ইউজার লগইন

ডিসেম্বরের শহরে!

আমার লেখা নিয়ে সেদিন একজন জানালো আমি নাকি লেখায় খালি মন খারাপের চাষাবাদ করি। বিশ্বাস করুন বন্ধুগণ, কোনরূপ চাষাবাদ সমন্ধ্যে আমার কোনো আইডিয়া নাই। সামান্য জমি জিরাতের ব্যাপার স্যাপার নিয়েও আমি পুরোই বকলম। দীর্ঘ স্কুলজীবনে এগ্রিকালচার পারে নি আমাকে সামান্য আগ্রহী করতে। খালি এভারেজ নাম্বার দিয়েছে। সবাই তখন বলতো, কৃষিশিক্ষায় নাম্বার তুলতে হবে। আমি তেমন নম্বর তুলতে পারতাম না, কারন ব্যবহারিক আকাআকিতে দুর্বলতা। আর আমাদের টিচার ছিল সুন্দর আলী স্যার, ধবধবে সাদা, হুজুর মানুষ, শান্ত ভদ্রলোক। কিন্তু আমরা ছিলাম কঠিন বেয়াদব। স্যার পড়া ধরে না, মারে না, তাই আমরা আন্তঃবেঞ্চ আড্ডায় মশগুল হতাম। স্যার আমাকে দেখে ডায়লগ দিতো, 'আরাফাত ক্লাসে আসো কি করতে? বাসাতেই বন্ধুবান্ধব নিয়ে দাওয়াত খাওয়ায়া আড্ডা দাও।' এরকম ক্রিঞ্জি কথাতেও আমি বিরক্ত হতাম না। একদিন সুন্দর আলী স্যার অসুস্থ। ক্লাস নিবে, আলেকজেন্ডার বো। উনার নাম এরকম হবার কারন চেহারায় সাদৃশ্য। উনি আমাকে পারিবারিক ভাবে চিনেন। এমনিতে উনি মারেন না হয়তো বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন, আমাকে পড়া ধরলো, পারলাম না, দিলো এক এপিক মাইর। মার খেয়ে আমি ছাত্র ছাত্রী সবার সমবেদনাসুলভ চাহনী পেলাম। সেদিনই আমি বুঝেছি টাইম খারাপ থাকলে এগ্রিকালচারেও মাড়াই করার মতো মার খেতে হয়।

মুক্তগদ্যে মন খারাপ আসবেই। কারন মন ভালো থাকলে লেখার আগ্রহ কম থাকে। মন খারাপ থাকলেই লিখতে ইচ্ছে করে। নিজেকে নিঙরে জানাতে ইচ্ছে করে। বেদনার ছবি আঁকতে ইচ্ছে করে। তাই আমার লেখায় বিষাদ্গ্রস্থতা পাবেন, হতাশার কালো মেঘ পাবেন। তবে আলোও পাবেন। নিজের পুরোনো লেখার দিকে ফিরে তাকালে প্রচুর লেখা পাই, যেখানে আমি ঝলমলে সব দিনের কথা বলে গেছি। সে যাই হোক। শীতের সকাল দেখা হয় না আজকাল। যত ভোরেই ঘুমাই। সময় মেপে উঠি। কাজে চলে যাই। একদিন এক বন্ধু আমাকে নাস্তার মাহাত্ম্য নিয়ে জানাচ্ছিলো, আমি বিরক্ত হয়ে কথা ঘুরালাম, তাকে জিগ্যেস করলাম- সকাল বেলা তার প্রিয় নাস্তার টাইপ কি? সে জানালো--' টাউন হলের জান্নাত কিংবা ধানমন্ডীর স্টারে যাবো। সেখানে গিয়ে চারটা পরোটা কড়া ভাজতে বলবো। স্যুপ নিবো, বেশী করে পিয়াজ মরিচ দিয়ে ডিম ভাজতে বলবো। তার খাবো স্ট্রং লিকারের চা খাবো। পুরো সকালের নাস্তা সেট'। আমি বললাম আমার পারফেক্ট নাস্তা করার জন্য আমার রাত জাগতে হবে। কারন রাত না জাগলে আমি সকালে ভারী খাবার খেতে কষ্ট হয়। এখনকার সকালে আমি সব সময় চা-বিস্কুট পন্থী। তবে হ্যা, যদি রাত জাগি তাহলে আলমাহবুবে যাবো। তেল ছাড়া তিনটা পরোটা, ডালভাজি, আর চা এতেই খুশী। এই কথা বলতে গিয়ে মন খারাপ লাগছে, কারন আল মাহবুব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিল্ডিং হবে। ফিউচারে হবে কিনা, শিউর না। আল মাহবুবে আমার যত স্মৃতি। একটা সময় আমার ঘর বাড়ী বানিয়ে ফেলছিলাম। ওয়েটারদের ফোন নাম্বার, কার কি নাম, কার কোথায় বাড়ী, কত আয়- সব জানতাম। তখন আমি চিকেন ঝাল ফ্রাইয়ের একনিষ্ঠ মুরীদ। বাসায় এভারেজ রান্না মানেই আল মাহবুব। আর বুয়া না আসলে তো কথাই নাই। গ্রীল খাও, শিক খাও, লোকজনকে ডেকে এনে খাওয়াও। আমার অনেক ফেসবুক স্ট্যাটাস আর ব্লগ পোষ্টের আইডিয়া আসে খাওয়া শেষে। কারন খেতে খেতেই আমার মাথায় আইডিয়া আসে এটা এইভাবে লিখবো, আশেপাশে লোকজনের কথা শুনি, কাজ কারবার দেখি। এইসবই যথেষ্ট আমার লেখার জন্য। আজকেই ২২ তারিখ, আজই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আনিসুল হক ভাই থাকলে লিখে ফেলতো- ঝলসানো মাংস খাওয়ার দিনগুলিতে প্রেম। কাল গিয়েছিলাম, ওয়েটারের আবদার, শান্ত মামা চইলা যাবার সময়, আসেনই তো না আজকাল, ১০ টাকার টিপসটা ডাবল কইরেন। আমিও তো ওয়েটারদের সাথেই মানুষ। আমিও বললাম,'ভাই বেরাদার চিনলেন না মিয়া, চিনলেন খালি টেকা, ঋত্বিক ঘটক বলে গেছে, পৃথিবীতে টাকা থাকবে না, কাজ গুলোই থেকে যাবে। উনি ঘটক শুনে ভাবলেন, বিয়ের ঘটক। উনাকে সাথে সাথেই জানিয়ে দিলাম- না তিনি সিনেমা বানাতেন।

কদিন ধরে বই পড়া হচ্ছে না। বাসায় বিভিন্ন পদের শুধু কলকাতার পূজাবার্ষিকী সংখ্যা। দেশ, আনন্দলোক, বসুমতী, সানন্দা হাবিজাবি। তাদের নাম না জানা অনেক সাহিত্যিকের গল্প উপন্যাস পড়া হচ্ছে। অনেকের লেখার প্রসারতা ভালো লাগে, অনেকের লেখা আবার সিনেম্যাটিক, কিছু কিছু লেখা আবার এজেন্ডা ভিত্তিক। পুরাতন চেনাজানা প্রবীণ সাহিত্যিকদের লেখা কেমন জানি হয় আজকাল, জমে না, এই পড়ে পড়েই অবসর সময় কাটে। বারেক স্টোরে কম যাওয়া হয়। লোকজন আগের তুলনায় কমে গেছে, সবার নতুন নতুন আড্ডা ব্যস্ততার ক্ষেত্র হয়েছে, যাদের সাথে আড্ডা মারলে দুনিয়াবী উপকার আছে তাদের সাথেই এখন বসে। আর কিছু বন্ধু আছে যারা ছুটির দিনেও অফিস করে, জানায় বাসায় ভালো লাগে না। আমি খালি তাদের জানাই- গেট সাম লাইফ। আমার এক বড়ভাই ছিল ছুটির দিন উনার খুব অসস্তি লাগতো। সকাল সাতটায় উঠেই আমাকে ফোন দিত- শান্ত চল বের হই। আমি বের হতাম। সারাদিন ব্যাপি ঘুরাঘুরি। পরে জেনেছি উনার স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হবার পর, তখন উনার স্ত্রীর প্রেম ছিল আরেকটা, তাই বাসায় উনার ভালো লাগতো না। শুনলাম আল্লাহর অশেষ রহমতে ডিভোর্স জীবনে তিনি অনেক তরুনীর সাথেই প্রেম করে বেড়াচ্ছেন। দেখাই হয় না তেমন। ভালো থাকুক সবাই।

জেবীন আপুর জন্মদিন ছিল ২০ তারিখ। পোষ্ট লিখবো লিখবো করেও লেখা হলো না। অথচ আমার সামহ্যোয়ারের শেষ পোষ্ট জেবীন আপুর জন্মদিন নিয়েই লেখা। এরপর আমি সামহ্যোয়ার ব্লগ থেকে মোটামুটি বিদায়। মাঝেমধ্যে দু চারটে কমেন্ট করতে পারি, এর বেশী কিছু না। তারপর তো লিখেই গেছি আমরা বন্ধুতে। আমরা বন্ধুতে লেখার পেছনেও জেবীন আপুর অবদান অনস্বীকার্য। আমরা বন্ধুতে কমেন্ট করতাম, কারন তখন ব্লগাররাই পরিচিত মানুষ। প্রথম পোষ্ট লিখেছিলাম মনে পড়ে, বাড়ী যাবো, তখন তো আর মোবাইল ইন্টারনেটের এত দাপট নেই, সাইবার ক্যাফেতে বসে লিখে চলে গেছি জামালপুর নাকি চিটাগাং। এসে দেখি কমেন্ট আর কমেন্ট। তখন কম লিখতাম আর বেশী বেশী প্রশংসা শুনতাম। তারপর নিয়মিত হলাম। এরপর লিখেই চলছি আর চলছি। জেবীন আপা আছেন খুব প্যারায়। মা বাবা দুজনেই অসুস্থ। হাসপাতাল থেকে সবকিছুই সামাল দিচ্ছেন উনি। সত্যিকারের সুপার উইমেন তো এরাই। সবাই সুস্থ হোক, ভালো থাকুক জেবীন আপু।

ফেসবুকে ফিরেছি। ফেসবুক ভালো লাগে না। কিন্তু চটজলদি নিজের ভেতরে থাকা জানানোর মত কথা, জানাতে আর বন্ধুদের ভাবনা শুনতে ফেসবুক ছাড়া উপায় কি। কিন্তু ফেসবুকের সমস্যা একটাই ঝুলিয়ে রাখে, বারবার জানায়- থাকো আমার বুকেই। তাই ডিএক্টিভেশনে যাই, আবার ফেরত আসি। আমার প্রিয় কিছু মানুষ আছে যারা ফেসবুক ছাড়া কাটাতে পারে দিন, মাসের পর মাস। তাদের খুব হিংসা হয়। আমি দশদিন ফেসবুক ছাড়া থাকলেই কেমন জানি নিজেকে অচেনা লাগে। ছোটবেলায় অসুস্থ হলে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিত আম্মু। আমি ভাবতাম স্কুলে কবে যাবো, আর বোধহয় যাওয়া হবে না। এমন না যে স্কুল খুব ইঞ্জয় করতাম, ভালো লাগতো বন্ধুদের সাথে থাকতে। তেমন অনুভুতি জাগে। ফেসবুকে আমি তেমন পপুলার নই, ২৬০ জনের ভেতরে ১৫০-২০০ জনই আমাকে তেমন পাত্তা দেয় না, ৬০ জনের ভেতরে ২০ জন সেলিব্রেটি, আর বাকী ৪০-৫০ জন এরাই ভরসা। এদের জন্যই ফেসবুকে আসি। আমি অবশ্য আমার রিয়েল লাইফ ফ্রেন্ড আর ছোটবড়ভাইদের লিস্টে রাখলে দেড়শো দুশো লাইক পেতাম। তাতে আর কি হতো। লাইক দিয়ে তো সামান্য আলুপুরিও খাওয়া যায় না এই শহরে।

পোস্টটি ১৯ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মীর's picture


লাইক দিয়ে তো সামান্য আলুপুরিও খাওয়া যায় না এই শহরে।

এপিক ডায়লগ Big smile Big smile

তানবীরা's picture


আলুপুরি জিনিসটা ঠিক এতো সামান্যও না Sad( Sad( Sad(

রাতিফ's picture


বাহ শান্ত সাহেব বাহ ! আপনার লেখার মতোই ধারালো আপনি ! এই জগৎ কতো বিচিত্রময় !

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!