শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে অতি উৎসাহ নয়, প্রয়োজন সঠিক অভিভাবকত্ব
মেরুদণ্ডহীন মানুষ নাকি কীটের সমান। তাই মেরুদণ্ডটা সোজা থাকা সবার জন্য জরুরি। এখন প্রশ্ন হল, মেরুদণ্ড কখন সোজা থাকে? যখন নাকি মানুষের ভেতর থাকে, আত্ম-বিশ্বাস এবং আত্মমর্যাদা বোধ। এটা আক্ষরিক অর্থেই সত্যি যে, আত্ম-বিশ্বাস বা আত্মমর্যাদা
(একজন মানুষকে সমাজে মানুষ হিসেবে, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বাঁচতে শেখায় এবং আত্ম-বিশ্বাস বা আত্মমর্যাদা(একজন মানুষের সাফল্যের মূল চাবি-কাঠি।
আত্ম-বিশ্বাস / আত্মমর্যাদাকে, মনোবিজ্ঞানীরা শিশুর সারা জীবনের মানসিক স্বাস্থ্য বা সুখী থাকার পাসপোর্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
আত্ম মর্যাদা বোধ, যে কোন শিশুর মানসিক ও আচরণগত বিকাশের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে, যে সব বাচ্চাদের আত্মবিশ্বাস কম, তারা সহজেই হাল ছেড়ে দেয়, হতাশ হয়ে পড়ে। সহনশীলতার মাত্রা থাকে এদের খুব কম। যদি প্রশ্ন করা হয়, “তুমি এই সহজ কাজটা পারনি কেন?” তাহলে হয়তো উত্তর আসবে, “আমি বোকা, তাই এটা পারিনা অথবা আমি তো কিছুই করতে পারিনা। আমাকে দিয়ে এটা হবেনা।“ তারা অপেক্ষাই করে থাকে, কখন অন্যেরা তার কাজটা করে দেবে।
কিন্তু একজন আত্মবিশ্বাসী শিশুকে যদি একই প্রশ্ন করা হয়, তাহলে সে হয়তো বলবে, “আমি বিষয়টা বুঝি নাই, তাই করতে পারিনি।“ এরা এদের সীমাবদ্ধতাকে সহজ ভাবে গ্রহণ করতে পারে। এরা যে কোন পরিস্থিতি সহজে সামাল দিতে পারে এবং নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে এদের একটা ধারণা থাকে।
আত্ম-বিশ্বাসের অভাব, শিশুদের আচরণের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে যেটা শিশুর আচরণ গত জটিলতা তৈরী করে এবং সেটা তার প্রাপ্ত বয়সকেও পরিচালিত করে।
কিভাবে শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো যায়? সে কথা বলতে গেলে, একটা বিষয় বলতেই হবে যে, শিশুদের আত্মবিশ্বাস বা আত্মমর্যাদা অনেক খানিই নির্ভর করে যে, অন্যেরা তাকে কিভাবে মূল্যায়ন করছে তার উপর।
তাই ঘুরে ফিরে সেই অভিভাবকত্বের এর কথাই চলে আসে। সঠিক অভিভাবকত্বই পারে একটি শিশুকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলে তাকে সুখী ও সুন্দর জীবন দিতে।
শিশুর জন্মের প্রথম ৫/৬ বছর বাবা-মা’ই শিশুর জীবনে সব। তারাই পারেন তার শিশুকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে এবং এই মূল্যায়ণটুকুই কিন্তু শিশু সারাজীবন বহন করে। তাই শিশুর জীবনের প্রথম ৪/৫ বছরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়।
একটা স্লোগান আছে “if you want to change your world, please change your first five.”
শিশুর আচরণগত পরিবর্তন আনতে চাইলে, বাবা-মা’র জন্য প্রথম শর্ত হল, শিশুকে যথেষ্ট এবং প্রয়োজনীয় আদর ভালোবাসা এবং মনোযোগ দিতে হবে।
তারপরেই যে বিষয়টাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, সেটা হল-বাবা-মা’র নিজের আত্মবিশ্বাসকেও অনেক বাড়াতে হবে। কারণ শিশুর বিকাশের ক্ষেত্রে শিশুর আয়না বা role model হল তার বাবা-মা। শিশু তাই তার বাবা-মা'কে অনুকরণ করে বেড়ে ওঠে। সে জন্যই বাবা-মা'র ইতিবাচক ও আত্মবিশ্বাসী আচরণ শিশুকেও ইতিবাচক হতে শেখায়। সুতরাং যে সব বাবা-মা’ মনে করছেন, একটা সময়ের পর আর নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো সম্ভব না, সেই সব বাবা-মা’র মনে রাখতে হবে-আত্মবিশ্বাস বা আত্মমর্যাদা জন্মগত কোন বিষয় নয়, এটি মানুষ অর্জন করে তার বেড়ে ওঠার পরিবেশ থেকে।
কাজেই একজন বাবা-মা’র দায়িত্ব শিশুর জীবনে অসীম,
১. শিশুর আচরণ গত বিকাশের ক্ষেত্রে বাবা-মা’ কে হতে হবে তার শিশুর কাছে সব চেয়ে ইতিবাচক আদর্শ।
২. বাবা-মা শিশুকে কি বলছেন এবং কিভাবে বলছেন, সেটা অবশ্যই মাথায় রেখে শিশুদের সাথে আচরণ করতে হবে।
আমরা দেখি, বাবা-মা, শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য অথবা যে কোন কাজে তাকে উতসাহিত করবার জন্য যখন তখন বাহবা দিয়ে থাকেন। এটা নিঃসন্দেহে বাবা-মা’র জন্য অবশ্য করণীয় কাজ। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কাজটি তিনি কিভাবে করছেন? যেমনঃ তুমি সবচেয়ে ভালো ছড়া লিখেছ, তুমিই সবার চাইতে সেরা, এটা বলে বাহবা দেবার চাইতে, এটা বলা অনেক জরুরী যে, সত্যি আমি অনেক খুশী হয়েছি, এ কারনে যে- তুমি এটা লেখার জন্য অনেক কষ্ট করেছ।“ কাজের ফলাফলকে বাহবা দেবার চাইতে, শিশুটিকে তার কাজটি ভালোভাবে করার প্রচেষ্টাটাকে গুরুত্ব দেয়াটা জরুরী।
৩. বাচ্চারা নিজেরদের সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা বা ভ্রান্ত বিশ্বাস, নিজের ভেতর ধারণ করে। বাচ্চাদের নিজেদের সম্পর্কে সে সব ভুল ধারণা বা ভ্রান্ত বিশ্বাস গুলোকে চিহ্নিত করে, তার পূণঃপরিবর্তন আনাটা বাবা-মা’র জন্য জরুরী। যেমনঃ শিশুর ভেতর তাদের যে কোন কাজ করার যোগ্যতা, কাজটি নির্ভুলভাবে করতে পারছে কি না , শিশুটির দৈহিক আকর্ষনীয়তা ইত্যাদি অনেক বিষয়ে শিশুর ভেতর অনেক ভুল ধারণা বা ভ্রান্ত বিশ্বাসস থাকে। এ সব বিষয়ে বাবা-মা’র যত্ন নিতে হবে।
প্রাসঙ্গিক একটা উদাহরণ দেই- একটা বাচ্চা হয়তো সব বিষয়েই ভাল, শুধু অঙ্কটা বোঝেনা। এ ক্ষেত্রে শিশুর হয়তো ধারণাই হয়ে গেছে যে, তাকে দ্বারা আর যাই হোক অংকটা হবে না। এই ভ্রান্ত ধারণা বা ভ্রান্ত বিশ্বাসটাই দিনকে দিন শিশুটিকে অঙ্কে খারাপ হতে আরও সাহায্য করবে।
বাবা-মা’র দায়িত্ব হচ্ছে যে, শিশুটিকে বোঝানো যে, “সে সব বিষয়েই ভালো। শুধু অঙ্কটাতে একটু খারাপ করছে সেটাতে সময় দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। শিশুটিকে আস্বস্ত করতে, বাবা-মা’ আরো বলতে পারেন, এই কাজটা আমরা দুজন মিলে করব।“
বাবা-মা’র আদর সোহাগ, শিশুর জন্য নিরাপদ এবং সুন্দর, স্থিতিশীল পারিবারিক পরিবেশ দেবার পাশাপাশি আরো যে বিষয়টা বাচ্চার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে, সেটা হল – বাচ্চাকে ইতিবাচক এবং সঠিকভাবে তার ভুলটা ধরিয়ে দেয়াটা জরুরী।
বাচ্চাদের মধ্যে প্রতিযোগী মনোভাব গড়ে তোলার চেয়ে, ওদেরকে যে কোন কাজে অংশ গ্রহণ করানোটা অনেক জরুরী। যেমনঃ দুজন বাচ্চাকে কোন কাজ করানোর সময়- “দেখি তো এই অঙ্কটা কে বেশী ভালো পারে? বলার চেয়ে, যে ভালো পারছে, তাকে উতসাহিত করা উচিত, তোমার বন্ধুকেও এটা শিখিয়ে দাও অথবা একা অংকটা না করে, দুজন মিলে এক সঙ্গে কর,” বলাটা অনেক শ্রেয়। তাহলে একজন শিশু তার সমবয়সী আরেক জনকে সহযোগীতা করতে শিখবে।
এবার দেখি, বাবা-মা আসলে কি করেন?
বাবা-মা শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে গিয়ে যে ভুলটি প্রায়শঃই করেন, সেটা হল- না বুঝে শিশুকে তার যে কোন কাজের জন্য অতিরিক্ত বাহবা দিয়ে ফেলেন।
শিশুকে বাহবা দেবার বিষয়টি অবশ্য এক এক সংস্কৃতিতে এক এক রকম
চায়নীজ সংস্কৃতিতে শিশুর তার কাজের জন্য বাহবা পাবার বিষয়টি খুব দূর্লভ। আবার আমেরিকায় সকল কাজেই বাচ্চাদের বাহবা দেয়া হয়- তাতে নাকি বাচ্চাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
আসুন দেখি গবেষনা কি বলে?
Jennifer Henderlong Corpus and Mark Lepper, নামের দুই মনোবিজ্ঞানী ৩০ বছরের উপরে গবেষণা করে দেখেছেন যে,
২৪ মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদেরকে তাদের সব কাজে বাহবা দিলে – সেই শিশুরা সব ধরণের challenge নিতে পারে।
কিন্তু বাচ্চা যতই বড় হতে থাকে, তারা কিন্তু বাহবা পাবার ব্যাপারে অনেক স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। কি উদ্দেশ্যে তাদের বাহবা দেয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে অনেক সচেতন হয়ে পড়ে। তারা যদি একবার ধরতে পারে যে, বাহবা দেবার ক্ষেত্রে বাবা-মা যথেষ্ট না সত বা মনযোগী নন, তারা যত্র-তত্র, কারণে অকারণে বাহবা দিচ্ছেন তাহলে, সেই বাহবাটি কিন্তু ভালো করার বদলে শিশুদের ক্ষতি করতে পারে।
অমনযোগী বা অকারণ অনেক বেশী বাহবা কিন্তু যে কোন সময়ই শিশুর আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারে এবং অনেক গবেষণায় দেখা গেছে বিষয়টা বাবা-মা’র সাথে বাচ্চার সম্পর্কের অবনতিও ঘটতে পারে।
যেমনঃ কারণে অকারণে বাবা-মা যখন শিশুকে ভালো বলছে- প্রায়শঃই শিশুটি এভাবে ভাবতে থাকে- বাবা-মা বোধ হয়, আমার অসাফল্যে দুঃখিত হয়েছেন তাই আমাকে খুশী করার জন্যই এটা করছেন। তার মানে, আমার আসল/প্রকৃত সমস্যাটা কোথায় সেটা বোঝার জন্য তারা কোন চেষ্টাই করছেন না। কাজেই শিশুরা উপ সংহার টেনে থাকে, “বাবা-মা’ এম্নিতেও ভালো ক রেছি ব ল বে, অম্নিতেও ভালো করেছি বলবে, তাই বাবা-মা'র কথা অত গুরুত্ব সহকারে শোনার কোন প্রয়োজন নেই।
তাহ লে বাবা-মা’র করণীয় কি? সেই জন্য বাবা-মা সন্তানকে যে বাহবা দেবেন, খেয়াল রাখতে হবে, সেটি প্রকৃত প্রয়োজনীয় এবং সুনির্দিষ্ট হয়।
মনে করা হয় যে, শিশুর বুদ্ধিমত্তা এবং মেধাকে বাহবা শিশুর আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়, এটা যেমন সত্যি, তার পাশাপাশি এটাও সত্যি যে এই বাহবাটা কখনো কখনো উল্টোমুখীও (backfire) হতে পারে।
Carol Dweck এবং তার colleague রা একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, বাচ্চাদের বুদ্ধিমত্তাকে সেরা ধরে, সব সময় খুব ভালো, খুব ভালো বললে, শিশুরা ভুল না করার জন্য খুব বেশী সতর্ক হয়ে পড়ে এবং তারা যে কোন ধরণের challenge এড়িয়ে চলতে শুরু করে। কারণ তারা ভুল করতে ভয় পায়। তারা ভাবে, ভুল করলেই বুঝি আর তাকে কেউ খুব ভালো বলবে না। শিশুরা এই অসাফল্য কিছুতেই মেনে নিতে পারে না।
বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে দেয়া বাহবাটি হওয়া উচিত বাস্তব সন্মত।
কারণ বাচ্চারা বাবা-মা’র কথাকে তার জন্য আদর্শবাণী হিসেবে মনে করে। সে ক্ষেত্রে বাবা-মা যদি বলেন, “তোমার মত ভালো পিয়ানো বাজাতে আর কেউ পারে না” তার মানে বাবা-মা একটা ভুল তথ্য তার শিশুকে দিচ্ছেন। বাচ্চা সেটাকে high standard ভাবছে। আর তখনই তৈরী হচ্ছে সমস্যা। এর কারণে বাচ্চা পড়তে পারে চাপের মুখে এবং তারা ভাবতে শিখছে এ বিষয়ে তার চেয়ে ভালো আর কেউ নেই, এটা একটা অসম্পূর্ণ তথ্য, এবং এটা নিয়েই তারা বেড়ে উঠতে পারে।
(Meyer 1992) সালে একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, খুব সহজ কাজে বাহবা পাবার পর বাচ্চারা একটি উপসংহারে যাচ্ছে সেটি হল, “there is something very wrong” এই একটা সহজ কাজে বাবা-মা এরকম বলছে তার মানে “হয় বাবা-মা ভীষন বোকা, নয়তো আমি ভীষন বোকা।“
(Barker and Graham 1987) একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন, ৪-১২ বছরের বাচ্চা বাহবা পাবার ব্যাপারে অনেক স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে। তখন তারা বাহবার আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন বা সামাজিক মূল্যায়ণ করতে শেখে।
যেমনঃ দুটো বাচ্চা একই কাজ করছে তার একটা ভিডিও অন্য বাচ্চাদের দেখানো হয়। দুটো বাচ্চা একই রকম দক্ষতার সাথে একইভাবে কাজটি সম্পন্ন করেছিল, কিন্তু একটি বাচ্চাকে কাজ শেষে বাহবা দেয়া হয়।
তারপর বাচ্চাদের জিজ্ঞাসা করা হয়, কে ভালোভাবে কাজটি সম্পন্ন করেছিল? তার উত্তরে অন্য বাচ্চারা জানায়, যাকে কাজ শেষে বাহবা দেয়া হয়েছিল, সে সত্যি অন্যজনের চেয়ে অনেক বেশী চেষ্টা করেছে।
বাচ্চারা যে কাজটা নিজে থেকে করতে পছন্দ করে, সে ক্ষেত্রে বেশী বাহবা দিতে নেই।
যেমনঃ একজন ব্রোকলি খেতে পছন্দ করে, তাকে বার বার বলার দরকার নেই, “ বাহ! তুমি তো অনেক লক্ষী ছেলে, কি সুন্দর ব্রোকলি খাও।“
তাতে সেই বাচ্চা সচেতন বা অসচেতন ভাবে, ভাবতে শেখে...তা হলে কি আমি ব্রোকলী কি বাহবা কুড়ানোর জন্য খাচ্ছি? অনেক সময় এ ক্ষেত্রে তারা খুব দ্রুত ব্রোকলী খাওয়া ছেড়ে দিতে পারে।
বাচ্চাদের অন্যদের সাথে তুলনা করে বাহবা দেয়া টা একেবারেই ঠিক নয়।
এই সামাজিক তুলনা শিশুদের জন্য দুধরণের সমস্যা তৈরী করে,
১. তুলনা সবসময় বাচ্চাকে প্রথম হতে শেখায় যা অনেক বাচ্চার নিজে থেকে ভালো কিছু করার আগ্রহটাকে নষ্ট করে ফেলে।
২. তুলনা বাচ্চাদের মধ্যে শুধু প্রতিযোগীতাই বাড়ায় কিন্তু শিশুর দক্ষতাকে সে ভাবে বাড়ায় না।
৩. সামাজিক তুলনা বাচ্চাদের অকৃতকার্যতার এর সাথে উপযোগী করতে শেখায় না। তাই বাচ্চারা সহযে ভুল থেকে তো শেখেই না এবং তারা কোন challenge বা নতুন কোন ঝুঁকি নিতে চায় না বা অনেক ক্ষেত্রেই পারে না। এ সব শিশুরা যে কোন challenge বা নতুন কোন ঝুঁকি নেবার বিষয় আসলেই, তারা নিজেদের খুব অসহায় ভাবতে শুরু করে যা কোন ভাবেই শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ায় না।
এখন কথা হল, তাহলে কি বাচ্চার ভালো কাজের জন্য বাহবা দেব না? অবশ্যই দিতে হবে।
তবে, সচেতন থাকতে হবে, আমাদের বাহবা যেন বাচ্চার natural motivation কে নষ্ট না করে ফেলে। বাচ্চাদের ভুল থেকে, তাদের পারিপার্শ্বিক অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে দেয়াটা জরুরী।
বন্ধু তানবীরার একটা খারাপ গুণ হল, আমাকে অতি মাত্রায় প্রশ্রয় দেওয়া। চান্স পেলেই খোঁজ খবর নেয়, এটা-সেটাতে উৎসাহ দেয়।লিখতে খোঁচাখুচি করে।
লেখার যা চেহারা দাঁড়িয়েছে, তাতে “এইবার তানবীরা বুঝবে, কত আটায় কত পরোটা”
তোমাকে সারপ্রাইজ দেব বলে, তোমার নেয়া খোঁজের বদলে খোঁজ নেইনি।
আমি আমার ভাইয়ের মেয়েকে পড়াই। ওর প্রি-স্কুলের পর কে জি ওয়ানের ভর্তি পরীক্ষার জন্য ওকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করার জন্য বলেছিলাম, আমি যে তোমাকে পড়াই সেগুলো ঠিক আছে কি না দেখার জন্য আমরা একটা স্কুলে যাবো। সেও খুশী।
পরীক্ষার দিন ও ভেতরে চলে গেলে আমি বাইরে বসে অপেক্ষা করছি। সব বাচ্চাই তাদের মা-বাবার সাথে গেছে। বেশীর ভাগের সাথে তাদের নানা-নানী/ দাদা-দাদী আছে।
পরীক্ষা শুরুর বেশ কিছুক্ষণ পর প্রথম একটা বাচ্চা মেয়ে বের হয়ে আসলো। বাচ্চার মা আমার পাশে বসা। মহিলা রীতিমতো চিৎকার করতে লাগলো বাচ্চার সাথে ' তুমি কেন বের হইসো?? কেন সবার আগে বের হইসো?? রিভিশন দিসো??' বাচ্চা যতই বলে আমি তো সব লিখসি। আমার লেখা শেষ তাই বের হইসি। ততই মহিলার চিৎকার বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে নানী, মায়ের কাছ থেকে টেনে নিয়ে নিজেও বাচ্চাকে ঝাঁকাতে থাকে। কি লিখসো বলো? স্পেলিং আসছে? এ্যডিশন আসছে? কেন বের হইসো, ইত্যাদি।
আমি পুরাই টাসকিত। এই হলো অবস্থা আপু। অসুস্থ পর্যায়ের প্রতিযোগীতা।
আপাতত প্রিয়তে আর পছন্দ করে গেলাম। সময় হলে পড়ুম নে।
আহা আমাদের ডিপার্টমেন্টের স্যারেরা এ ধরনের উত্তর খাতায় পেলে ১২ তে অন্তত ১০ দিতো।
খুবি প্রয়োজনীয় লেখা...
ধন্যবাদ
তুমিতো শিশু না, খোঁজ নিলে সমস্যা কি?
নাকি মনোগঠন এখনো বাকি
আটার পরোটা খেয়ে খেয়ে শরীরটার রঙ নষ্ট করে ফেলছো, এখন থেকে ময়দার পরোটা খাবে কিন্তু
আমাদের ধারনা, আজ আমার বাচ্চা ক্লাস ওয়ানে ফার্স্ট হওয়া মানেই হচ্ছে সে বড় হয়ে জজ ব্যারিস্টার বা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে। বাচ্চার হচ্ছে আমাদের রেসের ঘোড়া আর আমরা তার জকি।আমাদের ধারনা, আজ আমার বাচ্চা ক্লাস ওয়ানে ফার্স্ট হওয়া মানেই হচ্ছে সে বড় হয়ে জজ ব্যারিস্টার বা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে। বাচ্চার হচ্ছে আমাদের রেসের ঘোড়া আর আমরা তার জকি।
আমাদের ধারনা, আজ আমার বাচ্চা ক্লাস ওয়ানে ফার্স্ট হওয়া মানেই হচ্ছে সে বড় হয়ে জজ ব্যারিস্টার বা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে। বাচ্চার হচ্ছে আমাদের রেসের ঘোড়া আর আমরা তার জকি।
মন্তব্য করুন