শাপলা'এর ব্লগ
সাদা মেম এবং রুপাইয়ের গল্প
আজ সকাল থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে। আকাশটা কালি গোলা মেঘের মত হয়ে আছে। কুমুদিনি টী স্টেটটাকে কেমন বুড়ো জুবুথুবু লাগছে। দোকানের দিকে গুটি গুটি পায়ে ছাতা নিয়ে এগুচ্ছি, পেছনে গোপাল ডাকল-
-দাদা চা খাইতেন্নি, টাটকা লোফ আছে।
এখানকার স্থানীয় লোকজন রুটিকে লোফ বলে। সম্ভবতঃ বিলেত থেকে এসেই এই শব্দটা অজ পাড়া গাঁয়ে খুঁটি গেড়েছে।
সকাল সকাল কেন যেন কিছুই ভালো লাগছে না। বসে পড়লাম গোপালের দোকানে। টিনের বর্ধিত ছাউনির নীচে বেঞ্চিতে যদিও বৃষ্টির ঝাপ্টা আসছে এলো মেলো বাতাসে, তবুও কেন যেন বসে থাকতে ভালোই লাগছে। খুব গরম চা নয় কিন্তু কয়েক চুমুক দিতেই মাথা ভার ভার ভাবটা কেটে গেল। ভাদ্র মাসের গুমোট ভেজা হাওয়ায় কেমন মন হুহু করা ভাব। গোপাল যত্ন করে স্বচ্ছ পলিথিনে মোড়া “দৈনিক সিলেটটা” দিল।
হেড লাইনটা শেষও করতে পারিনি, হঠাৎ রফিক মিঞা আর তার বউয়ের কান্না শোনা গেল। বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠল। আবার কি হল?
দুবছর আগে এ বাড়িতে এভাবেই কান্নার রোল উঠেছিল। আবার কি হল? গোপাল বলল, যাইবেন্নি? ও টিনের খুপ্রি থেকে লাফ দিয়ে নেমে আসে। আমরা দুজনেই বাংলো বাড়িটার দিকে এগিয়ে যাই।
বিকল্প ভাবনা যেখানে ব্রাত্যদের ভাবনা
ফেব্রুয়ারী থেকে জুন, দেশ যেন দু-দুটো বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে গেল। ফেব্রুয়ারীতে হঠাতই ফুঁসে উঠল প্রথমে তরুণরা- মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের দাবীতে। তার সাথে সায় দিল দেশের আবালবৃদ্ধবণিতা সহ হাজার হাজার মানুষ। দেশ-বিদেশের অসংখ্য বাঙ্গালীরা চাইল-এদেশের মাটিতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হতে হবে। তাল মেলালেন প্রধাণ মন্ত্রী সহ অনেক রাজনীতিবিদ। মনে হচ্ছিল, মানুষ জেগে উঠেছে। জেগে উঠেছে একটা ঘুমিয়ে থাকা সময়। কিন্তু রাজনীতির ফাঁদে পড়ে হেরে গেল তারুণ্য, হেরে গেল অসাম্প্রদায়িকতা। দেশের ভেতর আরেকটা বিল্পব শুরু হল- আস্তিক এবং নাস্তিক এর। দলে দলে মানুষ প্রমাণ দিতে শুরু করল-“আমরা আস্তিক”। চালু হল নতুন কথা- ব্লগার মানেই নাস্তিক। কিম্বা অমুক নাস্তিক অথবা তমুক আস্তিক। ধর্ম রক্ষায় এগিয়ে এল ঢেউয়ের মত মানুষ। অনেককেই পাওয়া গেল ইসলামের হেফাজত করতে। দেশের বাঘা বাঘা সংস্কৃতমনা মানুষও বার বার বলতে শুরু করলেন, তাঁরা মুসলমান। তাঁদের জীবন-যাপন পদ্ধতি ধর্ম দিয়ে মোড়া। শুরু হল দ্বিতীয় বিপ্লব – রাস্ট্রীয় বিধান জারি হল, ধর্মের বিপক্ষে গেলেই-তাকে দেখে নেওয়া হবে। বিভিন্ন জায়গায় নজির পাওয়া গেল সাম্প্রদায়িকতার।
তবু আশা বেঁধে রাখি.....
দেশে ফিরেছি, মার্চের ১১ তারিখে। তখন দেশ জুড়ে চলছে হরতাল। কোথাও যেতে পারি না। ঘরে বসে বসে মুরগীর মত ঝিমাই। এর মধ্যেই একদিন কথা হল, ব্লগার শান্তর সাথে। অবশ্যই অনলাইনে। এর আগে কোন দিন ওর সাথে কথা বা যোগাযোগ কিচ্ছু হয় নি। আসলে বাঙ্গালীরদের “ভাগ্য” বলে, একটা বিশেষ কথা আছে। আমার ভাগ্যে শিকা ছিঁড়ল কারণ শান্তর আমার একটা লেখা বেশ পছন্দ হল- তার পর তিনি নিজে থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করে সেটা জানালেন। এক দু কথায় প্রকাশ পেল, তিনি আমার খুব কাছাকাছি থাকেন। আর যায় কোথায়? তারে প্রস্তাব দিলাম- 'আমি তারে দেখতে চাই' সেও রাজী কিন্তু চিনব কি করে? তিনি মধুর কণ্ঠে বললেন, আমার খোমা দেখেন- “তাইলেই আমার চেহারা মোবারক দেখতে পাইবেন”।
যাক সে এক ব্রাট ইতিহাস, শান্ত এলেন আমাকে দেখা দিতে----- ভীষণ ব্যাস্ত তিনি। দুই পকেটে দুই মোবাইল। সারাক্ষণ টুন টুন করে বাজতেছে। এরে তারে তিনি ফোনে এইটা সেইটা বলতেছেন, সে এক ব্রাট অবস্থা। তবে ছেলে ব্যাস্ত হলে কি হবে, ছেলে বেজায় ভালো। আমার জন্য খালি হাতে আসে নাই।
সমুদ্দুর রাখে না জমা সব সাঁতারের দাগ
যাযাবর জীবন সবার হয় না। জগতের বেশীর ভাগ মানুষই, বুড়ো বটগাছের মত শেকড় গেড়ে ঘোর সংসারী হতে ভালোবাসে। শাখা প্রশাখায় ভালবাসার জল সিঞ্চন করে, সেগুলোকে আঁকড়ে ধরে একজায়গায় থিতু থাকে। আসলে যাযাবর হতে হলে, সাহস লাগে। একটা যাযাবর মন লাগে, মনের সঙ্গী লাগে। কোন পিছুটান রাখতে নেই, যাযাবর জীবনে।
আবার সংসারে কিছু গ্রহণ লাগা মানুষও থাকে, যারা একটা ঘোর সংসারী জীবন পায়, কিন্তু মনটা পায় যাযাবরের। ছন্নছাড়া। সংসার মন লাগিয়ে করতে পারেনা। এরা না সংসারী না বিবাগী। এদের মত হতভাগা আর সংসারে দ্বিতীয়টি নেই।
পাখি তার নীড় হারালে, কোন কোন সন্ধ্যা তারা খুব কাঁদে
মন হাওয়ায় পেয়েছি তোর নাম
মন হাওয়ায় হারিয়ে ফেললাম
আজকাল তুমি বড্ড অপ্রতিরোধ্য হয়ে যাচ্ছ। কিছুতেই তোমাকে প্রতিহত করতে পারছি না। আমার মগজের প্রতিটি কোনায় কোনায় এখন তোমার অবাধ যাতায়ত। চব্বিশ ঘন্টার ছত্রিশ রকম কাজে বারবার তুমি এসে ভীষণ গোল বাঁধিয়ে ফেলছ। মস্তিষ্কের কোষ থেকে কিছুতেই তোমাকে সরাতে পারিনা। ঘূণ পোকার মত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছ আমার অস্থি-মজ্জা আর হৃদয়। তুমি নেই, অথচ এই জগত সংসারে আমি ঠিক বেঁচে বর্তে আছি-এ ভাবনাই অর্থহীন।
তাই আমি পালাব বলে, মনস্থির করেছি। তুমি আমাকে তোমার কথার চাতুর্যে বেঁধে কিছুতেই পালাতে দিতে চাইবে না আমি জানি। কিন্তু পণ্ডিত অজয়ের একটা গান আছে, শুনেছ কি? "যত পাহারাই দাও মন পালাবেই"।
হন্তারক
একটা গল্প শুনবে?
এটাই আপনার বিশেষ কথা? এর জন্য আমাকে এতদূর আনলেন? যুথি নির্বিকার ভঙ্গিতে কথাগুলো তারেককে বলে।
কেন নৌকায় ঘুরতে তোমার ভালো লাগে না?
তা লাগবে না কেন? খুবই ভালো লাগে। কিন্তু আপনি যে কারণে আমাকে এখানে ডেকেছেন, তা একটা পুরোন কৌশল।
তারেক একটু বিষ্মিত হয়ে যুথির দিকে তাকায়; তোমাকে নিয়ে নৌকায় ঘুরব এটার মধ্যে কৌশলের কি দেখলে তুমি?
যুথি বিজ্ঞের হাসি হাসে। “প্রেমে পড়লে ছেলেগুলো কেন যে এত বোকা হয়ে যায়, বুঝিনা। ‘ভালোবাসি’ এই কথাটা বলতে আমাকে আশুলিয়ায় আনতে হল, এটা কৌশল না?
তারেক তথমত খায়।
আপনি কিন্তু আমার ভালো প্রেমে পড়েছেন?
এভাবে বলছ কেন? তুমি পড়নি?
পড়েছি কিন্তু আপনাকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না।
তারেক যুথির দিকে আহত চোখে তাকায়। তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না!
চন্দ্রালোকের ছায়া-৫
চন্দ্রালোকের ছায়া-৩
চন্দ্রালোকের ছায়া-৪
“তুমি তাহলে জগিং শুরু করেছ?” হিরাগি বলল।
“হুম।“
“ জগিং করলে তো মোটা হবার কথা না, দিন দিন এরকম মোটা হয়ে যাচ্ছ কেন?”
“কি করব, সারা বিকেল যে শুয়ে শুয়ে কাটাই। আমি হাসতে হাসতে বলি। কারণ আসল সত্যটা হল, আমি অসম্ভব শুকিয়ে গেছি।“
অলপ বিদ্যা ভয়ন্কর-২ (উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে)
উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে
কয় দিন আগে ফেইস বুকে একটা লিন্ক পেয়েছিলাম। লিন্কটা হল, যে কোন কাজের প্রতি কোন জাতির কি মনোভাব।
আজ সকালের একটা ঘটনায় উপরের গল্পটা মনে এল। বছরে দুবার জাপানিজ পাবলিক স্কুলের বাচ্চাদের ভূমিকম্প হলে, তারা কি করবে, তার উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আজ ছিল সেই দিন। সকালে স্কুলে পৌঁছার পর দেখলাম, স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রত্যেক ক্লাসের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ হেলমেট পরে রেডী হয়ে আছেন।
শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে অতি উৎসাহ নয়, প্রয়োজন সঠিক অভিভাবকত্ব
মেরুদণ্ডহীন মানুষ নাকি কীটের সমান। তাই মেরুদণ্ডটা সোজা থাকা সবার জন্য জরুরি। এখন প্রশ্ন হল, মেরুদণ্ড কখন সোজা থাকে? যখন নাকি মানুষের ভেতর থাকে, আত্ম-বিশ্বাস এবং আত্মমর্যাদা বোধ। এটা আক্ষরিক অর্থেই সত্যি যে, আত্ম-বিশ্বাস বা আত্মমর্যাদা
(একজন মানুষকে সমাজে মানুষ হিসেবে, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বাঁচতে শেখায় এবং আত্ম-বিশ্বাস বা আত্মমর্যাদা(একজন মানুষের সাফল্যের মূল চাবি-কাঠি।
আত্ম-বিশ্বাস / আত্মমর্যাদাকে, মনোবিজ্ঞানীরা শিশুর সারা জীবনের মানসিক স্বাস্থ্য বা সুখী থাকার পাসপোর্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
অল্প বিদ্যা ভয়ংকর - ১
লেখালেখির ক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন, এধারকা মাল উধার করে কাটালাম। মানে এ ব্লগের লেখা সে ব্লগে এই রকম আর কি! তাতে যে বেশ নাম ছড়িয়েছে, তাও নয়। দুই চারজন দয়া করে পড়ে আমার মান বাঁচিয়েছেন আর পুরোনোরা বারবার বলেছেন, "দিদি ইধারকা মাল উধার করে আর কদ্দিন, এবার নতুন কিছু ছাড়ুন..."
তা নতুন মাল ভেতরে থাকলে না হয়, ছাড়া যায়, মানে লেখা যায়....। বাহিরের মত আমার ভেতরটাও ঝরঝরে। ফিলিপস বাতির মত সব ফকফকা। কিন্তু সে কথা বলা বারণ, আজাকের যা জামানা...তাতে ভাব ধরে থাকতে হয়। ভাব ধরে বিশেষ সুবিধা নাই, কেহই জিগায় নাই-'লেখেন না কেন?' কিন্তু তাতে কি? আমিই জানিয়ে দেই- "আমি আবার রাইটার্স ব্লকে ভুগছি"। এটা একটা দামী অসুখের নাম। দামী লোকরে কে কবে পাত্তা দিছে বলেন?? পোড়ার দেশে সবই কপাল।জ্ঞানের কদর একেবারেই নাই।
ধন্য ধন্য।। বলি তারে......
ভ্রমণ কাহিনী
গত রোববার,ভোর বেলা চেপে বসলাম বাসে। গন্তব্য ইযু পেনিনসুলা।। । এটি জাপানের সিযুওকা আইল্যাণ্ডে অবস্থিত।।।। বাসে মজা করতে করতে ঘন্টা চারেক পর পৌঁছে গেলাম।, ইযুর দোগাসীমাতে।।। আকাশ ঝকঝকে থাকলেও, বিধি বাম। অতিরিক্ত বাতাসের কারণে,একটুর জন্য সমুদ্র ভ্রমণটা মিস হয়ে গেল। চললাম, কাওয়াজুতে। সেখানে আছে, সাতটা পাহাড়ি ঝর্ণা। ঝর্ণাকে এরা দারু বলে, আর সাত সংখ্যা জাপানিজে হল- নানা।। । নানাদারুর কাছে গিয়ে আমার বাকরুদ্ধ হয়ে গেল।াম। সাত ঝর্ণার সাতটা রূপ। একটা সাপের মত, তাই হেবি দারু।। একটা চিংড়ি মাছের মত, তাই নাম এবিদারু। একটা কেটলীর মত, তাই কামাদারু। একটা প্রথমেই চোখে পড়ে, তাি নাম প্রথম দর্শন মানে হাক্কেইদারু, একটার নাম দেআইদারুএটার মানে হল দেখা হওয়া বা সাক্ষাত। কাঁকড়ার মত যেটা সেটার নাম কানিদারু।
সুরত আলীর যাপিত জীবন
অনেক দিন অন্ধকারে থাকতে থাকতে সুরত আলী অনেকটা মাকড়সা টাইপের হয়ে গেছে। ছোট্ট ঘরের মধ্যেই নিজের জাল বিছিয়ে থাকে। গতি মন্থর। এক জায়গায় স্থাণুর মত বসে থাকে। খুব সামান্যই পিলপিল করে এ কোনায় ও কোণায় হাঁটে। মানুষ আর মাকড়সার মধ্যে পার্থক্য খুঁজতে হলে বলতে হবে,সুরত আলী অন্ধকারে থাকতে থাকতে চোখ দুটো ঠিক আলো সহ্য করতে পারে না।
দিনকাল ভালো না, বাইরের আতণ্ক সুরত আলীকে খুব ছোট করে ফেলেছে। মাকড়সার মত সরু পেট। কাঠি কাঠি হাত পা। চেহারায় লাবণ্যহীন খসখসে ভাব। চেহারাটা মাকড়সার মতই বিশ্রী।
ফুল পাহাড়ের দেশে
ছোট্ট স্টেশনটায় এসে মন ভালো হয়ে গেল।। লোকজনের ভীড় নেই, হট্টগোল নেই; চারিদিকে শুনশান।, কোথাও কোন শব্দ নেই।।
মেয়ে আমাদের স্টেশন মাস্টার সেজে অভ্যর্থনা জানাল।।
স্টেশন থেকে বেরিয়ে, বাস ধরলাম।। কিছুক্ষণ যাবার পরই শুরু হল, ঘন বন।।। বাসের জানালা থেকে ছবি তুললাম।
তুচ্ছ মানব জন্ম
মানুষ হিসেবে আমি মাঝারি মানের - মানে মিডিওকার আর কি! (তার মধ্যে উচ্চতা, ওজন, মেধা, অর্থনৈতিক অবস্থা সবই পড়ে।) এহেন মানুষের আবার পছন্দ অপছন্দ! আমারে কেউ গোনার মধ্যেই ধরে না। তায় আমি াবার যেই বিষয়টা পছন্দ করি, তা জগতের বেশিরভাগ বুদ্ধিজিবী, উচ্চমানের মানুষ, সিরিয়াস মানুষ কেউ ই পছন্দ করেন না। সেটা হল রসিকতা। আমি রসিক মানুষ বেশ পছন্দ করি।