এখন শুধু যোগ দিতে হবে, আর কিছু করতে হবে না
শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ চলছে। প্রতি মুহূর্তে বীর সেনানিরা সেখানে যোগ দিচ্ছেন। কাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে যখন মাইকে ঘোষণা শুরু হলো এ যুদ্ধের ব্যপারে, তখন যাচ্ছি-যাবো করেও আর যাওয়া হয় নি। টানা চার দিনের ক্লান্তি মাথায় নিয়ে দেড়টায় বাড়ি ফিরে দেখি ২২০০ সৈনিক ততক্ষণে যোগ দিয়ে ফেলেছেন। আমি আর দেরি করলাম না। সকালে উঠতে দেরি হলো। ততক্ষণে ৩৫৫০ জন যোগ দিয়ে ফেলেছেন সাইবার যুদ্ধে। এ যুদ্ধে যারা এখনো যোগ দেন নাই, তাদের জন্য লিংক এখানে (ক্লিক করুন)। দেরি করার সুযোগ নাই। যোগ দিয়ে ফেলতে হবে এবং তারপর থেকে ছাগু আইডি/ ব্লগ প্রোফাইল যাই পান না কেন, শেয়ার করতে হবে পাতাটাতে। অন্যদের শেয়ার করা একই উপাদানগুলোর ব্যপারে রিপোর্ট করতে হবে। আমার-আপনার কাজ আপাতত এটুকুই।
আজকে সন্ধ্যায় শিরোনামহীন আসবে বলে শুনতে পাচ্ছি। ওদেরকে ইদানীং ভালো লাগে না। কারণ ওরা দিগন্ত টিভিতে প্রচুর অনুষ্ঠান করে। ওদের গান অনেক ভালো হয়। কিন্তু ওরা রাজাকারদের টিভিতে কেন যেতো? এই কারণে ওদেরকে অবশ্যই মাফ চাইতে হবে। বিনীতভাবে প্রকাশ্যে করজোড়ে ক্ষমা চাইতে হবে। নাহলে গান গাইতে দেয়া হবে না। আর যদি না আসে, ক্ষমা না চায়; তাহলে অনেক ভালো শিল্পী হওয়া স্বত্তেও ওই দলটাকে আমরা বর্জন করবো।
বিকেলের সোনালী সময়গুলোয় আমাকে কামলা দিতে ছুটতে হয়। ঢাকা শহর থেকে অনেকটা দূরে। মনটা তখন পড়ে থাকে শাহবাগের কোনা-কানচিতে। চেনা-জানা সুপরিচিত শাহবাগ আজ ভোজবাজির মতো পাল্টে গেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পাল্টে গেছে। চারুকলা ইনস্টিটিউট আর ইনস্টিটিউট নেই। ওটা যেন একটা বিপ্লবীদের দঙ্গলে পরিণত হয়েছে। রাতের যখন হাঁটি, তখন রাস্তায় আঁকা মানুষের ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে হাসি পায়। ছবিগুলোও পারলে যেন এখুনি উঠে ছুট লাগাবে। স্লোগান দিতে ইচ্ছে করে হয়তো ওদেরও।
আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। কাল সন্ধ্যায় মিরপুরের বিইউপি থেকে ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে ফিরছিলাম। দেখলাম ক্যান্টনমেন্টের ভেতর মানুষ জটলা হয়ে মাইকে প্রতিবাদ করছে। গাঁদা ফুলের পাপড়ি দিয়ে বাংলাদেশের ম্যাপ এঁকেছে। তার চারপাশে জ্বালিয়ে দিয়েছে অনেকগুলো মোমবাতি। এই জিনিসটা আমার সত্যিই দারুণ লাগে। প্রতিবাদ দেখেছি পল্লবীতেও। খুলনার প্রজন্ম চত্বরে ৪ দিন ধরে একটানা অবস্থান করছেন বীরজনতা। আলুপট্টি জায়গাটা কোথায়, কেউ একটু বলবেন তো। সেখানেও চলছে টানা আন্দোলন। বিদেশে বাঙালিরাও বসে নেই। হাতে হাতে প্ল্যকার্ড নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যা্চ্ছেন। প্রচুর ছবি তুলছেন, সেসব শেয়ার করছেন। সব, সবকিছু আমাদের মনোবল বাড়িয়ে দিচ্ছে। মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়ানোর ইচ্ছে জাগাচ্ছে।
এই অভূতপূর্ব আন্দোলন বিশ্ববাসী আগে কখনোই দেখে নি। এটা না গান্ধিবাদী অহিংস আন্দোলন, না তাহরীর স্কোয়ারের সেনাবিরোধী আন্দোলন, না কোনো ভিনদেশির আগ্রাসন বিরোধী আন্দোলন। এটা নিজেদের মুক্তির আন্দোলন। আজ ছয় দিন যাচ্ছে। কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। আজ ছয় দিন যাচ্ছে, কারো চোখে-মুখে একফোটা ক্লান্তি নেই। ছয় দিন পর্যন্ত কোনো ডেথ ক্যাজুয়ালটি নেই, সরকার-বিরোধী দল-সুশীল সমাজ-কুটিল সমাজ-আর্মি-কূটনীতিবিদ কারো টু শব্দটি নেই; সারাবিশ্বে এমন ঘটনা কি এর আগে একটাও ঘটেছে? বাংলাদেশ বিরোধী বলে পরিচিত আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো পর্যন্ত এ দেশের আন্দোলনকে নিয়ে একটা উল্টো কথা লিখার সাহস পায় নি। গণমানুষের এমন চরম মুক্তির আন্দোলন, এত এক্সট্রিম জাগরণ, এত পজিটিভ মোটিভেশন এই পৃথিবী কি এর আগে একবারও দেখেছে?
দেখে নি। আশায় আজ আমার টৈটম্বুর অবস্থা। ভঙ্গুর সামাজিক অবকাঠামোগুলোর ঝুর ঝুর করে ভেঙ্গে পড়ার দিন সমাগত। জোয়ার এসে গেছে। আমরা সবকিছু ভাঙ্গবো, তারপরে আবার সবকিছু নতুন করে গড়বো। এ লড়াইয়ে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার। বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, এখন শুধুমাত্র প্রত্যেকটা মুক্তিকামী মানুষকে তার নিজের জায়গা থেকে এ আন্দোলনে যোগ দিতে হবে। আর কিচ্ছু করতে হবে না। এমনকি সময়-সুযোগ না থাকলে হেঁটে হেঁটে শাহবাগ পর্যন্ত আসতেও হবে না। মনে মনে নিজেকে শুধু এই গণজোয়ারে ভাসিয়ে দিতে হবে। নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে একবার শুধু বলতে হবে, আমি আছি।
বড় সৌভাগ্যবান তারা, যাদের এখন যৌবন চলছে। এমন মধুর সময় জীবনে বার বার আসে না। আজ কবি হেলাল হাফিজের বহুপাঠের পরও অজীর্ণ হিরন্ময় সেই 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়' কবিতাটি আরেকবার পাঠ করবো। তার আগে সবাইকে জানাই, নতুন দিনের আগমনী শুভেচ্ছা। মানুষের জয় হোক।
"এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
মিছিলের সব হাত
কন্ঠ
পা এক নয় ।
সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,
কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার ।
কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার
শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে
অবশ্য আসতে হয় মাঝে মধ্যে
অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,
কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয় প্রলোভনে
কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয় ।
যদি কেউ ভালোবেসে খুনী হতে চান
তাই হয়ে যান
উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায় ।
এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় ।"
---
এই পোস্টটি শাহবাগে বসে যারা অক্লান্তভাবে সাইবার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, সেইসব বীর সেনানীদেরকে উৎসর্গিত।
ঠিক বলসেন ভাই! আমাদের প্রানের আন্দোলনে সবাই প্রান মিলাই!
ইয়ে রনি ভাই, আসেন আজকেও প্রাণ মিলাই, প্রতিদিন প্রাণ মিলাই।
একদম...
ঠিক। তাই না টুটুল ভাই?
নিভৃতদা'। আছেন কেমন?
উচ্ছল ভাই। শাহবাগে আসছেন তো নাকি?
সময় পেলেই চলে যাচ্ছি, আজ যাব অফিস এরপর।
আলুপট্টি রাজশাহীতে . প্রজন্মের জাগরণের আন্দোলন নিয়ে পোস্ট বলে কিছু বললাম না। প্রতিবাদ সমাবেশ করে ফিরছি। স্লোগান দেয়ার মাঝে অন্য রকম এক্টা আনন্দ অন্য রকম একটা অনুভুতি তা আজ টের পেলাম।
ওই যে, উত্তরেই বের হলো জায়গাটা শেষতক যেমনটি ধারণা করেছিলাম। আমাদের দেশে এমন অনেক পট্টি আছে, ডালপট্টি, হাড্ডিপট্টি, গালাপট্টি কত যে পট্টি!
যাই হোক, রাসেল ভাই; আপনারে মিস করতেছিলাম। ভাবতেছিলাম, কি করতেসেন এই সময়ে? কেমনে পারতেসেন এইসব থেকে দূরে থাকতে। তবে সমাবেশ করে বেড়াচ্ছেন জেনে এখন একটু ভালো লাগলো। আপনারা কোথায় সমাবেশ করলেন, কি সমাবেশ করলেন; সেগুলা একটু আমাদের কাছে শেয়ার করেন না ভাই। আমরা দেখি, পড়ি, জানি, প্রাণ জুড়াই
বুকের ভেতর জ্বলছে আগুন
সারা বাংলায় ছড়িয়ে দাও
শাহবাগে জ্বলছে আগুন
সারা বাংলায় ছড়িয়ে দাও
বুক, মাথা, পিঠ, পেট সব জায়গায় আগুন জ্বলতেছে। ফ্যান্টান্টিক ফোরের আগুনওয়ালা মনে হচ্ছে নিজেকে ইদানীং। আপনে কি স্লোগানকন্যা ছিলেন নাকি? অনেক স্লোগান শেয়ার করতেসেন দেখা যায়
শিরোনামহীন একটা ওভাররেটেড দল, ভাল লাগে নাই কখনোই
আমার কাছে ওদেরকে কখনো ওভাররেটেড মনে হয় নাই। আমার কাছে সমস্যা যেটা লাগছে সেটা হচ্ছে দিগন্ত টিভিতে ওদের নিয়মিত অনুষ্ঠান করা। এ ব্যপারে ভক্তদের কাছ থেকে ওরা অনেক বাজে ফিডব্যাক পেয়েছে। তাও কর্ণপাত করে নাই। এখন যদিও ঘোষনা দিয়েছে আর কোনো জামায়াতি টিভিতে অনুষ্ঠান করবে না, তারপরেও প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত ওদের রেহাই নাই।
টিপসই কমেন্টটা আমার পছন্দ না ভাইজান। এইটার চাইতে বরং কিছু না লিখলেও আমি আপনের অ্যাটেনডেন্স কাউন্ট করুম। আর ক্লাস ফাঁকি দিলে তো আছে বিশেষ সুবিধা। আমি নিজে ক্লাস ফাঁকি দিতাম এবং সকল শ্রেণীর ফাঁকিবাজদের প্রতি এখনো অন্তরে ভালোবাসা ধারণ করি।
কিন্তু টিপসই না, প্লীজ।
আমি কি লেখা নিয়া কম কথা কই ভাই?
সাতসকালে এত্ত বড় লেকচাল শুনাই দিলেন, মনটাই খারাপ হইয়া গেছে।
অনেক লেখাই থাকে
যাতে আলাদা করে কিছু বলার থাকেনা
কিন্তু লেখার কনটেন্টের সাথে আমি একমত
অথবা লেখার মূলভাবের সাথে আমি সহমত।
সে ক্ষেত্রে টিপসইটাই কি যথাযথ মন্তব্য নয়?
আমি প্রতিমন্তব্যটা হালকাচালেই করছি। করার সময় মনে হয় নাই, সেটা লেকচার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আপনের কাছে যেহেতু লেকচার মনে হচ্ছে, তাহলেতো নিজের ভুল স্বীকার করা ছাড়া উপায় নাই। দুঃখিত ভাইজান।
তবে টিপসই আপনের কাছে যথাযথ মনে হইলেও আমার কাছে না।
ঠিকাছে,
আপনেরে আর টিপসই দিমু না।
মন ভাল থাকুক, সবসময়।
কত কিছু চলছে কতো প্রোপাগান্ডা তার ভিতর থেকেই রুখতে হবে সব কিছু!
আর রুখতে হলে ভিতরটাতে থাকতেই হবে। নো ওয়ে।
চলছে মিছিল থামবেনা ফাঁসি ছাড়া মানবনা।
লড়াই হলে লড়তে হবে
এ লড়াইয়ে জিততে হবে।
যুদ্বে এসো বীর জোয়ান যায় যদি যাক প্রান।
মন্তব্য করুন