ইউজার লগইন

উপোষের দিন রাত্রী, সিজন টু, এপিসোড থ্রিঃ স্বর্গে দিন যাপন

পোষ্টটা কালই লিখতাম। কিন্তু মনে ধরলো না লিখতে। তার আগে অবশ্য নোটবুকটা নিয়ে অশান্তিতে ছিলাম। চার্জ হয় না। কাল থেকে অশান্তি দুর চার্জ হলো, নেটের স্পীডও কিঞ্চিত ভালো হলো। জিপির মডেম দিয়ে চালাচ্ছি নেট। খুবই বাজে অবস্থা ছিল। মোবাইলেই এরচেয়ে ভালো সার্ভিস দেয়। গতবার থেকে নোটবুকটা আনছি, সেবার ভালোই ছিলই নেটের অবস্থা। এবার অবস্থা দিশাহীন বেগতিক। এই দুইদিন মনটা উদাস ছিল, আহা পোষ্ট লিখতে পারবো না, সেই নোকিয়া সেটও নাই যে শুয়ে শুয়ে লিখবো। এত কষ্ট করে টেনে আনলাম নোটবুকটা। নোটবুক আনতে বেশী কষ্ট না, কষ্ট হলো এক্সটারনাল কিবোর্ড মাউস, ঢাউশ হেডফোন, ইউ এসবি হাব এইসব টেনে আনতে। আমার বিছানায় এখন ক্যাবল আর বইয়ের জঞ্জালে সেই পুরোনো অবস্থা। আম্মু দেখেই বলে, যেখানেই যাক শান্তর কাজ একটাই, সব কিছু বিতিকিশ্রী বানানো। বাসায় আজ মেহমান, তাই আমার অবস্থান আজ টিভি রুমে। সেখানেও একই দশা করে রেখেছি। আসলে আমি এক সাথে অনেক কিছু করার চেষ্টা করি। যেমন একদিকে আবু রুশদের বই পড়ছি, আরেকদিকে আজকের পত্রিকা, টিভি খোলা রিমোট হাতেই না তাকিয়ে সমানে চেঞ্জ করছি, আরেকদিকে নোটবুক সাথে মোবাইল সেট তো আছেই। যখন যেদিকে তাকাতে ইচ্ছে হয় তখন সেদিক তাকাই, কাজ করি। কোনোটাই ঠিক মতো হয় না। শুধু বইটাই মন দিয়ে পড়ি। কারন শেষ করার তাড়া আছে, বন্ধুর বই ধার করে আনা!

এইসব ছোটোখাটো গেঞ্জাম বাদে সময় যাচ্ছে দারুন আরাম আয়েশে। রোজার দিন একটা পর্যন্ত ঘুমাই, নামায পড়ি, শুয়ে থাকি, টিভি দেখা বই পড়া এসব করতে করতেই ইফতারীর সময় হয়ে যায়। ইফতারীটা খেলেই আমি ফুল চার্জে এসে যাই, চা বানাই, গল্প করি, নামাযে যাই, বই নিয়ে বসি, ফোনে কথা বলি, টিভি দেখি, কত কাজ! রাত বাড়লে টিভি অফ করে দিয়ে নোটবুকে মন দেই। ব্লগ আর পত্রিকাতে চোখ রাখি। গেইম খেলি স্টিক স্পোর্টসের, আস্তে আস্তে স্টিক টেনিসে হালকা পাতলা ভালো খেলতে পারছি। তা নিয়ে উত্তেজনাবোধ করি এক ধরনের। আবারও বই নিয়ে বসি, রাত বাড়ে, সেহরী খাই, নতুন দিনের পত্রিকা পড়ে ঘুম দেই। পুরাই বিলাস বহুল আরাম আয়েশের জীবন। ঢাকায় এমন সুখে থাকা কল্পনাতেও নাই। যা খেতে চাই, যে জিনিস চাই, যা বলি তাই হয়ে যায়। আমার কিসে পছন্দ অপছন্দ সেটাই এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চলে। এমনিতেও বাড়ী অসাধারণ জায়গা, তার ভেতরে এ যেন স্বর্গের সুখ শান্তি সব আমার চারদিকে। আমার চাওয়া অতি সামান্য সামান্য সব, তা পেয়ে গেলেই আমার বেশী কিছুর জন্য আবদার নেই!

টিভি দেখি আর টিভি নিয়েই বেশি হতাশ হই। আমার এক বন্ধু বুদ্ধিজীবি টাইপ, আমাকে বলেছিল, টিভি নিয়ে এত হতাশার কি আছে? টিভি তো এক বোকা বাক্সোর নাম। এত ভেবে লাভ কি? আমি লাভের জন্য ভাবিনা, আসলে আমি টিভি খুব ভালোবাসি। ভালোবাসার সম্পর্ক টিভির সাথে জন্ম থেকেই, সেই রিলেশন আমি অস্বীকার করি না, ওউন করি। তাই টিভি নিয়ে চিন্তা করি নিজের জন্যই। এই আড়াই দিনে, টিভি দেখলাম অনেক সময় নিয়ে। ভালো কিছুই নাই টিভিতে। সেই একই ধরনের সংবাদ টকশো চলছে তো চলছেই। এত সংবাদ দুনিয়ায় আর কোনো দেশে দেখায় কিনা তা আমার জানা নাই। সংবাদের চ্যানেল গুলাতেও কোনো অসাধারণ কোনো অনুষ্ঠান, সেই একই ফরম্যাট সব জায়গায়। প্রতি ঘন্টার খবর, রাতে টকশো, একটা ক্রাইম অনুষ্ঠান, সন্ধায় ৬৪ জেলার খবর, বিকেলে সারা দুনিয়ার খবর, রাতে বিনোদনের খবর, সেই একই খবর স্ক্রল জুড়ে বারবার, খবরেও বারবার। এত বেশি বিরক্তিকর রিপিটেশন দুনিয়ার আর কোথাও হয় বলে আমার জানা নাই। একটা এক্সাম্পল দেই, আজ এক হিমু পরিবহনের- হিমু রূপা সেজে শ্রদ্ধা জানানো খবর আমি বিকেল থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত, ১০৬ বারের কাছাকাছি ২০ টা চ্যানেলে শুনেছি! সব রূপা হিমুর চেহারাও আমার মুখস্থ। তাঁরা কে কি বলেছে তাও হয়তো বলে দিতে পারবো। নাটক কিছু দেখলাম গা জ্বলে, খালি মাছরাঙ্গাতে কাল মনে হয় একটা মোটামুটি মানের এক ঘন্টার নামের চল্লিশ মিনিটের নাটক দেখলাম। আর মাছরাঙ্গাতে বাউল গানের প্রতিযোগীতা হয়, বেচারা বুড়ো বাউলদের দশা দেখে হাসি পায়। তবে এটা বাউল গান না বলে বলা উচিত পল্লীগীতির প্রতিযোগীতা। তপন চৌধুরী বিচারক, এক কালের সুপারস্টার শিল্পী যিনি কিনা ছিলেন এইসব অনুষ্ঠান কম্পিটিশানের ঘোর বিরোধী তাঁকেই এখন এসব করতে হয়। হায়রে জামানা! আর এশিয়ান টিভি বৈশাখী আরো নানান চ্যানেলে দেখি হিন্দী সিরিয়াল স্টাইলের নাটক। গাঁ ঘিনঘিন করলে, ওদেরটাও তো যা কিছু একটা হয়- আমাদেরটা অতি জঘন্য। হুমায়রা হিমুকে দেখলাম চাবায় চাবায় একই ডায়লগ ছয়বার বললো। অনেক ভালো অভিনেতাদের দেখি এইসব নাটকে অভিনয় করে, দেখে মনটা খারাপ হয়, আহারে বেচারারা। তবে এই ধরনের নাটকে সবচেয়ে লাভজনক দেখি মধ্যম সারির মধ্যবয়স্ক অভিনেতারা। তাঁদের কালাকুলা মুখে দশ মন মেকাপ দিয়ে বানানো হয় নায়কের ভাই কিংবা বস কিংবা বউয়ের পরকীয়া পুরুষ। মজা পাই, বেচারাদের এহেন উত্থান দেখে। আর মধ্যম সারির যত নারী অভিনেত্রী আছে তাঁদের কপাল আরো খুলে গেছে। তাঁরা সবাই বড় বড় ষড়যন্ত্রী- নায়িকার শত্রু কিংবা নায়িকার সিম্প্যাথাইজার কাছের মানুষের রোল পায়। আহা কি আনন্দ! কাল ভালো লেগেছিল আবদুল হাদীর গানের অনুষ্ঠানটায়। তরুন শিল্পীদের কন্ঠে পঞ্চাশ ষাট দশকের বাংলা গান শুনতে খুব ভালো লাগে। হাদী সাহেব খুব যত্ন করে অরজিনাল শিল্পী- সুরকার-গীতিকারের নাম বলে উঠেন। ভালো লাগে তা দেখে। জামালপুরের সব খানেই জলসা আর জী বাংলার জয়জয়কার। দেশের চ্যানেল গুলার যে দশা, এই জয়জয়কার আরো অনেকদিন চলতেই থাকবে। তবে ভালো লাগে স্টারপ্লাসের হিট সিরিয়াল 'ইক হাসিনা থি' মাঝখানে প্রানের হিন্দি বিজ্ঞাপন। যাক এক জায়গায় তো বাংলাদেশ আছে। জী বাংলা ভর্তি তো প্রানের নানা বিজ্ঞাপন। এত জঘন্য প্রোডাক্ট লাইন নিয়ে প্রানের অগ্রযাত্রা আমাকে বিস্মিত করে!

যাই হোক আজ যাই। ইফতারীতে এত ভালো ভালো খাই, রাতে খাই না এই কারনে, খিদে পেয়ে যায়। আমার আগমন উপলক্ষে বাসায় নানান পদের খাবার ফ্রীজে। খেতে ইচ্ছে করে না, ভাবি এত খানাদানা জীবনযাপনের সাময়িক সুখ সইবো কেমন করে?

পোস্টটি ১০ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


অলরাউন্ডারের স্বর্গাবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হোক। Smile

আরাফাত শান্ত's picture


আমীন Smile

জ্যোতি's picture


রোজার দিন একটা পর্যন্ত ঘুমাই

At Wits End সকালে ঘুম ঘুম চোখে অফিস আসতে হয়। এমন জীবন অামি চাইনি।
তোমার বাড়ী থাকার সুখের কথা পড়ে আর তো সহ্য হচ্ছে না ঢাকা থাকা Crying

আরাফাত শান্ত's picture


আর মাত্র দুদিন, তারপর আপ্নেও সুখে থাকবেন!

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!