ইউজার লগইন

শেকল পাখির গান!

আমি কোনোকিছুতেই প্রথম হয় নি।কিছু কিছু ব্যাপারে চাইলেই প্রথম হওয়া যায় তাতেও প্রথম হইনি। যেমন ধরুন এক্সাম হলে আপনি চাইলেই এক্সট্রা শীট নিতে পারবেন সবার আগে, খাইষ্টা টিচার ছাড়া কেউ জিগ্যেস করবে না, এত পেইজ এত অল্প সময়ে শেষ করলি কিভাবে? কিন্তু আমি অবাক হয়ে যেতাম, আমি কেবল শেষ করলাম একটা প্রশ্নের উত্তর, আর ওর পুরো খাতা শেষ। তাজ্জব ব্যাপার। তখন কেউ কেউ সান্তনা দিতে দিতে বলতো, ফাঁকা ফাঁকা করে লিখছে, যে গ্যাপ তার ভেতরেও একটা প্রশ্নের উত্তর লেখা যাবে। যারা সত্যিকারের ভালো ছাত্র, তাঁরা হাসতো, এসব পাগলকে পাত্তা দেয়ার কি। আমি আরো কিছুটা সময় ভেবে এই সিদ্ধান্তে আসতাম, যাক কিছুতে তো সে প্রথম হলো।

বন্ধু বান্ধব থাকার দরুন অনেকে বইয়ের পান্ডুলিপি পড়ার সবার আগে সুযোগ পায়। আমি আজ অব্ধি কারোর বইয়ের পান্ডুলিপি পড়িনি কিনেই খালি পড়লাম কিংবা ব্লগে পড়া থাকলে দেখতাম কেনার সময় এটা এটা ঢুকাইছে। বন্ধু বান্ধবদের অসংখ্য গোপন কথাও আমি শুনেছি প্রথম তো দূরে থাক অনেক পরে। আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছিল, মুড ভালো থাকলে আমি হাসতে হাসতে বলে দিই সব। আমি শুনে একটু হতাশ হয়েছিলাম। পরে এটাকে বানালাম ঢাল, কেউ গোপন কথা বলতে এলেই বলে রাখি, আমাকে বলা মানে ওমুক ওমুককেও বলা, রাজী তো? আমার বান্ধবী ছিল তাঁকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসে ২০০০ টাকা সেলামী দিয়েছিল, সে খাওয়াবে, আমি ভাবলাম আমি একাই খাবো। গিয়ে দেখি আরো চারজন হাজির। তাতে অবশ্য দুঃখের কিছু নাই। ডেকেছে যে তাই বড় ব্যাপার। হাতমোজা আর বোরকা দিয়ে ঢাকা অবস্থায় তাঁর সাথে দেখা হয়েছিল। আমি চিনি নাই প্রথমে। তারপর সে বললো, তোর আম্মাকে ভুইলা গেলি। আমি গভীর হতাশায় নিমজ্জিত হলাম, আমার বাবা অটোক্রাট হতে পারে কিন্তু এক বিয়ে করেই যে বিপদে পড়েছেন, আরেকটা বিয়ে কখনোই করবেন না। পরে হাত দিয়ে টেনে নিয়ে নিজের কাপড়ের হেলমেট খুলে চেনালো। আমি তো অবাক। পরে খোজ খবর নিলাম। সবার সাথেই সবার যোগাযোগ আছে। খালি আমার খবর কেউ জানেনা। এতে সুখেরই হইছে, কারন লেইম ভার্সিটি গ্রুপে না থাকাই ভালো। যে বন্ধু বান্ধব আমার আছে তা নিয়েই আমি সুখী, কে কার সাথে শোয়, কে কার ভাই ভাই, এসব জেনে কি করবো। বাসে এক লোককে দেখেছিলাম, একগাদা লোকের সাথে ভিডিও গ্রুপ চ্যাট করতেছে। তাঁর এক বন্ধু জানাচ্ছে, আমেরিকার বাস কত সুন্দর, বাংলাদেশের বাস এরকম কেন? তাঁর বন্ধু লজ্জিত হয়ে জানালো, সিএঞ্জি পাচ্ছিলাম না তাই বাসে। আমি অবাক হয়েছিলাম, বাসে উঠলে ইজ্জত সম্মান কিভাবে বানের জলে ভাসে?

এখন আর বাসে উঠা হয় কম, রিকশাতেই যাই সবখানে। তাই আগের মত বাস নিয়ে লেখা হয় না। আমার জীবন আসলে বাসকেন্দ্রিক অক্ষমতার। যেমন ইচ্ছে করে বাসে করে জামালপুর যেতে। আম্মুকে ফোন দিলেই বলে, অনেকদিন তো আসলি না, মানুষ তো ছুটি পাইলেই আসে। আবার চিটাগাংয়ের বন্ধুরাও বলে চিটাগাং আসবি কবে? প্রিয় দুজায়গায় কোথাও যাওয়া হয়না।কারন আমি কোথাও প্রথম না। তবে ভাব মেরে কবিতার আশ্রয় নিতে চাই না, যে আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;/আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে। এইসব ডায়লগ যারা দেয় ব্যাতিক্রম বাদে তাঁরা সবাই আগে ভাগেই পৌঁছে গিয়ে বসে থাকে। এমনকি যে বারেক স্টোর আমার এত প্রিয় সেখানেও আমি সবার আগে কখনো যেতে পারিনি। যত সকালেই যাই কেউ না কেউ আগে এসে চা খেয়ে গেছে। একবার মৃদুল স্যারের ক্লাসে সিট না পেয়ে প্রথম বেঞ্চে বসেছিলাম। পড়া ধরা তিনি শুরুই করলেন আমাকে দিয়ে, এই জাকারিয়া দাঁড়া, তুই কি ভেবেছিস, প্রথম বেঞ্চে বসলে তোকে ছেড়ে দিবো, লাতি মেরে তিন তালা থেকে ফেলে দিবো। উনি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখতেন, আমিও তাঁকে হতাশ করতাম না। হতাশ লোকজন কাউকে হতাশ করে না। তবে শিক্ষকদের জীবন নিয়ে সত্যিই হতাশ হওয়া যায়। আমরা কথায় মাদ্রাসা শিক্ষকদের একতরফা বকা দেই, বিভিন্ন ভালো স্কুলের বিভিন্ন শিক্ষকেরা যে কি ধরনের এবিউজার তা মাথায় আনি না। সব ভুলে গিয়ে শৈশব মহান মহান করে মাথায় তুলি, কিন্তু বন্ধুরা আর বাবা মা ছাড়া বাকী সবকিছুই যে উদ্ভট ছিল তা মাথায় আনি না।

পোস্টটি ৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!