বন্ধুরে, তোদের মন পাইলাম না!
অনেকদিন পর গতকাল রাতে চা পানের সেই ফেলে আসা সময়কে ফিরিয়ে আনলাম। এক সিটিংয়েই হাফডজন কাপ ভর্তি চা, বাপের ঘরের কথা। কতদিন খাওয়া হয় না এরকম করে। চায়ের দোকানে দুই কিংবা তিনকাপের বেশী চা এখন ভুলেও খাই না। বসেই থাকি শুধু বেঞ্চে। আজ খেলাম তার কারন আছে, কারন গতকাল সন্ধ্যায় পুলকের জন্মদিন ছিল। কিন্তু দুঃখের কথা হলো আমার কাছেও টাকা নাই, পুলকের কাছেও টাকা নাই, আবীরের কাছেও টাকা নাই। তাই বারেক সাহেবের দোকানে বাকী চাহিয়া লজ্জা দিয়ে দেদারসে নিজেকে ও সবাই মিলে চা সিগারেট খাওয়ানো হলো। আমি যেহেতু সিগারেট খাই না সেহেতু চা খেয়েই সন্ধ্যার খিদেটার একটা দফারফা করলাম। চেচামেচি করে এক আড্ডা দিলাম। তারপর আবার আমার এক পরিচিত মামা, ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগ নেতা মদ খেয়ে মাতাল, তার সাথে মশকরা করলাম। আমাকে মুগ্ধ করে সব সময় মাতালরাই। মাতালরা এত অদ্ভুত এক জাতি হয়ে যায় মদ্যপানের, পর তা এক দেখার মত সিন। একটু আগেই যে হাজী সাব হয়ে নামাজের গুরুত্ব নিয়ে বয়ান দিচ্ছিলো, মদ চুর হয়ে তিনি বয়ান দিচ্ছেন যৌবনে তিনি কেমন সহিংস ছিলেন কিংবা তিনি কেমন নারীর কামনায় আসক্ত ছিলেন।
পকেটে টেকাটুকা না থাকলে যা হয় আর কি। আমি খুব আশাবাদী মানুষ হয়ে উঠি, ম্যাজিকে বিশ্বাস করি। যে হাটার পথেই হয়তো পড়ে থাকবে লাল ১০০০ টাকার নোট । আমি পকেটে তুলে নিয়ে ৫০০ টাকা দিয়ে দিবো এতিম খানায় আর ৫০০ টাকা দিয়ে একটা আস্ত গ্রীল গিলবো। কিন্তু আমার এই মনের আশা জীবনেও পূরণ হয় নাই। একবার খালি তিন হাজার টাকা পেয়েছিলাম যার টাকা সে সামনেই ছিল ডাক দিয়ে জানিয়ে দিলাম। নিজেরে তখন দানবীর মহসিন মনে হয়েছে। মনে হয়েছে আমার টাকা আমি আরেকজনকে দিলাম। কিন্তু আসলে টাকা তো হলো তার ই। আমার মামা অবশ্য এইদিক থেকে ইউনিক। একবার তিনি প্রায় লাখ তিনেক টাকার এক খাম পেয়েছিলেন। আমি হলেও রেখে দিতাম। কিন্তু মামা ঠিকানা খামে পেয়ে দিয়ে এসেছে তখনই। আমার এক বন্ধু ছিল যে ইসলাম দিয়ে বিপ্লব করার স্বপ্ন দেখতো সেই আমলে, এখন বুর্জোয়া মুমিন হয়ে ব্যাপক ভালো চাকরী করে। এখন আদর্শ হিজাবী গৃহিণী বিয়ে করাই তার ইসলামী বিপ্লব। সে তখন বলেছিল, দেশের মানুষ যখন টাকা পড়ে থাকবে তাও টাচ করবে না তখনই দেশে ইসলাম কায়েম হবে। আমি হেসে জবাব দিয়েছিলাম, আর হইছে মানুষ মাত্রই লোভ থাকবে, আর লোভে পড়ে অনেক কিছুই করবে ওরকম সমাজ দেশ রাষ্ট্র বিনির্মান সম্ভব না!
আমার বন্ধু আসলো গত শুক্রবার চিটাগাং থেকে। আমি বড়ই আমোদে ছিলাম অনেকদিন পর। দেখা হবে আড্ডা হবে মনে বেজায় ফুর্তি। কিন্তু কি হলো শুনলে হাসবেন সবাই। তারা আসলোই না। উল্টো বয়ান দিলো, নীলক্ষেতে আয় দুই ঘন্টা আড্ডা মেরে আমরা সায়দাবাদ দিয়ে চলে যাবো। আমি হলাম অবাক, বাজার কি খারাপ আমার। আমার সাথে দেখা না করে এখন আমাকেই আদেশ করে--আস নীলক্ষেত। শালার দুনিয়া, কিছুদিন আগেও আমার বাসায় থেকে এক্সাম দিয়ে দিয়ে আবার এসে আমার সাথে থেকে তার পরের দিন আমি বাসে তুলে দিতাম। সেই তারাই এখন তাঁদের নতুন বন্ধু বা অফিস কলিগের বাসায় ঊঠে। আর আমাকে ফরমায়েশ দেয়। জয় বাংলা বলে আগে বাড়ো! মেজাজটা খারাপ ছিল। পরে কোথায় জানি পড়লাম যে আট বছর পর পর মানুষের মন মানসিকতা চেঞ্জ হয়। এইটাই নাকি ন্যাচারাল। যাক ন্যাচারাল ভাবেই সবাই বদলে যাচ্ছে। আমি গাধা, গাধাই রয়ে গেলাম।
অবশ্য অনেক আগে থেকে আমি এইসব ব্যাপার নিয়ে ভেবেছিলাম। তখনই মনে সান্তনা দেয়া দুনিয়াতে ভাই বাবা মা ছাড়া আর আপন কেহ নাই। তাই পীরিতি দেখাবো যত খুশী কিন্তু আশায় থাকা যাবে না। আমি কারোর কিছুতেই আশা করি না। এখন যারা জানের দোস্ত, কাল যদি তারা না থাকে তবে আমার বয়েই গেল। আমি আমার মতোই থাকবো। বঙ্গদেশে বন্ধুর অভাব নাই। তারা আপনার ভালো বন্ধু হবে কিনা সেটাই ভাবনার। আজ যারা ভালো বন্ধু, কাল তারা নাও থাকতে পারে। তবে আমার চেষ্টা হবে তারা যেন না ছুটে। শত চেষ্টার পরেও যদি বন্ধুরা আপনার আপন না হয় তাহলে সেটা তাঁদের সমস্যা। আমার কোনো সমস্যা নেই। আমার আম্মু সবসময় বলতো খারাপ ছেলেদের বন্ধু নাকি বেশি থাকে। কথাটা ডাহা মিথ্যে, ছেলে হিসেবে আমি নেহায়েত মন্দ না, তাও এককালে আমার এত বন্ধু ছিল হাতের কড়া গুনে শেষ করা যেত না। এখন আঙ্গুল গুনেই বলে দেয়া যায়। আগামীতে হয়তো সেখানেও কমবে, কিন্তু তাতে আর কি। দেশে থাকলে আপনার বন্ধু এমনিতেই হবে, যার সাথেই কথা বলবেন তার সাথেই নম্র থাকবেন দেখবেন সবাই আপনার বন্ধু। আর দুনিয়াতে বন্ধু বানিয়ে আপন করতে গেলেই বিপদ, কয়দিন পর আপনাকে কম্পিটিটর ভাবতে শুরু করে নয়তো করুনা করা শুরু করে। তাই যারা আছে তারাই থাক, ফেসবুকে কিছু আজাইরা বন্ধু টিকে থাক, আপনি ভালো মানুষ হলে চারপাঁচজন বন্ধু আপনার থাকবেই। বাইডিফল্ট। তাই যথেষ্ট একটা জীবন কাটানোর জন্য। সবার সাথে নম্র ভদ্র থাকলে অনেকেই আপনার বন্ধু না হয়েও বন্ধুভাবাপন্ন হবে। আমি এই নীতিতেই বিশ্বাসী।
এক ভদ্রলোকের সুত্রে জানলাম, কমিউনিটি ব্লগের দিন নাকি শেষ। প্রথম আলো ব্লগ নাকি বন্ধ হয়ে যাবে। আমি বড়ই চিন্তায় পড়লাম। ব্লগ বন্ধ হয়ে গেলে দিনলিপি লিখবো কই?
আপনের বন্ধুদের ব্যাবহার দেখে খারাপ লাগলো, সময় খুব খারাপ একটা জিনিস মনে হয় মাঝে মাঝে।
ব্লগ ক্যান বন্ধ হবে?
নতুন আইন আসতেছে নাকি কোন?
আইন না, কমিউনিটি ব্লগ নাকি চলে না তেমন তাই বন্ধ করে দিচ্ছে!
ফে বু তে লিখবেন । ইয়ংম্যান ! হতাশ হবার কিছু নাই ! জীবন এমনই ! আজ, যারা বন্ধু, কাল তারা বন্ধু না থাকুক, শত্রু না হলেই হলো ! ভাল থাকুন !
থ্যাঙ্কস ভাইয়া। আপনাদের অনুপ্রেরনায় মুগ্ধ হই!
কী সুন্দর কথা বলেছিস শান্ত।
তোর লেখাগুলোযে কী দুর্দান্ত হয়।
আবার লিখতে ইচ্ছে করে।
কতদিন ব্লগ লেখা হয় না... গো অ্যাহেড...
ধন্যবাদ ভাইয়া
আমার লেখা হয় না তাও লিখে যাই, আপনারা পড়েন ভালো লাগে তাই!
আমিও গাধা, গাধাই রয়ে গেলাম


বন্ধু যারা হয় তাদের আপন ভাবতে শুরু করি, কেউ আর আপন থাকে না, বারবারই কষ্ট পাই
তুমি তোমার লেখায় কত কি বলে যাও মনের কথা!!!
কি খবর আপু? কেমন আছেন? আজকাল আপনাকে দেখি টেখি না কোথাও!
আারাফাত........সবসময় ....... খটখটে রোদের মাঝে আপনার লেখাগুলো এক পসলা বৃষ্টির মতো......
... ভালো থাকবেন.....
বিশাল কমপ্লিমেন্ট। ভালো থাকেন ভাইয়া!
গুড গুড

গুড নারে দোস্ত ব্যাড!
ব্লগ বন্ধ হলে আমার লেখক প্রতিভার কি হবে?
এই ব্লগ বন্ধ হবে না, ইনশাল্লাহ!
মন্তব্য করুন