শহীদুল ইসলাম লালু
১৯৭২ সালের ২৪শে জানুয়ারী। টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী স্কুলের মাঠে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কাদেরিয়া বাহিনীর সকলে অস্ত্র জমা দেয়ার সময় ১৩ বছরের এক ছোট্ট কিশোর আসে মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত স্টেনগানটিও বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দিতে। বঙ্গবন্ধু অবাক হয়ে তাকে কোলে তুলে নেন। সেসময় তার পিঠে থাপ্পড় দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, "সাব্বাস বাংলার দামাল ছেলে।" এরপর সেই কিশোরের সহযোদ্ধাদের কাছে তার পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর বাংকার ধ্বংসের কাহিনী শুনে তাকে "বীর বিচ্ছু" আখ্যা দেন বঙ্গবন্ধু। এরপর মঞ্চে শেখ রাসেলের পাশে নিয়ে বসান। তিনি আর কেউই নন। তার নাম শহীদুল ইসলাম। ৭১ এ পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে পালিয়ে আশ্রয় নেন বর্তমান ধনবাড়ী উপজেলার কেরামজানী নামক স্থানে। সে সময় তার পরিচয় হয় মুক্তি কমান্ডার কাজী হুমায়ুন আশরাফ বাঙাল এবং আনোয়ার হোসেন পাহাড়ির সাথে। তারা তাকে প্রাথমিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের ফুট ফরমায়েশ ধরার কাজ দেন। পাশাপাশি তাদের অস্ত্র পরিষ্কার করে দিতেন তিনি। এভাবে অস্ত্র ধরা শিখে গেলে একসময় ভারতে চলে যান ট্রেনিং এর জন্য। সেখানে তিনি ট্রেনিং এর পাশাপাশি প্রতিদিন সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, মুক্তিযোদ্ধাদের লাইনে দাঁড় করানো এবং জাতীয় সংগীতের দায়িত্ব পালন করলেও একসময় অস্ত্র চালনা এবং গ্রেনেড চার্জ করার প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরেন। প্রশিক্ষণকালীন সময়ে ভারতের তুরা ক্যাম্পে ভারতীয় বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সমজিত সিং শহীদুল ইসলামেকে আদর করে লালু বলে ডাকতেন। আর সেই থেকে লালু হয়ে যায় তার নামের অংশ।
বয়সের কারণে পাকিস্তানী বাহিনীর ক্যাম্পের খবরাখবর আনা এবং টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানায় অবস্থিত পাকিস্তানী বাহিনীর ক্যাম্প গ্রেনেড দিয়ে উড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব পরে তার উপর। তাকে কেউ সন্দেহ করবে না এই ভেবেই তাকে এই দায়িত্ব দেয়া। থানার সামনে বটগাছের নিচে তার এক দূর সম্পর্কের ভাইয়ের সাথে দেখা হয় তার। তার সেই ভাই পাকিস্তানী ক্যাম্পে সেনা সদস্যদের চা-পানি খাওয়ানোর কাজের জন্য প্রস্তান দিলে সুযোগ হাতছাড়া না করে তৎক্ষণাৎ রাজী হয়ে যায় লালু। একসময় সবার অগোচরে থানার ভেতরে লুকিয়ে নিয়ে যায় তিনটি গ্রেনেড। এরপর সুযোগ খুঁজতে থাকেন তিনি সেগুলো ব্যবহারের আর হিসেব কষতে থাকেন এবং ক্যাম্পের যাবতীয় তথ্য জানাতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধাদের। সুযোগ মত নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রেনেড চার্জ করে সেই ক্যাম্প উড়িয়ে দিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে নিজের জীবন নিয়ে ফিরেন তিনি। তার সেই অপারেশনে সেই ক্যাম্পের বেশীর ভাগ পাকিস্তানী সেনা সদস্য মারা যায়, পালিয়ে যায় অনেকেই এবং মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়ে বেশ কিছু। ১৯৭৩ সালে তাকে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হলেও তিনি তা জানতে পারেন ১৯৯৬ সালে। তার বীরত্বভূষণ সনদ নম্বর ৪২৫।
দীর্ঘদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বারান্দায় ধুকে ধুকে অবশেষে এই বীর যোদ্ধা ২৫শে মে ২০০৯ সালে ঢাকার মিরপুরে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
স্যালুট জানাই এই অকুতোভয় বীরকে!
এরকম আরো হাজারো নাম না জানা বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়ে গেছেন লোচক্ষুর আড়ালে ! তাদের একজনকে জন সমক্ষে নিয়ে আসার মহত প্রচেষ্টা নিঃস্নদেহে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য ! আন্ত্রিক ধন্যবাদ আপনাকে । ভাল থাকুন ।
দীর্ঘদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বারান্দায় ধুকে ধুকে অবশেষে এই বীর যোদ্ধা ২৫শে মে ২০০৯ সালে ঢাকার মিরপুরে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এই লাইনটি জাতির জন্যে নিদারুন লজজার ....কষটের
আমরা আমাদের বীর সন্তানদের প্রাপ্য সম্মান জানাতেও পারিনা! জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য বড় লজ্জার!
স্যালুট জানাই এই অকুতোভয় বীরকে।
মন্তব্য করুন