'কথা সামান্যই' নিয়ে সামান্য কথা!
ইচ্ছা ছিল এই মাসে নেট আরো কয়েকদিন পরে নেবো। কিন্তু সিনেমার নায়িকাদের মতোই 'আমার মন মানে না'। তাই অল্প টাকার মান্থলি প্যাকেজ নিলাম। ৫০০ টাকায় সাড়ে তিন জিবি। এক কালে ১ জিবি দিয়েও ১ মাস চালিয়েছি। সেইসব গল্প ব্লগে এখনো ঝুলছে দিনলিপির মোড়কে। এখন ৩০ জিবি না হলে ভালোই লাগে না। ত্রিশ জিবি কিনতে টাকা লাগে ১২০০। সিনেমা দেখা যায় ১৫-২০ টা। সিরিয়াল নামানো যায় পাঁচ ছয় সিজন, সেখানে সাড়ে তিন জিবি তো সাগরের বুকে না হলেও পুকুরে মাঝে ১ গ্লাস পানি, সেটাও বেশি দামে। তবুও মাঝে মাঝে ১ গ্লাস পানিতেই গলা শুকিয়ে যাওয়া ঠেকাতে হয়। এই যেমন আজ নিয়ে ১ মাস তো দূরে থাক অন্তত ১ সপ্তাহের জন্য ঠেকালাম। তার আগেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু কয়েকটা দিন তো হাহুতাশ কাটবে। ভালো জায়গায় একা একা ইফতারী করতেই এখন লেগে যায় ৫০০ টাকা! তা দিয়ে পাওয়া সাড়ে তিন জিবি ডাটা সামান্যই।
আজ আমি আমার খুব প্রিয় একটা বই নিয়ে লিখবো। রিভিউ টিভিউ কিছু না স্রেফ ভালো লাগা থেকে সামান্য কিছু কথা। বইটার নাম কথা সামান্যই, নামে সামান্য হলেও বইটা অসামান্য। লেখক সৈয়দ শামসুল হক। সাহিত্য প্রকাশ থেকে বের হয়েছে। দাম পাঁচশো টাকা। বইটা অনেক আগেই আমি পড়ে শেষ করে ফেলছি। তবুও বইটা আমার অনেকদিন ধরেই ড্রয়ারে রাখা, সময় পেলেই চোখ বুলিয়ে নেই। আরেকটা বইও আমার প্রিয় লেখক একই, 'মার্জিনে মন্তব্য'। সেটা অবশ্য আরো দরকারী। তবে আমি মানুষটাই অদরকারী তাই দরকারী বই থেকে দূরে থাকি। আর 'মার্জিনে মন্তব্য' বইটা আগামীতে যারা গল্প কবিতা লিখবে তাঁদের জন্যই লেখা, আমার মতো কেরানী টাইপের টাইমপাস ব্লগারের কি দরকার? তবে 'কথা সামান্যই' একদমই আলাদা ধরনের বই। ভুমিকা যার নাম দেয়া 'সবিনয় নিবেদন; সেইখানেই এই ব্যাপার নিয়ে বলা আছে। ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর 'অভিধানে আমোদ' হক সাহেবের খুব ভালো লাগতো। কত শব্দই তো আমাদের চেনা, সেই চেনা জানা শব্দের নানান অর্থ নানান ভাবনা তো সবার মনেই থাকে। তা রসাত্মক ভাবে লেখাটাই চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে সৈয়দ মুজতবা আলীর দেখাদেখি অনেকেই লিখতেন তবে তারা শব্দ নিয়ে লিখতেন না। লিখতেন যাপিত জীবনের নানান সাধারন বিষয় নিয়ে। তবে পঞ্চাশের শুরুতেও এই লেখার হুজুগ ছিল। অনেকটা নানান বিষয় নিয়ে খোশ মেজাজে গল্প করা। সৈয়দ শামসুল সেই খোজ মেজাজে গল্পের ছলেই বিভিন্ন শব্দ নিয়ে অনেক ভাবনা যে মাথার ভেতরে আসে তা লিখে গেছেন। এই শব্দের খেলার জন্য তিনি প্রচুর দেশী বিদেশী শব্দ নিয়ে পড়েছেন, উৎস নিয়ে জেনেছেন, কোন লেখক কি ভাবে কোন শব্দকে তাৎপর্য নিয়ে লিখে গিয়েছেন তা মনে রেখে লেখায় তা স্বার্থক ভাবে ঢুকিয়েছেন। এই পুরো ব্যাপারটাই অত্যন্ত শ্রম সাধ্য, কিন্তু তিনি এত ঠাট্টা তামাশা ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করতে করতে লিখেছেন, মনে হয় এত সহজ কাজ। ৯৪ টা নানান শন্দ নিয়ে এই খেলাটা খেলেছেন। যা মেসির খেলার মতোই দুর্দান্ত। শব্দগুলো অত্যন্ত সাধারন কিছুটা সামান্যও। কিন্তু এই সামান্য শব্দ নিয়েই কি অসাধারন সব ভাবনা। নিজেকে নিয়ে ভেবেছেন, নিজের নানান কিশোর যুবক বয়সের স্মৃতিকে ডেকে এনেছেন, বাংলা সাহিত্যে সেই শব্দে নানা ব্যাবহার নিয়ে লেখছেন, আজকাল সেই শব্দ নিয়ে আমরা কি ভাবি তা বলেছেন, সেই শব্দের গভীরে থাকা সুখ দুঃখ হতাশা আনন্দ নিয়ে তিনি চমৎকার করে লিখেছেন। তাই বইটা আমি মাঝেমাঝেই শব্দ ধরে পড়ি। যখন যেই শব্দ নিয়ে পড়তে ইচ্ছা হয়। এত বার পড়ি, তাও মুগ্ধতা কমে না। শব্দগুলো কেমন? যেমন--খাই খাই, ডিকশেনারী, ঈদ, ভালোবাসা, ভাদ্র, কর, ডাক, বুদ্ধি, চেয়ার, ভাষা, স্যান্ডেল, খুটি, ছাগল,মুখের কথা, উঠা নামা, চোর, খারাপ, চেহারা, বিশেষন, ঘর, মিল, প্রবাদ, মানুষ, ভ্রমন, সাধু, মেঘ, পরামর্শ, সাধারন, অতীত, আরো কত নিত্য দিনের শব্দ। এই শব্দগুলো আমি বললাম সম্পুর্ন না দেখেই। এতবার এই বইয়ের পাতা উল্টিয়েছি যে বইয়ের পাতা গুলো কেমন জানি ভাজ পড়ে গেছে। পাতা উল্টালেই বুঝে যাই এখন কোন শব্দে আছি। বর্ণনা গুলো নাতিদীর্ঘ। লেখা রিফ্রেশিং। পাঠকের প্রতি লেখকের যে ভালোবাসা দিয়ে লেখা, তা প্রতি পাতায় পাতায় পাবেন। শব্দই নাকি এখন ইশ্বর। সেই ইশ্বরের সান্নিধ্য এই বইতেই পাওয়া যায় দারুন ভাবে। আমি চাই হক সাহেবের 'কথা সামান্যই' আরো সিরিজ বের হোক। উনার মতো করে এই কাজ কারোর পক্ষেই সম্ভব না। বইটা অনেকেই পড়েছেন। অনেকের শেলফেই আমি বইটা দেখি। যারা বইটি পড়েন নাই, তারা সম্ভব হলে জলদি পড়ুন। এরকম নন ফিকশনাল রাইটিং আপনি বই পড়াকে যতই ঘৃণা করুন না কেন, ভালো লাগবেই। গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি।
আর্জেন্টিনার সেমিফাইনালে আরোহনে মুগ্ধতায় আছি এখনো। মুড খুব ভালো। নব্বইয়ে যেহেতু আমি শিশু, তাই বলা যায় জীবনের প্রথম আর্জেন্টিনার সেমিফাইনাল দেখতে পারাটাও সৌভাগ্যের। আবার কবে না কবে উঠে, বিবিসির সাবেক এডিটর মিহির বোস বললেন আর্জেন্টিনার কাপ জয়ের সম্ভাবনা কম না। শুনেই শান্তি। আমি চাই আর্জেন্টিনা- ব্রাজিল ফাইনাল হোক। জিতে যাক যে কেউ। তবে আর্জেন্টিনা জিতলে এরচেয়ে সুখের আর কিছু হবে না। যদি থার্ড প্লেসও পায় তাতেও দু;খ হয়তো পাবো না। কারন আমি খুব মানি সবার পক্ষে সফল হওয়া সম্ভব না। আমরাও যেমন, আমাদের সাপোর্টের দল তেমন। আছে শুধু আবেগ আর আবেগ!
গুড রিভিও। কিপিটাপ।
৫০০ টাকায় রবি ফোন এখন আর ৩ জিবি দেয় না। শুধু মাত্র ১ জিবি প্যাকেজ। পুরাই ফালতু সিস্টেম।
বইটা পড়তে দিও শান্ত।
আমিও খুব আশা করেছিলাম ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা যদি ফাইনাল খেলতো! তা তো আর হলো না! ব্রাজিলের বিদায়টা বরং করুণ লাগলো অনেক বেশী। এখন আশায় থাকি আর্জেন্টিনা কাপ জিতুক।
কথা সামান্যই কিন্তু ব্যাপক ও বিস্তৃত।
আমি এক জিবিতে মাস চালাই --- তাও হাজার ট্যাকা দাম
(
দুঃখ কইরোনা বন্ধু। আমি তিন জিবিতে মাস চালাই। কিছু ডাউনলোড করতে গেলেই প্যাকেজ শেষ।
এত টেকা দিয়া কি করবা দোস্ত, থ্রিজি যখন চালাও আরেকটু বেশী করে ডাটা প্যাকেজ নাও!
মন্তব্য করুন