ইউজার লগইন

১২ই নভেম্বর ১৯৭০--- একটি ছোট্ট ঘটনা

আজ ভয়াল ১২ই নভেম্বর। ১৯৭০সালের এই দিনে ঘটে যায় প্রয়লংকারী ঘূর্ণীঝড়। প্রায় ১০ লক্ষ লোক মারা যায় এই প্রাকৃতিক দূর্যোগে। কি ভয়াবহ সেই সময়। সেই ভয়াবহ সময় যাদের উপর দিয়ে বয়ে গেছে শুধু তারাই জানে কি দুঃসময় ছিল তা।

সেই সময়ের একটি ছোট্ট ঘটনা। ঢাকা মেডিকেল কলেজের কিছু তরুন ডাক্তার সেচ্ছাসেবী দল হিসাবে সাহায্যের জন্য গিয়েছিল সেই উপকূলিয় আঞ্চলে। সারাদিন নৌকায় করে এক চর থেকে অন্য চরে ঘুরাঘুরি করে তারা ক্লান্ত হয়ে রাতে সন্দ্বীপে আশ্রয় নেয়। রাতের খাওয়া শেষ করে বাইরে এসে দেখে যতদূর চোখ যায় শুধু লাশের সারি। বাতাসে পঁচা গন্ধ। চারদিক নিঝুম শুধু সাগরের গর্জন ছারা কোন শব্দ নেই। সোলায়মান ভাবলেন, লাশ গুলি একটু পরখ করে দেখা যাক। যা ভাবা তাই কাজ। সবাই নয় ৪৫জনের দলের মধ্যে অসীম সাহসী আটজন যুবক একটি মাত্র পাঁচ ব্যাটারীর টর্চলাইট হাতে নিয়ে কাজ শুরু করে দিল। অন্যান্যরা ক্লান্তি, ও অলৌকিক বস্তুর ভীতির কারনে যেতে অস্বিকার করে।

একটার পর একটা লাশ। সারি সারি শোয়ান। দুইটি লাশের মাঝখানে পা দিয়ে লাশ পার হতে হচ্ছে। সামনে সোলায়মানে হাতে টর্চ। চারিদিকে শুধু বাতাসের শব্দ। একটি নিশাচর পশু বা পাখিও নেই সেখানে। পায়ের নিচে প্যাচপ্যাচে কাঁদা। সেই কাঁদায় বারবারই পা পিছলে যাচ্ছে। কখনও কখনও লাশের উপর কেউ উপুর হয়ে পরছে। সে এক অবর্ণনীয় অভিজ্ঞতা।

হঠাৎ সোলায়মানের পা পিছলে গেল আর তার হাত থেকে ছিটকে পরে গেল টর্চ। টর্চটা এমন একটা জায়গায় পরেছে যেখান থেকে টর্চের আলো পরেছে একটি লাশের মুখে। দেখে মনে হচ্ছে লাশটি মুখে পৈশাচিক হাসি নিয়ে বিকৃত ভঙ্গীতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। অন্ধকারে এগিয়ে যাবার কোন দরকার নেই ভেবে সোলায়মান ফিরে যাবার কথা বলে পিছনে ফিরল। ইতিমধ্যে সবার মাঝেই একটা ভয় কাজ করতে শুরু করেছে। সবাই বারবার করে পিছনে টর্চের আলোয় আলোকিত মুখটি দেখছে। যেন সম্মহিত করেছে সেই লাশ তাদের। সবার গা ছমছম করছে, এই অন্ধকারে তাদের আরও আধা মাইলের মত পার হতে হবে।

সোলায়মান সবার পিছনে। তার বারবার কানে আসছে পেছনে কার হাঁটার শব্দ। পেছনে বার বার তাকাচ্ছে সে। না এর মধ্যদিয়ে কোন মানুষের হেঁটে আসা সম্ভব নয়। তবু অন্ধকারে মনে হচ্ছে কে যেন আসছে? অন্ধকারের মাঝে মাঝে আবার বেশি আধাঁর। যেন কেউ এখানে কেউ ওখানে দাঁড়িয়ে।সব ঝাপসা, শুধু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে টর্চের আলো ফেলা মুখ।
তার মনে হচ্ছে তার পেছনে জন এই বোধ হয় তার কাঁধে হাত রাখল। এক একবার চিৎকার করে সামনের জনকে দ্রুত হাটঁতে বলছে সে। নিজেদের ভয় দূর করবার জন্য জোরে জোরে কথা বলছে তারা নিজেদের মধ্য।

একবার লাশ পার হবার জন্য একটি পা রেখে যেই অন্য পা তুলেছে সাথে সাথে সেই লাশটি হাত ভাঁজ করে তার পা চেপে ধরে। তার সারা শরীর ঘেমে উঠল। পা যত টানাটানি করছে পা কিছুতেই ছাড়ছে না লাশ। প্রচন্ড আতঙ্কে সে চিৎকার করে উঠল। তার চিৎকার শুনে সামনে দলের সবাই থেমকে গেল। পিছন ফিরে চাইল সবাই।

দেখে সোলায়মান ওখানে চিৎকার করছে আর খুব ধস্তাধস্তি করছে। দুইজন এগিয়ে এল কি হয়েছে দেখার জন্য। অন্যরা লাশ পার হয়ে আসতে পারছে না। যা দেখল তাতে সবার চোখ স্থীর। সবাই মিলে পা ধারে টানাটানি করছে কিন্ত কিছুতেই কিছু না করতে পেরে তাকে ধরে টানতে লাগলো। লাশ উঠে আসছে কিন্তু পা ছাড়ছে না। সবাই তখন লাশগুলির উপরেই দাঁড়িয়ে গেছে। শত টানাটানিতে লাশ পা ছাড়ছে না। তারা হাঁপিয়ে পরেছে। সোলায়মান বুঝতে পেরেছে তার আর মুক্তি নেই। লাশ পায়ে নিয়ে টেনে চলতে চেষ্টা করতে করতে সে ক্লান্ত। সে বসে পরল। সবাইকে বিকৃত স্বরে বলল --যদি বাঁচতে চাও, চলে যাও। আমি থাকি। কেউ তাকে ছেড়ে যেতে রাজী হল না। সে বসে পরল অন্য লাশের উপর।

তৎক্ষনাৎ তার মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেল। সে লাশের হাতটায় হাত রাখল। শক্ত হাতে লাশের ভাঁজ হয়ে থাকা হাতটা ধরে সোজা করল। আস্তে করে পা টেনে নিল। এ দেখে সবাই হেসেই ফেললো। এত সহজ একটা জিনিস অথচ শুধু মাত্র পরিবেশের কারনে কত কঠিন হয়ে উঠেছিল।

আসলে দলনেতা যেই পা ফেলেছে পাটি পরেছে লাশের কনুই এর কাছে এমন এক জায়গায় যাতে চাপ লাগার সাথে সাথে ভাঁজ হয়ে গেছে। ফলে শক্ত লাশের কনুইএর ভাঁজে পা আটকে গিয়েছে। ডাক্তাররা এর ভাল ব্যাখ্যা দিতে পারবেন মেডিকেল টার্মগুলি ভুলে গেছি।

পোস্টটি ১৩ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

আরাফাত শান্ত's picture


যদিও ঘটনা প্যাথেটিক তবুও মজা পাইলাম পড়ে!
ভালো লাগলো আপু!

সামছা আকিদা জাহান's picture


ধন্যবাদ আরাফাত। ঘটনার নায়ক আমার বাবা।

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


পড়তেছি

সামছা আকিদা জাহান's picture


বি বা পড়তেই থাকুন। পড়া শেষে আওয়াজ দিয়েন।

আসমা খান's picture


মহা দুর্যোগের সেই ভয়াবহ ক্ষতির দিনটি আমরা স্মরন করি Sad

সামছা আকিদা জাহান's picture


শুধু স্মরন নয় আমাদের এখন অবশ্যই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের নির্মমতা থেকে বাঁচার জন্য সচেতন হতে হবে। আমরা এখনও সেই আগের মতই মার খাই আর ভাগ্য ও আল্লার হাতে সব ছেড়ে দিয়ে বসে থাকি।

গ্রিফিন's picture


বনের্বাঘে খায়নাগো বৈন মনের্বাঘে খায় Sad

সামছা আকিদা জাহান's picture


Laughing out loud

মীর's picture


Sad Sad

১০

সামছা আকিদা জাহান's picture


১১

জটিল বাক্য's picture


সাহস, কষ্ট আর মানবিক একটি ঘটনা বর্ণনার জোরে মজার হয়ে উঠেছে।
============================

১২

সামছা আকিদা জাহান's picture


ধন্যবাদ জটিল বাক্য।

১৩

তানবীরা's picture


চাচার সাহসিকতার গলপ পড়তে ভাল লাগলো

১৪

সামছা আকিদা জাহান's picture


কাল রিংটা হারিয়ে খুব মন খারাপ ছিল। মনে হচ্ছিল বাবাই বোধ হয় অভিমান করে সরে গেল। রাতে বসে বসে বাবাকে ভাবতে ভাবতেই গল্পটা মনে পরে গেল। লিখলাম ,ছোট বোন টাকে পড়ে শুনালাম। দুই বোন চুপচাপ ফোনের দুই প্রান্তে বসে কাঁদলাম।

১৫

তানবীরা's picture


মন খারাপ থাকাটাই স্বাভাবিক। আংটি খুজে পেলে জানিওতো

১৬

সামছা আকিদা জাহান's picture


ও টা আর পাব না। ওকে বিদায় দিয়েছি। ফেসবুকে আমার প্রফাইল পিক এ হাতে আংটিটা দেখা যাচ্ছে। খুব সাধারন কারুকাজ বর্জিত কিন্তু বড় অসাধারন।

১৭

জ্যোতি's picture


গল্পটা পড়ে মন্টা খারাপ লাগলো, আবার মজাও পেলাম।
আপনার মন ভালো হয়েছে?

১৮

সামছা আকিদা জাহান's picture


কেমন আছ জ্যোতি? হ্যাঁ আপু ভাল আছি।

১৯

সাবেকা's picture


পড়ে মন খারাপ হল,আপনার লেখার গুণে মনে হল যেন সব চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি ।

২০

সামছা আকিদা জাহান's picture


ধন্যবাদ

২১

মিশু's picture


জন্মস্থানের ঘটনা পড়তেছি

২২

সামছা আকিদা জাহান's picture


বাহ সন্দ্বীপ আপনার বাড়ি ,জেনে ভাল লাগোল। ছয় দফা আন্দোলনের প্রথম সমর্থক ঢাকা মেডিকেল কলেজের কিছু তরুন যুবক। তাদের নেতৃতে ছিলেনএক তরুন । বঙ্গবন্ধু যাকে পাগলা বলে ডাকতেন।

২৩

দূরতম গর্জন's picture


প্রকৃতির বিরূপ এখন যেন বিরল

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

সামছা আকিদা জাহান's picture

নিজের সম্পর্কে

যতবার আলো জ্বালাতে চাই নিভে যায় বারেবারে,
আমার জীবনে তোমার আসন গভীর আন্ধকারে।
যে লতাটি আছে শুকায়েছে মূল
কূড়ি ধরে শুধু নাহি ফোটে ফুল
আমার জীবনে তব সেবা তাই বেদনার উপহারে।
পূজা গৌরব পূর্ন বিভব কিছু নাহি নাহি লেশ
কে তুমি পূজারী পরিয়া এসেছ লজ্জার দীনবেশ।
উৎসবে তার আসে নাই কেহ
বাজে নাই বাঁশি সাজে নাই গেহ
কাঁদিয়া তোমারে এনেছে ডাকিয়া ভাঙ্গা মন্দির দ্বারে।
যতবার আলো জ্বালাতে চাই নিভে যায় বারে বারে।