ফেরদৌসী মজুমদারের 'মনে পড়ে'
সাহিত্য প্রকাশ থেকে বইটা কিনেছিলাম এই মেলায়। জমানো ছিল, অন্য বইয়ের ভীড়ে পড়া হয় নাই। উল্টিয়ে পাতা রেখে দিতাম। কি মনে হলো একদিন নিয়ে পড়তে বসলাম। চিকন বই, পড়তে সময় লাগলো মাত্র দুই ঘন্টা পনেরো মিনিট। তাঁর ভেতরে ফ্যামেলি ছবি দিয়ে ঠাসা অনেক পাতা। এই বই লেখার প্রথম প্ল্যান আসে লেখকের মাথায় ২০০৩ সালের প্রথম আলোয় ঈদসংখ্যায় কিশোর বেলার স্মৃতিকথা লেখার মাধ্যমে। সেই এক লেখা পড়েই তারা জীবিত যত ভাইবোন আছে ঈদ পূর্ণমিলনীর আড্ডায় হেসে কুটিকুটি। তাঁর ভাইবোনরা আরো নতুন নতুন গল্প করছিলো যা উনার লেখার সময় মনে ছিল না। তারপর ত্রপা মজুমদারের অনুপ্রেরনায় তিনি লিখতে বসেন। এবং লিখে ফেলেন এই বইটা। এইটা কোনো আত্মজীবনী না, সিরিয়াস কোনো লেখালেখিও না, এটা একজন সরকারী কর্মকর্তার বিখ্যাত মেয়ের ও তাঁর স্বনামে বিখ্যাত সব ভাইবোনের ফেলে আসা জীবনের হাসি আনন্দের স্মৃতিকথা। ডক্টর ইউনুস বইটার ফ্ল্যাপ লিখেছেন যত্ন করে। দামও খুব কম, কমিশন বাদে ১১৫ টাকা।
বইটা কয়েকটা চ্যাপ্টারে ভাগ করা। সব বাবা মা ভাই বোনের নামে। বেশির ভাগ জুড়ে কিশোরবেলা আর বাল্যকালের গল্প। একজন সম্ভ্রান্ত মুসলমান সরকারি কর্মকর্তা সেই আমলে কিভাবে জীবনযাপন কিংবা দিন যাপন করতো তাঁর আঁচ পাওয়া যায় বইতে। নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষ কেমন সেন্স অফ হিউমারে পাকা হয় তারও অনেক নজির আছে বইজুড়ে। ভাইবোনের সম্পর্কের যে উষ্ণতা, বাবা মায়ের সপ্রতিভ স্নেহের সব গল্প । বইটা পড়াই এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা। লেখকের বিভিন্ন ভাইবোনের যে দারুন দারুন মজা করা তাতে না হেসে পারা যায় না। হুমায়ুন আহমেদ এই পরিবার নিয়ে জানাশোনা থাকলে দারুন কিছু তেনা পেচানো উপন্যাস নাটক লিখতে পারতেন। চোদ্দ পনেরটা ভাইবোনের ভেতরে ফেরদৌসী মজুমদার একদশ তম। তা সত্তেও তাঁদের ভেতরের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার আন্তরিক ও শ্রদ্ধার। একজন আরেকজন সমন্ধে কি গভীর ভাবে। এই পরিবারেই বিখ্যাত দুই সন্তান, মুনীর চৌধুরী আর কবীর চৌধুরী। লেখকের সাথে তাঁদের বয়সের ডিফারেন্স অনেক হলেও, বন্ধুর মতো মিশতেন সবাই। অত্যন্ত মেধাবী এই দুই মানুষ ভাইবোনের ভেতরে খুবই অনুপ্রেরনা দিতে পারতেন। বইতে জানা যায় বাইরে বাইরে খুব সিরিয়াস মানুষ হলেও, এই দুইজনই ছিলেন খুব ভালো সেন্স ওফ হিউমার ওয়ালা মানুষ, অনেক কাজে অনেক কথায় তা প্রমান দিতেন। তাঁদের পুরো ফ্যামিলী কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললেও, সময়ের ব্যাবধানে তারা সবাই পরিনত হন বাঙ্গালী অসাম্প্রদায়িক ও গনতান্ত্রিক মানসে। প্রথমে আপত্তি থাকলেও, রামেন্দু মজুমদারকে তাঁর পিতা মাতা মেনে নেন পরিবারের একজন হিসেবেই, তাঁর আরেক ভাই এক পাকিস্তানীকে বিয়ে করছে, আরেক ভাই বিদেশীকে, সময়ের সাথে সাথে তাঁদের গোটা পরিবারই খাপ খাইয়ে নিয়েছে সবকিছুর সাথে। এই বইকে ধরা যেতে পারে এক মুসলমান মধ্যবিত্ত পরিবারের অসাম্প্রদায়িক যাত্রায় এক পারিবারিক স্মৃতিকথার স্মারক হিসেবে। আমার খুব ভালো লেগেছে বইটা, সবারই ভালো লাগার কথা। এমনকি যাদের বই পড়তে ভালো লাগে না, তাদেরও ভালো লাগবে। কারন এরকম সাধারনভাবে পারিবারিক হাসি আনন্দ বেদনার গল্প সচরাচর কেউ লিখে না। এক টানেই বইটা শেষ করা যায়, এবং মুগ্ধ হয়ে বলা যায় কি সুইট এক জিনিস পড়লাম!
লেখাটা লেখলাম অযথাই। কারন বাসায় নেট আজ রাত থেকে থাকবে না। আগামী তিন চার দিন হয়তো লেখা হবে না। কারন টাকা নাই, এই মাসের টাকা এখন পাই নাই। তাই লিখে ফেললাম এখনই!
এডভান্স লেখা ভাল্লাগছে।
থ্যাঙ্কু ম্যাঙ্কু!
বইটা কিনেছিলাম দুই ভচর আগে বইমেলা থেকে। আসলেই দারুণ লেগেছে পড়তে। আর তোমার রিভিউটা পড়ে যারা বইটা পড়েনি তাদের আগ্রহ হবে পড়ার।:)
থ্যাঙ্কস আপু!
রিভিউ পড়ে আমারও পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে।
বইটার প্রকাশক কি সাহিত্য প্রকাশের? সম্ভবত। আপনি বলেছেন সাহিত্য প্রকাশ থেকে কিনেছেন। মেলায় যেহেতু অন্যপ্রকাশকেরও বই থাকে সেজন্য জিজ্ঞাসা। এটা স্পষ্ট করলে যারা যারা সংগ্রহ করতে চায় তাদের জন্য সুবিধে হবে।
সাহিত্য প্রকাশেরই বই, বইমেলায় আর অন্য কোথাও এই বই পাওয়া যাবে না ভাইয়া। সাহিত্য প্রকাশের শোরুম আছে একটা পল্টন মোড়ে, সেখানে পাবেন!
পড়ার আগ্রহ হচ্ছে...
ধন্যবাদ অনেক।
ফেরদৌসী মজুমদারের কী অপরিসীম জীবনী শক্তি! আর্থ্রাইটিসের কারনে একবার তাকে দেখলাম হুইল চেয়ারে বসে নাটক করছে। দেখলেই শ্রদ্ধা জাগে মনে।
আসলেই শ্রদ্ধা জানাই। অন্য কোনো দেশে জন্মালে লিজেন্ডের খেতাব পেত!
লেখা ভাল্লাগছে।
শুনে খুব শান্তি পাইলাম আপু!
মন্তব্য করুন