ব্রেইনলেস, কাট-পেষ্ট হিন্দি সিনেমা দেখা!
রোজা রমজানের দিন যদিও সিনেমা টিনেমা নিয়ে লেখা ঠিক না, তাও লেখতে বসলাম। কারন এই অলস দুপুরে আর তেমন কিছু করার নেই। বসে বসে বই পড়া ছাড়া, রোজা রেখে দিনে বই পড়ায় কনসেন্ট্রেশন পাই না। তাই হয় টিভি নয়তো নেট এইটুকুই ভরসা, আম্মু ফোনে জিগেষ করে কোরআন পড়ি কিনা, বলি পড়বো কিন্তু পড়া আর হয় না। আসলে কেমন জানি দূরের দূরের লাগে এইসব সিরিয়াস ইবাদত বন্দেগী। আমার আম্মু অবশ্য আমাকে ছোটবেলা থেকেই ব্যাপক চেষ্টা করছে, হুজুর বানানোর। হলাম আর কই? যাই করি দায়সারা ভাবে। হলাম না আলেম, হলাম না জালেম। হলাম মাঝামাঝি সুবিধাবাদি মানুষ। সেই সুবিধাবাদী মনতো রোজার দিনেও হিন্দি সিনেমা নিয়ে লিখতে চাইবেই আবার নামাযও পড়বে। রোজা যাচ্ছে ভালোই। খালি বাড়ীর মতো ভালো খানাদানা হয় না, তবে যা হয় তাই খারাপ না। যেমন ধরুন কাল, আর্জেন্টিনার খেলা, কান্নাকাটি করে জিতলো- খেলা শেষেই একটু আগে ভাগে সেহেরীর ব্যাবস্থা, শান্ত ভাইয়ের বাসায় গরুর মাংস দিয়ে ব্যাপক খেলাম। তার আগে ইফতারীও হইছে হেভীওয়েট। রাতে আর কিছু খাই না। ইফতার ও সেহরী যা পাই শুধু গিলি, যদিও খাবার দাবার গুলো স্বাস্থ্যকর কিছু না, বুয়ার রান্না করা সেহেরীও যা, বাইরে থেকে কেনা ইফতারীও তা। ভাইয়ার অফিসে এখনও যেয়ে ইফতারী শুরু করি নাই। আবীর আসে অফিস থেকে দুই বন্ধু একত্রে ইফতারী কিনে খাই। ইফতারী কেনাও এখন কম্পিটিশান, জিলাপী কিনতে গেলে লাইন দাও, ভালো জায়গায় ইফতারী কিনতে গেলে ধাক্কা ধুক্কা মেরে আগে যেতে হবে, হালিম ভালো নাই, আর কেনা শেষে বাসায় এনে দেখা যাবে টাকা ঠিকই রাখছে কিন্তু জিনিস কম তাই ভালো লাগে না বাইরের ইফতারী। তাও গিলি, সহানুভুতিশীল লোকজন দাওয়াত দিবে সামনেই এই স্বপ্ন দেখে প্রতিটা রোজার দিন পার করি। কাল পুলক আমার কথা ভেবে আন্টির বানানো সব্জি বড়া আর আলুর চপ ও পাঠালো অনেক গুলো, দারুন টেষ্ট। তাই বাসায় বানানো ইফতারী যারা খান তারা নিজেদেরকে খুব লাকী ভাবতে পারেন। আব্বু ফোন দেয়, বলে উঠে শান্ত তুই ইফতারী কত খেতে ভালোবাসিস, সেই কথা মনে হলে মন খারাপ হয়। আমি বলি তুমি আর আম্মু টেনশন ছাড়া খাও, আমি আসতেছি সামনেই।
যাই হোক আসল কথায় আসি, আজ যেসব সিনেমার কথা বলবো সেসব রোজার আগেই ম্যাক্সিমাম দেখে ফেলছি। রোজার সময় হিন্দি সিনেমা দেখা হয় না। টরেন্টে সিরিয়াল নামাই। ব্রেকিং ব্যাড দেখতেছি, টু এন্ড হাফ ম্যানের সিজন ধরে নামিয়ে দেখছি, ফ্রেন্ডসের পুরো সেট ধরে ডিভিডি আছে বাসায়। তাই সময় চলে যায় এইসব দেখতে দেখতে। এইসব এবসার্ড সিটকম দেখলেও ভালো লাগে। কিন্তু হিন্দি সিনেমা যে এখন কি মানে লেইম হচ্ছে তা দেখে দেখে অবাক হই। অবশ্য হিন্দি সিনেমা লেইম ছিল না কবে?
অক্ষয়কুমারের 'হলিডে' দেখলাম। তামিল পরিচালক এ আর মুরগাদাসের বানানো। তাঁরই সিনেমা 'থুপাক্কি' রিমেক। 'থুপাক্কি' আমি দেখছি আগেই, তাই হলিডে আমার কাছে বোর লাগছে। আর সোনাক্ষী সিনহা রে সহ্যই হয় না, আর অক্ষয়কুমার তো সেই ই, সানি দেওলের আরেক ভার্সন। সিনেমাটা ভালো ব্যাবসা করছে, আঠারো দিনে ১১১ কোটি রুপি। কিন্তু আমি এই কাটপেষ্ট একশন সিনেমায় উত্তেজনা বোধ করি নাই। এইচ আদ্যক্ষরের আরেক সিনেমা দেখলাম, সাজিদ খানের 'হামশকলস'। চুড়ান্ত ব্রেইনলেস মুভি, কাতুকুতু দিয়েও হাসায় তাও হাসি আসে না। উদ্ভট গল্প, আজাইরা টুইস্ট, জঘন্য সব কাজকারবার। বিশেষ করে ছেলেকে মেয়ে সাজানো যে কি পরিমান ডিষ্টার্বিং তা বলার মতো না। রিতেশ দেশমুখের কমেডি সেন্স ও এপিয়ারেন্স আমার পছন্দের কিন্তু এই সিনেমাতে তা জঘন্য। কোন এক প্রভাবশালী পত্রিকা এই সিনেমাকে রেটিং দিয়েছে পাচে শুন্য দশমিক পাঁচ। আরেক পত্রিকা দিয়েছে ১, আড়াইয়ের উপর কেউ দেয় নাই। তাও সিনেমা ভালো হিট, প্রচুর মানুষ দেখছে। আরেক সিনেমা দেখলাম ম্যায় তেরা হিরো। পাগলু টুয়ের হিন্দি ভার্সন, এই সিনেমাও হিট। ফালতু অভিনয়, ফালতু স্ক্রিপ্ট, ফালতু সব কিছুই। তাও এইসব সিনেমা মানুষ দেখে, আমরা ডাউনলোড করে দেখি। শেইম অফ আস। আরেকটা সিনেমা দেখলাম এইটাও এইচ আদ্যক্ষরে নাম, 'হিরোপান্তি, টাইগার শ্রফের, পুরাই কারিনা কাপুরের মত দেখতে যে নায়ক। দক্ষিণের সিনেমা 'পারুগু' থেকে নেয়া। একই সিনেমা কলকাতাতেও হয়েছিল। হিন্দিটা এর ভেতরে সব চাইতে ফালতু। জ্যাকি শ্রফের পোলাটা কোনো কামেরই না। তবে মজা লাগে যখন টাইগার শ্রফ নায়িকার সাথে কথা বলে, রোমান্স করে, মনে হয় কোনো লেসবিয়ান মুভি দেখছি!
এরভেতরে ব্যাতিক্রম আছে, মহিত সুরির বানানো 'ইক ভিলেন'। যদিও এইটাও কোরিয়ান সিনেমা 'আই সো দ্যা ডেভিল' থেকে মারা। তাও গল্পে নতুন করে ঢোকানো ইন্ডিয়ান ব্লেন্ডিং আছে, প্রেম ভালোবাসা, আইটেম গান, ইমোশন সবই আছে। সিনেমাটা উপভোগ্য। কারন আমি আই সো ডেভিল দেখি নাই, তাই গল্পটা খুব ইন্টারেষ্টিং লাগলো দেখার সময়। পুরো সিনেমায় দাপিয়ে অভিনয় করেছে রিতেশ দেশমুখ। আর বন্ধু প্রিয় র পছন্দের নায়ক সিদ্ধার্থ মালহোত্রার অভিনয়ও ভালো। সিনেমাটা প্রেডিক্টেবল কিন্তু ইন্টারটেইনিং। এই সিনেমাও দারুন ব্যাবসা করছে, তিনদিনেই ৫০ কোটি রুপী ক্রস করেছে।
কথা হলো এইসব লেইম সিনেমা বানিয়েও বলিউড বাজার বাড়াচ্ছে। আমরা দেখছি, মানুষ দেখছে টাকা দিয়ে। আমরা কিছুই করতে পারছি না। আমাদের লেইম সিনেমাগুলাও কেউ দেখে না। আর ভালো সিনেমা হয়ও না!
থ্যাঙ্কস ভাইয়া!
কি বলো! খেলেই তো জিতলো। ব্রাজিলের মত ট্রাইব্রেকার তো লাগলো না।
রোজা রেখে তো আমার কিছুই করতে ভাল্লাগে না, ইফতারের সময়ের জন্য অপেক্ষা শুধু। তোমাকে তো বললাম বাসায় আসো ইফতার করতে, আসো তো না
আসবো আপু:D
বাড়ি যাইবেন কবে?
যাবও সামনেই!
আজকে দেখলাম "এক ভিলেন"। এইমাত্র। চরম! আর সিদ্ধার্থকে দেখসো? উফ! জোওওওওওওওওওওওওসসসসসসসসস!
আমিও দেখে তোমার কথাই ভাবছিলাম, জানতাম তোমার খুব মনে ধরবে!
a soldier is never off duty এটা দেখো নাই, এখনো? এটারতো রিভিউ ভাল পড়লাম। তোমাকে এওয়ারড দেয়া দরকার, এতো আজাইরা মুভি দেখার পেসেনস যে রাখো তাই
সেটাই তো হলিডে নাম, অক্ষয়ের। হলিডে নিয়ে তো বললাম!
মন্তব্য করুন