সোনাঝুরি বনের একাকী!
উন্নয়নশীল দেশে থাকার সুবিধা অনেক। প্রচুর পাইরেসি চালানো যায়। তাতে অবশ্য মোবাইলের বারোটা বাজতে পারে কিন্তু কাজ হয় দারুণ। যেমন আমি খেলা দেখি স্পটজফাই নামের এক এপিকে ফাইলে। তাতে তিন বল পরে আসলেও খেলা দেখা যায়। বইয়ের জন্য আছে ফ্রি ইবুক ডাউনলোডার। ইউটিউবে গান মিনিমাইজ করে শোনার জন্য আছে, একটা এপ। তাতে আপনি স্পটিফাইয়ের মতন ইউটিউবে গান শুনতে পারবেন। এগুলো কোনোটাই গুগলের প্লেস্টোরে নাই। ব্রাউজারে সার্চ দিলে আসে। ফাইল গুলো আমার আগাম সতর্কতা জানায়, যে তুমি যে ফাইল নামাচ্ছো, তাতে ক্ষতি হতে পারে। তখন অপশন আসে, ডাউনলোড এনিওয়ে। জীবনটা আমাদের হয়তো তেমনই, এনিওয়ে কিংবা হোয়াটেভার করে করেই পার হচ্ছে। যাক এপিকে ফাইল নামানো এপে সেটের খুব একটা ক্ষতি হয় নাই। আর মন না চাইলেই আমি ডিলেট করে দিই। গেম টেম খেলি না, মোবাইলে ভারী কিছু দেখিও কম। এই টুকটাক ইউটিউব ভিডিও দেখা আর গান শোনা ও পড়াশোনাই মোবাইলে কাজ।
আমি রাতে আজকাল উদ্দেশ্যবিহীন হাঁটি। হাঁটলে আর যাই হোক কিছু কন্টেন্ট পাওয়া যায়। যেমন বিষুদবারে ১৫০ টাকায় ফুটপাতে পাঞ্জাবী বেচে। আমি ভেবে পাই না ১৫০ টাকাই পাঞ্জাবী কিভাবে সম্ভব। প্রচুর মানুষ হাতায় আর কিনে। তবে বেশির ভাগ পাঞ্জাবী আমার মনে হয় ওভার সাইজড। তাও কোনো এক শুক্রবার পরবে বলে মানুষ কিনে। কেউ কেউ আবার কিনে বয়স্ক আত্মীয়ের জন্য। তবে নিজের কাছের আত্মীয় দেড়শো টাকার পাঞ্জাবী পরতেছে, ব্যাপারটা আমার পছন্দ না। প্লেইন লিভিং হাই থিকিং, এখন নির্বাসনে। এত হাই লিভিং, প্লেইন থিংকিং। চিন্তা না করলেও সমস্যা নাই, জাতের একটা চাকরী করলেই লোকজন আপনার ইন্টেলেকচুয়ালের দিওয়ানা হবে। কিছু আপনার মাথায় না থাকলেও সমস্যা নাই। সব মানুষই কাঁদে, সব মানুষই পাদে, এসব লাইন শুনেই লোকজন বলবে, মরি মরি! তারপর দেখি হোটেলের পাশে বসা ভিক্ষুকদের। তাদেরকে কেউ কেউ খাবার সাধে, তারা চায়, ক্যাশ। কেউ জোর করে খাবার দিলে খুবই অভক্তি নিয়ে খায়। অথচ এই খাবার কিনে খেতে গেলে কম টাকা লাগতো না। আমি একটা মানসিক ভাবে চ্যালেঞ্জড ছেলেকে চিনি। সে সকালবেলা মোহাম্মদপুরের কোনো সেরা হোটেলের সামনে দাঁড়ায়। কেউ নাস্তা দিলে খায়। প্যাকেট দিলে সাথে করে এনে তার বন্ধুদের খাওয়ায়। খাওয়ানোর আনন্দে তার চোখ মুখ জ্বলজ্বল করে। কোনো সকালে ব্যাপারটা দেখলে আমার ভালোই লাগে।
মন মেজাজ খারাপ থাকলে আমি বিদেশী গান শুনি। যে গুলো ভাষার কিছুই বুঝি না সেসব গান। ইংরেজি মিনিংও খুঁজতে যাই না। সকাল সকাল ফ্রেঞ্চ গান শুনলে আমি দেখেছি হতাশা কমে। রাতে কোনো টার্কিশ গান চনমনে করে। আবার কোনো জনপ্রিয় মেক্সিকান সুর বিষণ্ণতাকে আরো ভরিয়ে তোলে। কবীর সুমন এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, তিনি দেশে থাকতে বিদেশী গান একদমই শোনেন নাই। কিছু হিন্দি উর্দু আর বেশুমার বাংলা গান। তিনি জানাচ্ছেন, বাংলা গানের শিল্পীদের রবীন্দ্রনাথের বাইরেও যে আধুনিক বাংলা গান আছে, শোনা উচিত। আমি অবশ্য শোনা আর না শোনার, দুইয়ের পক্ষেই। কেউ যদি গান না শোনেই জনপ্রিয় হয়ে যায় গানের জগতে এরচেয়ে মূর্খতার সৌন্দর্য আর কি আছে?
আজকাল লোকজন আমাকে পাত্তা দেয় না। তাতে মাঝেমধ্যে হতাশ লাগে। বেশি লোকের পাত্তা আমি চাই না। চাই আমার বন্ধু ছোট ভাই বোনদের পাত্তা। তাদের ভেতর একজন আমার সাথে কথা বলা বাদ দিয়েছে। কারো কারো সাথে রিলেশন যাবে যাবে ভাব। এরা সবাই আমাকে আগে রীতিমতো পীর মানতো। কিন্তু এখন ছফার উপন্যাসের মতই, আলী আরাফাতের উত্থান পতন। আর আমার বন্ধুরা সময়ের কারনেই বিভিন্ন কিছুতে ব্যস্ত। যারা আগে আমার সাথে আড্ডা দিতে আসতো। আমার সাথে কাটানো সময়কে ভাবতো দারুণ, তাদের কাছে আমার এখন আবেদন ফুরিয়েছে। বন্ধুরাও আমার কথার যে খুব ভ্যালু দেয় এটা বলা মুশকিল। এই টানাপোড়েনের ভেতরেই থাকা আর কি। আজকাল আমার মেজাজ মনও থাকে খারাপ। হয়তো কারো সাথে অযাচিত রুড হই। মুখ চোখ গোমড়া করে বসে থাকি। এমন মানুষদের ক্রাউড পছন্দ করবে এটাও ভাবা ভুল। আমি অবশ্য দীর্ঘদিন মানুষের ভ্যালিডেশন নিয়ে ভাবিনি। এখন বয়স হচ্ছে তাই হয়তো এসব অযাচিত ভাবনা। তাই এখন আমার আশ্রয় গান। কোনো একটা গান ভালো লেগে গেলে টানা এক ঘন্টা শুনি। মন মেজাজ ঠান্ডা না হলেও একটা শান্তি শান্তি ভাব আসে। যেমন আজ আমি রাতে ফিরেই টানা শুনলাম এই গান।
সোনাঝুরি বনের একাকী!
মূল শিল্পীঃ শ্রুতি গোস্বামী
কথা ও সুরঃ সুদীপ বন্দোপাধ্যায়।
তোমায় দেখবে বলে এ ফুল ফুটেছে
তোমায় দেখাবে বলে সূর্য উঠেছে
তোমার জন্য নতজানু এ আকাশ
একবার এসে তুমি দেখে যাবে নাকি
ও আমার পাতাঝরা বনানীর পাখি
ও আমার সোনাঝুরি বনের একাকী।
যখন সকাল হয় তোমাদের দেশে
কী কী রং জেগে থাকে, কী কী রং মেশে
কোন্ রঙে মনে পড়ে পাশের বিদেশে
ঋণী হতে চায় কেউ তাই ডাকাডাকি
ও আমার পাতাঝরা বনানীর পাখি।
তোমার জন্য আজ মন আনমনা
তবুও তেমন অনুযোগ আনবো না
যা করেছো তা করার অধিকারী তুমি
আমি শুধু অনুনয় সুরে বেঁধে রাখি
ও আমার পাতাঝরা বনানীর পাখি।
বদল তোমার হয়, বদল আমারও
বদলাও কে কতোটা বদলাতে পারো
শুধু বদলায় না আমার এ ঠিকানা
আরশিনগরে আমি বরাবরই থাকি
ও আমার সোনাঝুরি বনের একাকী
ও আমার পাতাঝরা বনানীর পাখি
গানটা কি অনুবাদ করা? কেমন জানি লাগতেছে।
জানিনা ঠিক। আমি সুমনের, আমি তো ছিলেম বেশ নিজের খেয়ালে- গানের সুরের মিল পাই। হতে পারে দুজনই কোনো জায়গা থেকে নিয়েছে।
হ, তা হইতে পারে। তবে সুমন কপি করলে বইলা করার কথা।
মন্তব্য করুন