তু ছিল ।
ওর কথা মনে পড়লো আর সেই সাথে ওর বলা কথাগুলোও । ও ছিল একটা কমেডিয়ান । স্বাভাবিক ভাবে হাসির কথা বলে যেত । মুখ গম্ভীর করে এমনকি অশ্লীল কথাও বলতে পারতো । একটা জিনিস ছিল সে । সে সেইদিন বললো, আমি নাকি তার সবচে প্রিয় বান্ধবী । কোনো একজনের সবচে প্রিয় হওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার । যদি সেইজন সদা সত্য কথা বলে । তবে আমি মানুষতো, তাই শুনে পরাণ জুড়িয়ে গেছিল ।
দুঃখের গান শোনার সময় ওর কথা কেন মনে পড়ল, বুঝলাম না ।
এই সময় মনে পড়ার কথা মাধবী দিদি কে । আমাদের ক্লাশমেট, কিন্তু বয়েসে বড় । এতো কম কথা বলা মেয়েও আমার জন্য বিষ্ময়ের বস্তু ছিল । আমি তো জানতাম, মেয়েরা প্রচুর কথা বলে । মাধবী’দির একজন শ্রীকান্ত ছিল । বাল্যপ্রেম । দিদি নাকি ন্যাংটোকালে তাকে বলেওছিল, “ আমি তোকে বিয়ে কব্বো, বড় হলে । হায়, সেই ছেলের সাথে সামান্য কথা বলাও মাধবী’দির জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায় । দিদির মুখ বেশীরভাগ সময়ই দুঃখি দুঃখি থাকতো ।
একজন লুল টাইপ মাস্টার ছিল । আমি তার ছাত্রী ছিলাম না । কিন্তু আমার সাথের সবাই তার ছাত্র ছাত্রি ছিল । মাধবী’দি কে ডাকতো মাধু বলে । হাত দেখতে জানতো । সবার হাত দেখেই বলতো, সামনে তোর শুভদিন । মাধুকেও বলতো । কিন্তু আমি থাকতে সেই শুভদিন দেখি নি । অনেকদিন দেখা হয় না আমাদের । এর মাঝে সেই শুভদিন এসেছে কিনা জানি না ।
মাধবী’দিকে বলা হয়নি, তাকে আমার খুব পছন্দ ছিল । নিজের বড়বোন তো নেই, ওনাকেই মাঝে মাঝে কল্পনা করে নিতাম ।
আমি স্বভাবে চরম আইলসা । কাজে স্লো । চিন্তায় অতীতচারী । সবমিলায়ে একটা অপদার্থ!!
চিন্তা করি যেহেতু অতীত নিয়াই বেশী । তাই পুরোনো লোকদের কথা ভাবি । কত মানুষ পিছনে ফেলে এসেছি । লুল মাস্টারের কথাই ধরি, মোটা খাটো লোকটার লুলামির ইতিহাস ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল আমাদের মাঝে । লুল হলেও মানুষকে আপন করে নিতে পারতেন । রাস্তা দিয়ে হাটার সময় চেনা জানা সবাইকে ডেকে কথা বলতেন । ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করতেন । খুব ভালো গ্রামার বুঝাতেন । ছিলেন অসাধারণ মেধাবী ছেলের বাবা । ওনার বদগুন মাঝে মাঝেই ঢাকা পড়ে যেত সদগুনের ভীড়ে । আমার ছোট বোনকে পড়াতেন । সেই সূত্রে আমাকে ডাকতেন বড়, আর বোনকে ছোট ।
এখনো খুব মিস করি, হঠাৎ রাস্তার মাঝে আচানক সেই ডাক ‘ বড় ’ ।
২
ভাবছিলাম লোকে বিড়ি সিগ্রেট কেন খায়? খেলে কি ব্রেইন পরিষ্কার হয়? অন্তর অনেক বড় হয়? আমি তো জানি এইসব মানুষের ভিতরটা ঝাঝরা করে দেয় । মানুষের অকাল মৃত্যু হয় । যেমন আমার তিনজন মামা । ছিলেন কট্টর ধুমপায়ী । তিনজনেরই খুব অসময়ে মৃত্যু হয়েছিল । সবাই ভুগেছিলেন হৃৎপিন্ড, ফুসফুস এর রোগে । আগে বন্ধুরা বলতো, সিগারেট খেতে নিষেধ করা নাকি মেয়েদের একটা ঢং । আসলেই কি তাই? মেয়েরা যাকে ভালোবাসে তাকেইতো নিষেধ করে । তার দীর্ঘায়ু চায় ।
আবার মনে হয় আতলামি করতেছি ।
আসলে কিছুদিন আগেইতো একজন মারা গেছেন, তাই হঠাৎ মনে পড়ল । পুরাতনদের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে । অথচ কারো পাশে বসে একটু কথা বলার ফুরসত পাচ্ছি না । সবাই আচমকাই চলে যাচ্ছে । আমি খবর পাই দেরি করে । একা থাকি বেশীরভাগ সময়, তাই টেনশনে কেউ আমাকে বলে না প্রথমে । কিন্তু কেউ আমাকে জানে না । আমার লোকজন আমাকে ঠিক মত চেনেই না । আমি অনেক শক্ত হয়েছি এখন । সেই কুজো, দুর্বল মনের মেয়ে কি আর আছি । কত মৃত্যুর খবর শুনছি রোজ । প্রিয়জন কারো মৃত্যুর খবর শুনলে বুকটা একটু মোচড় মারে ঠিক, কিন্তু স্বাভাবিক হয়ে যাই একটু পরেই ।
আমার নানি আপুর মৃত্যুটাই আমি সবচে বেশী ফিল করি । একবছর হয়ে গেলো এই মার্চে । অথচ মাঝে মাঝেই তার জন্য নতুন শাড়ি কেনার কথা ভাবি । তিনি যে নেই, মনে থাকে না । নানির ঠিক একবছর পূর্ণ হবার দিন তার অতি আদরের বড় ভাস্তে মারা গেল । বোধহয় নানিই তাকে কাছে ডেকে নিলেন । মন খারাপ হয় । দিন দিন আমরা আত্মীয়শূন্য হয়ে যাচ্ছি । আমাদের মাথার ছায়া ঝাপসা হয়ে আসছে ।
আর কিছু লিখতে ইচ্ছা করতেছে না ।
এইটা আমিও খুব ফিল করি।
আপনি চমৎকার লেখেন। দারুণ। কেমন বিষন্ন হয়ে গেলাম লেখাটা পড়ে। কিন্তু এতো ভাল একটা লেখা পড়েছি বলে মনেটা কিছুটা ভালও হল।
ধন্যবাদ, ভাইয়া ।
দুঃখ দেয়ার জন্য আমি দুঃখিত
দিন দিন আমরা আত্মীয়শূন্য হয়ে যাচ্ছি । খুব সুন্দর বলেছেন। আমাদের সমাজ এমন ভাবে তৈরী হচ্ছে যে আত্মীয় আর থাকছেই না। আপনার খুব মন খারাপ এবং আপনার প্রসংগ ভিন্ন তবুও বলি আমাদের জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতির কারনে মামা খালা ফুপু চাচা কাকা বড় আব্বা বড় আম্মা হারাচ্ছে আমাদের সন্তানেরা।
আমার তো মনে হয়, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আরো কঠোর হওয়া উচিত । দেশের যে কি অবস্থা!! আজকে যে জায়গা দেখছি খোলা, কিছুদিন পর সেই জায়গায় বাড়ি । এইরম করে সব জায়গা ভরাট হয়ে যাচ্ছে । অথচ আমাদের শষ্যভূমি, বনভূমি প্রচন্ড দরকার ।
একদম ঠিক। মন খারাপ হয়ে গেলো পোষ্টটা পড়ে। মন ছুঁয়ে গেলো।
ধন্যবাদ, আপু
ভালো লাগলো
মাসুম ভাইএর মতোই একই অনুভূতি, কেমন বিষন্ন হয়ে গেলাম লেখাটা পড়ে। কিন্তু এতো ভাল একটা লেখা পড়েছি বলে মনটা কিছুটা ভালও হল। লিজা আপু'কে থ্যংকস্।
যাক ব্লগে অন্তত একজনের আপু হইলাম
লিজার এক একটি লেখা আগেরটিকে ছাড়িয়ে যায়, ছাড়িয়ে যায় কি বলা যায় প্রতিটিই অনবদ্য। প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক। অভিনন্দন আপু।
আপনাদের মন্তব্যগুলো টনিকের কাজ করে । থাঙ্কিউ আপু সাথে থাকার জন্য ।
আগে কেন? পোলা'রা এখনো এটাই বলে।
তুই তো এত মন খারাপ করার পাবলিক না, তাইলে আজ-কাল এমন মন খারাপ করস কেন?
মন ভালো রাখার চেষ্টা করি সব সময় । কিন্তু মাত্র তিন চার দিনের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে অস্থির হয়ে গেছি । এখন দেখ, আবার স্বাভাবিক
গানটা খুব প্রিয়।পোস্টে ঢুকার আগে ভেবেছিলাম গান নিইয়ে বোধহয় পোস্ট ।
কিন্তু পড়ে অন্যরকম অনুভুতি হলো।
গান শোনা থেকেই শুরু
আমাদের ব্লগে একজন "ছায়া আপু" আছে। আপনি ভয় পাবেন না।
অসামাজিক ব্যস্ততায় খাইলো আমাগোরে
মিল পেলাম একটু।
আমার দাদুর সাথে খুব বেশী সময় আমার থাকা হয়নি। (
ভাই-বোন বা কাজিনদের সবার ছোটো হওয়ায় খুব কম সময় কাছে পেয়েছি তাকে। কিন্তু দাদু চলে যাওয়ার এই ৯ বছর ধরে আমিই নিয়ম করে বিশেষ দিন গুলোর আগে সব সময় তাকে স্বপ্ন দেখি।
দিন দিন ভালোবাসার লোক কমে যাচ্ছেরে পৃথিবী থেকে। আজকের লেখাটা প্রচন্ড মন খারাপ করিয়ে দেয়া লিজা। এই বয়সে এতো মন খারাপ করা লেখা কেনো? সারাজীবনতো পরেই আছে। এখন বরং চনমন ঝনঝন লেখা দাও
মন খারাপ কবেই শেষ হয়ে গেছে
মন্তব্য করুন