উইথ গড অন আওয়ার সাইড!
বব ডিলানের অতি বিখ্যাত একটা গান। অনেকেই শুনে থাকবেন আশাকরি। গানটায় বলা হচ্ছে বিভিন্ন সময় গডের নাম ভাঙ্গিয়ে পৃথিবীতে মানুষ ধ্বংস করছে, লুটপাট করছে- প্রান ও প্রকৃতি। নানান সময়ে উসিলা একটাই, ঈশ্বরের নাম করে। ঈশ্বর আমাদের পক্ষে থাকবে এই কারনে কতজনকে আমাদের ঘৃণা করতে হয়। কত যুদ্ধ করতে হয়। বব ডিলান গানটার শেষে বলছে হয়তো দোযখে যাবো আমি, যাবার আগে আমি বলতে চাই গড যেন এবার মুখ ফিরে তাকায়। আর কোন যুদ্ধ যেন না হয়, আর যেন কোনো মানুষ না মারা হয় গডের নাম ভাঙ্গিয়ে। এবার গড আমাদের পক্ষেই যেন থাকে। গানটা আশাবাদের গান। আমারও আশাবাদ থাকে। কিন্তু আশাবাদী হবার মতো কিছুই নাই। সংযমের মাসে সংযম করে ৭০ গুন সওয়াব পাবার বিরতির- পরে আরেকজন ব্লগার খুন। আমি নিলয়কে চিনি না। কোনোদিন দেখছি বলেও মনে পড়ে না। বেচেঁ থাকতেই আমি নিলয়ের লেখা কোনোদিন পড়ি নাই, তাই ঘাতকদের ডজনখানেক কোপে নৃশংস খুনের পরে উনার লেখা পড়ার কোনো ইচ্ছে নাই। আমি কেকা, সজল, এপিজে আবুল কালাম, কত রাজনৈতিক নেতা, সানিদেওল- অক্ষয় কুমার- সুনীল শেট্টি- কতজনকে নিয়েই তো মশকারি করি। এখন সেই কারনে যদি কোনো তাদের ভক্ত আমাকে এসে কুপিয়ে যায় তবে আমার কিবা করার আছে! যাহারা উনার হত্যার জাষ্টিফিকেশনে নেমেছেন তাদেরকেও সেই একই কারনে মেরে ফেলা যায়। আমি মরলেও লোকজন বলবে ইন্ডিসিপ্লিনড ছেলে, চায়ের দোকানে দুপুরে বসে থাকে, কোনো সভ্য লোক এমন হয় নাকি? অনেকে বলতে পারেন ভাই ইসলাম ভিন্ন জিনিস। আমিও সেটা মানি। কিন্তু আপনার অনুভুতি এতই আঘাত প্রাপ্ত যে লোক দিয়ে খুন করাচ্ছেন। যারা খুন করে নি তারা তেনা পেচাচ্ছেন। খুনের জাষ্টিফিকেশনের মিছিল চলছে। আপনাদেরও দিন আসছে প্রস্তুত থাকেন। বলতে পারবেন না তখন মাই চয়েজ- পালন করবো কি করবো না! বলতে পারবেন না কোনটা আসল ইসলাম? তাহাদের ইসলামই আপনাকে মেনে নিতে হবে। না মানলে কি হবে তার ডেমো দেখতেই তো পারছেন। যে রাষ্ট্রীয় নির্লিপ্ততা ও উদাসীনতা দেখছি তাতে আমার নিজের জন্য না, যারা না বুঝে ত্যানা প্যাচান তাদের জন্যই মায়া লাগছে।
সরকার হিসাব ভোটের হিসাব। খামাখা এই সময়ে সরকার ব্লগার হত্যার বিচার করে- কাউকে চটাতে চায় না। ইসলাম কি বলে তা ইস্যু না, ইস্যু হলো ব্লগার হত্যা হলে মিডিয়াতেই যা লাফালাফি। হাজারো নতুন ইস্যুর ভীড়ে তা তলিয়ে যাবে। সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া নাই, সাধারণ মানুষের আরো না। ব্লগার কি সাধারন মানুষজন তাই জানে না। যারা জানে তাদের ধারনা এরা ইসলামের শত্রু নমরুদ। তাই এদের হত্যা করা দোষের না। তবে নমরুদকেও এইভাবে কুপিয়ে মনে হয় মারা হয় নাই। আমার ইসলামি জ্ঞান নেহায়েত মন্দ না। ইসলাম পরকাল ভিত্তিক ধর্ম। কিন্তু আদম সন্তানদের এখন আর তর সইছে না, পরকালের উপরেও মনে হয় না ভরসা আছে। তাই নেমে পড়েছে নিজেই নিধনে, নিজেই বিচারে। যারা অপারেশনে সরাসরি অংশ নিতে পারছে না, তারা আছে জাষ্টিফিকেশনে, নিলয়ের বউ কেমন সেই হিসাব নিতে। আরেক পক্ষ আবার আরেক কাঠি সরেস, তারা হত্যাকারীদের বকা দেয় তারচেয়ে দ্বিগুণ বকা দেয় নিহত মানুষটার। যেন তাদের আদরের ছোট শালা লাগে। কি করবে, না করবে সেই বিষয়ে মৃত্যু পরবর্তী নসীহত। আবার আরেক বুদ্ধিজীবিদের দেখলাম তারা ইন্টারন্যাশনাল কনটেক্সটে দেখছেন। আমেরিকার একটা চাল, বাংলাদেশে আগামীতে আগ্রাসন চালাবে। আমি দুঃখে হাসি। বেচারারা কত পরিশ্রম কত চেষ্টা করছে, কিন্তু লুকাতে পারছে না যে ব্লগার হত্যায় তারা মোটাদাগে কম বেশী খুশী ও আনন্দিত। এই হত্যাকান্ড গুলোর দায় আওয়ামীলীগের কাঁধেই আসবে দিন শেষে। কারন তারা বিচার করতে পারে নাই, কাউকে ধরতেও পারে নাই নিজের মুরোদে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই ভাষনে আছে, রক্তের দাগ এখনো শুকায় নাই। আমি বলি আওয়ামীলীগ ও তার তালগাছবাদী সমর্থকদের হাতেও রক্তের দাগ বিদ্যমান। আওয়ামীলীগ সরকারের একটা ধারনা, যে ব্লগাররা বকেয়া মাল। বিদেশ গিয়ে বাঁচতে পারলে ভালো, মারলে দোষের কিছু না। আওয়ামী লীগ যদি জামাতের চেয়েও বেশি মওদুদীবাদী হয় তাতেও জামাতের ভোটারগন আওয়ামীলীগকে ভোট দিবে না। আওয়ামী লীগ যতই ওলামা লীগের ভাষায় কথা বলুক না কেন দিনশেষে জাতীয়তাবাদী ইসলামের ভোট বিএনপির বাক্সতেই যাবে। তাই আইজিপি স্যারের ভাষায় বলি, আওয়ামীলীগকে তার সীমানায় আসতে হবে। আওয়ামীলীগ যদি এখন জামায়াতকে তাদের নিকটবর্তী দল ভাবে তাহলে আমাদের আর কি?
অনেক প্রগতিবাদীদের মুখে শুনি কলম বন্ধ হবে না। মাজল মি নট। লেখা চলবে। আমি বলি- ঘন্টা চলবে। এরকম সময়তেও যদি কেউ দেশে বসে কিছু লিখে, তাঁকে উন্মাদ বলাই ভালো। বেহুদা হিরো হবার কারো দরকার নাই। বিদেশে চলে যাবে, খাবে দাবে কলকলাবে তখন সময় পেলে একটু আকটূ এক্টিভিজম- ইহাই এখন মুক্তবুদ্ধির চর্চা। এই মুক্তবুদ্ধির দরকার নাই, দেশে কোপান্তিস চলবে আর লোকজন লিখবে এতবড় বিপ্লবী এখন আর দেশে নাই। অন্য মানুষেরা শহীদ হয়ে অমর হোক, আমার দরকার নাই শহীদের। কারন বলা নেই, কওয়া নেই, আমাকে ফলো করা শুরু করবে, বাসায় এসে মেরে চলে যাবে সেরকম বীর আমি না। আমি পাবলিক মানুষ,বিদেশ যাবার বিন্দুমাত্র আশা নাই, সবার সাথে মিশি, নামায কালাম পড়ি। যতদিন বেঁচে থাকার থাকি, আল্লাহ ভরসা। আরো বেশী কালো অন্ধকারের অপেক্ষায় বসে আছি অন্ধকারে।
শান্ত, তোমার এই লেখাটা পড়ে আমার মহাশ্বেতা দেবীর "হাজার চুরাশির মা" এর কথা মনে পড়ে গেল।
কথাগুলো নির্ভেজাল সত্যি
(
কিচ্ছু বলার নেই। নাস্তিক মারা ফরজ, বেহেস্ত একেবারে কনফার্ম।
মন্তব্য করুন