নির্ভরযোগ্য পেশা নয়, নেশা
‘আমরা বন্ধু’ থেকে দীর্ঘসময় বিচ্ছিন্ন। এ ক্ষেত্রে স্বভাবসুলভ তৃতীয় হাতটি (অজুহাত) আমি তুলে ধরতে চাই না। তবে কারণ যে একটি আছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। রুটিরুজির প্রয়োজনে এখন অনেকটাই দৌড়ঝাঁপ করতে হচ্ছে। কোথাও স্থির হতে পারছি না। এটা বয়সের দোষ কী না তাও বোঝার ক্ষমতা অনুপস্থিত।
সাংবাদিকতা পেশাটা বর্তমানে গার্মেন্টসের চেয়েও অসচ্ছল বলেই মনে হয় (একান্তই আমার কাছে?)। অথচ এ পেশায় কেটেছে জীবনের অর্ধেকটা সময়। সেই ১৯৮৮ থেকে বর্তমান ২০১৬ সাল। পেশার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার সংখ্যা বাড়লেও পাল্লা দিয়ে বাড়েনি সচ্ছলতার পরিধি।
তারপরও বর্তমানে সংবাদমাধ্যমের কর্ণধাররা (প্রকাশক/সম্পাদক) এটাকে আত্মরক্ষা বা কালোকে সাদা করার কৌশল হিসেবে নিয়েছে। সাংবাদিক নেতারা যতোই অষ্টম বা নবম ওয়েজবোর্ড বলে মুখে ফেনা তুলুক না কেন, অধিকাংশ পত্রিকায় ন্যূনতম বেতনও (ভাতা দূরে থাক) নিয়মিত হচ্ছে না। না না আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার কথা বলছি না। ‘এ’ ‘বি’ ক্যাটাগরির পত্রিকাগুলোর অধিকাংশেরই এ অবস্থা্।
আমি একবার আমার অগ্রজ সাংবাদিক ভাইকে (গুরুত্বপূর্ণ নেতা) যদিও আমার এক সময়ের কলিগ ছিলেন, তাকে ফেসবুকে কমেন্টসে বলেছিলাম- ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের আগে অনিয়মিত বেতন যাতে নিয়মিত হয় সেদিকে দৃষ্টি দিন। আমার বক্তব্যটি হয়তো তার কাছে পাগলের প্রলাপ বলেই মনে হয়েছে। যে কারণে এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে উৎসাহ দেখাননি।
আমি অবারো বলছি, গার্মেন্টকর্মীরা তাদের বেতনভাতার জন্য প্রকাশ্যে দাবি-দাওয়া বা আন্দোলনে যেতে পারেন, সাংবাদিকরা এ সুযোগ পান না। কারণ এ বিষয়ে যারা মুখ খুলবেন বা উদ্যোগ নেবেন, তারা নিজেরাই বিশেষ সুবিধার কাছে বন্দি। সুতরাং বিজ্ঞাপনের ভাষায় বলতে হয়- ‘তুমি যতোই মাথা চুলকাও কোনো লাভ হবে না’।
বিজয়ের ‘ভি’ দিয়ে একটি পত্রিকার নাম। এর আগে এ পত্রিকাটির বিরুদ্ধে বেতনভাতার বিষয়ে ফেসবুকে আমি একটি কমেন্টস করেছিলাম । তাই তৃতীয় দফায় সেখানে আমার নিয়োগ অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে। কারণ তারা এমপ্লয়িদের ওপর যাচ্ছেতাই ব্যবহার করবেন বা বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করলেও টুশব্দটি করা যাবে না। যারা দেশের বিভিন্ন পেশাজীবীদের খারাপ-ভালো ১৬ কোটি মানুষের সামনে তুলে ধরেন, তাদের সমস্যার কথা বলতে বা লিখতে পারেন না। লিখলে পত্রিকা কর্তৃপক্ষের মান থাকে না। আমার পেটে দানা-পানি না জুটলেও তাদের মান যাওয়ার বিষয়টি আগে বিবেচনায় রাখতে হবে সাংবাদকর্মীদের।
পরিশেষে বলতে চাই, অনিশ্চয়তার পেশা সাংবাদিকতা এখন এ কারণেই কলুষিত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও অসততার দিকে ধাবিত হচ্ছে। পেটে ভাত না থাকলে ধর্মের দোহাই দিয়ে কী লাভ, বলুন?
মন্তব্য করুন