দিনে দিনে বয়স বাড়ে...
জানুয়ারী মাসটা আমার খুব প্রিয় মাস। স্কুলে ঠিকঠাক মতো ক্লাস হতো না চলতো স্পোর্টস। আর এই চান্সে আমরা আমাদের মতো খেলাধুলায় মত্ত থাকতাম। কিন্তু সবাই না বেশীর ভাগই ছেলে স্কুলে যেয়ে প্যারেডের জন্য কাজ করতো। ঐখানেই থাকতো। আমাদের হাউজ সিস্টেম ছিলো অনেকে ছিলো হাউজের নেতা। তখন তো আর বছরের প্রথম দিনেই বই দিতো না শেখ হাসিনার মতো তাই আমাদের দিন কাটতো খেলাধুলা আর হাসি তামাশা আড্ডা দিয়ে। কিন্তু প্রিন্সিপাল কমান্ডার মোসলেউদ্দিন সাহেব ছিলেন এক পিস তিনি তার জিপ হাকিয়ে আমাদেরকে খুজতেন। মাঝে মধ্যেই ধরা খেতাম। আর খাইলেই সেই মুহুরতেই মাইর স্টার্ট এরপর কলেজে নিয়ে গিয়েই বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে দাড় করিয়ে রাখা। এরপর কিছু দিন এই অপমানে মন খারাপ থাকতো। এমন সব অপমান করা মুহুর্তেই আসতো আমার জন্মদিন। খুব মেজাজ খারাপ থাকতো। স্কুলের জীবনে কোন কালেই আমি জন্মদিন নিয়ে খুব একটা ভাবতাম না। বাসাতেও তাই ছিলো জন্মদিন মানেই ভালো মন্দ খাবার দাবার। আর কিছুইনা। এই দিনটার কথা খালি আমিই মনে রাখতাম। কলেজে থাকতে যেহেতু পিরিতি ছিলো তাই জন্মদিন নিয়া উচ্ছাস ছিলো বেশি। ইংরেজি প্রাইভেটের টাকা মেরে সঞ্চয় করে বন্ধু বান্ধব নিয়া ব্যাপক খানাদানায় দিন যাইতো।
ঢাকায় এসে শুরু হলো আমার জন্মদিন বিরোধী দিন যাপন। জন্মদিনের দিন বাসা থেকেই বের হতাম না। পারলে পরের দিন চট্টগ্রাম চলে যেতাম এইভাবেই কাটতো। ২০০৭ থেকে আসলো ব্লগ ফেসবুকের দিন। দেখি লোকজন সমানে উইশ করে। এত উইশ দেখে মনটাই ভালো হয়ে যায়। মাঝে মধ্যেই জগত সংসারে বিরক্ত হয়ে আমি নিজেই নিজের মরন কামনা করি। কারন নিজে নিজে তো কখনওই আর মরতে পারবো না স্রষ্টার অনুগ্রহ লাগবে। কিন্তু যখন দেখি এত উইশ আর বাবা মা ভাই ভাবীদের এত ভালোবাসা তখন দুইশো বছর বাচতে ইচ্ছা করে।
এবার আমার জন্মদিনে রিয়েল লাইফ ফ্রেন্ড উইশ করে নাই। যাদের সাথে প্রতিদিনই দেখা হয় আড্ডা হয় তারা সবাই জানার পরে উইশ করছে ইচ্ছা ছিলো তাদেরকে আলমাহবুবে খাওয়াবো। তারা সবাই শুক্রবারে ব্যস্ত ছিলো সময় করতে পারে নাই লাঞ্চের তাই আমারো টাকা বেচে গেছে। দিনটা কাটছে বলা যায় একা একাই। চায়ের দোকানে বসা ৮-১০ টা দিন যেমন যায়। ভাবছিলাম মিরপুর ১৪ তে যাব। সেখানে কিছু। ভেজাইল্লা বাল্য বন্ধু আছে তাও যায় নাই আলসেমিতে। এশার নামায পড়তে গেলাম নুর মসজিদে। আমি আবার নুর মসজিদের সম্মানিত চাঁদা দেয়া মেম্বার। সেখানে যথেষ্ট সতর্ক ভাবে রাখা সত্তেও আমার মাত্র সাড়ে সাতশ টাকা দিয়ে কেনা দুই মাস বয়সী স্যান্ডেলটা হারালাম। অতো মন খারাপ হয় নাই। ক্লাস নাইনে থাকতে ১০০০ টাকা দামের এক জুতা কেনার দুই দিনে হারিয়ে হু হু করে কাদছিলাম। এরপর জীবনে এত কিছু হারাইছি যে এই সব নিয়া আর মাথা ঘামাই না। আমি তখন খালি পায়ে হাটবো নাকি রিকশা নিয়ে বাসায় যাবো এমন সময় মানি ব্যাগে দেখি কোনো ভাংতি নাই। এদিকে মোয়াজ্জিম সাহেব তার একটা স্যান্ডেল আমাকে দিয়ে বললেন এইটা নিয়া যান পায়ে ব্যাথা পাবেন। আমি তা না নিয়ে খালি পায়েই হাটা শুরু করলাম। লোকজনের দেখি আমার পায়ের দিকেই চোখ পড়ে খালি আমি টেনশন না নিয়ে ব্যস্ততার ভান করে হেটে গেছি। পাঞ্জাবী পড়া ছিলাম অনেক বলদই ভাবতে পারে আমি হয়তো হিমুগিরিতে ব্যস্ত। কিন্তু সেই সব আতলামি করার কোনো খায়েশ যে আমার নাই তা কারে বুঝাই! তাই বাসা থেকে স্যান্ডাল নিয়েই আবার বের হলাম। ২৫ হয়ে গেলো কিন্তু লোকজন বলে এখনো নাকি আমি আচরনে কিশোরসুলভ। তাই অঞ্জন দত্তের গানের মতো করেই বলি আমার বয়স বাড়ে আমি বাড়ি না!
বলদরা যদি ভাবে তাইলে ভাবতে দেও না। তাগোরে আবার বুঝানির চেষ্টা করার কি কাম?
ব্যাছাড়া! স্যান্ডেল হারিয়ে মনের দুক্কে পুষ্ট দিছে
জন্মদিন আমার কাছে সব সময় একটা বিশেষ দিন
ঐ দিন নিজেকে ইসপিসাল মনে হয়
২৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত ছেলেদের আত্মবিশ্বাস থাকে তুঙ্গস্পর্শী। শুভকামনা রইলো ব্রাদার।
wish you best of luck!
খালি পায়ে হাটা স্বাস্থ্য সম্মত না, তাই এই আতলামীটা করার ইচ্ছে নাই। তবে বাদাম বিক্রির ব্যাপারটা কিন্তু এখনও মাথায় রেখেছি। যেকোনদিন বিক্রি শুরু করেই দিব। আমারও বয়স বেড়েই চলে, আমি বাড়ি না।
বয়স বাড়ছে এটাই বড় কথা , আপনি না বাড়লেও ক্ষতি নাই ।
তোমার লেখা পড়লে আসলেই মনে হয় কোনো কিশোরের লেখা পড়ছি। ক্লাস নাইনে থাকতে ১০০০ টাকা দামের এক জুতা কেনার দুই দিনে হারিয়ে হু হু করে কাদছিলাম। এরপর জীবনে এত কিছু হারাইছি যে এই সব নিয়া আর মাথা ঘামাই না। আহা! কি সুন্দর বললা!
অসাধারণ লাগলো, তবে দিন যতো যাবে, হারানোর পাললা ও যাবে বেড়ে
ব্যাছাড়া! স্যান্ডেল হারিয়ে মনের দুক্কে পুষ্ট দিছে
জন্মদিন আমার কাছে সব সময় একটা বিশেষ দিন
ঐ দিন নিজেকে ইসপিসাল মনে হয়
বড়ো হতে হতেই জানা যাবে হারানোর পাল্লা ভারি হবার ব্যাপারটা, ঠিক এইসব নিয়া মাথা ঘামানির কোনই মানে নাই।
"আমার বয়স বাড়ে আমি বাড়ি না"-আল্লাহ বাঁচাইছে!
অনেক ভালো লাগল
মন্তব্য করুন