ইউজার লগইন

নভেম্বরের শহরে!

কেউ কখনো নিউমার্কেট থেকে স্যুটকেস কিনতে দেখেছেন বা কিনেছেন, কিংবা বড় লাগেজ, দেখবেন যারা কিনে রিক্সায় তারা খুব হাসিখুশী থাকে। চোখে থাকে বড় কিছু কেনার আনন্দ। আমিও প্রতিদিন স্যুটকেস নিয়ে হাঁটি, স্যুটকেস ভর্তি শুন্যতা নিয়ে। সেই স্যুটকেসের খবর শুধু আমারই জানা। আমি বয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াই সারাটাদিন, এই শহরময়। পাশে লোক থাকে, জিগ্যেস করে কি অন্যমনষ্ক? আমি হাসি, আমি অন্যমনষ্ক নই, মনমনষ্ক। সারাদিন মনে মনেই ভাবি। নিজে যখন অন্যের সাথে কথা বলি তখন হই পরমনষ্ক। ইউটিউব যখন শুনি তখন হই গানমনষ্ক। ইতিহাসমনষ্করা আক্ষেপ করে বলে, প্রজন্ম কাউকে চিনে না। আমি এইসব ব্লেইম গেইমে বিশ্বাস করি না। জানে না যারা, তারা জানবে। অনেকেই আছে আমার আপনার চেয়েও অনেক কিছু জানে, অনেক বয়স্করাও অনেক কিছু নিয়ে কিছুই জানে না। ক্লাসিক জিনিস সব সময়ই চিরকালীন। এখনো প্রচুর তরুণ আছেন যারা সুনীলের ছবির দেশে কবিতার দেশে পড়ে আপ্লুত হন, সত্যজিতের সিনেমা দেখে কেদে উঠেন, আজ রবিবারের আনিসকে দেখে হো হো করে হাসেন। তাদের কথাও বলা দরকার। জেনারেলাইজেশন, ভালো ব্যাপার নয় অবশ্যই।

আজ ছুটি ছিল। অনেকদিন পর আজ আমি শুধুই ঘুরতে বের হয়েছিলাম। এরকম দিন গুলো আর আসে না আগের মতো। আগে সবদিন গুলোই ছিল এরকম। হন্যে হয়ে ঘুরতাম অকারণে। আজও কিছুটা সেরকম ছিল। সকালে গিয়েছিলাম দলবেঁধে কেরানীগঞ্জ। সেখান থেকেও অনেক ভেতরে এক জায়গায়, খুব ভালো খুদের ভাত আর অনেক পদের ভর্তা পাওয়া যায়। যাওয়াটাই কষ্টের। এত অসাধারণ টেষ্টের খাবার অনেকদিন সকালে জুটে না। সেই ভালো লাগলো। আসলাম বারেক স্টোর, সেখানে আজ অশান্তির দিন। বারেক সাহেবের ভাই ব্যাটারী চালিত রিক্সা হারিয়ে ফেলছে। কে বা কারা তাকে নেশা খাইয়ে রিক্সাটা মেরে দিয়েছে। বসে থাকতে থাকতে রিক্সা চুরি কিভাবে হয়, কত রকমের পার্টি থাকে তা নিয়ে আলোচনা। যেমন যারা চুরি করে তারা শুধু ৮০০-১০০০ টাকার কামলা। রিক্সা চলে যায় গ্যারেজে। খোঁজ নিলে বলতে হবে শুধু কোন এলাকায় কি বলে রিক্সাটা নিয়ে গেল। যেমন ধরুন আছে বাসাবাড়ী কামলা, তারা রিকশাচালককে ফুসলিয়ে বাসায় উঠায়, চালক নেমে দেখে রিক্সা নাই, আবার আছে চা দোকানের কামলা, তারা চায়ের সাথে সিস্টেমে কিছু মিশিয়ে দেয়, খেয়েই রিক্সাচালক রিক্সার গদিতে ঘুমায়, তাকে নামিয়ে কোথাও শুইয়ে দিয়ে, রিকশা উধাও। নেশার কারনে সুমন সাহেব বলতে পারছেন না, উনার সাথে কি হলো? যা হোক তা নিয়ে বচসা চলছে। চলছে বিপিএল জুয়া। নিম্নবিত্ত মানুষের সে কি আগ্রহ এইসব নিয়ে। বিপিএলের সব খবর পাওয়া যায় এক বসাতে। পুলক ঢাকায় থাকে না। এখন ঢাকায়। আলাপ হলো, পুরোনো ঠাট্টামশকরা হলো। বাসায় আসলাম। গোসল করে খেয়ে আবার বের হলাম। ভাবলাম যাই বসেই যখন, লিটফেস্ট থেকে ঘুরে আসি। কিন্তু আমি তো জানি না, আজ হাবিয়া দোযখ রাস্তায়। শাহবাগের রাস্তা অফ। আওয়ামীলীগের সেলিব্রেশন। রিক্সা নিলাম। ফেসবুকে প্রজন্মদের নিয়ে আক্ষেপ করা ইতিহাসজ্ঞরা জানবেন না কোনোদিন এই ফুলবাড়ীর রিকশাচালক জহিরুল তাদের চেয়ে কম কিছু না। সে বলতে পারে বুক চিতিয়ে, যে ভাষন আমাদের বাপ চাচাদের যুদ্ধ করাতে পারে, জান দিয়েছে, সেই ভাষণ কে স্বীকৃতি দিলো না দিলো, তা নিয়ে এত সভা সমিতি কেন? আর গত চল্লিশটা বছর ইউনেস্কো কি ঘোড়ার ঘাস কাটলো?

লিট ফেস্ট আমার খুব একটা টানে না। কারন শুরুই তারা করেছিল হে নাম দিয়ে। পরে লোকজনের চাপে হলো ঢাকা লিটারেচার ফেস্টিভ্যাল। তবে জিনিসটা মোটামুটি। আমি গেলাম সবার শেষে, কোথায় কি সেশন কিছুই জানি না। তবে এখন বাংলা বই কম পড়ি আর ইংরেজী বই ভালো পড়া হয় বলে, বই নিয়ে আগ্রহ ছিল। আমিও দেখলাম কুল জেনারেশনের মত অনেক লেখকের নাম গড়গড় করে আওড়াচ্ছি। এখানে কালেকশন খুব ভালো। বিশেষ করে যে লেখক উপস্থিত তিনি বিদেশী হলে তার বই দু চারটে বেশী বিক্রি হয়। আমার সাথে ছিল এক বন্ধু। তার আবার বোন দেয় ফোন, আপুটা আছে প্যারায়। হয়তো ছাড়াছাড়ি হয়ে যেতে পারে। যথারীতি আপু মানিয়ে চলার প্রানান্তকর সব চেষ্টা করছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না কিছুতেই। নিজে এক স্বনামধন্য স্কুলে পড়ান, এত মেপে চলেন কথা বলেন এত বছর সংসার করেও মিলছে না। পুরুষদের ন্যাচার আমি বুঝি না। কেমন জানি আজাইরা। এত আজাইরা মানুষ কিভাবে হয় তা আমার জানা নাই, নিজেদের এরা ভাবে কি তারাই জানে। যা হোক। কাছেই পেলাম বিখ্যাত হেলাল হাফিজের কবিতা পাঠ। শামীম ভাইকে খুব ভালো লাগছিলো। আরও যুবক হচ্ছেন দিন দিন। মার্জিত পরিমিত উপস্থাপনা। আমার পাশে এক অত্যন্ত সুন্দরী। সে হেলাল হাফিজের বিশাল ভক্ত। হেলাল হাফিজ বলার আগেই তিনি কবিতা বলে উঠেন, সামান্য হাসির কথায় অট্টহাসি দেন। ঐসব বিখ্যাত কবিতা যে আমারও মুখস্থ তা আর তাকে জানানো হয় নি। আমি কবি নই, কবিরা প্রেমিক হয়। ঘুরলাম। নানা বিখ্যাত মানুষদের দেখলাম। চেনা অনেক মানুষকেই দেখলাম। কথা বলি নি। আগ বাড়িয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না মোটেও। সবাই নিজেদের সার্কেল নিয়ে ব্যস্ত, আমিও আমার বন্ধুকে জ্ঞান দিচ্ছিলাম আর সে আমাকে রবার্ট ফ্রষ্টের কবিতা নিয়ে বয়ান দিচ্ছিলো। শাড়ীপরা তরুণীদের দেখে আমার সুদর্শন বন্ধুর চিত্তে দোলা দিচ্ছিলো। আমার মনে পড়লো হুট করে শুভর কথা। এরকম এক লিট ফেষ্টে সে কি একটা ইভেন্টের একটিভেশনের কাজ করছিলো, দেখে তার ভার্সিটির ছেলেমেয়েরা। বেচারা নাকি সেই লজ্জা পেয়েছিল। কত মানুষ কত কিছুতে কুন্ঠিত হয়। আমিও দেখছিলাম, সাদা এক ছেলের সাথে এক তরুনী খাতির জমাতে পেরে সে কি খুশী, দুই স্কুলের বাচ্চা আলাপ করছে রায়ান রেনল্ডস নাকি জাস্টিন টিম্বারলেক কে বেশী হট, চা খেতে খেতে দুই মধ্যবয়ষ্ক বান্ধবী আলাপ করছে ইন্ডিয়ান কোন কোন শাড়ী বেশী জোশ, চিপায় দাঁড়িয়ে সুন্দরী তরুনী খাচ্ছে সিগারেট, অনেকেই কিনছে গেঞ্জী, মগ, ব্যাগ। তবে বই নিয়েও আলোচনা আছে, এক নিবিষ্ট বিদেশী ভদ্রলোক আলাপ করছে সাহিত্য নিয়ে, কয়েকজন শ্রোতা মন দিয়ে শুনছে। শেষ পর্যন্ত বসবো, কিন্তু অডিটোরিয়ামে দেখি জায়গা নেই। কি আর করা। বের হয়ে গেলাম। রিক্সা নিলাম সোজা মোহাম্মাদপুর।

প্রচুর লোক এসেছে আওয়ামীলীগের মিটিংয়ে। ঢাকার আশেপাশের নানান জেলা থেকে সব ছেলের দল। মুখে গোফ দাঁড়ির আভা নেই, খাচ্ছে সিগারেট। কি খুশী। একজনকে জিগ্যেস করলাম, কোথা থেকে আসছো? সেই অসভ্য ছেলে জানায়, কোথায় হলে খুশী হন। এরকম তেরা জবাবে মেজাজ খারাপ হলো। বন্ধুর সাথেই আলাপ করছিলাম। পুরাই একাডেমিক আলাপ। পুরোনো দিনের বাংলা কেমন ছিল। রিক্সাচালক এইসব শুনে টুনে ভাবছে আমরা আবার কোথাকার পাগল। আসলাম। দেখি তখন সুমন কেন্দ্রিক আলাপ। উনার স্ত্রী রাগ করে চলে গেছে দুমাস। লোকজনের টিপ্পনী দেয়া আলাপ আলোচনা। বিপিএলে রংপুর যারা নিয়েছিল তাদের মনে বিষাদের ছায়া। সবাই আসলো। অনেকদিন পর জমাট আড্ডা হলো। খাওয়াদাওয়া হলো। বাসায় আসলাম। বাসায় এসে দেখি বাজার নাই। বাজারে গেলাম। মাছ কিনলাম। বাসায় আসলাম। ধুলাবালিতে ঠান্ডা লেগে অবস্থা খারাপ। তারভেতরেই লিখে ফেললাম এই লেখা। কারন লিখছি, লিখবো করে আর লেখা হয় না। লেখাটা হলো সাধারণ, একসময় একটা জীবন পাবো না এরকম লেখার। অভিযোগ অনুযোগ করার মতো থাকবে না একটা জীবন।

পোস্টটি ১৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

তানবীরা's picture


দেশে আসলে ভর্তা দিয়ে খুদের ভাত খেতে কেরানীগঞ্জ যাবো - আলোচ্য লেখায় এই আমার বক্তব্য

আরাফাত শান্ত's picture


তা আর বলতে। অবশ্যই!

নিয়োনেট's picture


লেখাটা হলো সাধারণ, একসময় একটা জীবন পাবো না এরকম লেখার। অভিযোগ অনুযোগ করার মতো থাকবে না একটা জীবন।

নিয়োনেট's picture


লেখাটা হলো সাধারণ, একসময় একটা জীবন পাবো না এরকম লেখার। অভিযোগ অনুযোগ করার মতো থাকবে না একটা জীবন।

নিয়োনেট's picture


সুন্দর লেখা। ব্লগে ফিরে আসার জন্য ধন্যবাদ!

আমিও একবার হে ফেস্টে গেছিলাম। স্মৃতির অনেক কিছুই লেখার সাথে মিলে গ্যালো। চিপায় দাঁড়িয়ে তরুণীদের সিগারেট খাওয়ার দৃশ্যটা আমার ভালোই লাগতো দেখতে!

আরও মনে পড়লো আম্লীগের সমাবেশে আসা ঐসব ছেলেপেলের কথা। আপনাকে সালাম, আপনি জিগ্যেস করছেন কোথা থেকে আসছো! ঐ ছেলেও ভালোই উত্তর দিছে! কী আর করবে বলেন, ওরা বাস ভাড়া করে নিয়ে আসে সমাবেশ করতে আর শহরটাকে বাজিয়ে দেখতে, আর ঢাকার লোক জন যেমনে ওদের দিকে তাকায়, তাতে ঐ জবাব ছাড়া আর কী দেবে ওই ছেলের দল।

প্রতিদিন লিখবেন ভাই। এবং পোস্ট করবেন ব্লগে। ভালো থাকুন। সুখে থাকুন।

আরাফাত শান্ত's picture


ধন্যবাদ ভাই। ভালো থাকবেন!

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!