বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি
গৌতম গতকাল লিখেছে "জগতের কোনো বিষয়ে তোমার কোনো ক্ষোভ আছে বন্ধু? এসো, তাহলে, আমাকে মেরে যাও; পুড়িয়ে দিয়ে যাও আমার ঘরখানি। আমরা জ্বালানি শুধু তোমার উল্লাসের আগুনের, বাকি পরিচয়টুকু না হয় চিতার আগুনেই ধ্বংস হোক!"
৬ বছরের বেশী সময় ধরে গৌতমকে আমি চিনি। নিজস্ব উদ্যোগে বাংলাদেশের শিক্ষা বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট দীর্ঘ সময় পরিচালনা করেছে। বাংলাদেশের এই জোড়াতালি দেওয়া শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারে করনীয় বিষয়গুলো নিয়ে ভেবেছে, লিখছে, গবেষণা করছে ও। দীর্ঘ দিনের পরিচিত একজন মানুষ যখন হুট করে এমন একটা কিছু লিখে, সেখানে লুকিয়ে থাকা খেদ আর শ্লেষ আমাকে আহত করে।
আমাদের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী সমাজে "বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিবোধ" এর ভ্রান্তিবিলাস আমাদের গণমাধ্যমে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবেদন প্রকাশে অন্তরায় ছিলো। নিতান্ত অবহেলায় সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর সংবাদ প্রকাশিত হতো ভেতরের পাতায়।
"বাংলার হিন্দু বাংলার মুসলিম বাংলার বৌদ্ধ বাংলার খ্রীষ্টান- আমরা সবাই বাঙালী" শ্লোগানটির ভেতরে বাঙালী শব্দটার যে তেজ স্বাধীনতাপূর্ববর্তী সময়ে ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালী শব্দের সেই তেজ ক্ষয়ে গেছে। আমরা ক্রমাগত বাংলাভাষী বাংলাদেশী মুসলিম হয়ে উঠেছি।
ভেতরের পাতায় এক কলামে অবহেলার প্রকাশিত এইসব সাম্প্রদায়িক হামলা এবং সংখ্যালঘুর সম্পত্তি দখলের সর্বদলীয় উৎসবের খবরগুলো আমাদের চোখের আড়ালে অমোচনীয় ক্ষতিকর ক্ষতের মতো পরিপুষ্ট হয়েছে। যে ক্ষত আমরা অবহেলা করেছি, লুকাতে চেয়েছি সেই দগদগে ক্ষত যখন মারাত্মক সহিংসতার স্পষ্ট হলো এইসব সাম্প্রদায়িক হামলার খবরগুলোর গণমাধ্যমের শেষের পাতায় উঠে আসলো। সেখান থেকে সাম্প্রদায়িক হামলার খবরগুলো দৈনিকের প্রথম পাতায় স্থান করে নিয়েছে। সাপ্তাহিক পত্রিকায় সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।
সংখ্যালঘু নিপীড়নের সংবাদ প্রথম পাতার সংবাদ হয়ে ওঠা রাষ্ট্র হিশেবে আমাদের জন্যে গৌরবোজ্জ্বল কোনো অর্জন নয় বরং দীর্ঘ দিনের অবহেলায় আমরা যে সাম্প্রদায়িকতার চাষাবাদ করেছি সেটা সমাজের ভেতরে যে ক্ষত তৈরি করেছে অন্য কোনো উপায়ে তা আর আড়াল করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের শোভন পোশাক আর শোভন বাক্য সেসব ক্ষত আড়াল করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা হঠাৎ করে উপলব্ধি করলাম এই দেশে প্রায় পরিকল্পিত ভাবেই সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপরে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।
তথাকথিত আলোকিত মানুষদের প্রতিক্রিয়া দেখলে মনে হয় এটা গত ২ বছরে হুট করে ঘটে যাওয়া ঘটনা, এর আগে এটার কোনো অস্তিত্বই ছিলো না। তবে বাস্তবতা হলো স্বাধীনতার পর থেকেই এই দেশে পরিকল্পিত উপায়েই সংখ্যালঘু পীড়নের রাজনীতি চলছে।
বাংলাদেশী বাংলা ভাষী মুসলমানদের বাইরে অন্য সবাই যেখানে "অপর" হিশেবে পরিগণিত হচ্ছে । রাষ্ট্র ধর্ম হিশেবে ইসলামকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর হাইকোর্টে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষণার বিরুদ্ধে একটি রীট দায়ের করা হয়েছিলো। গত ২৫ বছরে সেই রীটের শুনানী হয় নি। রাষ্ট্রের ধর্ম পরিচয় থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ কি না আমাদের বুদ্ধিজীবীরা সে সংশয় কাটিয়ে উঠতে পারেন নি।
রাষ্ট্র ধর্মীয় রাজনীতির প্রসারে ভূমিকা রেখেছে, ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ক্ষেত্র নির্মাণ করেছে, এই ধর্মউন্মাদনা এখন এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে আমাদের যে কোনো সৎ বিচারকই এখন এই রীটের শুনানী করতে বিব্রত বোধ করবেন। সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে একধরণের রাজনৈতিক সমঝোতার অস্তিত্ব থাকায় আদালত যতটা সহজে ৫ম এবং ৭ম সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়েছিলো, রাষ্ট্র ধর্ম বিষয়ে তেমনই সমঝোতার অস্তিত্ব থাকায় ৮ম সংশোধনীর বিরুদ্ধে কোনো রায় ঘোষণা করার মতো প্রেক্ষাপট বাংলাদেশে নেই।
১০বছরের তীব্র পাকিস্তান আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে উপমহাদেশে দুটো পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিলো। যদিও ১০০০ মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট জনগোষ্ঠীর ভেতরে কোনো ধরণের সাংস্কৃতিক ঐক্যবদ্ধতা ছিলো না, ধর্মীয় সংস্কৃতির মতো আরোপিত একটি জাতীয়তাবোধকে ঐক্যবদ্ধতার সূত্র হিশেবে ধরে নিয়ে হিন্দু এবং মুসলিম জাতীর জন্যে আলাদা আলাদা রাষ্ট্রের পত্তন করা হয়েছিলো এখানে। মহানুভব ব্রিটিশ সরকার "অপশন" দিয়েছিলেন, সেখানে এই ভূখন্ডের বাসিন্দাদের নিজেদের পছন্দমতো রাষ্ট্র বেছে নেওয়ার সুযোগ ছিলো। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহৎ দেশত্যাগের রক্তাক্ত ইতিহাস লেখা হয়েছিলো উপমহাদেশে। রক্তের দাগে রাষ্ট্রের সীমানা চিহ্নিত হয়েছে, প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে দেশভাগ জনিত বিভ্রান্তি আর সহিংসতায়।
পাকিস্তান হওয়ার পরপরই শিক্ষিত হিন্দুদের ব্যপক দেশত্যাগ পূর্ব বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থাকে কিছুটা পর্যুদস্ত করেছিলো। অধিকাংশ স্কুলের ভালো ভালো শিক্ষকেরা ভারতে চলে যাওয়ার পরের আঘাতটুকু আমরা দীর্ঘ সময়ে কাটিয়ে উঠেছি এমনটা বলা যাবে না। সাম্যবাদী দলগুলোর দীর্ঘ দিনের সক্রিয় কর্মী ও নেতারা এবং একই সাথে কংগ্রেসের দীর্ঘ দিনের নেতারা পূর্ব বাংলা ত্যাগ করায় আদর্শিক রাজনীতিতে এক ধরণের শূণ্যতা তৈরি হয়েছিলো। সুহওয়ার্দি আবুল হাশেমের মতো নেতাদের কুটচালে পেছনে ঠেলে দিয়ে নবাব পরিবারের পোষ্য আর অনুগত রাজনীতিবিদরা মুসলীম লীগের নেতৃত্ব দখল করার প্রতিক্রিয়ায় মুসলিম আওয়ামী লীগ গঠিত হয়েছিলো। গণতান্ত্রিক রাজনীতির শূণ্যতা খুব দ্রুতই পূর্ণ হয়ে গেলেও কম্যুনিস্ট নেতৃত্বের শূণ্যতা দূর হয় নি।
ক্ষমতাসীন মুসলীম লীগ এবং পরবর্তীতে সামরিক শাসকেরা সাম্প্রদায়িক হামলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন, এ জি স্টক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপিকা ছিলেন, তিনি তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন তার এক ছাত্রের কথা। একটি ট্রেনের বগির সবগুলো হিন্দুকে জবাইয়ের দৃশ্য দেখে যে ছাত্র মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলো। তবে পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক হামলা উস্কানিগুলো এই দেশের শিক্ষিত তরুণেরা সংঘবদ্ধ মোকাবেলা করেছিলো। তারাই মহল্লায় মহল্লায় সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে বিগ্রেড তৈরি করেছিলো, প্রতিবেশী হিন্দুদের বসতভিটা এবং জান মালের নিরাপত্তা প্রদান করেছে তারা। ১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের সময় আমাদের বর্তমানের অসাম্প্রদায়িক নায়কেরা অনেকেই টেলিভিশন-বেতারের জন্যে সাম্প্রদায়িক উস্কানী সম্বলিত প্রচার নাটিকা লিখেছেন, সে সময়েই শত্রু সম্পত্তি আইন অনুমোদিত হয়েছে এবং দেশত্যাগী হিন্দুদের বসতভিটা আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের মচ্ছব শুরু হয়েছে। কমতে কমতে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রতি ৫ জনের ১ জন ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী, এখন সংখ্যাটা প্রতি ১০ জনে ১ জনে নেমে এসেছে।
ধর্মীয় বৈষম্যহীন, অর্থনৈতিক বঞ্চনাবিহীন যে বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মাণের প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছিলো মুজিবনগর সরকারের ঘোষণায় আমাদের আদম শুমারীর প্রতিবেদন নিশ্চিত করেছে আমরা তেমন বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মাণে ব্যর্থ হয়েছি। ২০০৮ সালে প্রকাশিত আবুল বারাকাতের Deprivation of Hindu Minority in Bangladesh: Living with Vested Property বইটির তথ্যে দেখা যাচ্ছে সংখ্যালঘুর সম্পত্তি দখলের উৎসবে আমাদের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর কেউই পিছিয়ে নেই, আক্রান্তরা সাক্ষাৎকারে জানাচ্ছেন কিভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের সম্পত্তির দখল ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে, কিভাবে পরিবারের নারীদের সম্মান রক্ষা এবং শিশুদের জীবন রক্ষায় তারা বাধ্য হচ্ছেন দেশত্যাগ করতে। শুধুমাত্র এই দেশের হিন্দু সম্প্রদায় নয় বরং সংখ্যালঘু আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসতভিটা দখল করা হচ্ছে। অন্যান্য আদর্শে তারা পৃথক হলেও সংখ্যালঘুর সম্পত্তি দখলে বাংলাদেশের মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে এক ধরণের অলিখিত সন্ধি আছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আওয়ামী লীগের " ভোট ব্যাংক" হিশেবে বিবেচনা করা হয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সময় এই " ভোট ব্যাংক" রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে ওঠে। রাজনীতির আওয়ামী বিরোধী অংশ সংখ্যালঘুদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোট প্রদান থেকে বিরত রাখতে চায়, ফলে তাদের উপরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নিপীড়ন চলে। অন্য দিকে আওয়ামী লীগ যেহেতু এই নিপীড়নের ভীতির ভিত্তিতেই "ভোট ব্যাংক"এর নিশর্ত সমর্থন পায় তাই তারাও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় বাড়তি কোনো ঝামেলা করতে অনাগ্রহী। ভোটের সময়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের এক ধরণের স্বেচ্ছা শিথিলতা দেখা যায়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর থেকেই রাজনীতিতে সংখ্যালঘু নিপীড়নের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। পাকিস্তানী অবৈধ সামরিক শাসকেরা যেমন শাসনতান্ত্রিক ব্যর্থতা আড়াল করলে রাষ্ট্রের মদতে সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটাতেন, গত ২ বছরে এমন ঘটনাই ঘটেছে। টাঙ্গাইলে ১৫০ বছরের মন্দির জ্বালিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মন্দিরে আর সংখ্যালঘুদের বসতভিটা আক্রমন ও আগুণ জ্বালানোর ঘটনায় আওয়ামী লীগের কতিপয় উৎসাহী কর্মী যুক্ত ছিলো স্থানীয় ব্যক্তিরা এমন অভিযোগ করেছেন।
যেহেতু সংখ্যালঘুদের উপরে শুধুমাত্র জঙ্গীবাদী ৪ দলীয় জোটই সাম্প্রদায়িক হামলা চালায় তাই আওয়ামী লীগ নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনে এই হামলা চালিয়েছে না কি এর পেছনে সংখ্যালঘুর সম্পত্তি দখলের লিপ্সা ছিলো স্পষ্ট বলা কঠিন।
রামুতে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিলো, একই ভাবে পাবনার সাঁথিয়ায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নেতৃত্ব দিয়েছে। হিন্দুদের বসতভিটায় অগুণ জ্বালাতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছে যুবলীগের কর্মী, তাদের সাজাও হয়েছে।
নির্বাচনের পরপর পুনরায় দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ভোট দেওয়ার অভিযোগে সংখ্যালঘুদের উপরে পরিকল্পিত হামলা চালানো হচ্ছে। আক্রান্তরা অভিযোগ করেছে হামলার সম্ভবনা জানা মাত্রই তারা স্থানীয় প্রশাসন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের জানিয়েছেন, নিরাপত্তা চেয়েছেন কিন্তু আওয়ামী লীগ কিংবা প্রশাসনের কেউই এগিয়ে আসেন নি। অবশ্য হামলা ঘটে যাওয়ার পর খুব দ্রুতই তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ত্রান বিতরণ করেছেন।
আমরা বাংলার মুসলিম, বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ বাংলার খ্রীষ্টান সবাই বাঙালী কিন্তু আমাদের ধর্মীয় সংস্কৃতিতে কিছুটা ভিন্নতা আছে। রাষ্ট্র ধর্মের স্বীকৃতি পাওয়া সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মবিশ্বাস ঈমাণ রক্ষায় রাষ্ট্র যতটা তৎপর অন্যান্য ধর্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র ততটা তৎপর নন। একজন মুসলমানের ধর্মবোধ আক্রান্ত হলে রাষ্ট্র যতদ্রুত সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে ছুটে আসে, হিন্দু, খ্রীষ্টান বৌদ্ধের ধর্মবোধ আক্রান্ত হলে রাষ্ট্র ততটা তৎপরতা দেখায় না। ময়দানে আলোকসজ্জ্বা করে, মাইক ঝুলিয়ে ওয়াজ মেহফিলের নামে ৩ দিন-রাত টানা সংখ্যালঘুদের ধর্ম বিষয়ে কুৎসা রটানো হলেও ওয়াজ মেহফিলের ওলামা মাশায়েখদের বিরুদ্ধে কেউ ধর্মীয় সম্প্রীতিতে আঘাত হানার অভিযোগ উত্থাপন করে না।
দেব দেবীর প্রেমলীলার নামে আদিরসের হাঁড়ি উলটে দেওয়া বাংলাদেশে পর্ণোগ্রাফি নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র বাহাত্তুরে বুড়োদের ঈমাণ দন্ড বেপর্দা নারী দেখলে দন্ডায়মান হয়, তারা বিভিন্ন ফলের সাথে নারী দেহের তুলনা করেন, সেসব কিভাবে খোলা অবস্থায় কলুষিত হয়, কিভাবে সেসবতত্ত্বাবধান করা হবে, কিভাবে বেপর্দা নারীদের উন্মুক্ত শরীরে চাবুকের আঘাত করা হবে, কিভাবে আগুণের ছ্যাঁকা দেওয়া হবে সেই রগরগের বর্ননা দিতে দিতে ঘোর শীতের রাতে ঘেমে যান। এমন প্রকাশ্য অশ্লীলতার আয়োজন নিয়ে, সাম্প্রদায়িক হামলার উস্কানি নিয়ে প্রশাসনের বিন্দুমাত্র মাথা ব্যাথা নেই।
মন্দির ভাঙা, দেবমুর্তিতে আগুণ জ্বালানোর প্রেক্ষাপট তৈরি হয় এইসব অনুমোদিত ওয়াজ মেহফিলে। ক্বাওমী মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রনে রাষ্ট্রের ব্যক্ত অনীহায় সেসব সাম্প্রদায়িক হামলার সৈনিক প্রশিক্ষিত হয়। ভোটের আগের রাতে হিন্দু মহল্লায় ভোটের আগুণ জ্বলে উঠে, ভোটের পরপর পরাজয়ের ক্ষোভ মেটাতে মশাল হাতে সংখ্যালঘু মহল্লায় হানা দেয় বিক্ষুব্ধ মানুষ। সংখ্যালঘুর বসত ভিটা পুড়ে, পুরুষেরা শরীরে, নারীরা যোনীতে আর শিশুরা মনের ভেতরে ক্ষত নিয়ে বেড়ে ওঠে আমাদের চোখের সামনে।
প্রশাসন তার নিরপেক্ষ নির্বিকারত্বে আক্রান্তের আবেদন উপেক্ষা করে যায়, পুড়ে যাওয়া দেবালয়ের আগুণ তাদের নজরে আসে না। আমাদের এই পরিস্থিতি পরিবর্তনে কাজ করতে হবে। আক্রান্তদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক পদাবনতি দিয়ে সেখানেই পুনরায় পোস্টিং দিতে হবে, হামলাকারীদের দ্রুত আটক করে তাদের বিচারের উদ্যোগ নিতে হবে।
বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিতে বিএনপি জামায়াত আওয়ামী লীগের স্পষ্ট অস্পষ্ট নিজস্ব রাজনৈতিক প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসাব আছে । তারা এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি বজায় রাখতে আগ্রহী। সুতরাং যারা এই ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতিতে ব্যক্তিগত স্বার্থের প্রয়োজনে বিকিয়ে যায় নি সেসব স্থানীয় তরুণদের সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে । প্রশাসনকে অধিকতর দায়িত্বশীল করে তোলা এবং স্থানীয়দের ঐক্যবদ্ধতা ব্যতীত এই সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে পরধর্মসহিষ্ণু বাংলাদেশে পরিণত করা যাবে না।
অসাধারণ জরুরী একটা লেখা!
ডু অর ডাই ---- মরতে হলে মেরে মরব --- এটা হতে হবে ব্যানার
প্রয়োজনীয় লেখা।
মন্তব্য করুন