ট্রিবিউট টু কামাল ভাই এন্ড লীনা আপু!
ডিসেম্বর জন্মদিনের মাস। আমার ভাতিজির জন্মদিন। তিনজন ক্লোজ বন্ধুর জন্মদিন। মামার সন্তান সাইকের জন্মদিন। জেবীন আপার জন্মদিন। ছায়ার আলো ওরফে ইমরান ভাইয়ের জন্মদিন। খুঁজলে হয়তো আরো অনেক পাওয়া যাবে। তবে এই শীতের রাতে লিখতে বসেছি ব্লগে আমার দুই প্রিয় এনলাইটেন মানুষের জন্য। এই দুইজন মানুষকেই আমি ব্যাক্তিগত জীবনে খুবই পছন্দ করি, তারা আমাকে পছন্দ করে সেটা একটা কারন হতে পারে। তবে সব চেয়ে বড় কারন তাদের লেখা, মতামত, অপিনিয়ন আমার খুব প্রিয়। এইজন্য ব্লগ আমি এখনো লিখি টুকটাক, কারন ব্লগের কারনেই একটা জানালা আমার খুলে গেছে। সেটা পড়ার জানালা, যারা পড়ে তাদের সাথে তাল মিলিয়ে পড়ার জানালা। সেই জানালার খোজ সবাই পায় না। আর পেলেও বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আমি মনে করি পড়ার জানালাই আমার জীবন। এই যে দুচারটা কথা লিখতে পেরে আনন্দিত হই এটা পড়ার ফল। নয়তো সবাই অফিসে প্রতিদিন পিসিতে কত কিছুই লিখে, কোনও কিছুতেই এই ব্লগ লেখার আনন্দের ধারে কাছেও নাই। আমি আমার পুরানো ব্লগ কখনো পড়ি না, নতুন করে যা লিখি তাই পড়ি, কারন এক ধরনের উত্তেজনার ভিতরে থাকি যে নিজের কিছু কথা জানাতে পারছি। কেউ কেউ পড়ে বাহবা দিচ্ছে, কেউ কেউ পড়ে বিরক্ত হচ্ছে, এই প্রতিক্রিয়াই বা কোথায় পাওয়া যায়। ফেসবুকে তো খালি লাইক। যাই লিখি তাতেই লাইক কম বেশী পাওয়া যায়, ব্লগের একটা কমেন্টের কাছে ১০০ লাইক কিছু না। আমি ব্লগে মন্তব্য করতেই ভালোবাসতাম, কিন্তু লেখাও যে আনন্দের আমি লিখতে পারি এই বিশ্বাসটা আমার মাথায় গেথে দেয়ার জন্য কামাল ভাই আর লীনা আপার অবদান অন্য অনেকের চেয়ে বেশী। তাই শোকের দিন বুদ্ধিজীবি হত্যা দিবসেও তাদের নিয়ে লিখতে আমি ইতস্তত বোধ করি না। দেশে জীবিত যত বুদ্ধিজীবি তাদের চেয়ে আমার ঢের ভালো লাগে আহমাদ মোস্তফা কামাল আর লীনা দিলরুবাকে। আগেও আমি দুজনকে নিয়ে লিখেছি এরকম জন্মদিনেই। আবার নতুন করে সেসব কথা লিখতে ইচ্ছে করছে না। আগ্রহীরা খুঁজলেই পড়তে পারবেন। তারচেয়ে নতুন কিছু লেখার চেষ্টা করি যা আগেও লিখেছি অন্যভাবে।
কামাল ভাইয়ের ২০১৫ সালের মেলায় একটা বই বের হয়। সেবার মেলায় সম্ভবত একটা বইই বের হয়েছিলো। উনার মুক্তগদ্যের বই, একদিন সব কিছু গল্প হয়ে যায়। বইটা আমি ভাবতাম খালি আমারই প্রিয়। কিন্তু যখন দু কপি কিনে পাঠিয়েছিলাম চিটাগাংয়ের ক্লোজ বন্ধুদের পড়তে দিলাম। তারা সবাই মুগ্ধ। আমার বন্ধু ফয়সাল বলছিলো, মায়াময় সব লেখা, থ্যাঙ্কস জানিয়েছিলো পাঠানোর জন্য। আমি তখন চিন্তা করছিলাম আমরা ভালো বইয়ের বিপনণ করতে পারি না, করতে জানলে অনেকের অনেক বই পড়া হতো, বই পড়ার প্রতি ভালোবাসা খুজে পেত। চিটাগাংয়ের বন্ধুরা আমার বইয়ের প্রতি যে প্রেম তাতে যত্নশীল। পড়তে দিলে বা কিনতে বললে, কিনে পড়ে মতামত জানায়। দুইটা বই হাতবদল হয়েছে বন্ধুদের মাঝে, পড়ে সবাই আনন্দিত। তখন আমার মনে হয়েছিল বইটা নিয়ে রিভিউ লিখি, লিখেও ছিলাম যতদুর মনে পড়ে। কিন্তু ভেবে দেখলাম, আমার রিভিউ লেখা হয় না। কারন রিভিউ লিখতে গেলে নিরপেক্ষ দেখার চোখ লাগে, পড়ার মন লাগে। আমি নিরপেক্ষ নই, যার যে জিনিস তা ভালোই লাগে, যা খারাপ লাগে তা খারাপই লাগে, ব্যালেন্সিংটা এখনো শিখতে পারি নাই। এক্সাম্পল হিসাবে বলি, কামাল ভাইয়ের একদিন সব কিছু গল্প হয়ে যায়, বইটা খুব প্রিয়। গল্পের মত করে এখানে বলা, কিন্তু গল্প নয়, উপন্যাসের মত অসংখ্য লাইন তাও এটা উপন্যাস নয়, পুরোনো অনেক অনুভূতির কথা লেখা তাও এটা নির্জীব স্মৃতিকথা নয়, এটা এমন কিছু লেখার সমষ্টি যা পড়তে দারুন আর মুগ্ধতার রেশ রয়ে যায় অনেকক্ষণ। বইটা শুরুই হয়েছে, আমার না লেখা ডায়রীর পাতা গুলো, লেখক কেন ডায়রী নিয়মিত লিখেন না তার কথা আছে, টুকরো টুকরো বিভিন্ন মনিষীর ডায়রীর কিছু কথা লেখা, ব্যাক্তিগত দিন যাপনে দুঃখ বেদনা হাসি আনন্দ সংগ্রাম ডায়রীর পাতা বেয়ে উঠে এসে কিভাবে সেটা অনেকের চিন্তার সাথে মিলে যায় তার কথা বলা আছে এক এট্রাক্টিভ ওয়েতে। খুবই অসাধারণ কিছু লেখা আছে, মা কে নিয়ে, লেখকের কিশোর বেলা, ব্যাক্তিগত বই সংগ্রহ, নিজের ঘর, এইসব দিনযাপন নিয়ে। আমার ভালো লাগে আগে পড়া, যে পথে জেমস জয়েস হাঁটতেন, কালের খেয়া নাকি কোথায় লেখাটা ছাপা হয় আমি নেটে পড়ে সন্তুষ্ট হতে পারি নি। পত্রিকাটা কিনি, আর মামাকে দেখিয়ে বলেছিলাম, কামাল ভাইয়ের এই লেখাটা পড়ো মামা, কি ফ্যান্টাস্টিক। আমার এখনো মনে আছে, মামা এক গাল হেসে বলেছিল, তুমি যাদের লেখা ভালোবাসো তাদেরকে বেশী ভালোবাসো, এত ভালোবাসা ঠিক না। আমি বিরক্ত হয়েছিলাম এত সত্য কথায়। দহনকাল নামে একটা আড়াই পাতার লেখা আছে বইতে, সেটা যখনই পড়ি চোখে পানি আসে, কিংবা চোখে পানি আসে- মুমূর্ষু বিছানার কিনারে পড়লে। আবার জীবন নিয়ে নতুন ভাবে সিদ্ধান্ত আসে যখন পড়ি একদিন সব কিছু গল্প হয়ে যায় চ্যাপ্টারটি। চ্যাপ্টারের শেষ দিকের কয়েকটা লাইন আমার মুখস্থ- 'মানুষ চিরটা কাল একটা বিভ্রম নিয়ে বাঁচে যে, এই পৃথিবীতে তার অনেক কাজ, অনেক দ্বায়িত্ব, অথচ সময় এত কম! এটা বিভ্রমই। বিশুদ্ধ বিভ্রম। হয়তো মধুর বিভ্রমও, নয়তো মানুষ কি নিয়ে বাঁচতো? প্রকৃতপক্ষে মানুষের করনীয় কিছু নেই, দ্বায়িত্বও নেই কোনো। না চাইতেই পেয়ে যাওয়া এই জীবনে বয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনোকিছুই প্রয়োজনও নেই। এই বিভ্রমে আমিও ভুগেছি বহুকাল। এখন বুঝে গেছি বেচে থাকার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। চলে গেলেও সব কিছু চলবে। কিছুই থেমে থাকবে না আমার জন্য। এখন ঘুমের মধ্যে নিঃশব্দে মৃত্যু ছাড়া আর চাওয়ার কিছু নেই আমার।' আহ কি লাইন, বাঁচার লালসা, ভোগ আকাঙ্ক্ষার জীবন থেকে নিজেকে কত চমৎকার ভাবে সরিয়ে রাখা। আমরা সবাই মরবো এইটাই সত্য। আমি চাই কামাল ভাই আরো অনেকদিন বাঁচুক, সুস্থ থাকুক। আমাদের জন্য বাঁচুক। আমার প্রতি উনার যে উদার স্নেহ তা টিকে থাকুক। হৃদয়গ্রাহী সব লেখায় ভরিয়ে দিক আমাদের অন্তর। জন্মদিনের শুভেচ্ছা বস, উই লাভ ইউ।
লীনা আপার লেখা কোনো বই আমরা এখনো পাই নি। সামনে পাবো এমন লক্ষণও দেখছি না। তবুও আমি ব্যাক্তি লীনাপুর চেয়েও উনার লেখক লীনা দিলরুবার বেশী ভক্ত। ফেসবুকে আমার ক্লোজ ফ্রেন্ড টিক দেয়া, তাই ফেসবুকে উনি যাই লিখু্ক নটিফিকেশন আসে, সাথে সাথেই পড়ে ফেলি। দেখা সাক্ষাত হয় না, কথা হয় না ব্যস্ততার জন্য, কিন্তু ফেসবুকেই জেনে যাই, পড়তে ভালো লাগে উনার ভাবনা। সেলফি আজাইরা স্ট্যাটাস তো সবাই দেয়। কিন্তু যা পড়ছে তা নিয়ে লেখা, বিভিন্ন লেখক নিয়ে ভাবনা কয়জন আর জানায়। এইজন্যই লীনাপুর লেখা আমার এত প্রিয়। উনি সততার সাথে যা পড়েন, যা ভাবেন তা কম বেশী ফেসবুকে লিখে দেন। আমার হিংসা হয়, ইশ উনার মতো যদি পড়তে পারতাম। আমি যে পড়ি না এমন না, ভালই পড়ি, কিন্তু তা নিতান্তই নস্যি। উইম্যান চ্যাপ্টারে আপুকে মাঝে লিখতে দেখলাম। তার ভেতরে আমার এই লেখাটা খুব ভালো লেগেছে।
http://womenchapter.com/views/16958
উইম্যান চ্যাপ্টার নিয়ে পুরুষ ফেসবুকাররা হাসাহাসি করে। আমি হাসির কারন খুজে পাই না। এই দুনিয়ার হাফ মানুষ নারী- কন্যা- মহিলা। তাদের নিয়ে দুই চার লাইন লিখলেই কি র্যাডিকাল ফেমিনিষ্ট হয়ে যায়? আর আমার কাছে ফেমিনিজম ইজ কুল, বিকজ দুনিয়ার সব চেয়ে বড় জাতিকে নিয়ে আপনি লিখবেন, তাদের নিয়ে কথা বলবেন, নারীর সমধিকারের কথা বলার চেয়ে বড় ইজম আর কি। আমি বরং হতাশ হই দেশে পুরুষ নারীবাদীর সংখ্যা এত কম বলে। যে দুয়েকজন আছেন তারা পিউর এটেনশন সিকের জন্য বলে। আমি চাই লীনাপু ব্লগ না লিখুক অন্তত উইমেন চ্যাপ্টারে লেখা অক্ষুণ্ণ রাখুক। লেখার জন্য দরকার পড়ার, উনার মতো পড়ুয়ারা না লিখলে চলবে কি? আমার মতো স্পন্টেনিয়াস লেখকদের দিয়ে পেইজ ভরা চলে কিন্তু কাজের লেখা তো আর হয় না। উনাকেও জন্মদিনে জানাই শুভেচ্ছা। নামিরা শ্রেয়া দুলাভাইকে নিয়ে দিন যাক আনন্দময়। আপনার সাথে দেখা হয় না অনেক দিন, কথাও হয় না, তাতে অবশ্য আসে যায় না। কারন আপনি আত্মার কাছের মানুষ, আমাকেও কাছের মানুষ মনে করেন, এরচেয়ে বড় রিলেশন আর কি। আপনার সব কিছু দারুণ কাটুক।
শুভ জন্মদিন লীনা আর কামাল ভাই। নতুন বছর আনন্দে কাটুক। ভালবাসা ---
শান্ত, পোস্টটা পড়তে খুব ভাল লেগেছে। অনেক গুছিয়ে লিখেছো তুমি।
থ্যাঙ্কস আপু। মেসেঞ্জারের রিপ্লাইটা আরো ভালো ছিল!
ভাতিজী,বন্ধু,ব্লগার সবাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। পোস্টে উত্তম জাঝা।
অনেক ভালো লাগলো .
শুভ জন্মদিন লীনা আপু

শুভ জন্মদিন কামাল ভাই
থ্যাঙ্কস রন ভাই।
বেশী থ্যাংকস- ব্লগটা এখনো বাচিয়ে রাখার জন্য!
মন্তব্য করুন