ইউজার লগইন

ঘুম ভাঙ্গা সকালে!

শীতের রাত, ফ্যান চলে না। ঘুমিয়ে গেছি আড়াইটায়, এক মুরুব্বি কন্ঠে অতিরিক্ত ভলিউমের ফজরের আজানে ঘুম ভাঙ্গে, একতলায় বাসা, কুকুরের শব্দেও বিরক্ত লাগা শুরু হয়। লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাই, দু চারটে মশাও গুনগুনিয়ে উঠে। ঘুম ভেঙ্গে মুখ তিতে হয়ে আসে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি আবার হয়তো ঘুম আসবে। মোবাইলে ফেসবুক গুতাই। ওতো ভোরে কিছুই নাই। অনেকের পুরাতন পোস্ট ফিডে আসে, তিন চারদিন আগের। নিজের প্রোফাইলে বারো তেরো পনেরো লাইক পাওয়া পোষ্ট গুলোও দেখি। আমার বান্ধবী বলেছিল সে যখন ছিল মোটামুটি সেলিব্রিটি তখন নিজের লাইক দেখে অবাক হতো। রাতে ঘুমাতো না, সারাদিন এসব লেখালেখি একটিভিজম নিয়ে থাকা, নিজের লেখায় নিজেই মুগ্ধ হওয়া। লোকজনের প্রশংসা ও সমালোচনা দুটোকেই খুব সিরিয়াসলি নিত। লোকজনও আপু আপু বলে বিগলিত করতো তার হৃদয়। তারপর সে এসব ছেড়ে ছুঁড়ে ওই আইডি ডিএক্টিভেট করে বসে আছে অনেকদিন। সেজন্যই সে আমার এত ভালো বন্ধু।

ঘুম ভেঙ্গে কি করা যায় ভাবি। করার কিছুই পাই না। দশ মিনিট মণীন্দ্র গুপ্ত পড়তেই অসহ্য লাগে। ভাবি চলে যাওয়া দিনটার কথা। কিভাবে কাটালাম দিনটা। শুক্রবার আমাদের ভালো কাটে। লোকজন আসে আড্ডা জমে। কাল অনেকদিন পর ছোট অনিক এসেছিল। অনিক ছিল দু তিন জন। পাগলা অনিক যে আবার বড় অনিক আর ছোট অনিক। ছোট অনিককে নিয়ে ব্লগে আমার গল্পও আছে। সবাই আমার লেখার স্টাইল দেখে ভাবতো আমি ভালো গল্প লিখবো, কিন্তু আমি গল্প লিখতে পারি না। যাও লিখি নিজের কাছে পাঠ যোগ্য লাগে না। এত ভালো সব গল্প পড়া। অনেকদিন পর অনিক এসে অনেক কথা হলো। তার মফস্বলি জীবন থেকে টঙ্গীতে থাকা। সংসার জীবন থেকে পারিবারিক বিষয় আসয় সব নিয়েই সীমিত আলাপ। তার প্রাক্তনকে আমি কোথায় দেখেছি তা নিয়েও ইনসাইড দেয়া। ভালো লাগে। পুরোনো লোকজন আসলে এক ঝলকে মনে পড়ে এক দশকের জীবন। আমাদের পুরাতন ছবি নিয়ে হাসাহাসি। হঠাৎ করে দেখলাম সাড়ে ছয়বছর আগের আমার মাথায় চুল ফেলে দেয়া ছবি। তখনও চুল নিয়ে ভাবতাম। এখন চুল বাল নিয়েই কিছুই ভাবি না। তখনও হয়তো ভাবতাম সামনেই অনাগত সুদিন। কিন্তু এখন জেনেছি সুদিন এক মরীচিকা, ঘুরে দাঁড়ানোও সবার হয় না, বেঁচে থাকাটাই আসল। মণীন্দ্র গুপ্তের ভাষায়, পূর্বসূরিদের হঠকারিতা আমাদের রক্তেই থাকে।

ভেবেছিলাম লেখতে লেখতে ঘুম আসবে। আসে নাই। মোবাইলে লেখালেখি এক ফালতু বিষয়, এত এত ভূল হয়। তারপর এডিট করো ফেসবুকে বারবার। লীনাপুর কথা মনে পড়ে। কতদিন দেখি না। উনি আমার নোকিয়া সিটু সেট দেখে বলতো, এই ফিচার ফোনে এত লেখা কেমনি লেখো? তখন তারুণ্য ছিল নিজেকে কিছু একটা ভাবতাম। এখন লেখালেখি করাটাই এক কাজ, তাই স্বস্তি খুঁজি কোথায় আরাম করে লেখা যাবে। আরামও আসলে একটা আলেয়া। কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর এর লেখায় দেখলাম উনি সাহিত্য করতে ও পত্রিকা চালাতে বিরক্ত। জীবিকা ঠিক রেখে এত কাজ পড়াশোনা তার মনে হতো বিশাল বোঝা। তার ভেতরেও তিনি লেখকদের সাথে প্রচুর পত্রালাপ করছেন। আমাদের জীবনে এসব কিছুই নাই তাও আমরা কত ক্লান্ত। উনি সারারাত জেগে জেগে বই পড়ছেন লেখছেন। একটা মধ্যবয়সী মানুষ কিসের টানে এসব করেন তা আগে বুঝতাম না এখন বুঝি। বাংলাদেশের সিরিয়াস সাহিত্যে খ্যাতি নাই, টাকা নাই, পারিবারিক সামাজিক জীবনে বাহবা নাই, তাও মানুষ লিখছে। এর কারন আমার মনে হয় গোটা দশেক পাঠক আর নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার বাসনা। এরকম বাসনা না থাকলে লেখালেখি করা খুব চ্যালেঞ্জিং। তাও তো জাহাঙ্গীর ভাই জীবন গুছিয়ে আরো লেখালেখি করতে চেয়েছিলেন, আমাদের না হলো জীবন গুছানো না হলো লেখালেখি। জাহাঙ্গীর ভাইও সেই অর্ধযুগ আগে টুপ করে চলে গেলেন। ১৫ টাকার কুরিয়ার নষ্ট হলো বলে যিনি আপসোস করেন দিনলিপির পাতায়, শহীদুল জহিরের মৃত্যু নিয়ে সুতীব্র মন খারাপ করেন, তিনিও হারিয়ে যান। তাই রাত বিরাতে ভোরে ঘুৃম ভেঙ্গে এসব লিখি। কেউ তো জানলো আমার বাসনা ও তাড়না। সময় তো সবারই কমে আসছে।

পোস্টটি ৩ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!