নিসংগতা
মানিকদী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট,ঢাকা
২৫/১১/২০২০ খ্রীঃ
নিসংগতা//
গতপরশু গিন্নি মেয়েকে সাথে করে দিনাজপুর গেছেন। আমরা বাপবেটা বাসায়। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে অনলাইন ক্লাস প্লাস অনান্য বিষয় সহ আপন ভুবননিয়ে ব্যস্ত। খাবার টেবিলেও সময়মত পাই না। কাজেই একেবারে নিসংগ।
ওরা ট্রেন ধরার জন্য সন্ধা ৭টার (২৩/১১/২০২০) সময় বাসা থেকে বের হয়ে যাবার পর থেকে মনটা কেন যে এত খারাপ হলো বুঝতে পারছিলাম না।
কোরান শরীফ, হারমোনিয়াম, গিটার, কোনটার উপরেই কোন আকর্ষন নাই। ফেবু, হোয়াটসঅ্যাপে কিছুটা গুতাগুতি করলেও ইউটিউবে সিরিয়াল দেখতেও মন চাচ্ছে না। এখন তো মোবাইল, পিসি বা ল্যাপটপের পাশাপাশি Smart 4k UHD TV গুলোতে ইউটিউব, গুগল এবং মেইল সবই ব্রাউজ করা যায়। তবু কিছুই করতে মন চাচ্ছে না।
আমার ভাবনাগুলোর কাউকেই যেন খুজে পাচ্ছি না। আমার এই নিসংগতার সুযোগে ওরাও যেন সুযোগ নিচ্ছে।
আমি তো বড় কোন লেখক, কবি বা গীতিকার নই তাই এসময় বিখ্যাত বিখ্যাত লেখক কবি, গীতিকারদের লেখায় সুযোগ নেবার জন্য ওরা হয়ত লবিং করতে গেছে।
ওখানে যারা যারা সুযোগ পাবে তারা তো আর ফিরে আসবে না। যাদের অগত্যা কোথাও কিছু না হবে তারাই হয়ত ফিরে আসবে। তাও কবে আসবে কে জানে। হয়ত আর আসবেও না।
অনেক আগের আমার একটা লেখায় লিখেছিলাম
মন যে অকারনে কেন বিষন্ন হয়
কেউ কি বলিতে পারে?
কেন যে সদাই নাচিয়ে বেড়ায়
কেউ কি বুঝিতে পারে??
তবে এবার বিষন্নতার কারণ কিছুটা বুঝতে পারছি।
ঢাকায় এলে গিন্নিতো আমার পছন্দের খাবার, তার অফিস ও অন্যান্য কাজ নিয়া ব্যস্ত থাকে, মেয়েটা এটা সেটা নিয়ে সারাক্ষন আমাকে ধমকের উপর রাখে।
বাবা তুমি শুধু ময়লা করো।
ওষুধ খাওনি কেন?
কোক খাওয়া যাবে না।
মিষ্টি কেন খেলে?
আরো কত কি, আপনারা যারা মেয়ের বাবা তারা বাকিগুলো পূরন করে নেবেন, আপনাদের সব উত্তর জানা আছে?
গত দু,রাত ক্লান্তির কারনে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাই
কিন্তু রাত ২/৩টার সময় ঘুম ভেঙে যায় আর ঘুম আসে না। অন্য সময় এমন হলে কিছু লেখালেখি করি। কিন্তু ঔ যে উপরে বললাম, ভাবনাগুলো কোথায় হারিয়ে গেছে। তাই লেখালেখিও শিকেয়।
তবে গত দুদিন নষ্টালজিক অতীত স্মৃতিগুলো খুব মনে পড়ছে যা সুখ এবং দুঃখ দুটোই দিচ্ছে।
খুব মনে পড়ছে শ্রদ্ধেয় আব্দুল করিম বেপারী ও আমার ফুপা শ্রদ্ধেয় আব্দুল রশিদ মন্ডলের কথা।
জনাব বেপারীকে আমি নানা করে ডাকতাম। উনিও আমাকে খুবই আদর করতেন।
মসজিদের মাইকটা খারাপ হওয়ায় উনি নিজেই মাইকটা নিয়ে যান ঠিক করাতে। মাইকটা ঠিক করে ফেরার পথে উনার সাইকেলটা একটা মটর সাইকেলের সাথে ধাক্কা খেলে উনি পড়ে যান। মোটরসাইকেল চালককে ধরা গেলেও চিকিৎসার ক্ষতিপূরণ বা অন্য কোন অভিযোগ না করেই মোটরসাইকেল চালককে উনার নির্দেশে ছেড়ে দেয়া হয়।
কিন্ত দুদিন মৃত্যু নামক বন্ধুটির সাথে খুনসুটি করতে করতে জীবন নদীর ওপারে মৃত্যযানে চড়ে আপন গন্তব্যে গমন করেন।
যে ব্যক্তির অনেক ধনসম্পদ থাকার পরেও সারাক্ষণ মসজিদ মাদ্রাসা নামাজ রোজা নিয়ে পরে থাকেন, সংসারের মায়াকে পারিবারিক সান্যিধের সুখের উপর পাথর চাপা দিয়ে, জান মাল খরচ করে তাবলিগ জামাতের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকেন তাদের কাছে ক্ষনস্থায়ী এই দুনিয়ার ভোগবিলাসের চেয়ে ওপারের চিরস্থায়ী বাসস্থানে গিয়ে সৃষ্টিকর্তার সাক্ষাৎ পাওয়াটাই হয়ত বেশী আরাধ্য হয়ে থাকে। তাই হয়ত বেপারী সাব অল্প বয়সে সৃষ্টিকর্তার সান্যিধ্য লাভের জন্য কারো উপর কোন অভিযোগ না করেই চলে গেলেন মসজিদের মাইক ঠিক করতে গিয়ে মসজিদেও আর ফিরে এলেন না, পরিবারের কাছেও না, মানুষের জীবনের, উনার জীবনের পরম আরাধ্য উনি হয়ত পেয়ে গেছেন। (চলবে)
ধন্যবাদ ভাই
মন্তব্য করুন