ইউজার লগইন

চলতে চলতে ......

ট্রেন চলছে, সমতল ভূমি ছেড়ে দিগন্ত রেখায় উঁচু পাহাড়ের সারি। সাদা কালো মেঘে ঢেকে আকাশ। একবার মেঘ ধরে ফেললে ই ঐ পাহাড়ে চলে যাওয়া যাবে। দূরে বলে ই পাহাড় এর উচ্চতা আনুমান করা যাচ্ছে না। যখন ই পাহাড়ের কাছ ঘেঁষে যাচ্ছি, তখন ও বুঝা যাচ্ছে না। চলতে চলতে কখন যে ঘুমায়ে পড়েছিলাম। কত সময় ঘুমিয়েছি বুঝতে পারছি না। এখন কোথাও আছি তাও ঠাহর করতে পারছি না। চোখ খুলে দেখি, পাশের কাঁধে বেশ আয়েশ করে ই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তার চেহারায় বিরক্তি, স্নেহ, প্রেম বা আদর কোন টা ই প্রকাশ্য না।

কি করব বুঝতে পারছি না।সে এখন ও বই এ ডুবে। কথা বলতে ইচ্ছে করছে, খুব আবোল তাবোল। বলতে পারছি না। কয়েকবার এপাশ অপাশ করে উঠে দাঁড়ালাম। কিছুটা নিজের আড় মোড় ভাঙ্গার জন্য, আর কিছু টা পাশের জনের। তার কোন বিকার নেই দেখে নিজে ই উঠে হেঁটে হেঁটে দরজার পাশে যাই। অনেকটা ই ফাঁকা দরজা। ট্রেন চলছে পূর্ণ গতিতে। মনে হচ্ছে কোথাও থামার উদ্দেশ্য তার নেই। দরজায় দাঁড়িয়ে দুই পাশের হতাল ধরলাম। দিলাম চুল খুলে। বাতাস আর চুলের সে কি খেলা। যেভাবে মাথার বাঁক, সে ভাবে ই চুলের বিন্যাশ। মুহূর্তে নিজেকে ভেসে বেড়ানো তুলার মতো লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে হাতটা ছেড়ে দিতে। পা য়ের পাতা কোন রকমে ট্রেন এ রেখে পদার্থ বিজ্ঞান এর নিয়ম মেনে বাকী শরীর দিলাম বাইরে বের করে। ট্রেন এ বসে বাইরের গাছ গুলো কে যেমন লাগে, ছুটে চলা, নিজেকে তেমন গাছের মতো ই লাগছে। সিঁড়িতে পা দিয়ে বসে পড়লাম। গলা ছেড়ে গান।

পিছনে তাকিয়ে দেখি দাঁড়িয়ে আছে। ভয় পেয়ে গিয়েছিল, কিন্তু কোন কথা নাই। একটা সিগারেট ধরাল। চুপ চাপ বসে পড়ল পাশে।দুই জন আলদা মানুষ পাশা পাশি বসে আছি, বিশেষত্বহীন, আবেগ হীন। সুর তাল লয় হীন গানের কথায় গলা বিলাল। প্রকৃতি ও আমাদের সাথে। এই বাতাসে বৃস্টির ছটা। সে হাসি গলা ছেড়ে হাসি আর গান। দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে ই শেষ স্টেশন এ চলে আসলাম আমরা।
ভিতর থেকে ছোট একটা বেগপ্যাক, তাতে ক্লাশের বই খাতা, আর দুটো গল্পের বই।

এই ব্যাগ কাঁধে স্টেশন এ নেমে দাঁড়িয়ে আছি। আমাদের কোন তাড়া নেই, কোন গন্তব্য নেই। দাঁড়িয়ে আছি হতবিহবল। চিরাচরিত মুখের ভাঁজে একটু চোখ নাড়াও। এবার কি?? আমি ও জানি না। একটা প্রশ্ন করবো বলে, কিন্তু করা হয় নি। এখন ও মনে হচ্ছে না বলার উপযুক্ত সময়। বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে, বললাম, নাস্তা করা যায়। তার আগে ফ্রেস হওয়া দরকার। খুব ক্লান্ত লাগছে। বাইরের ধুলা সব বিভিন্ন রং এ সারা গায়ে। কি করা যায়। এই শহর অচেনা। কোন আপন জন নেই। সে নির্বিকার দাঁড়িয়ে আছে, আমার ই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। একটা হোটেল এ যাওয়া যায়, অকাহ্নে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে, ফিরতি ট্রেন।

কাছে ই একটা হোটেল। জিজ্ঞেস করলাম, ১ ঘণ্টার জন্য পাওয়া যাবে কি না। আমরা ফ্রেস হব। সবাই কেমন যেন তাকালো। একটা অসস্থিকর অপরিচিত চোখ। বেশ অবাক লাগল। ভাল লাগল না। বের হয়ে আসলাম। অন্য আরেকটায় ঢুকলাম। তারা রীতি মতো জেরা। আমরা বন্ধু শুনার পর আরও জেরা। কি সব পরিচয় পত্র চায়। মাথায় তখন ও আসে না, কেন এতো জেরা। একটু ফ্রেস হবো, শুধু। তৃতীয় হোটেল এ রুম দিবে, কিন্তু রেজিস্ট্রার এ শ্বামি স্ত্রী লিখতে হবে। আমি মিথ্যা কেন লিখব? তাই বের হয়ে আসলাম। বের হয়ে দেখি সিগারেট হাতে নির্লিপ্ত দাঁড়িয়ে আছে বাইরে। বাকী দুই ঘণ্টা, গজ গজ করতে করতে এদিক সেদিক হেঁটে নাস্তা করে ফেললাম। ফিরতি টিকেট কেটে ফেললাম।

কিছু ক্ষন রিক্সায় এদিক সেদিক। কিছু করার নেই, দেখার নেই, বলার নেই এই ব্যস্ত শহরে। প্রশ্ন টা ও করা হচ্ছে না। আবার ট্রেন এ উঠে বসলাম। পাশাপাশি সিট। হাত ধরে বসে আছি, চুপ চাপ। চোখে পানি। এতো পানি কথা থেকে আসল। কিভাবে কখন যে চেনা গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম, শব্দহীন। এবার নেমে আর বিহ্বলতা নেই। যে যার রিক্সা নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম।

পোস্টটি ৭ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.