হে সহযোদ্ধা, এবার দেখা হবে রাজপথে, শুধুই রাজপথে
জীবনটা সবসময় সুন্দর নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে এত বেশি সুন্দর যে, তখন আবার মনে হয় এটা কি কোনো স্বপ্ন? প্রজন্ম চত্বরে স্বপ্নবান তরুণেরা এক অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। যে বিপ্লবের আগুন আজ দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়লো, এটা সমাজকে পরিবর্তন না করা পর্যন্ত নিভবে না। আমি হলফ করে বলতে পারি। সামনে আসছে নতুন দিন।
আজ ৮ম দিন চলছে। বিপ্লবী জনতাকে হাত করার বহু চেষ্টা এরই মধ্যে হয়েছে। চেষ্টা হয়েছে চোখ রাঙিয়ে তাদের ঘরে পাঠানোর। শিবির সপরিবারে হত্যার হুমকি দিয়েছে লাকীকে। ছাত্রলীগ পর্যন্ত সুযোগ বুঝে হাত উঠিয়েছে তার গাএ। এত কিছুর করেও লাকীর কণ্ঠের আগুনকে নেভানো যায় নি। নেভানো যায় নি প্রজন্মের সৈনিকদের বুকের আগুন। এ আগুন কোনো কিছু না জ্বালিয়েই নিভে যাবে, এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
মিসরের বিপ্লবের এক বছর পার না হতেই আবার সেখানে গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যার একমাত্র কারণ, মিসরের বিপ্লবীরা আপস করেছিলো সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে। আমরা সেটা করি নি। আমাদের এ বিপ্লব আমাদেকে কেবল এক নতুন পথের সন্ধানই দেবে। কোনো পিছিয়ে যাবার শঙ্কা জাগাবে না। যদিও আমাদের এখানে একজন চারণ রাষ্ট্রদূত আছেন ওই দেশটির। ড্যান ডব্লিউ মজীনা। তার সম্পর্কে আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। তার ছায়াটিকেও প্রজন্ম চত্বর মাড়াতে দেয়া চলবে না।
কাল সন্ধ্যার পর যখন ওখানে আমি হাঁটছিলাম, তখন এক অদ্ভুত শিরশিরে অনুভূতিতে বারবার কেঁপে উঠতে হচ্ছিলো। আসলেই কি এটা ঘটছে? আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি? আমি কিএকটা বিপ্লবের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি? এতখানি সৌভাগ্য কি আমার জন্য সত্যি সত্যি ওস্তাদ বরাদ্দ করে রেখেছিলেন? আমি মুহূর্তের জন্য অনিশ্চয়তার দোলাচলে পড়ে যাই। যা কিছু ঘটছে, সবই কোনো গভীর রাতের স্বপ্ন নয়তো?
কিন্তু এক সেকেন্ডের মধ্যে আবার কানে এসে প্রবেশ করতে শুরু করে তীব্র স্টেনগানের আওয়াজ। পাবলিক লাইব্রেরী গেটে তখন চলছে মুক্তিযুদ্ধে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। আমি হঠাতই সংবিত ফিরে পাই এবং বুঝতে পারি, আমি কোনো স্বপ্নের মধ্যে নেই। এটাই ঘটছে আমার জীবনে। হঠাৎ করে নিজের ক্ষুদ্র মানবচজন্মকে স্বার্থক হয়ে যেতে দেখি চোখের সামনে। এখন মরে গেলেও একফোঁটা আফসোস থাকবে না, এই কথাটা কি কেউ জানে?
চারুকলা অনুষদের সামনে একটা বিশাল প্রতিবাদী চিত্র টাঙিয়ে দেয়া হলো। চারুকলা মানে আমাদের সবচেয়ে বড় আর্ট ইনস্টিটিউট। এদের আঁকানো ছবি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। বিশ্বের মানুষ আমাদের মেধা, মনন সম্পর্কে ধারণা নেবে। চিত্রটাতে আধুনিকতার ছোঁয়া দেখে আমার মনে হলো, বিশ্বের মানুষের কাছে ভুল কোনো ধারণা যাচ্ছে না। নতুন দিনের পৃথিবীতে এক যোগ্য নতুন দেশ হিসাবে নিজেদের জায়গা করে নিতে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বিপ্লব একে একে পৃথিবীর প্রতিটি আনাচে-কানাচেই গড়ে উঠবে। আরবের পর এলো বাংলাদেশে। এখান থেকে হয়তো ছড়িয়ে পড়বে দক্ষিণ এশিয়ায়। কিন্তু নতুন পৃথিবীর এই পথচলায়, এখনো শতভাগ সফল বিপ্লব কোনো দেশে হয় নাই। বিপ্লব কিভাবে সফল করতে হয়, বিশ্ববাসী তা এখনো শিখছে। সেই শিক্ষা কার্যক্রমের শুরুর দিকে বাংলাদেশের সিরিয়াল পড়ে গেছে। এর মানে কি? বাংলাদেশ কি নতুন পৃথিবীর নেতৃত্ব দেবে নাকি?
নাহ্ আমরা বাংলাদেশিরা বড় আবেগপ্রবণ। স্বপ্নের জাল একবার যদি বিছিয়ে দিই, তো সেটা পুরো সমুদ্র গ্রাস করে নিতে চায়। এইবেলা বরং দিবাস্বপ্ন দেখা বন্ধ করে কাজে যাই। সবাইকে শুভেচ্ছা। নতুন দিনের যোদ্ধা্রা, সবাইকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে জানাই ভালোবাসা। এই বিপ্লব শেষে নতুন দেশ গড়ার কাজে আমাদের অনেক যোদ্ধা লাগবে। তাদের প্রস্তুতি নেয়ার সময় হয়ে গেছে। কবীর সুমন এ পর্যন্ত দু'টি গান আমাদের জন্য লিখে ফেলেছেন। উনার আসলে এখন প্রজন্ম চত্বরে চলে আসা দরকার। এসে গিটারে বাজিয়ে গান শোনানো দরকার।
এই লেখাটা লিখছি যখন তখন কাওরান বাজারে শিবির তান্ডব শুরু করে দিয়েছে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, সবকিছুর মধ্য দিয়ে আবার মহান একাত্তর ফিরে আসছে। দরজায় কড়া নাড়ছে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ। হে সহযোদ্ধা, এবার দেখা হবে রাজপথে, শুধুই রাজপথে।
---
দেখা হবে রাজপথে... দেখা হবে যুদ্ধের ময়দানে...
প্রত্যেকটা মানুষের জন্য শ্রদ্ধা, ভালোবাসা। প্রত্যেকের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ, জরুরী। ভালোবাসা আর আবেগ নিয়েই আমরা জড়ো হই, জড়ো হব, হাতে হাত রাখব।
লড়াই চলছে চলবে!
সেইদিন ঠিক সেই মুহূর্তে আমি আর শান্ত ওখানে ছিলাম ! শিরশিরে অনুভূতিটা আসলেই অন্যরকম।
বার দেখা হবে রাজপথে, শুধুই রাজপথে।
বার দেখা হবে রাজপথে, শুধুই রাজপথে
এবার দেখা হবে রাজপথে, শুধুই রাজপথ
এবার দেখা হবে রাজপথে, শুধুই রাজপথে।
দেখা হবে রাজপথে... দেখা হবে যুদ্ধের ময়দানে...
মন্তব্য করুন