বই বসন্ত!
ফেসবুকে আপনি যখন বইয়ের ছবি আপলোড দিবেন। দেখবেন কত পাঠক, কত বন্ধু বলছে-- ইশ, আমার যদি থাকতো। অনেক বুক রিডার গ্রুপে দেখি, লাইব্রেরীর ছবি দিলেই লোকজন আহ-উহ করে বলে উঠে, আহা আমি যদি যেতে পারতাম এই খানে। কিন্তু যায় কই মানুষ? আর পড়েই বা কই? চায়ের দোকান হাটে মাঠে ঘাটে অনেকের সাথেই তো আমাদের সামাজিকতা, হাতে বই দেখলেই প্রশ্ন। 'এখনো এই সব পড়োস? আর পড়ে কি হবে? এত জেনে জেনে জানোয়ার হবার মানে কি?' আর সত্যজিৎ রায় কি এক সিনেমা বানিয়েছিল- হীরক রাজার দেশে, তার ডায়লগ সবাই দেয়ঃ জানার কোনো শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই। সিনেমাতে তো পলাতক মাষ্টারও ছিল তার কথা কেউ মনে রাখে নাই। মনে রাখছে নরপিশাচ রাজার কথা। তাহলে ফেসবুকে এত ঢংয়ের মানে কি? সেই ঢংওয়ালা মানুষদের আবাস কোথায়? আমার বন্ধুদের আরেক কমন ডায়লগ আগে খুব পড়তাম, হুমায়ুন আহমেদ-সমরেশ- সুনীল। এখন আর পড়ি না, পড়ার অভ্যাস নাই। সময় না পেলে ভিন্ন কথা। কিন্তু আগে পড়ার অভ্যাস ছিল এখন নাই তার মানে হলো সেই মানুষ কোনোকালেই ভালোবেসে পড়তো না। আমরা কোনোকালেই পড়ুয়া জাতি না। আমাদের পাঠভ্যাসও যতদূর পাঠ্যপুস্তক কেন্দ্রিক। আগেও তাই ছিল, এখনও তাই। কমছে শুধু কোয়ালিটি পাঠকের সংখ্যা।
তবে আমি নিজের ঢোলই পিটাই। এত ফেসবুক, মোবাইল, চায়ের দোকান,আড্ডাবাজি, ব্লগিংয়ের ফাঁকেও আমরা পড়তে ভালো লাগে। সময় বের করতে না পারলে মন খারাপ হয়। পড়ার জন্য মন উশখুশ করে। আর যখন ফুল পড়ার মুডে ও মধ্যে থাকি তখন মনে হয় আরো পড়া উচিত। কত কি আছে এখনো পড়ার বাকি! তাই আমার সব বই কিনে পড়া সম্ভব হয় না। টাকাও নাই তেমন। তাই আমার বই ধার দেয়ার কয়েকজন বন্ধু আছে তারাই ভরসা। আর বই মেলার জন্য তো কামাল ভাইয়ের মতো গুটিকয় মানুষ তো আছেই। বাসা থেকেও টাকা দেয়। চলে যায় দিন। রকমারীতে মাঝে মাঝে অর্ডার দেয়। একদমই নিয়মিত না। কারন আমি কিনলে আজিজ থেকেই কিনতে ভালোবাসি, না কিনলে নাই। তবে আমাকে যারা বই ধার দেয় দুজন মানুষ, তাঁদের ভালোবাসাতেই আমি মুগ্ধ। বাসায় গেলেই এক গাদা বই নিয়ে বাসায় ফিরি। তাঁদের বাসার আলমারী ভর্তি শুধু বই আর বই। চিন্তা করে আনি, কারন যত্ন করে পড়ে ফেরত তো দিতে হবে। কারন আমার রুম ভর্তি শুধু দুই জিনিস, এক জামাকাপড় আর দুই বই। শেলফ কেনার টাকা নাই, আর কিনলেও রাখার জায়গা নাই। তাই বই পড়ে থাকে- দেয়ালের স্লপে, সিপিউর উপরে, বিছানার পাশে, কার্টুনে, ফ্লোরে পেপার বিছিয়ে। তাই কি কি বই আনবো ভাবি, পড়ে দ্রুত সব শেষ করতে হবে এমন বই। আবার নতুন বই ধার আনতে হবে। এই করেই চলছে। এই করেই করেই অনেক বই পড়লাম। কি কি পড়লাম সাম্প্রতিক কালে তার লিষ্ট দিলাম!
১। সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস সমগ্র
২। তিন পয়সার জোছনা- সৈয়দ হকের( পড়া হয় নাই এখনও ধার নিয়ে রেখে দিয়েছি)
৩। হুমায়ূন আজাদের কিশোর সমগ্র
৪। আবু রুশদের আত্মজীবনী
৫।এবং মুশায়েরা- কাফকা, কামু সংখ্যা
৬। সৈয়দ শামসুল হকের সাক্ষাৎকার
৭। জ্যোতি বসুর আত্মজীবনী- যতদূর মনে পড়ে
৮। সৈয়দ শামসুল হকের- মার্জিনে মন্তব্য
৯। বাংলাদেশের জাতীয় অবস্থার চালচিত্র-সলিমুল্লাহ খান
১০। সতীনাথ ভাদুরী সমগ্র
১১। ঢাকা নিয়ে মুনতাসীর মামুনের সম্পাদিত ঢাকা স্মৃতি সিরিজের প্রথম পাঁচ খন্ড
১২। মুনতাসীর মামুনের ঢাকার বিভিন্ন স্থান কাল ব্যাক্তির প্রামান্য সিরিজ দুই খন্ড( মনের দুঃখে তিন খন্ডই কিনে ফেলছি)
১৩। সুনীলের সব ভ্রমন কাহিনী
১৪। কাম্যু, কাফকার বিখ্যাত উপন্যাসগুলো
১৫। রশীদ করীমের ছোট আত্মকথা- জীবন মরন
১৬। সৈয়দ মুজতবা আলী রচনা সমগ্র (আংশিক)
১৭। শাহবাগ নিয়ে জিয়া হাশানের বই
১৮। শিবরাম চক্রবর্তীর দুটো বই
১৯। কমলকুমার মজুমদার গল্প সমগ্র(এখনো শেষ হয় নাই)
২০। প্রতিভা বসুর আত্মজীবনী
২১। শাহীন আখতারের ময়ূর সিংহাসন
এই পোষ্ট নিবেদন করলাম আমার দুই বন্ধুকে। যারা নির্ভীক চিত্তে ও দ্বিধাহীন ভাবে আমাকে বই ধার দেন এত গুলা করে। কোনোদিন যদি অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হই, তবে তাঁদেরকেও আমি বই কিনে দিবো উপহারে, প্রয়োজন মাফিক। তাঁদের প্রতি অনেক অনেক ভালোবাসা জানাই!
বন্ধুদের নামটাইতো বললে না !
এই যে এই পড়ার অভ্যাস, এইটা ধরে রেখে।
আজকাল আর পড়া হয় না/সময় পাই না।
একসময় প্রতিদিন কোনো না কোনো বই পড়লে ঘুমই আসতো না।
সময় কত পাল্টে দেয় আমাদের।
অবসর একদমই মেলে না।
ভালো থেক শান্ত।
আপনিও ভালো থাকেন ভাইয়া!
বই পড়ি লং জারণিতে ..... খুব কম পড়ি কিনতু তাও কখনো সখনো পড়ি
সময় তো পান না, পড়বেন কখন?
তোমার লিখা অনুসরন করলে আমার বেশ হিংসা ই হয়। বেশ নসটালজিক ও হয়ে পড়ি।
এখন বই পড়া হয় অসুস্থ হলে।
সমস্যা নাই আপনার আছে জীবন্ত বই পড়ুয়া+ জ্ঞানী মানুষ জামাই, বই কি আর এত পড়া লাগে!
বইপড়া অব্যাহত থাকুক

শুভকামনা
দোয়া কইরেন ভাইয়া!
বইয়ের লিস্ট দেখে ভয় খাইসি।
সময়ই পাইনা। পড়বো কখন?
অফিসে থাকো প্রেশারে, বাসায় থাকো ব্যাস্ত সময় কই তোমার পড়িবার?
ভাই অনেক দিন পর আসল খবর পেলাম। সত্যিই তো বাংলার মানুষের সব কিছুই দরকার কিন্তু হয় ফ্রীতে নয় সময় নাই। কিভাবে যে এরা এগুবে কে জানে?
এগুনোর পথ আর নাই, কামনা করি যেন না পিছাই!
মন্তব্য করুন