জীবন নদীর ওপারে
মানিকদী ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা
২৩/১১/২০২০
জীবন নদীর ওপারে//
(প্রথম পর্ব)
দূরের গ্রামে সামায় পল্লী বধুদের তালে তালে চিঁড়া কুটার শব্দ শুনা যাচ্ছে। একটি ক্ষুদার্ত শিয়াল সাড়ারাত খাবার যোগার করতে না পারার ব্যর্থতায় হুকা হুয়া শব্দে তার করুন আর্তনাদ ব্যক্ত করছে।প্রতিবেশী বনমালী কাকা ভোর বেলায় বনেদী গুড়গুড়িতে সুর তুলে দম দিতে দিতে কাজের ছেলে অরুন মানীকে গরুগুলো গোয়াল থেকে বের করে চাষে যাবার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। উনার মুখ নিসৃত ধোঁয়ার কুন্ডলী আকাশ পানে উঠার সাথে তার তীব্র কাশির শন্দ যখন চারপাশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে তখন ইহা যে কখনো কখনো কারও সকালের নিদ্রা ভঙের কারণ হয় তা বলাই বাহুল্য।
কিছু কিছু জমিতে অতিভোরে চাষ শুরু হয়েছে।দূরের হাটে যাবার জন্য কয়েকটি গরু এবং মহিষের গাড়ী ইতিমধ্যে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। তাদের চাকার চলার শব্দ সকালের পাখির কিচির মিচির শব্দের সাথে মিলে অন্যরকম শব্দ তুলে সকালের নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করছে। এরই মধ্যে গ্রামের চৌকিদার তার অর্ধ বয়স্ক বাইসাইকেলটি থেকে বহিরাঙ্গনে অবতরন করে হাঁক দিলেন। আকন্দ সাব বাড়ি আছেন নাকি? ও আকন্দ সাব।
আকন্দ সাব তখন ফজরের নামাজ পড়ে প্রতিদিনকার অভ্যাসমত কোরান তেলাওয়াত করছিলেন। চৌকিদারের হাঁক শুনে পাঞ্জাবিটা পড়ে বাইরে বের হয়ে আসলেন। চৌকিদার নিচু গলায় যা বললেন তার মর্মার্থ হলো-
গতকাল রাত ১২টার পর তার ছেলে নূর আকন্দ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। ডিসি সাব বলেছেন আজ দুপুর বারটার মধ্যে লাশ হাইস্কুলের মাঠে হেলিকপ্টারে করে আনা হবে। চৌকিদার আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু শেষ করতে পারলেন না। তার আগেই বৃদ্ধ ওরে আমার বাবারে,চিৎকার দিয়েই মূর্ছা গেলেন।
ক্ষনিকে সমস্ত দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়ে গেল। বাড়িশুদ্ধ আশপাশে কান্নার রোল পড়ে গেল। নূর আকন্দ যে ঘরটায় থেকে পড়াশোনা করতেন তার উত্তর -পূর্ব কোনার লিচু গাছটা থেকে কয়েকটি পাতা ঝরে পড়লো। গোয়াল ঘরে গরুগুলো খামাখাই হাম্বা-হাম্বা করতে লাগলো। বনমালী কাকার বাড়ির দুই তিনটা কুকুর একসংগে ঘেউ ঘেউ করে কেমন যেন একটা ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করলো বাড়ির পিছনেী বাঁশঝাড়ে যত পাখি ছিল সকলে তারস্বরে কিচির মিচির শব্দ করতে লাগলো। বাড়ির পোষা বিড়ালটা খামাখাই মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। এসবই যেন নূর আকন্দের মৃত্যু সংবাদে ব্যথিত হৃদয়ের করুণ আর্তনাদ মাত্র। (চলবে)
মন্তব্য করুন