প্রথম প্রেম, প্রথম স্পর্শ্ব প্রথম চুম্বন
''একটি কথার দ্বিধা থরথর চুড়ায় সাত সাতটি অমরাবতীর সুখ '' মুহুর্তের আগে ভীষণ অস্থির মুহুর্তগুলো নিজের কাছেই লুকিয়ে রাখার সময়। সুমনের একটা গান ছিলো প্রথম সব কিছু
" প্রথম প্রেমে পরার পরে সবাই পস্তায়,
ক্লাশ পালিয়ে হন্যে হয়ে ঘুরেছি রাস্তায়"
নিয়মিত দেখছি যে মেয়েটাকে তাকে হঠাৎ কোনো একদিন একটু আলাদা করে দেখা, তার চোখ, তার হাসি, তার চোখের সামনে নুয়ে থাকা এক গুচ্ছ চুলে আলগোছে সরিয়ে দেওয়ার দৃশ্য আর কানের পাশে কুন্ডলিত চুলের ভেতরে নিজের অসহায় আত্মসমর্পনের মুহূর্ত। আমি তাকে, শুধু তাকেই ভালোবাসি, তার কাছে যেতে চাই, তাকে নিজের অনুভব জানাতে চাই, এই অনুভুতি প্রকাশের আগে নিজের ভেতরে এক ধরণের দ্বিধাদ্বন্দ্ব অস্থিরতা থাকে।
তারপর শুধুই করুণ প্রতীক্ষার সময়। আমি জানি বিকেলে সে হেঁটে আসবে রাস্তা দিয়ে, আমি চলতি পথেই বেখেয়ালে তাকে দেখবো যদিও তাকে দেখার জন্যেই আমি আমি নিয়ম মেনে রাস্তা পাহারা দিচ্ছি, নুয়ে পরা সূর্যের নীচে দাঁড়িয়ে আছি ৩০ মিনিট, তারপরও আমার চোখে এক ধরণের স্বেচ্ছা উদাসীনতা থাকবে। আমি তার চোখে চোখ পরার আগেই চোখ নামিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিবো, হয়তো মুখটা আড়াল করে একটা সিগারেট ধরাবো, তারপর পরের দিন বিকেলের অপেক্ষা ছাড়া সারা সন্ধ্যা আমার আর কিছুই করার নেই।
তার ক্রমশ দূরে সরে যাওয়া অবয়ব দেখে মাথার ভেতরে এক ধরণের ভাবনাচক্র তৈরি হবে "বলে ফেললেই হয়, না এখনই বলাটা ঠিক হবে না।" এক দৌড়ে দিয়ে যা থাকে কপালে বলেই ফেলি কিন্তু পা দুটো তখন গাছের মতো রাস্তায় শেকড় মেলেছে।
এভাবে সপ্তাহ আর মাস কেটে যাওয়ার পর প্রিয় বন্ধুকে শহরের অন্য প্রান্তে টেনে নিয়ে গিয়ে আরও দূরে নির্জন মাঠে গিয়ে বলা সে কথা যা আমি নিজেই ভাবনায় লুকিয়ে রাখি।
এক ঝলক ভেজা বাতাস অতর্কিতে শরীর স্পর্শ্ব করলে বুঝি আকাশ জুড়ে মেঘ জমেছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই দেখি আকাশের উঠানে কালো মেঘ, থেকে থেকে মাথার ভেতরে কিন্নরী স্বরে কেউ গায় , তবে সম্পূর্ণ গানটা আমার কখনও ভালো লাগে না, হঠাৎ হঠাৎ একটা দুটো অংশ মনে পরে।
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়--
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার--
জগতে কেহ যেন নাহি আর॥
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব--
যে কথা এ জীবনে রহিয়া গেল মনে
সে কথা আজি যেন বলা যায়--
এমন ঘনঘোর বরিষায়
গানের অন্য অংশগুলো প্রায়শই অপ্রয়োজনীয় মনে হয়, না লিখলেও হতো। তাই যখনই গানটা একটা মেয়ের সুরেলা কণ্ঠে মাথার ভেতরে বাজতে শুনি তখন এই অংশগুলোই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে গায় সে মেয়ে।
এভাবেই একদিন প্রায় মরিয়া হয়েই ঘোরের ভেতরে প্রথম ভালোবাসার স্বীকারোক্তি এবং যথারীতি প্রত্যাখ্যান। আমি তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাস্তায় নামি। আমার অসংখ্য দ্বিধার মুহুর্ত আর এই করুণ অপেক্ষার প্রহর শেষ, প্রত্যাশা পুরণ না হওয়ার কিছুটা কষ্ট থাকলেও এই অসহনীয় গোপন ভালোবাসার যন্ত্রনা থেকে মাত্র একটা মুহুর্তে নির্বান লাভের স্বস্তিটুকু ভীষণ উপভোগ্য লাগে তখন। স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান না করে যদি আরও কিছুদিন অপেক্ষায় রাখতো তবে সেই সময়টুকুতে কি ভীষণ অস্থিরতায় কাটাতাম, আর ভেতরে কত কত কল্পনার ডালপালা মেলতাম, সেই অস্পষ্ট অনিশ্চিত মুহূর্তগুলোতে বসবাস করতে হলো না ভেবে নিজের ভেতর থেকে অবলীলায় আন্তরিক ধন্যবাদ বের হয়ে আসলো।
প্রথম প্রেমের পর প্রথম স্পর্শের শিহরণ আর প্রথম চুম্বনের বিহ্বলতা। সেসব অনুভব আর কখনও ফিরে আসবে না জীবনে। সেভাবে আর কখনও অনুভব করবো না, এসব অনুভব শুধু একবারই আসে। মানুষ প্রথম প্রেমের পর আবারও প্রেমে পরে, কাউকে বলে ভালোবাসি কিন্তু সে বলার ভেতরে প্রথম প্রেমের স্বীকারোক্তির অনুভব থাকে না। বুকের ভেতরে একটা ভারি পাথর দীর্ঘদিন বয়ে নিয়ে গিয়ে একদিন সে ভার লাঘবের আনন্দ পরবর্তী কোনো প্রেমেই পাওয়া যায় না।
ভালোবেসে কারো হাত প্রথম ধরতে চাওয়া, সন্তর্পনে হাত বাড়িয়ে আঙ্গুল ছুঁয়ে দেওয়ার মুহুর্তগুলোর পরে কোনো একদিন নির্জনে লটারির প্রথম পুরস্কারের মতো একটা হাত, তার সব কয়টা আঙ্গুল নিজের হাতে খুঁজে পাওয়ার শিহরণ ফিরে পাওয়া যায় না। তবে প্রথম প্রেমের স্বীকারোক্তি, প্রথম স্পর্শের শিহরণের একটা ধারাবাহিকতা আছে। কিন্তু প্রথম চুম্বনের আকস্মিকতা সে বিহ্বল মুহূর্তকে কখনই প্রকাশ করতে পারে না।
প্রথম চুম্বনের কোনো প্রস্তুতি থাকে না, ঘটে যাবে এমন প্রত্যাশাও থাকে না। দীর্ঘ দিন পরে যেটুকু স্মৃতিতে আছে, একটা অর্ধস্ফুরিত অধোরোষ্ঠ, মুক্তোর মতো একটা দাঁত, তার দু চোখ বন্ধ , সময় হঠাৎ করেই স্থির, প্রতিটা দৃশ্য সিনেমার স্লোমোশন দৃশ্যের মতো ঘটে যাচ্ছে, অনিবার্য অতর্কিত চুম্বন। অনুভুতিবিহীন একটা মুহুর্ত যখন হৃদস্পন্দন বন্ধ। ঠোঁটের নরম স্পর্শ্বের পর ঠোঁট উঠিয়ে নেওয়ার আগে ধীরে ধীরে অসার অনুভুতিগুলো সচল হয়ে ওঠে। লিপ স্টিকের স্বাদ লেগে থাকে ঠোঁটে, তারপর চুলের তেল আর শ্যাম্পুর সাথে জামায় লাগানো সেন্টের গন্ধ নাকে আসে। তারও অনেক পরে রাস্তায় হকারের চিৎকার আর পাখীর শিসের শব্দগুলো কানে আসে, অবশ্য তখন চুলের ভেতরে নাক ডুবিয়ে গন্ধ নেওয়া শেষে, বুকের কাছে মুঠ করে ধরা হাতটুকুতে হাত রেখে দ্বিতীয় চুম্বনের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়।
চমকপ্রদ বর্ণনা।
অনেক দিন পর এতটা
প্রেমময় কোন লেখা পড়লাম।
অনুভূতিটুকু অনুভব করা যায় পড়লেই।
আপাতত প্রিয় তে রেখে দিলাম,
ভাগ্যে থাকলে মিলিয়ে দেখা যাবে!
হুম ! এমন বর্ননা হয়ত অনেক মানুষের অনেক কষ্টের স্মৃতি মনে করিয়ে দিবে
ভাল লাগলো।
সবার অনুভূতিগুলো কি একই রকম হয় ...
অনেক দিন পর
রাসেল্ভাইয়ের এই ধাচেঁর লেখা আর পড়ি নাই ... দারুন
সব প্রথমটার অনুভূতিতো অন্যরকমের, আর মনেও থাকে তেমন করে, কিন্তু যে প্রথমটা ধরেন মেকি ছিলো, শঠতাতে পরিপূর্ন, সেটা কিভাবে স্মরনে আসে?
আমি দেখি একা নোয়াখালীর হুজুর না আরো আছে
সেটা স্মরনে আসে বিষ নিয়ে (
ভাল লাগলো
মন্তব্য করুন