ইউজার লগইন

উপোষের দিন রাত্রী, সিজন টু, এপিসোড ফাইভঃ ইটস নট হ্যাপি এন্ডিং!

আরেকটা ঈদ এসে পড়লো। এত জলদি কেন ঈদ এখন এসে যায় তা বুঝি না। আমার বন্ধু এহতেশাম আজ দারুন ডায়লগ দিলো, যে বরফ গলার চেয়েও দ্রুত এখন কাটে একেকটা মাস, একেকটা বছর। আমিও রাতে বসে বসে টিভি দেখতে ভাবছিলাম সময় এত দ্রুত চলে যাচ্ছে জীবন থেকে, ভাবাই যায় না। তরতর করে খালি বয়স বাড়ছে। সেই ছোট্ট মানুষ আর থাকলাম কই? এখন বড়দের মতো আমার রাতে সহজে ঘুম আসে না। সেহরীর কারনে সকালে ঘুমাই। ঘুম আসে না তাও। অজস্র চিন্তা আসে জীবন নিয়ে। ঈশ্বর, এই পৃথিবী, ইহকাল, পরকালের বাস্তবতা, চারিপাশে এত মৃত্যু সব নিয়ে মনটা বিষিয়ে উঠে। নিজে নিজেই বলি এক 'বালের' জীবন আমাদের। যে জীবনে খালি অজস্র ব্যর্থতার সাগরে ডুবে থাকতে হয়। সেই ডুবন্ত অবস্থায় কিছু কিছু কচুরীপানা পেয়ে ভাবি এবার সাফল্য কিংবা সুখে ভাসবো। কিন্তু সেই আশা দুরাশাই। অনেক ধর্মীয় ভাবনা মাথায় ঘুরে, জীবনে অনেক মিথ্যা, অনেক পাপের কথা মনে পড়ে- যা সব কিছুই নির্দোষ বিনোদন হিসেবে মনে করেছিলাম তখন। মনে হয় পরকালটা নরকেই কাটাতে হবে। যদি পরকাল নাও থাকে তবূও এই নরকে যাবার এক ধরনের কল্পিত যন্ত্রনা মনকে আচ্ছন্ন করে। চার পাঁচ দিন আগে যথারীতি স্টেশনে গিয়েছিলাম। কয়েকজন পুলিশ একটা বস্তা টেনে আনছে, উৎসুক জনতার ভীড়। সবাই বললো ট্রেনে কাটা লাশ। নিমিষেই সিমেন্টের বস্তাটা আমার স্মৃতিতে একটা ছাপ মেরে দেয়। কি বীভৎসতম অবস্থা। একটা জীবিত মানুষ ইচ্ছে করে অনেক দুঃখের পাহাড় বুকে নিয়ে মরছে, তার শরীর ছিন্ন ভিন্ন। সব টুকরা নানান প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করে একটা বস্তায় ভরা হচ্ছে। এই জিনিসটা নিয়ে ভাবলে এত ঈদ, আমার টিভি দেখা, ফেসবুক লাইফ, ব্লগ লেখা, হাসি আড্ডা গান, বন্ধু বান্ধব, পরিবার পরিজন সব কেমন জানি ফিকে হয়ে আসে।

তবুও সেই বেঁচে থাকা। কোনোরকমে টেনেটুনে জীবনকে বইয়ে নিয়ে চলা। সেই জীবনে আসে ঈদ বছরে দুবার করে। ছোট্ট মানুষদের বেশী ঈদের আনন্দ টানে। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে মানুষ- তত হালকা হয়ে আসে ঈদের আনন্দ। আবার সেই আনন্দ জমাট বাধে সন্তান সন্ততি হলে। তাকে ঘিরেই আবার খুঁজে পায় হালকা হয়ে যাওয়া ঈদের খুশী। সন্তান বড় হতে হতে আবার সেই দ্বায়িত্বই মুখ্য হয়ে যায়। ঈদ আবারো সেই বোরিং একটা দিন মনে হয়। আমার ক্ষেত্রে এই নিয়ম অবশ্য ব্যাতিক্রম। ক্লাস টেন থেকেই আমার ঈদ বোরিং লাগে কারন ছাড়াই। কেমন জানি এত আনন্দ, এত খুশীর দিনটা পানসে লাগতো। তখন অবশ্য সহায় ছিল, বন্ধুরা ছিল অনেক। না চাইতেই অনেক আমোদ ফুর্তিতে কাটাতাম। ঢাকায় আসলাম, ভার্সিটি জীবন শুরু ঈদের বোরিং ভাব আরও বাড়লো। তখন অবশ্য ভাইয়া ছিল। ব্যাপক সেলামী পেতাম কিন্তু বন্ধু নেই। সারা শহর রিকশায় একা একা ঘুরতাম। সদরঘাট তাতিবাজার, ওয়ারী, মতিঝিল ঐ জায়গা গুলো তখন বাসা থেকে যেতে যেতে ফানা ফানা করে ফেলেছি। আর নীলক্ষেত ক্যাম্পাস শাহবাগ এইসব এরিয়াতে তো মন চাইলেই চলে যাওয়া হতো। বন্ধু বান্ধব কেউ নাই আমি একা একাই ঘুরতাম। আর বাসায় থাকলে সামহ্যোয়ার ইন ব্লগে বসে থাকা। ঈদের দিনে সামুতে প্রচুর পোষ্ট আসতো, প্রবাসী বড় ভাইদের সাথে কত কিছু নিয়ে আড্ডা হতো। এরকম ঈদের দিনে আমি সকাল বারোটায় টিএসসিতে বসে ছিলাম। এক মেয়েকে দেখলাম। সুন্দরী নয় কিন্তু অসম্ভব মায়াময় চেহারা। মনে হয়েছিল এর সাথে যদি সারা শহর রিকশায় বসে থাকা যেত। দেখে বুকটায় হাহাকার করে উঠেছিল। তারপর অনেক বার খুজছি মেয়েটাকে কিন্তু আর পাইনি। ২০১২ সালে তাকে এক পলকের জন্য রিকশায় দেখে ছিলাম, এক ছেলের হাত তার পিঠে। মনে হয়েছিল এই এক পলক না দেখলেই ভালো হতো, প্রতি ঈদেই এক আকাশ কুসুম স্বপ্ন নিয়ে ভাবা যেত। এরপর বন্ধু জুটে গেল ঢাকায়। সারাদিন কত কথা বলে বলে পার, এল্ডোরা এক দোকান ছিল, এখন যেখানে সোসাইটির মীনা বাজার সেই দোকানের সিড়িতে বসেই। তার গল্পই বেশি শুনতাম কারন এত চমৎকার সব গল্প আর স্মৃতি ঝাপি খুলতো- মুগ্ধ হতাম। তারপর আসলো বাড়ী ফেরার জীবন। এখানে আব্বু আম্মু আর টিভি দেখা ও মোবাইলে ফেসবুক চালানো ছাড়া আমার আর কোনো ঈদ নেই। ঈদের নামায পড়েই পাঞ্জাবী খুলে রাখি কারন তার আর কাজ নেই। মাঝে মধ্যে নানু বাড়ীতে যেতে হয়, তাও সেখানে এত লোকারন্যেও বোরিং লাগে। মজা পাই না, মজা লাগে না, সমবয়সী অন্যদের মজা করতে দেখলে ছ্যাবলামি বলে মনে হয়। তাও অবশ্য অনেকের তুলনায় ভালো আছি, আরাম আয়েশের জীবন। যা খেতে চাই তাই রান্না হয়, যা করতে চাই তাই পাই- তবুও একধরনের নাগরিক বিচ্ছিন্নতায় বিষণ্ণ একেকটা ঈদ কাটে আমার।

তবুও এখন মনটা একটু খারাপ। সন্ধ্যে থেকেই। কারন শিল্পী হাসি চক্রবর্তী মারা গিয়েছে। আমার ভাইয়ার বন্ধুর বাবা। কখনও কথা না হলেও, ভাইয়ার কারনে আমাদের নিকটবর্তী মানুষ। কত গল্প শোনা ভাইয়ার মুখে উনাকে নিয়ে। ভাইয়া যেত, উনাদের বাসায় তখন নানান কাজে কিংবা এমনিতে। সেদিন রিকশায় ফিরছিলাম শাহবাগ থেকে একা একা। দেখা হয়ে গেল ভাইয়ার সেই বন্ধুর ছোট ভাইয়ের সাথে। ডাক দিয়ে তুললাম। তখনও শুনলাম আংকেলের কত গল্প, পুরো পরিবারের আপডেট। শরীর অসুস্থ ছিল কিন্তু এরকম আকস্মিক চলে যাওয়া তাঁদের জন্য খুব কষ্টের। কারন ফেসবুকে দেখছিলাম ভাইয়া চিটাগাংয়ে ফিরতে পারার উচ্ছাস জানাচ্ছে। সেই উচ্ছাস একদিনের ব্যবধ্যানেই ম্লান হয়ে গেল। আবার সেই শোক এক মাসেই হয়তো কেটে যাবে। মনের ভেতরে যে যন্ত্রনা তা বয়ে বেড়াতে হবে আজীবন। যাই হোক অনেক জ্ঞান ঝাড়লাম। ক্ষমা করে দিবেন আশাকরি। সবাইকে ঈদ মোবারক। ঈদ আনন্দে কাটুক সবার! আমার সিরিজ এ বছরের জন্য সমাপ্ত!

পোস্টটি ১২ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

রাসেল আশরাফ's picture


ঈদ মোবারক শান্ত!! Party

আরাফাত শান্ত's picture


ধন্যবাদ ভাইয়া। অনেক অনেক শুভকামনা!

জ্যোতি's picture


আসলেই অজস্র ব্যর্থতায় ভরা জীবনকে টেনে নিয়ে বেড়ানো। এই এক কথায়ই সব শেষ Sad
সেই মায়াময় মেয়েটাকে মনে পড়ে যে এত!!!! শোন, কোন এক মায়াবতী হয়ত অপক্ষোয় আছে Smile

আরাফাত শান্ত's picture


আর কারো অপেক্ষায় নাই আমি, আমার জন্যেও কেউ নাই। ঐসব নিয়ে ভাবি না আপু। ঢাকা কেমন লাগে?

জ্যোতি's picture


ঢাকা আর কেমন লাগবে!!স্বজনহীন যান্ত্রিক শহর। সময়ে অসময়ে কান্না পায় Sad

আরাফাত শান্ত's picture


আহারে আপু Stare

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!