জি বাংলা ব্লুজ!
এই নামে ডার্কলিং এর ব্যানারে একটা বাংলাদেশের গান আছে। অনেকদিন ধরেই আমার ভীষণ প্রিয়। কখনো সময় পেলে শুনবেন। ইনডি কাজ, পৌছায় নাই সব জায়গায়। তো গানটার লিরিক কি?
ফুটন্ত কেটলির গানে কেটে গেছে বাকী সুর
ছোটবেলার আবছা স্বপ্নগুলো এলোমেলো বহুদূর।
কি চেয়েছিলে মাগো
কি হতে পারোনি
সাত সমুদ্দুর তেরো নদী দেয় কি হাতছানি?
কেউ কি জানে তুমি কত অভিমানী?
এক শাড়ীর আঁচলে ভালোবাসা পৌষ অগ্রহানী।
আমি জানি আমি জানি
তোমার চোখের পানি আমি জানি
টিভির শব্দে কান্নার আওয়াজ লুকিয়ে যায়
তেলেভাজা গন্ধে কমদামী সাবান ধুয়ে মিশে যায়।
গানটা শুনলে এত মন খারাপ হয়ে যায়। এ যুগের মায়েদের জন্য এসব গান না। এসব গান আমাদের মায়েদের জন্য। যাদের নিজেদের স্বপ্ন সমাধিস্থ করে সংসার নামের এক ওভাররেটেড জায়গায় আমাদের নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। সমাজে অনেক সফল সন্তানেরা আছে। আছে আমাদের মত ব্যর্থ সন্তানেরাও। যারা কোনো স্বপ্নই পূরণ করতে পারেনি এবং কথাই তেমন শোনে না। এরকম সন্তান সমাজের চোখে, চেনা পরিমন্ডলে না থাকাই ভালো, তাও আমরা আছি। মায়েদের জন্য যারা তেমন কিছু করতে পারে না তারাও মায়েদের কথা ভীষণ ভাবে। আজকের কথাই বলি, আজ আফজাল ভাইয়ের বাসায় বিপুল ইফতারী আমরা খেয়েছি। বেশীর ভাগ রোজার দিনই আমার ঢাকায় কোনোরকম ইফতার করা হয়। আজ যখন বিপুল খাওয়া দাওয়া শেষে মনে হচ্ছিল, বাসাতে হয়তো এমন ইফতারী করি না কিন্তু আমি যা পছন্দ করি,তা খাওয়া হয় ভরপুর। আমার মা টাইম মতো ইফতারী গুছাতে পারে না। সংসারে অনেক কাজ, তার ভেতরে তিনি যে লেভেলে ধার্মিক কোরআন পড়া, নামাজ, তারাবীহ, তাহাজ্জুদ, সব কিছু নিয়েই তার এক আলাদা দুনিয়া। তিনি নিজে ইফতারীতে খান ভাত। কিন্তু আমি থাকলে সবসময় আয়োজন হয়। রোজা রেখে এত কষ্ট করে ইফতারী বানাতো তাতে আমি ছোটবেলায় হতাশ হতাম। মানুষের বাসায় গেলে দেখতাম অনেক ইফতার। আমাদের বাসাতে, ছোলা মুড়ি বেগুনি পিয়াজু আর কলার বাইরে কিছু নাই। শরবতও হতো না প্রায়ই। এখন বাবা মা না হয়েই বুঝতে পারি, কি কষ্ট ও সময় অপচয় এসব কাজে। তারপর কলোনীর বাসায়, আবার প্রতিবেশীর হক আদায়। বড় হয়ে আমরা ঢাকাতে এসেও আত্মীয় স্বজন আসতোই সমানে বাসায়। এই রান্নাবান্না ও নামাজ কালাম মিলে কি এক কঠিন সময় ছিল তার। তখন আবার থাকতো না কারেন্ট, সমানে লোডশেডিং। আমিও নানানকাজে ব্যস্ত, ভাইয়া ব্যস্ত। বাসায় মা একা, ফোনে বিভিন্ন ঝগড়াঝাঁটি করতে করতে সব কাজ শেষ হতো। আমার মায়ের কথার ধাচ আমি পেয়েছি। আমার কথা মন দিয়ে শুনোছ না, মরে গেলে বুঝবি, জীবনে সুখ শান্তি আর আসলো না।
আমরা যারা কিছুই জীবনে হতে পারলাম না তাদের ঘাড়ত্যাড়ামি টুকুই সম্বল। এখনো বাবা মার কথা শুনিই না। কিন্তু তাদের যে ত্যাগ ও পরিশ্রম সেটা বিষ্ময়কর। আমার যতটুকু ভালো সবই তাদের থেকে পাওয়া। আর যত খারাপ গুন তা সব আমারই। আমার মা মাঝেমধ্যেই বলে বংশে এমন ছেলে আর নাই। এই যা হয়নি গোষ্ঠীতে তাই নিয়েই আমি কোষ্ঠীতে যাপন। আমার মায়ের জীবনে সুখ ছিল না, আমার জীবনেও সুখ সাচ্ছন্দ্য নাই। তিনি আত্মত্যাগে করে, না চাইতেই হয়তো মহান হবেন, আমি অক্ষমতার গ্লানি গ্লানিতে দ্বগ্ধ হবো। এসব নিয়েই দুই পৃথিবীর টিকে থাকা।
মন্তব্য করুন