যাবো আবার যাবো, আমি বাড়ী ফিরে যাবো!
বাড়িতে যাবো আরেকটু পরেই। সকালের ট্রেন। ট্রেনের নাম তিস্তা। উঠবো কমলাপুর থেকে। টিকেট মামা অনলাইনে কেটে দিয়েছে। অনলাইনে পাওয়াই যায় না টিকেট। পাওয়া গেলে আরো দু চারদিন পরেই হয়তো বাড়ীতে যেতাম। কিন্তু বারবার এত গেঞ্জামে বাড়ীতে যেতে ইচ্ছে করে না। তাই আগেভাগেই এবার ট্রেন ধরলাম। বিশাল লম্বা সময় এবার বাড়ীতে থাকতে হবে হয়তো। বাড়ীতে যাবার আগের তিন চার ঘন্টা আমার ভীষন মন খারাপ থাকে। মনে হয়, ভালোইতো ছিলাম এখানে। দিব্যি ভালোয় ভালোয় যায় দিন। সেখান থেকে জামালপুর যাওয়া, অল্প কিছুদিনের জন্য এক অন্য ধরনের চেনাজানা জীবনে অভ্যস্ত হওয়া। ঢাকা কিংবা চিটাগাংয়ে থাকতেই আমার শান্তি। শহরে শান শওকত- আড্ডা- ঘুরে বেড়ানো জীবন যাপনই আমার আনন্দের। বাড়ীতে কত দিন ধরে যাচ্ছি তাও কোনো বন্ধু নেই, সেই ঘর- মসজিদ- পত্রিকার দোকান- জঘন্য টিভি, মফস্বলের নির্জন রাস্তায় হাঁটা, এই তো! কাল যখন সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি সবার মন কি খারাপ। আনোয়ার নামের যে চাচা, যিনি রাজমিস্ত্রী, নোয়াখালী টানে বলতে থাকলেন 'আমাদের একা রেখে চলে যাবা ভাতিজা'। বারেক সাহেবের সন্তান জুয়েল বলে ' শান্ত ভাই আপনি সাত দিন পরে যান, 'আমি আপনার কথা সব শুনবো এ কয়দিন। পড়ার সময় পড়বো, কারো সাথেই বেয়াদবী নাই, আর্জেন্টিনা হারলো আপনিও চলে যাবেন, খুব মন খারাপ হবে'। বন্ধু আবীর কিংবা পুলক বলবে আপনি ছাড়া দিনগুলো অতি বোরিং লাগে, আড্ডায় কোনো মজা নাই। জেমস আর আসবেই না এ কয়দিন, 'শান্ত নাই এসে কি হবে? আরো অনেকের কথাই বলা যায় যারা আমাকে অন্তর থেকে খুবই ভালোবাসে। সবাই বলে চায়ের দোকানে- আড্ডা মেরে কি হয়? আমি বলি সম্পর্ক হয়, এই সম্পর্কের ভালোবাসা পাওয়ার কপাল সবার হয় না। আপনার অনেক বন্ধু থাকতেই পারে, কিন্তু তারা কেউই আপনাকে খুব বেশী ফিল করবে না। কিন্তু চায়ের দোকানে, আড্ডার খাতিরে, বসতে বসতে, চুপচাপ কথা শুনতে শুনতে যাদের সাথে বন্ধুত্ব হবে, তারা আপনাকে সেই দোকানে আসলেই আপনার অনুপস্থিতিতে মিস করবে। আমিও অনেককে মিস করি, তারাও করে। আমি বাড়ীতে গেলে এই জিনিসটাই খুব মিস করি। আর মিস করি এই ঢাকার এই জীবনকে।
তবে বাড়ীতে গেলে অবশ্য আরেক জীবনকে দারুন ভাবে টের পাই। তা হলো আমার পারিবারিক জীবন। বাবা মায়ের সাথে কাটানো অমুল্য সব সময়গুলো। মাকে সবাই ভালোবাসে, আমিও বাসি কিন্তু চার পাঁচ মাসের বিরতির পর যখন বাড়ী যাই তখন বুঝি মা আসলে কত স্পেশাল। কি যে আদর যত্নে থাকি তা আগেও অনেকবার বলেছি। নতুন করে বলার কিছু নাই। বাবা মার সাথে থাকা, গল্প করা, ভালো ভালো খাওয়া, টিভি দেখা, বকা শোনা, সব কিছুই এত অসাধারণ ব্যাপার। সেইটা যারা এখন করতে পারেন না, তারাই বুঝবেন। সবার মতোই আমার মা বাবাও আমাকে অসম্ভব আদর করে। ছোটবেলায় প্রচুর মার দিতো, এখন ঠিক ততই আদর। মাঝে মাঝে কান্না পায়। নিজেকে সংবরন করি। ভাবি জীবনের শ্রেষ্ঠ সুখের মরণ হবে, যদি এই আদরের মাঝেই দুনিয়া থেকে চলে যেতে পারতাম। তাই প্রতিবার বাড়ী যাওয়ার সময় আমার মনে হয়, আর বোধহয় ফিরে আসা হবে না। এ এক অদ্ভুত ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মনোভাব আমার মনে বয়ে চলে অবিরাম। দুটোই বাস্তবতা। মাঝে মাঝে ভাবি দুটোর মাঝে যদি এক সরলরেখা টেনে এক করে দিতে পারতাম। কিন্তু জীবনটা বড়ই কঠিন, জীবন শুধু সময় উপভোগের জন্যই না। এত কিছুর পরেও আমার জীবন আমার মতোই সাধারনভাবে অসাধারণ। এই জীবন নিয়ে আমার কোনো রিগরেট নেই।
পোষ্টটা আরো বড় লেখার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ব্যাগ গুছাতে হবে। কি কি বই নিবো, তা নিয়ে ভাবতে হবে। আবার শুরু হয়েছে বৃষ্টি। টেনশনে আছি সিএঞ্জি পাওয়া যাবে কিনা? এত কিছুর ভেতরেও লিখে ফেললাম এই পোষ্ট। কারন ব্লগটা আমার খুবই আপন। সব পরিস্থিতিতেই নিজের কথা ব্লগে লেখা এক অসাধারণ ব্যাপার লাগে আমার কাছে। সবাই ভালো থাকেন। গ্রামীনের মডেম যদি চলে, তাহলে বাড়ীতে বসেও পোষ্ট লেখা যাবে। আমি ততক্ষণ সায়ানের 'যাবো এবার যাবো বাড়ী ফিরে যাবো' গাইতে গাইতে ব্যাগ গুছাই। সবাই দোয়া করবেন!
কী চমৎকার করে তুমি লেখো।
শত ব্যস্ততার মাঝেও ব্লগটা ধরে রেখো। লেখালেখিটা ছেড়ো না।
ভালোভাবে বেড়িয়ে আস।
বাবা মায়ের সাথে ঈদ করা, আহারে কত দিন !!
অল দ্য বেস্ট শান্ত।
ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনাদের ভালোবাসায় মুগ্ধ হই। ভালো থাকবেন ভাইয়া। ভালো কাটুক ঈদ!
এসব অনুভূতির মধ্যে দিয়ে আমরা সবাই কখনো না কখনো যাই শান্ত।
ভাল করে ঈদ করে আসো। দেখা হবে। এবার ঈদে আমিও বাড়ি আসবো

ঈদের পরেই আপনার সাথে দেখা হবে ভাবতেই মনটা ভালো!
এ আড্ডাটা একসময় আমারও খুব প্রিয় ছিল। এখন খুব মিস করি। সময়ের অভাবে।

লেখা বরাবরের মতোই সুন্দর, সুখপাঠ্য
থ্যাঙ্কস ভাইয়া!
খুব খুব ভালো কাটুক প্রতিটা দিন..
থ্যাঙ্কস বর্ণ, তোমারও দিন খুব ভালো কাটুক!
শুভ কামনা থাকল
থ্যাঙ্কস এ লট!
লেখা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। ভাল থেকো আর আন্টি–আঙ্কেলের সাথে খুব মজা করে ঈদ করো।
তুমিও ভালো থাকো দোস্ত, মন প্রান দিয়ে শপিং করো!
আরামে ঈদ কর। মা-বাবা ভাই-বোন সবার সাথে দেশে ঈদ করতে পারার মত সুখ আর নাই।
আরে চৌধুরী সাব, কতদিন পর!
আপনে ফেসবুকে কম আসেন, আর ব্লগ টগে তো দুস্প্রাপ্য মানুষ!
ভালো থাকেন, আবার ব্লগে ম্লগে লিখেন!
খুব সুন্দর লেখা
খুব ভাল লাগল । দোয়া করি ভাল ভাবে ঈদ করে ফিরে আসেন......
থ্যাঙ্কস পাভেল!
সুন্দর লেখা ভালো লাগলো!
ধন্যবাদ শরিফ সাহেব!
আমি বাড়ী গেলে ঢাকাকে মিস করি না একদমই। ঢাকা খুবই পর মনে হয়। ঢাকায় ফিরে আসাই বরং কষ্টের।
আর বাবা-মায়ের আদর আরো টের পাবা আরো যখন বয়স বাড়বে। এই দুনিয়াতে এই একটা জায়গা পরম নিশ্চিন্ত থাকার, মমতার। বাবা-মায়ের বয়স যত বাড়ে ছেলে-মেয়ের ভালোবাসা ততই বাড়তে থাকে।
ঠিক বলছেন আপু!
বাড়ি ফিরে যাবার অনুভূতিটা বেশ জীবন্ত যেন নিজের শেকড়ের কাছে ফিরে যাওয়া
মন্তব্য করুন