ইউজার লগইন

উপোষের দিন রাত্রী, সিজন টু- এপিসোড টু!

শরীরটা ভালো লাগছে না। ইফতারের পর থেকেই কেমন জানি করছে। তাও ঘুম আসে না। ভোর না হলে ঘুম আসার কোনো সম্ভাবনাই নাই। খুবই খারাপ অভ্যাস এই দিনে ঘুমানোর। কিন্তু কি আর করা, করেই যাচ্ছি। ঘুম ছাড়াই শরীর কেমন জানি টানছে। এর কারন সম্ভবত গত দুই দিনের কম ঘুম আর ইফতারে অহেতুক বেশী খাবার। ইফতার যখন খাই তখন তো হুশ থাকে না। খালি গিলি আর পান করি। কিন্তু খাবারের পর বুঝি অযথাই এত জিনিস কিনে এনে খাওয়া। লোকজন বলে রাতে খাও না, ইফতার বেশী খাওয়া দোষের কিছু না। কিন্তু খাওয়ার পরে বোঝা যায় ঠেলা, হাঁটা যায় না মোটেও, শরীর ঝিমিয়ে আসে। শরীর খারাপ হবার আরো কারন থাকতে পারে গত দুই দিনই খুব হাইপারের ভেতরে ছিলাম ওয়ার্ল্ডকাপ নিয়ে। প্রথমটায় ব্রাজিলের ডিজাস্টার হারে প্রথমে উৎফুল্ল হলেও পরে খুবই মন খারাপ ফ্যানদের কথা ভেবে, আর সেকেন্ডদিন আর্জেন্টিনার প্যানাল্টিতে জয়। ভাগ্য ভালো রোমেরো সেভ করেছিল নয়তো তখন মনে হচ্ছিলো টেনশনে মরেই যাই। তবে খেলা শেষে যে আনন্দ পাইছি তা এই বছরের সেরা সুখের ভোর। ইন্টার এক্সাম আমার ভালো হয় নাই, আমি তখন খুব টেনশনে ছিলাম যদি ফেইল করি, মান সম্মান সব শেষ। সেই রেজাল্ট দেয়ালে ঝুলানোর আগে কি যে টেনশনে ছিলাম। কাল মনে হয় সেই টেনশনকেও ফেইল করেছে। এইসব টেনশনে থেকে থেকে খুব খুশিতে থাকলেও, শরীরের উপর প্রেশার।

তবে এই দুই তিনটা দিন খুব ভাল কাটবে। ফাইনাল হবার আগ পর্যন্ত। কত রকম আশায় থাকবো। চব্বিশ বছর পর যে আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেলবে এইটা ভেবেই এক ধরনের শান্তি পাচ্ছি। হয়তো হারবে ফাইনালে। কিন্তু এই দুই তিনটা দিন আমার শুধু মনে আসবে, মেসির হাতে কাপ। আর হয়তো জীবনে দেখতে পারবো কি না জানি না! আবার আর্জেন্টিনা কবে ফাইনাল খেলবে। ততদিন বেঁচে থাকবো কিনা? তবে ২৮ বছর পর এবার কাপ পাবে এই স্বপ্ন দেখতে দেখতেই এই দু তিনটা দিন যাবে। তবে আমি যে আর্জেন্টিনার ফ্যান, এইটা আগে খুব কম লোকই জানতো। আমিও কাউকে জানাই না। আড্ডায় কথা উঠলে আমি আর্জেন্টিনা ব্রাজিল নির্বিশেষে সবাইকেই বাঁশ দেই। কিন্তু সেই কিশোর বেলার প্রেম এবার কিভাবে এত জেগে উঠলো তাই ভাবছি। সুইজারল্যান্ড আর বেলজিয়ামের সাথে দেখা দুইটা ম্যাচ তো পুরো প্রেশারে ছিলাম। এরকম আগে কখনোই হয় না। ২০১০ সালে ৪-০ গোল খাবার পরেও আমার মন খারাপ হয় নি। মন খারাপ হয়েছিল ০৬ এর পেনাল্টি হারে, ০২ এর প্রথম রাউন্ডের বিদায়ের লজ্জায়, ৯৮ তে অরতেগা কান্ডে। ৯৮ তে কান্নাকাটিও করেছিলাম যতদুর মনে পড়ে। ৯৪ তে ম্যারাডোনার ড্রাগ কেলেংকারি, ছোট মানুষ বুঝি কম। সবাই খেলা দেখে আমি ঘুমাই। নব্বইয়ে ফাইনালে উঠে কলংকিত রেফারীর গল্প অনেক শুনেছি বড়দের মুখে। তাই এবার অনেকদিন পর অনেক খুশীর দিন। কাপটা নিলেই সেই খুশী বিশাল আনন্দে পরিনত হবে!

রোজা যাচ্ছে সো ফার সো গুড। অফিস আদালত নাই তাই বাসায় বসে বসেই যায়। ঘুমাই বারোটা একটা অবধি, তারপর পিসির সামনে বসি। আড্ডা মারার ডাক পাই কিন্তু বের হই। রোজার সময় বের হয়ে পর্দাওয়ালা চায়ের দোকানের সামনে বসে থাকতে ভালো লাগে না। যদিও সবাই জানে আমরা রোজাদার, তাও কেমন আন ইজি। তাই বাসাতেই থাকি। নামায পড়ি, টিভি দেখি, বই পড়ি, গেইম খেলি। সময় কেটে যায়। আসর নামাযের পর ইফতারী কিনতে হয়। এই মাসটা হুদেই সংযমের কথা বলা হয়। সংযম তো দূরে থাক। ভোগের শেষ নাই। কত কিছু মানুষ খালি কিনছে। আমার মামা বলে রোজা তো খুব সিম্পল। ব্রেকফাস্টটা খুব সকালে আর লাঞ্চটা সন্ধ্যায়, এই সামান্য না খেয়ে থাকার জন্য কত খাবার দাবারের আয়োজন। তারপর আসছে ঈদ। ঝাপিয়ে পড়ছে সবাই কেনাকাটায়। আর যাদের সামর্থ্য নাই তারা রোজা রাখারও বালাই নাই। আজ আর্জেন্টিনা জয়ের খুশীতে চারটার সময় বের হয়েছিলাম। পর্দার অনেক সামনে বসা। তাও শোনা যায় দোকানে কে কি বলে, দেখি চা খেতেই খেতেই এক ছেলে বয়ান দিচ্ছে রোজার দিনে কিভাবে ইবাদত করতে হয় তা নিয়ে। আমি ছেলেটাকে দেখে বিস্মিত। এরকম বিস্ময়কর কাজ খালি আমাদের পক্ষেই সম্ভব। রোজা যত সামনে যায় তত লোক কমে মসজিদে। অন্যদের কথা কি বলবো, আমি তো যাই না। চায়ের দোকানে বসে থাকি। সবাই যখন তারাবী পড়ে তখন আমি মসজিদে একা একা এশার নামায পড়ি। বাচ্চাদের দুষ্টুমি দেখি, ভালো লাগে। আমরাও একদিন এমন ছিলাম। মসজিদে আসতাম জোর করেই, শয়তানী করার জন্যই। কত কি না করছি। সব চেয়ে খারাপ কাজ ছিলো সীবিচে গিয়ে বসে থাকা। কি যে ভয় লাগতো তখন তাই ভাবি। একবার ভাইয়ার কানে গেলে মাইরের সাগরে ভেসে যেতে হবে। মাইর খেয়েছি তাও বাদরামী কমে নি। একদিন বুড়ো হবো, তখন এইসব গল্প শোনাতে লোক খুজবো। তরুনরা বলবে 'বুড়া মানুষ মাইনষের পর্যায়ে পড়ে না।' আমরা তখন শুনে যাবো এই সব কমপ্লিমেন্ট হিসেবে!

পোস্টটি ১০ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

প্রিয়'s picture


জার্মানীর সাথে আর্জেন্টিনার রেকর্ড ভাল না। সেইজন্যই টেনশন। তবে সেমি- ফাইনালের অসাধারণ জয়ে অনেকদিন পর আর্জেন্টিনা যে আনন্দ দিল তাইজন্য ওদেরকে থ্যাঙ্কস।

আরাফাত শান্ত's picture


তবুও আশায় বাঁধি বুক। যতক্ষণ খেলা না শেষ হয় ততক্ষণ পর্যন্ত জয়ের আশায় আছি আমি। বন্ধু বন্ধুর মিল তো থাকবেই!

তানবীরা's picture


সমবেদনা Puzzled

আরাফাত শান্ত's picture


থ্যাঙ্কস আপু।

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!