Aim In Life
এই পঞ্চাশ এ এসে এভাবে সব গুবলেট হয়ে যাবে? সে আজ কি বল্লাম ছাত্রদের। অংক বুঝাতে বুঝাতে কি যে হল, অঙ্কের সাথে মিলিয়ে গল্প শুরু করে দিলাম। মনে হচ্ছিল এই কথা গুলো অঙ্কের সমাধানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্ররা ও কিছু বলল না।কেন এমন হল? অঙ্কের শিক্ষক আমি, আমাকে তো কার্যকরণ জানতে হয়, ঘটনার পিছনের ঘটনা জানতে। নাকি এই কথা গুলো জমে জমে চাপ তৈরি করছিল। পথ খুঁজছিল বের হয়ে আসার। তাই বলে এই ছোট ছোট কিশোর দের কাছে কেন এই বিষণ্ণতা ঢেলে দিয়ে আসলাম। যা বলেছি ঠিক বলেছি কি? ঠিক ই তো মনে হয়। জীবন ভর মানুষ হতে চেয়েছি, ভাল মানুষ। সবাই ভালবাসবে এমন মানুষ। মানুষ সৃষ্টির সেরা আমাকে ও সেরা হতে হবে। আমাকে শিখিয়েছে আমি বাচ্চাদের শিখাচ্ছি এতো গুলো বছর। কখন ও প্রশ্ন করেনি, আমি ও করিনি। যত দিন যাচ্ছে, তত বিশ্বাস প্রকট হচ্ছে, মানুষ তো সেরা না। "মানুষ" শব্দটায় আলাদা কোন মহত্ত্ব নেই, নেই কোন শ্রেষ্ঠত্ব। চার দিকে চোখ খুলে রেখে যা দেখলাম এতোটা বছর, মানুষ সবচেয়ে চতুর এবং হিংস্র সৃষ্টি। আমাদের হিংস্রতা লুকিয়ে রাখতে আমরা বাকী সব সৃষ্টি যার কাছে ই আমাদের অক্ষমতা প্রকাশ পেয়ে যেতে পারে তাদেরকে হিংস্র আখ্যা দিয়ে দেই। মানুষ এর যে সব বিশেষ চরিত্র মানুষ কে বিশেষ করেছে বলে মনে করি, তাকে তুষ্ট করতে মানুষ ই একমাত্র হিংস্র হয়। আমরা তো শুধু হিংস্র না, প্রচণ্ড বর্ণবাদী। এই যে আমি শ্রেষ্ঠ, ভাব তাই তো সবচেয়ে বড় বর্ণবাদ। এই শ্রেষ্ঠত্বের দোহাই দিয়ে আমরা কি না করছি।
খুব কি ভুল বলেছি ছাত্রদের। এই যে বিশেষত্ব আর অক্ষমতা এক বিন্দুতে এসে মিলিত হয়েছে, এই যে আমাদের লাগাম হীন চাহিদা, শুধু টিকে থাকার দোহাই দিয়ে নয়, মনুষত্বের দোহাই দিয়ে এই চাহিদা পুরন এর পিছনে ছুটে চলা। লক্ষ বছরে এতো এতো ধর্মের আবির্ভাব শুধু এই চাহিদা কে লাগাম টানার জন্য। কিছু পিছিয়ে পড়া দুর্বল মানুষকে অন্য শক্তিশালী মানুষের চাহিদার শিকার থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। পেরেছে কিছু? পারে নি। মানুষের মনুষত্বের কাছে সব অকেজো।
দাদা একটা কথা বলত, আরে অন্ধকারে সাপ গোপের ভয় নাই, ভয় মানুষের। তখন কথাটা য় মজা পেয়েছি, বিশ্বাস করি নি। কিন্তু এখন কিভাবে বিশ্বাস ই করছি শুধু তা নয়, এই বিশ্বাস আমি প্রচার করছি। মানুষত্ব কি এতোটা ই ধোঁকা দিল। ছাপোষা জীবন আমার। নিস্তরঙ্গ। কোথাও কোন বিশেষত্ব নেই। মানুষের নিয়মতান্ত্রিক যে আচরণ তাই পেয়েছি। ছাত্রদের শ্রদ্ধা, সমাজের ভালবাসা, পরিবারের মমতা। তাও এমন ভয়ঙ্কর একটা সিদ্ধান্তে কিভাবে আসলাম। তা হলে কি আমি নির্বিষ, চাহিদাহিন মানুষ। তাও কিভাবে আমি এই কথা গুলো বললাম? এই বাচ্চাদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিলাম না তো। আমরা তো মানুষ গড়ার কারিগর।
ভাবতে ভাবতে ফলপ্ট্রির মাথায় চলে আসলো।
বইয়ের দোকান গুলো পিছনে ফেলে চলে আসলো। পিছনে হেঁটে যেতে হবে। কলম আর কাগজ কিণতে হবে। মাথায় ঘুরছে, কাল ক্লাশ এ গিয়ে কি ছাত্রদের অন্য ভাবে বলবে, মানুষ হতে ই বলবে.।.।.।
কি জানি.। অংক শিখার এই এক সমস্যা, প্রশ্ন আর প্রশ্ন, এইটার উত্তর পেলে পরের প্রশ্ন এসে হাজির হয়ে যায়। অংক না জেনে সাহিত্য পড়লে কি এইভাবে ই ভাবতো।।।
স্যার আসসালামুয়ালাইকুম, কি লাগবে?
একদম ঠিক কথা। নিজের শ্রেষ্ঠত্ব নিজেই জাহির করার মধ্যে কোনো মাহাত্ম্য নেই।
মন্তব্য করুন