শেষ রাতের শেষ অন্ধকারের কিছু স্মৃতি (উৎসর্গ ঃ বিহঙ্গ)
চেনা পথেই ঘুরেছি শতবার, অচেনা ভাবে মাড়িয়েছি চেনা চেনা ক্ষেতের আইল হেলে দুলে। টান টান সিনার মত খালের পাড় চষে বেরিয়েছি স্নিগ্ধ জোসনা আলোয়ে !! ভাব খানা যে বড় বৈরাগী ছিলো তা কিন্তু নয়। এক ধরনের নেশা বলতে পারেন । নেশার কোনো জাত কুল নাই । শায়েরীটা মনে পড়ে গেলো, “ লোগ ক্যাহতাহে ম্যায় শরাবী হু , তুম ভি শায়েদ ইয়েই ছোচ লিয়া হ্যা।। নেশা মে কন নেহি হ্যায় বাতা দো মুজে জ্যারা” বয়সের তালে তালে নেশা পরিবর্তন হবে এটাই স্বাভাবিক । কখনো এই নেশাটা অভ্যাসে পরিণত হবে । কখনো কখনো নেশার মাঝে কেউ কেউ খুঁজে বেড়ায় ভিন্ন নেশা । চেনার মাঝে অচেনা কিছু , দেখার মাঝে অদেখা কিছু , আর জানার মাঝে অজানা কিছু, বলতে পারেন মুঠোর ভীতর শুন্যতার রহস্যটুকু । হাড়ি ভেঙ্গে দিলে যা আসে, আপনার মাঝে খুজে বেড়ায় আরো আপন কারো পদচারণার মৃদু স্পর্ষটকু । দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার !!
রাতের মাঝে রাত খুঁজেছি । জোসনাভরা বালুমাখা মাখা পথ ধরে একটু অন্ধকার খুঁজেছি । দক্ষিনা হালকা বাতাসে তাল পাতার পরষ্পরের ঘর্ষনে অদ্ভুদ এক সুরের সৃষ্টি হতো , তার মাঝে নেশা ছিলো , কিছুটা শিহরন ছিলো, আচমকা আতংকে আৎকে উঠতাম , সেই ভয়ের রহস্য খুঁজেছি । কখনো মিলেছে কখনো মিলেনি । জোসনা আমায় মাতাল করেনি কভুও । রাতের নেশা অন্ধকারে । দু একটা জোনাক পোকার উড়ন্ত মিট মিট আলোর ফোটা, লম্বা সরু পথের দু’পাশে সুপারী গাছের অস্তিত্ব পুলকিত করতো । ভুত দেখার আশায় কবরস্থানের বাউন্ডারীর দেয়ালের উপর বসে থাকা হতো তখন ।
রাত সাড়ে এগারোটা !! থানা দেবিদ্বার। জেলা কুমিল্লা!! নানা বাড়ি গিয়েছিলাম এক ‘না বলা রাতে’। পকেটে দুটো গঞ্জিকার পুটলি । নানা বাড়ি আর যাওয়া হয়নি । স্কুলের পিছনেই থাকতো বন্ধু বেলাল। ক্যানো জানি বেলার নামের লোকদের গানের গলা থাকে । তারা গাইতে জানে। এই বেলালও বাদ পড়েনি । হুবহু গায়েন মনির খানের মত ।
তার বৈঠক ঘরের জানালা দিয়ে তাকে ডাকলাম, বেলাল আছিস ? চোখ কচলাতে কচলাতে উঠলো; হুম।
বেলাল বাহিরে এলো । স্কুলের পিছনে অথৈ পানি । যেনো কয়েকটা মহা সাগর একত্রিত হয়েছে আমার সামনে । ফসলের ক্ষেত, খাল-বিল, ডোবা-পুকুর সব একাকার পানিতে । আধো পূর্ণিমা। কিছু মেঘের আবছা দেখা যাচ্ছে । বাতাসে পানির কল কল এক মাতাল সুর বাজছে কানে । ইচ্ছে হচ্ছে ঝাপিয়ে পড়ি । বিড়ির কোনো প্যাকেট নেই । বর্ষার কারনে মফস্বলের দোকান গুলো সন্ধ্যার পর কদাচিৎ খোলা থাকে । বেলালের বাবা কৃষক মানুষ। সাত সন্ধ্যায় পেটপুরে খেয়ে ঘুমিয়েছে । মাথার পাশেই আকিজ বিড়ির প্যাকেট । আমার সু-পরামর্শে বেলাল প্যাকেট গায়েব করলো ।
বেলাল নৌকা নিলো । বাতাসের অবস্থা ভালো না, বেলাল জানালো বৃষ্টি আসতে পারে। একটা শীতল পাটি আর আশটে গন্ধমাখা একটা বালিশ নৌকার মাঝখানটায় বিছানো হলো । বেলাল নৌকার আগায় বসে মুলি বাঁশ দিয়ে ঠেলা মেরে নৌকাটা ভাসিয়ে দিলো । হালকা পত পত আওয়াজে নৌকা চললো । হাতের মাঝে রেখেই দুইটা ষ্টিক বানাই । বাতাসের কারনেই এই ব্যাবস্থা নেয়া । একটা নৌকা ছুটে চলছে মাঝ জলার দিকে । মাঝে মাঝে দুই একটা কচুরিপনার সাথে ধাক্কা লাগছে । মাঝে মাঝে শাপলার সাথে । পানির উপর চাদরের ন্যায় বিছানো পদ্মপাতা। এবার নৌকার আগায় আমি । পিছনে বেলাল মুলিবাশ দিয়ে বৈঠার কাজ চালাচ্ছে । ষ্টিকটা ধরালাম । পত পত আওয়াজ, আধো পূর্ণিনা, মৃদু-দমকা বাতাস, অচেনা সুর কানের মাঝে খেলা করা, সব মিলিয়ে মাতালীয় পরিবেশ ।
বেলাল দুইটান দিলো , তার সিগারেটের অভ্যাস নেই । আমাদের সাথে বেরোলে দুই এক টান দেয়। বেলাল গানের টান দিলো, “ দয়াল রে ! তুই বুঝি আর দূঃখ দেবার মানুষ পেলিনা, তুই বারে বারে আমার দ্বারে;অন্যখানে গেলি না” ।
নৌকা আর গান সমান তালে চলছে । কোথাও কোনো সীমানা নেই । উপরে শাদা কালো মেঘের ছায়া , সামনে সাধা কালো জলের ঝিলিক। মনে দিয়েছে মাতাল দোলা , কানে বাজছে বিচ্ছেদ সুর, জলের মাঝে ডুবে আছি আমি । ডুবে আছে আমার সমস্ত অস্তিত্ব। আকিজ ধরিয়েছি একটা । গাঞ্জার পর বিড়ি না থাকলে দুনিয়াটাই পানসে ।
বেলাল ২য় ষ্টিকটা ধরালো, তিনটান দিয়েই আমার কাছে পাস করলো। বেলাল কে বললাম, খবরদার কোনো কথা বলবি না, একের পর এক গান গেয়ে যাবি , আমি নৌকায় চিৎ হয়ে শু’বো। আমি আকাশ দেখবো । দু’একটা তারার ছুটো ছুটি দেখেবো । আমি উড়বো মেঘের মত । আমি মিশে যাবো আমার মাঝে । বেলাল টান দিলো , “মাঝি বাইয়া যাওরে , অকুল দরিয়ার মাঝে আমার ভাঙ্গা নাও রে মাঝে বাইয়া যাও রে” আমি ডুবে গেছি আমার মাঝে ।
রাত তিনটা বেলাল একটা টেট্টনের লুঙ্গি থেকে বাটালী গুড় আর খৈ বের করলো । এবার নৌকা বাতাসে চলছে । বেলাল আর মাঝখানে বসে বসে খেয়ে চলছি । নৌকা থেকে উবু হয়ে বিলের পানি চপ চপ করে চুষে চুষে পান করে যাচ্ছি মাঝে মাঝে । বড়ই ঠান্ডা । দিলের মণিকোঠায় গিয়ে ঠেকে এই পানি।
বেলাল ফিরতি পথ ধরলো । মানুষের কারেন্ট জালের মাছ দেখছি, জাল তুলে তুলে । সাপ, কৈ মাছ , পুটি মাছ জালে আটকে মরে আছে ।
স্কুলের পাড় ঘেষে নৌকা নিয়ে যাচ্ছে আমার নানীর বাড়ির দিকে । নানীর বাড়ির কবরস্থানের বাঁশমুড়ার পাশদিয়ে শুকনোয় নেমে গেলাম । বেলাল তার বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলো । আমি তাকিয়ে রইলাম এক পলকে । বেলাল ধীরে ধীরে মিশে গেলো শেষরাতের শেষ অন্ধকারে । আমি হালকা নেশায় চূর হয়ে সেজো মামার রুমের পিছন দিকের জানালা দিয়ে ডেকে উঠালাম সেজো মামাকে । সেজো মামার গোল্ড লীফ থেকে দুইটা টেনে ঘুম দিলাম । সকালে নানী খোলা পিঠা খাওয়ার জন্য ডাকছে , আমি গোঙ্গাতে গোঙ্গাতে বললাম , চাপা শুক্টির ভর্তা বানায়া ডাক দিও ।
কৃতজ্ঞতা ঃ সোহেল কাজী , যার "নিশি কথন" পরে শরীরে জ্বালা ধরে যায় !!! রাইত নিয়া লেখবো আমি কি চুপ মাইরা থাকুম নি ......।। খাইছি তোরে রে পাগলা !!!!! মুহাহাহাহা
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন ।
কেনো? কাহিনি কি ?
আহাগো ভাইডী, উদাসী কইরা দিলেন।
রাইতের বেদন বুঝে রাইতের পূজারী। আমি অধম সাধ্য কি আছে সেই বর্ণনা দেই।
নিশিলিপি সুখপাঠ্য হইছে।
"দু একটা ঝিঁ ঝিঁ পোকার উড়ন্ত মিট মিট আলোর ফোটা" এইখানে জোনাক হবে মনে হয়।
এরকম কত রাতযে বুকে জিইয়ে রেখেছি এই মাটির স্মৃতির পাত্রে।
আমার জলজ বেলাটা খুব মনে পইড়া গেলো ভাইডী।
আবার জল আর রাতের ভাব এসে গেলো। যাই একটা বিড়ি টাইন্যা আহিগা .....................
থ্যাঙ্কু!!
ফাকি নেহি দিয়েন !!!
পোষ্টান ।।
জীবনটাই একটা মহা ফাঁকিরে ভাই। আমি এক নীরব পরিব্রাজক
নাহ !! পোষ্টাইতে কমু না !!
কেউ কইলে যে পোষ্টান যায় না , এই তিন দিনে টের পাইছি ।।
আপ্নে নীরব পরিব্রাজক ... হাহাহা জটিল ডায়লগ ।।
উদাস হইলে পোষ্টায়েন , তার আগে না !!!!
জটিল লেখা।
থ্যাঙ্কু
এরকম কত রাতযে বুকে জিইয়ে রেখেছি এই মাটির স্মৃতির পাত্রে.........
তয় এই মাটির পাত্র থেকে কিছু দান করেন ।। পইড়া উদাস হই।।
আমি তো উদাস হয়েই ।আছি।এমনেই উড়াধুড়া লাগছিলো....আপনারা যা শুরু করলেন না! কি আর কমু!রাইত জানতাম আমার একলার এহন দেহি ঝড় তুফান চালাইতাছেন
বেহিন না ভালা !!!
আইজ উদাস হালতে আছি !! কাজী সাব আর সাঈদ ভাইও দেখি পুরা গেছে ।।
দেন দুই একটা লেখা উদাসের !! পড়ি !!! কাল থেকে আবার বিজি !!
জয়িবু, একটা পুষ্ট দেন আমি আপ্নেরে একটা গান দিমু। গানটার টাইটেল "জয়িতা" গেয়েছেন আমার সবচেয়ে প্রিয় গায়ক।
গান পাইতে হইলে জলদি পোষ্ট দেন। তুরান্ত
কাজী সাব আপ্নে " মুরুব্বি" নি্বক টা নেন নাই ক্যানো ?
এইটা ক্যামন জানি লাগে । মুরুব্বি নিকের মাঝে একটা মাজেজা আছে ।। চিন্তাইয়া দেইখেন নেয়া যায় কি না ?.....................।
ঐ নিক টা আমগো অনেকের পছন্দের !!!
মুরুব্বি নিকের লেইগ্যাই আপিল করছিলাম মাগার মঞ্জুরী কমিশন খালাস দেয় নাই
দিবেনা ক্যানো? আমরা সবাই তো আগের নিক-ই নিছি ।
বুঝিনা দুনিয়ার হালচাল!!!
ভাইগো, তিনজনে মিলে যা শুরু করছেন........যেন ভরা জোছনার মায়াবী ঘোরে ডুবে যাচ্ছি।চলুক অাপনাদের নিশি কথন।
নো হাংকি পাংকি !! লেখা ছাড়েন ।।
জয়িবু, আপ্নের নামে একটা দারুন গানের প্রস্তাব করলাম তাও পাষান দিল গলাইতে পারলামনা?

একটা পোষ্ট দেন ভইনডী গানটা কিন্তু সত্যিই আমার খুব প্রিয়
মনডা সত্যই উথাল পাথাল।কইতে গেলে কত কি মনে পড়ব!দেন না গানডা শুনি!এমন নিষ্ঠুরতা নিশিজনকে মানায় না গো....
কবি বুঝিতে পাড়িয়াছেন যে, কবিকে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে ফ্রিতে গান আদায়ের চেষ্টা করা হইতেছে। এই ষড়যন্ত্র কখনো সফল হৈতে দেয়া যাইবে না
হিহিহি
ওক্কে মন খারাপ করার কিছু নাই
নেন শুনেন
আপনাকে থেংকু থেংকু।আপনি কত্ত ভালো!
আমিযে ভালো সেইটাতো বুঝলাম। এইবার আপনার পোষ্টটা দেন

পছন্দ হইছে ভাইডি গান !!
আকাশ হতে কোন তারা খসে গেলে আকাশ কি তা মনে রাখে ???
বড়ই উদাস লাগতাছে রে ভাই । তোমার পোষ্ট পইড়া আরো উদাস হইলাম। খালি ভাবের কথা উথাল পাথাল করতেছে মনে। রাস্তা দিয়া একা একা হাটতে পারলে ভালো লাগতো কিন্তু ফুলিশ মামা কোন দিক দিয়া উঠায়া নিয়া যায় , কওন যায়না।
আরো কতো কিছু লাগবো আপ্নের !! কইলাম , কইরা লান ।
রাজি তো হন না !! এখনও সময় হয় নাই আপ্নের !!
থাকেন উদাস । আমিও উদাস।
চারিদিকে দেহি উদাস বাতাস বইছে
চারিদিকে দেহি উদাস বাতাস বইছে
খালি বাতাস নারে ভাই , ঝড়-তুফান আরো ক'তো কিছু যে বইতাছে !!!
লেখা দেন না ক্যান ?......... দেন দুই একটা উদাস লেখা !!
এমনিতেই রাইত দুইটা, তার উপর এই লেখা.. উদাস না লেগে কই যায়..! :(
আহারে, এই রাতের সংগে সখ্যতার কতো কাহিনী মনে পড়লো,, পিটুনী খেতেও বাদ রাখিনি এমনই সখ্য... আহা.. [উদাস ইমো দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হউক]
রাতের সঙ্গে সখ্যতার কাহিনী মনে পড়লো বইলা তো আর পাড় পাইবেন না ............।। লেখা ছাড়েন।।
(দাড়ি চুল্কানোর ইমো হবে)
বহুদিন পর মন উদাস করা লেখা রেএএএএ..........মিস করছিলাম........আরেকজন নিশাচর কই? :)
থ্যাঙ্কু নীড় দা,.........।।
সবাই একটু বিজি আছে , আমিও বিজি মাগার ফাক পাইলে আইয়া পড়ি।।
আড্ডা হবেনে, টেনশন নেহি লেনেকা !!
কিছু কিছু লোকের আঙ্গুলে শব্দ গুলো খেলা করে। নকশী কাঁথা বুনে অক্ষরের মিহিন সূঁতা।
আপনার আর আমার নানীর বাড়ি দেখি একই জায়গায় তাহলে কেনো আমার কী বোর্ডে শব্দগুলো আপনার মতো ধরা দেয় না।
এ ধরনের যারা লেখে তাদেরকে আমি কেনো যেনো পছন্দ করতে পারি না
ধন্যবাদ !!
নজ্জায় নাল হইতে হইতে মইরা যাইবার ইমো হবে !!
আপনার নানীর বাড়ি কোথায় ?
লেখাডায় কেমনযানি মন ভরলো না.....................ওই যে একটা কথা আছে না পাইলে চাওয়া বাইড়া যায়
উৎসর্গ আমি অধমরে...........কেম্নে যে খুশি প্রকাশ করি.। কৃতজ্ঞ দাদা.........পাখি ভাই রাতের নৌকা দৌড়ানি আরো লিখা চাই.............তয় এহনি না উদাস অইলেই লিখখেন...................
আমাদের ক্ষুদা অনন্তকালের!! পেট ভরলেও মন ভরেনা !!
আপ্নের লেখা কই ? খালি ফাকি মারেন মিয়া !!!
সাধারন ঘটনা, বর্ননায় আসাধারন হয়ে ধরা দিলো।
মন্তব্য নিষ্প্রোয়জন।
মন্তব্য নিষ্প্রোয়জন।
মন্তব্য করুন