হ য ব র ল
মানুষের শরীর। কখন যে কি হয় বলা মুশকিল। কদিন আগে সকালে প্রজেক্টে গেলাম ভালই। দশটার দিকে কেন যেন ভাল লাগছিল না। কিন্তু সাড়ে দশটার দিকে পারচেজার ফোন দিল স্যার বিদ্যুৎ এর মেইন লাইনের কেবল টা কিনতে যাব, আপনার সময় হবে কি?
একে তো শরীর ভাল লাগছে না,তার উপর সকাল থেকে সার্টেল স্টাইলে বৃষ্টি হচ্ছে। যখন হচ্ছে অনেকটা সাপে নেউলের যুদ্ধের মত। এই বৃষ্টির জন্য প্রজেক্টের কাজ প্রায় বন্ধ।তবু কেন যেন বৃষ্টিটা আমি এবার ভীষন উপভোগ করছি।
আমার মনে হয় স্থান কাল পাত্রভেদে মানুষের অনুভুতিও ভিন হয়।এই যে বৃষ্টিটা এত ভাল লাগছে তার কারন আমার বর্তমান অবস্থান। চট্টগ্রাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি।এই শহরকে যত দেখছি সৃষ্টি কর্তার অপরূপ সৃষ্টি কৌশলে মুগ্ধ হয়ে প্রতি ক্ষণে সিজদা করছি।
আর এমন প্রাকৃতিক লীলা ভূমি যে দেশে আছে বা পৃথিবীর এমন সুন্দর এক্টি দেশে আমার জন্ম হবার জন্য নিজেকে ধন্য মনে করার পাশাপাশি সৃষ্টি কর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি
সমুদ্র পৃষ্টথেকে +৩০মি উপরে আমার প্রজেক্টের গ্রাউন্ড লেভেলে। পাশের পাহাড়ের চুড়ার লেভেল +৬০-৭০মি। প্রজেক্টের সামনের রাস্তার লেভেল +১২-১৩ মি। অর্থাৎ আমার সাইট অফিসে বসে সামনে তাকালে ৩০-৪০ মি উচু পাহাড়,পিছন দিকে তাকালে ১২-১৩ মি নিচে সিডিএ বিশাল রাস্তা। আমার অফিস টিনের ছাদের আধা পাকা বিল্ডিং। আহ বৃষ্টির ফোটা যখন টিনের চালে পড়ে, তখন সাতটি স্বরের সাথে আরও কত স্বর মিশে কত যে তাল তেরী হয় তার হিসেব মিলাতে সংগীত বিশেষজ্ঞও ৩৩ নম্বর পাবে কিনা সন্দেহ হয়। তবে যে যেই সংগীত মস্তিষ্কে ধারন করবে,তাল সুর লয় তাতেই সাড়া দিবে তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি।
বৃষ্টি ও বাতাসের ঝাপ্টায় সামনের দিকে তাকলে পাহাড়ের চুড়া বাদেও বিভিন্ন উচ্চতার যে গাছগুলো আছে, এদের নাচন কোদন,কখনো জংলিদের জংলী স্টাইলের ধাওয়া পালটা ধাওয়া কখনও কথক বা ভরত নাট্যমের নিত্য মনে হয়।
পাহাড়ের উপর যে বাড়িগুলো আছে,তাদের বসবাসরত মানুষগুলো এই বৃষ্টির সময় অর্ধদৌড়ে যখন এ ঘড় ও ঘর করে তখন...।
বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ ছাড়া শুধু জেনারেটর দ্বারা এত বড় প্রজেক্ট চালানো দু:সাধ্য ব্যাপার, তাই বিদ্যুৎ সংযোগ অতীব জরুরী। শরীর না চাইলেও মনের জোরকে সাথি করে বললাম,দুপুরের খাবার পর চলে এসো।
আড়াইটার দিকে পারচেজার লাবু এল। সংগে তার নিত্য সংগী পিকআপ ও পিকআপ ড্রাইভার সুমন। এরা দুজনই আমার বিশ্বস্থ ও নির্ভরযোগ্য।
আমার নতুন একটা অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করব। যারা জানেন ভাল,আর যারা জানেন না তাদের জন্য ভীষন কাজে দিবে,বিশেষ করে যারা নির্মাণ বা ডেকরেশনের কাজ করেন।
চট্টগ্রামে পুরাতন জাহাজ ভাংগা হয়,এই জাহাজ থেকে যে সব সামগ্রী বের হয় তার অধিকাংশই নির্মাণ বা আভ্যন্তরীন ডেকরেশনের কাজে ব্যবহার করা যায়। সবচেয়ে মজার বিষয় হল এই মালামাল গুলো অনেক সস্তা ও দর্শনীয় হয়। এই যেমন আমরা আজ ৬০০ ফুট লম্বা ২৫ আর এম সাইজের তারটি যে দামে কিনলাম সম পরিমান তার নয় বছর আগে তিনগুন বেশী দামে কিনেছিলাম। তবে এই সব মাল কিনতে হলে মালামালের গুনগত মান সম্পর্কে যেমন ধারনা থাকা দরকার তেমনি অনেক অনেক ধৈর্য থাকা প্রয়োজন।
যে ধরনের বৃষ্টির কথা বলছি তেমন বৃষ্টি এখনকার দিন আর দেখা যায় না। টলটল স্বচ্ছ থৈ থৈ পানি ছোট রাস্তা মেঠোপথ বা আইলের উপর দিয়ে হাল্কা স্রোতে বয়ে যেত। চলতে পথে এই সব ডুবন্ত পথের পানির স্রোতে সব ধরনের মাছকেই চলাচল করতে দেখেছিা। দিনে যেমন তেমন রাতে যেন মতস্য কুলের মাঝে গন্তব্যে পৌছার প্রতিযোগিতা চলত। এদের মাঝে বেশী তাড়া যেন কৈ নামক মাছটির। তবে গন্তব্যে পৌছার তাড়া নাকি শক্তির বড়াই তা মতস্য কুলই ভাল বলতে পারবে।
যে যা বলুন এই কৈ মাছটির ভাজা যে কত মজার, যারা খেয়েছেন,তাদের জিহবায় নিশ্চয়ই পানি এসে গেছে।
আজ থেকে চার দশক আগে মা যখন কৈ মাগুর শিং পুঠি অর্থাৎ দেশী মাছ ভাজা করত, চুলার ধারে পিড়ায় বসে মাছ ভাজা খেতাম,আজ চার দশক পর পুরাপুরি না হলেই কিছুটা কৈ মাছ ভাজার স্বাদ যে আমাকে স্মৃতি কাতরতায় ভোগাচ্ছে, তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব। তবে এই স্মৃতি কাতরতা সুখের চেয়ে দুঃখেরই বেশী। চার দশক আগে বাবা মা বেতের লম্বা হাতল ওয়ালা ছাতা,মানকচু বা কলার পাতা যখন যা দরকার বৃষ্টি বা রোদের ছায়া হয়ে আমাদের ছায়া দিতেন। আজ না ফেরার দেশে চলে যাওয়া এই মা বাবা কেমন আছেন জানিনা। তবে আমি যে ধর্মে বিশ্বাসী তাতে মা বাবার জন্য সন্তানের দোয়া নাকি আল্লাহ তায়লা কখনো ফেরত দেন,তা সন্তান যতই গোনাহ গার হউক।
সেই আশা সেই বিশ্বাস নিয়েই পৃথিবীর সকল সন্তানেরা সকল মা বাবার জন্য পড়ে যাচ্ছি,
রাব্বির হামহুমা কামা বাব্বি ইয়া নিছছাগিরা।
১২/৭/১৭ চট্টগ্রাম
মন্তব্য করুন