Aim in life .......
এক রিম নিউজ পেপার দাও, এক রিম সাদা কাগজ, একটা ইউয়ত কালি। রহমান ভাই আসছিল এই কয় দিনে?
না স্যার আসে নাই। আসলে কিছু বলতে হবে? স্যার কিছু নতুন বই আসছে দেখবেন? কালাম স্যার এর নতুন বই টা ও আসছে।
দোকানের ছেলেটার জিনিস পত্র বাঁধা বাঁধির কাজের ফাঁকে ই নতুন আনা বই গুলো উলটে পাল্টে দেখছে। কালাম স্যার এর বই গুলো অন্য রকম। মানুষটা সাহিত্যের, কিন্তু শেকড় এর প্রতি টান তার দুর্দমনীয়। পকেট এ লাল কলম আর কাল কলম ই তাকে বাংলার শিক্ষক বলবে, এছাড়া সে পুরা দস্তর নৃবিজ্ঞানি। তার সময় নৃবিজ্ঞান বিষয়টা আলাদা ভাবে ছিল বলে ই সে বিষয়টা পড়তে পারেনি। এই শহরের, এর বাইরে গ্রাম গুলোর হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী সবুদ কুঁড়িয়ে বেড়ানো তার নেশা। ভাষার নৃবিজ্ঞানিক ধারা ও সে খুঁজে বেড়িয়েছে। খুঁজে খুঁজে একত্রিত করেছে। লিখে রেখেছে, নিজের পয়সায় প্রকাশ ও করেছে। নতুন বইটা এর উপর ই। এই টানা টানির সংসার এ চার ছেলে মেয়ে নিয়ে এমনি ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এই বইটা নিতে ই হয় একটা।
দাও এটা নিয়ে দাও, বাচ্চাদের নিজের শিকড় জানতে হয়। দেখত কত হইলো।
দাম পরিশোধ করতে গিয়ে, টাকা কম পড়ে গেল।
স্যার পরে দিয়ে যাইয়েন।
দড়ি দিয়ে বাঁধা বান্ডেল টা হাতে হাতে নিয়ে এই রোদের মাঝে ই বের হয়ে গেল। লাইব্রেরী পট্রি তে লাইন ধরে রিক্সা দাড়ায়ে থাকে। কিন্তু এখন রিক্সা নেয়া যাবে না। পকেটের টাকা শেষ। মাসের ও শেষ দিকে। অনেকটা ই রাস্তা। কম করে হলে ও ৩০ মিনিট হাঁটা পথ। হাঁটতে হাঁটতে ই বড় রাস্তায় বাজ্জি মোড় এসে উঠল। কোনায় কয়েকটা চা সিগারেট এর দোকান। এর ই একটায় গিয়ে হাতের জিনিস গুলো বেঞ্চ এ রেখে সিগারেট ধরাল। সিগারেট এ একটা টান দিয়ে আগুন টা ঠিক ঠাক লাগালো। বেঁধে রাখার রশিটার চাপ এ হাত টা লাল হয়ে আছে। কিছুক্ষন জিরিয়ে, সিগারেট এর দাম চুকিয়ে, আবার হাঁটা। এক পাশে মাথা কাত করে হাঁটছে। সে কখন ও কালাম স্যার হতে পারে নি। তার ও কোন ভাল কাপড়, ভাল জুতা র নেশা নাই। দালান কোঠার স্বপ্ন নাই। সে কালাম স্যার হতে চেয়েছিল। সে তার গ্রাম এর বাড়িতে ঘাট পার একটা ছোট ঘর বাঁধতে চেয়েছিল। সে লিখতে চআয়, প্রচুর পড়তে চায়, চায় বাচ্চাদের নিয়ে হই হুল্লোড় এ মেতে থাকবে। একটা সময় ছিল, প্রতি ছুটির দিন এর আগের রাতে সারা রাত হেঁটে বাড়ি পৌঁছাত সেই ভোর এ। মা অপেক্ষা করে বসে থাকত। ভাত তরকারী পাত বেড়ে বেসে থাকা। বাজান এ আইবো। হারা রাইত আইট্টা আইবো। মার কাছে যাইতে মন চাইতাছে। চোখ দিয়ে পানি পরে।
হাটতে হাটতে বাস স্ট্যান্ড চলে আসে। আবার হাত বদলায়। ভাবছে, মেয়েটা হয়েছে আমার মায়ের মতো। সারা মুখে কোন রা নাই। কোন অভিযোগ নাই, চাহিদা নাই। বাজার থেকে বাসায় গেলে পোলাপান দৌড়াইয়া আইসা ধরে কই আনছে। মাইয়াটার কোন আগ্রহ নাই। একমাত্র নেশা বই পড়া। নইলে বাসার সামনে রাস্তার উপর যে কাপিলা গাছ টা আছে তার নিচে বইসা থাকবে। একা একা মাটি খুঁটবে নইলে গাঙ্গের দিকে তাকায়ে থাকবে। কি যে দেখে আর কি যে ভাবে। মাইয়া টা বড় হচ্ছে, সেই হুস ও নাই মনে হয়। বাড়ির বড়ই গাছ আম গাছ তার পছন্দের জায়গা। উঠানের ঠিক মাঝে যে ৫০-৬০ বছর পুরান একটা আম গাছ, এর সবার উঁচু ডাল টায় গিয়ে শুয়ে থাকে বা বসে থাকে। আসে পাশের মানুষ ও ভাল কিছু বলে না। এই বইটা পেলে খুব খুশি হবে, কিন্তু বুঝা যাবে না। এই বই হাতে হয়তো কোন গাছের ডালে তারে দেখা যাবে।
ভাবতে ই মন টা ভাল হয়ে গেল অঙ্কের মাস্টার এর। তার মেয়ে কে ও কি সে বলবে, মানুষ কত ভয়ঙ্কর? তার তো আরও বেশি করে জানা দরকার।
মন্তব্য করুন