আজ খেলা শেষ, আর জমছে না!
আমার এক ক্লাসমেট ছিল, আমার সাথে নামের মিল। ওর মেইন নাম আরাফাত, আমার নাম আলী আরাফাত জাকারিয়া। খুলনাতেও এক সাথে ক্লাস করেছি, চট্টগ্রামেও তাই। বন্ধু ছিলাম না তেমন, দেখা হলে কথা হতো। আমরা যখন টেন্ডুলকার বনাম লারা কে সেরা তা নিয়ে ঝগড়া করতাম, তখন তাঁরা কলোনীর কোন গাছের পেয়ারা চুরি করা যায় তা নিয়ে ওয়ার্কআউট করতো। ইন্টারের পর সেই ছেলে বাপের টাকার জোরে নরম্যাল সিম্যান হিসেবে জয়েন মার্চেন্ট শীপে। আস্তে আস্তে নানান লম্বা সফর দিয়ে দিয়ে টাকা পয়সা ভালোই কামায়, পদোন্নতি হয়, ট্রেনিং করে জাপান থেকে। তাঁর বাবাও বড়লোক, নেভীর মিশনে কুয়েতে গিয়ে চিটাগাংয়ে এক তিনতলা বাড়ী করেছে। বোন একটার বিয়ে হয়ে গিয়েছে নেভীর এক অফিসারের সাথে। যাই হোক সেইসব জিনিস আলোচনায় আসবে না। আলোচনায় আসবে সে কঠিন দূঃসাহসিক মুডে পালিয়ে বিয়ে করেছিল বছর ছয়েক আগে। তাঁর মা শত চেষ্টা করেছে, সিনেমার কায়দায় ছেলেকে লোক পাঠিয়ে পিটিয়ে মাথা ন্যাড়া করে, বাসায় আটকে রেখেছে। কিন্তু হোগি পিয়ার কি জিত, যে মেয়েকে বিয়ে করেছিল খুব সুন্দরী না হলেও অনেক মেধাবী। চিটাগাং ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ পড়তো, প্রথম সারির ছাত্রী। ২ বছর তাঁরা ভার্সিটির পাশে এক রুমের সাবলেট থেকে দিন চালিয়েছে। আরাফাত শিপে আসছে গেছে মেয়ে সেখানেই থাকতো। কখনো নিজের বাসাতেও যায় নাই। দু বছর পরে সব ঠিক হলো, বাসায় মেনে নিলো। কিন্তু নতুন সমস্যার শুরু। মেয়ে দানে দানে তিন বছরে বাচ্চা নিতে গিয়ে তিন বার মিসক্যারেজ হয়েছে। দেশী বিদেশী নানান ডাক্তার দেখিয়েও লাভ হয় নাই। এমনিতেও মেয়ে প্রচন্ড ভাবে ভেঙ্গে পড়ছে তাঁর মাঝে কোন এক হুজুর ঘোষনা করলো, মেয়ের সাথে জ্বীনের সম্পর্ক আছে। হুজুরের বোনাস ঘোষনা- নতুন একটা বিবাহ করান। বন্ধুও পাল্টে গেছে। প্রেম ভালোবাসায় খরা, বউকে না জানিয়েই নতুন মেয়ে দেখছে তাঁর মা, ডিভোর্স হয়ে যাবে সামনেই। জানি না এখন কি আপডেট! তবে আমি ওর এত খবর জানতাম আমার এক বন্ধুর কারনে। সেই বিয়ের উসিলায় আমার বন্ধুটি ব্যাপক দৌড় ঝাপ করেছিল, থানা পুলিশের ভয়ে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়েও ছিল। সে আমাকে বলেছিল আগে যদি জানিতাম এই হবে হাল, তবে কখনোই হতো না বিয়েটা। আমি হেসে বলে উঠি, তুই কি গড যে আগে থেকে জানবি? মনের আসলেই কোনো মর্জি নাই। হুট করে মাঝ রাতেই আমার এই পুরানো গল্পটা জানাতে ইচ্ছে করলো!
অবশ্য আমার মতো নাদান লোক এইসব সম্পর্কের রাজনীতি ও হিসাব নিকাশ বুঝি কম। আমি খালি ফ্যাক্ট শুনি পুলকের উসিলায়। মাসে ১৩-১৪ টা ডিভোর্সের কেইস পায় পুলকদের চেম্বার। আশ্চর্য ব্যাপার হলো পুলকরা বেশীর ভাগই কেইস পায়, কেরানীগঞ্জ, পুরান ঢাকা কিংবা ধামরাই থেকে। বেশীর ভাগই মধ্যবিত্ত পরিবার। স্বামীরা যেইসব ডিভোর্স কেস আনে, সেই সবে অভিযোগ বঊ শ্বাশুরীর সাথে মিল মিশ খাওয়াতে পারে নাই, বউ বেয়াদব, বউয়ের অন্য রিলেশন আছে। আর বঊদের ঘুরে ফিরে অভিযোগ দুটাই। স্বামী ড্রাগ এডিক্ট কিংবা স্বামীর আরেক প্রেম। তবে এতে পুলকদের চেম্বারের অবস্থা ভালো। ডিভোর্সের পেমেন্ট ভালো। ক্লায়েন্ট স্বেচ্ছায় বেশী টাকা দিতে রাজী। আবার আরেক ধরনের ডিভোর্সের কেস পেলে ভালো লাভ। তা হলো স্বামী স্ত্রীর দীর্ঘদিনের সংসার, স্বামী কি মনে করে নতুন বিয়ে করলো আবার। সন্তান, প্রথম বউ, সেকেন্ড ওয়াইফ কে কি পাবে সম্পত্তির তা নিয়ে আইন আদালত, পারিবারিক আইন সালিশী। এক আজব কিস্তা কারবার বটে।
আমার আরেক কাছের বন্ধু। মেধাবী ছেলে। ইউনিভার্সিটিতেই প্রেম। তাঁদের ক্যাম্পাসে গেলে তাঁদের জুটি ঈর্ষা করে অনেকেই, কঠিন প্রেম ভালোবাসা। বিয়ে তো হবারই কথা ছিল। হয়েও গেল। তারপর বিয়ের পর জানা গেল আমার বন্ধুকে আর তাঁর ওয়াইফের পছন্দ না। কেন? ওয়াইফ বলে আমার এইসব সংসার ভালো লাগে না। ২ মাসও এক সাথে থাকে নাই নতুন ফ্ল্যাটে। ওয়াইফ থাকে ওয়াইফের মতো এক শহরে, আরা আমার বন্ধু ইচ্ছে করেই চাকরী নিয়ে চলে গেছে চিটাগাংয়ে। শেষ। ডিভোর্স হয় নাই- কিছুই হয় নাই কিন্তু এক সাথে আর থাকে না। বন্ধুর বাবা মা কান্নাকাটি করে, বন্ধুকে বোঝায় নতুন কোনো সম্পর্ক জড়াতে, বন্ধুর আর এইসবে মন নাই। সে এখন আড্ডার মধ্যমনি, সেলারীর অর্ধেক টাকাই ভাঙ্গে বন্ধুদের পেছনে। চটপটি, বিরিয়ানী, কফি, পিৎজা ননস্টপ খালি খাবার খাওয়ানোর উপর আছে। এইসব নিয়েই ব্যাস্ত। আমি আর বিশেষ ওর খোজ খবর নেই না। এত টাকার গরম আমার পছন্দ না!
আমি নিতান্তই কিশোর টাইপের চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুরি। আমার মাথায় আসে না, কেন টিকবে না সম্পর্ক। এত আয়োজন এত চেনাজানা এত ভালোবাসাবাসির বিয়ে মাত্র কয়েক মাসের ব্যাবধানে এত ভেঙ্গে যাবার হুমকির ভিতরে থাকবে কেন? হতে পারে উত্তরাধুনিক সমাজ, হতে পারে এটাই এই যুগের নিয়ম, হতে পারে যে মুখোশ পড়ে থাকে মানুষ তা বিয়ের পরে খুলে যায়। হতে পারে এখন আর কেউ মানিয়ে চলতে পারে না আগের মতো, হতে পারে এখন আর এই প্রতিদিন ভাত ডাল আর কারো ভালো লাগে না, জীবন চায় বিরিয়ানী। হতে পারে ভাবলে অনেক কিছুই। কিন্তু একেকটা সম্পর্কের ভেঙ্গে যাওয়া মানে আসলে দুই পক্ষেরই পরাজয়। হয়তো সেখানে কেউ কেউ মুক্তির স্বাদ পায় কিন্তু মুক্তি আর কই? এক ধরনের ফোর্সড রিলিফ আর কি। তবে দিন যাবে, দেশ উন্নত হবে, জীবন যাত্রার মান বাড়বে আর পাল্লা দিয়ে ভাঙ্গবে বিয়ে। কে দোষী কে নির্দোষ এইসব হিসেবে না গিয়ে, যারা বিবাহ করবে তাঁদের নিজেদেরই কেয়ারফুল হওয়া উচিত। কারন এক মনিষী বলেছিলেন, বিয়ে হলো সেই জিনিস যে ১ গ্লাস পানি পান করার জন্য, এক সমুদ্রে সারাজীবন সাতার কাটা। আমাদের আগের জেনারেশনের মানুষেরা সেই সাতার কাটতো কোনো চিন্তা ছাড়াই। এখন আর কেউ সাতার কাটতে চায় না সমুদ্রে, কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই আরেক সাগরেই ঝাপ দেয়!
কঠিন কথাবার্তা তবে পুরাই সলিড।
এভাবে ভাবতে ভালো লাগে না। সব সত্যি আসলে সহজে হজম হয় না।
লেখছি আর কি, ওতো ভালো কিছু হয় নাই!
অসম্ভব দরকারী একটা পোস্ট। এবং সেই সাথে সাথে সময়োপযোগী।
থ্যাঙ্কস দোস্তো!
যাদের ভালবাসায় ভালবাসাই থাকে না তাদের দুনিয়াটা এভাবেই ভাগ হয়ে যায়। এই হচ্ছে দেশের সামগ্রিক অবস্থা !
অনেকদিন পর আসলেন, ভালো আছেন নিশ্চয়?
বাচচা না হওয়ার কারণে যদি বউরে ডিভোর্স দেয়, নগদে বন্ধুরে/ক্লাসমেটরে ডিভোর্স দিবা। কুততা শালা
নইলে নিজের নাম বদলায় ফেলবা
এমনিতেও সে আমার বন্ধু ছিল না। খোজ খবর জানি আর কি!
মন্তব্য করুন