ইউজার লগইন

লীনা আপুর জন্মদিন ও নস্টালজিয়া!

নিউজফিডে অদ্ভুত সব জিনিস ভেসে উঠে। যেমন একটু আগে শুনলাম মানস চৌধুরীর কন্ঠে রাইসুর জনপ্রিয় কবিতা, বড়লোকদের সাথে আমি মিশতে চাই। আমার ভালো লাগে না রাইসুর কবিতা। যে মানস চৌধুরীরা বিশ্বাস করে জ্ঞান অর্জন সহজ কোনো প্রক্রিয়া না, তারাই ব্রাত্য রাইসুর কবিতায় মজে। পাঠ করে শোনায়। যে রাইসু বাতিঘরকে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের এক কেন্দ্র ভাবে, সেখানেই তার কবিতা পাঠ হয়। এ পৃথিবী এমনই। আমি যেমন সকাল থেকে পড়ছিলাম লীনা দিলরুবার কবিতা। তিনি ফেসবুকে নাই, ফোনে যোগাযোগও নাই, তার এসব ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লেখাগুলোই আছে। আগে তো তাও ফেসবুকে থাকতেন, আমার লেখাজোকা নিয়ে মন্তব্য করতেন, উনার লেখা ও চিন্তাভাবনা এবং পড়াশোনা নিয়ে জানতাম। এখন তিনি ফেসবুকে নেই। টেক্সটের রিপ্লাই নাই, এসব শুন্যতা নিয়েই বেঁচে থাকা।

আজ সোমবার৷ বিডিনিউজে গত বছর প্রকাশ পাওয়া লীনা দিলরুবার একটা কবিতার নামও, 'সোম'। কবিতাটা অন্যরকম।

সোম

এখনো কী মেঘ দেখো?
অনেক অনেক মেঘ
ঝাঁকে ঝাঁকে
নেমেছে তোমার স্বর্গোদ্যানে!
ঘরের চৌকাঠ পেরিয়ে ঘন জঙ্গলে যেও না
বাঘ খেয়ে ফেলবে
আমি তো বাঘিনী
রক্তের বাসনা আমারও তো কিছু আছে।

আমার আরেকটা প্রিয় কবিতা হলো উনার। নিজের দিনযাপনের সাথে বেশি প্রাসঙ্গিক লাগে।

নির্বাণ

রাত নামেনি
অকর্তব্য মনে করে হয়ত
প্রত্যাবর্তনের আগে
ঘষে ঘষে
সংশয় ধুয়ে ফেলি
নির্বাণ আর হয়নি আমার !

এরকম আরো কিছু কবিতা আছে। কিন্তু লীনা দিলরুবা তো মূলত গদ্যের মানুষ। আজ বাসায় এসে, অনেকদিন পর পড়লাম উনার কিছু বারোয়ারী লেখা। জীবনানন্দকে নিয়ে হালি খানেক, আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে থেকো সাত্রে হয়ে সন্দীপন, কত কিছু নিয়ে তার লেখা আছে। পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম, কবে উনি ফেসবুকে আসবেন আর কবে নতুন লেখাগুলো পাবো। লীনাপু থাকলে অবশ্য থাকলে এত আহলাদকে প্রশ্রয় দিতেন না। বলতেন, বারেকে দিন রাত না বসে, বেশী বেশী পড়ো। আমার ছোট বাসায় বই পুস্তকের দিকে তাকই। আহমদ শরীফ, সুবিমল মিশ্র থেকে মুর্তজা বশীর এসব বইগুলোর দিকে তাকালেই মনে পড়ে লীনাপার কথা। বই গুলো তিনি আমাকে দিয়েছিলেন কিনে। সবই পড়া শেষ হলো কিছুদিন। কতদিন লীনাপুর থেকে বই নিই না।

আমাকে কেউ কেউ জিগ্যেস করে লীনাপু তো তোমার ক্লোজ, খোঁজ জানো। কথাটা শুনলেই ভালো লাগে। লীনাপুর ভাই এটাই আমার কয়েক জায়গায় বড় পরিচয়। কয়েক মাস আগে বাতিঘরের দীপঙ্কর দীপন জিগ্যেস করে, আপনার আপা কোথায়? অনেকদিন আসেন না। আমি জানাই, অনেক ব্যস্ত। আমিও বাতিঘরে যাইনা মেলাদিন। আমার পোষ্টগুলোও রিভাইস দিচ্ছিলাম উনাকে নিয়ে। ঘুরে ফিরে একই ধরনের আলাপ। সেগুলো হয়তো আবার করবো। তবে গুগলে সার্চ দিলে অদ্ভুত কিছু জিনিস পাওয়া যায়। যেমন কবেকার হিমালয় নামের এক ব্লগারকে নিয়ে লীনা দিলরুবার লেখা পেলাম। একটা ফরমায়েশী লেখা, কিন্তু কি মমতা দিয়ে আপু লিখেছে। ভালো লাগলো। আমরাবন্ধুতেও আপুর পোষ্ট গুলো মুছে ফেলা। একটা ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগে উনার কয়েকটা লেখা পড়ি। এভাবেই কাটে আরো কিছুটা সময়।

অনেকেই প্রশ্ন করে, তোমার পাবলিকেশন কই? বই তো ছাপাতেই পারো। আমার এক বন্ধু টাকাও দিতে চেয়েছিল, আমার বই প্রকাশের জন্য। আমি তাদেরকে বলি, 'আমার বন্ধু লীনা আপু আমার দেখা ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট রাইটার, তিনি বই বের করেন না। আর আমার বই।' লীনা দিলরুবা আমাকে শিখিয়েছে, প্রকাশ ও প্রশংসার হঠকারিতায় থাকা যাবে না। পড়তে হবে প্রচুর, তারপর নিজেকে প্রকাশ। তাই আমি ফিচার টিচারই লিখি বেশী, কারন এই পড়াশুনায় অনাগ্রহী সমাজে লোকজন অল্প অল্প জ্ঞানের কিছু লিখলেই তা পড়ে। আমার ফেসবুক বন্ধু আড়াইশোর বেশী, নিজের লেখাকে একদম পাবলিকের জন্য ভাসাতে চাই না। আমার লেখা গুটিকয়েক মানুষদের জন্য। কারণ জীবনে যত কম এটেনশন তত আনন্দ। কম্পিউটার নষ্ট, ল্যাপটপ নাই, এত কষ্ট করে, মশার কামড় খেতে খেতে এখনো বড় বড় সব লেখা লিখতে হয়, এই এনার্জিটার শিক্ষা লীনা আপুর থেকে পাওয়া। উনি অমানুষিক পরিশ্রম করে পড়েন, রাতে ঘুমান কম, একটা নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এত দ্বায়িত্বপূর্ন পদে থেকে, সংসারের এত ঝামেলা সামলিয়ে, এত বিপুল সাহিত্য ও এসব নিয়ে পড়তে উনাকেই দেখেছি কেবল। আমার নজিরবিহীন অলসতায় উনি বিরক্ত হতেন আগে। যা লেখালেখি করতাম, উনার কি ভালো লাগে নাই বলে দিতেন। এইযে আমার ভ্যালিডেশনের কম আকাঙ্খা, এটাও আপুর থেকেই পাওয়া। লীনা দিলরুবার এই অনলাইন প্রেজেন্সটা আমি খুব মিস করি।

আমার মাকেও লীনাপুর গল্প করা। উনি মাঝেমধ্যে জিগ্যেস করে, তোর আপুর খবর কি? আমার মা ভাবতেন আমিও হবো লীনা দিলরুবার মতো। কিন্তু এ শহরে লীনা দিলরুবা হওয়া সহজ নয়। তিনি একজনই। আপুকে আমি ভীষণ ভীষণ ভীষণ মিস করি। একটা সময় যে আনন্দ আড্ডায় আমাদের সময় গিয়েছে, সে সব দিনের কথা ভাবি। তবে বিচ্ছিন্নতাই তো নিয়তি। একই শহরে থেকেই আমার কত মানুষের সাথে দেখা নাই। আর এত কষ্ট করে মোবাইলে লিখি সকাল সন্ধ্যা মাঝরাতে, লীনা আপু থাকলে ভালো ক্রিটিক হতো। হয়তো কোনোদিন তিনি পড়বেন আবার। উনার কিশোর নামের একটা ভাই আছে, আমাকে একদিন বলেছিল, লীনার পোষ্ট মানেই তো আরাফাত শান্তর প্রথম কমেন্ট, এটাই তো মাষ্ট। শুনতে বেশ লেগেছিল। লীনা দিলরুবার ফেসবুক পোস্ট পড়া এক অন্য আনন্দের। লীনাপু তখন ব্লগে নাই। আমার কিছু পোষ্ট পড়ে উনি মেসেজ পাঠাতো, শান্ত লেখা ভালো হচ্ছে। এখন প্রশংসা যে শুনিনা তা না, কিন্তু লীনাপা কামাল ভাইদের প্রশংসা পেয়ে পেয়ে বড় হবার পর, কোনো প্রশংসার জন্য আমি আর লিখি না।

এত কিছু লিখলাম বাসায় ফিরে, আজ লীনা আপুর জন্মদিন। উনি ফেসবুকে নাই অনেকদিন, মাসের বেশীরভাগ দিনই তার কথা মনে পড়ে। আমার কিছু লেখা আছে উনাকে নিয়ে, একটা লেখা আছে, লীনা দিলরুবাঃ আমাদের চিরচেনা বাতিঘর। বেঁচে থাকলে খুব বড় করে সামনে লেখবো, লীনা দিলরুবার কাছে আমাদের ঋণ। আশাকরি তাঁর পঞ্চাশের আগেই। শেষ করা যাক এই বলেই, জন্মদিনের শুভেচ্ছা, আপু। আপনি একজন অসাধারণ আন্তরিক মানুষ। আমাদের এমন স্নেহ করতেই থাকেন। আমাদের ভালোবাসায় শিক্ত হন। আমি ব্যক্তিগত জীবনে খুব মিস করি আপনার অনলাইন উপস্থিতি আর অফলাইনে স্নেহের আতিশয্য। একদিন আশাকরি ফিরবেন, দেখা হবে, আড্ডা হবে। খুবই প্রিয় নামিরা ও শ্রেয়ার জন্য অনেক ভালোবাসা। আসছে বছর আরো ভালো কাটুক। বেঁচে থাকলে সামনের বছর আপনার জন্মদিনে আরো ভালো কিছু লিখবো।

পোস্টটি ৭ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

টুটুল's picture


লিনা আপাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

ভালো থাইকেন সব সময়

আরাফাত শান্ত's picture


Love

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!