নাগরিক গল্পঃ ১৪-বৃষ্টিকবিতা দিন
স্বর্গের সিঁড়িতে
একাকী বসে আছে পদ্মসুন্দরী-
নীল পলকে-অপলকে
হারায় চোখ-
ফিরে আসে ঘুমন্ত যৌবন-
অস্থির মধ্যাহ্নে!
আজকে কোথায় যাওয়া উচিত? অফিস না শহীদ মিনারে? হুমায়ূনের ফেরার কথা! আজকে কি মানিক মিয়ার জারুল কিংবা সোনাঝুরি অন্যান্য দিনের মতো হাসবে? আজকে কি গোলচক্করে ঠিক অন্য দিনের মতো মীরপুরের বেপরোয়া বাসগুলো গোত্তা দেবে ডানে আর বামে! কিংবা পুরানো বিমানবন্দর থেকে ঊড়বে হেলিকপ্টারগুলো প্রজাপতি ডানায় নীল আকাশে। আজকে কি আকাশ হাসবে প্রতিদিনের মতো? গত কয়েকদিন ঢাকার আকাশ হাসি-কান্নার মাঝেই আছে। হাল্কা বৃষ্টি মনে করিয়ে শ্রাবন মেঘের দিন। অরুপের কি খুব মন খারাপ আজকের দিনে? বকুলতলা দিয়ে হেঁটে বের হয়ে অরুপ ফিরে চললো শহরের উত্তরে। আজকে কবি আসার কথা দক্ষিনে। আজকে শহীদ তাজউদ্দিনের জন্মদিন। শীতালক্ষাপুত্র শহীদ তাজউদ্দিন! মোড়ে আসতেই উজ্জ্বল আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে গেলো-সোজা পুবে হাঁটা শুরু করলো অরুপ। কিছুটা হেটেই মনে হলো একদিন কাজ-কর্ম না করলে কি হয়? একদিন সারা ঢাকা শহরের ব্যস্ত মানুষ দেখলে কেমন হয়!
-অরুপ কি করো? কই তুমি?
-আমি রাস্তায়-হাঁটছি; ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত মানুষ দেখবো।
-অফিস যাবানা?
-না আজকে শাহবাগ হয়ে সোয়ারীঘাট যাবো।
-সোয়ারীঘাট কোথায়?
-সোয়ারীঘাট পেরিয়ে কলাকোপা বান্দুরাও যেতে পারি।
-কি আবোল তাবোল বকছো অরুপ? তোমার শরীর ভালো।
-হা ভালো! তুমি কেমন আছো কংকনা?
-এতোক্ষনে টের পেলে আমি কে?
-আরে না; অন্যকিছু ভাবছিলাম।
-কি হয়েছে তোমার?
-তেমন কিছুনা-তুমি এতো ভোরে ঘুম থেকে উঠেছো?
-হাঁ আজকে ডাক্তারের কাছে যাবো।
-আবার কি হলো?
-সমস্যা আগেরটা-তোমাকে তো বোঝানো যায়না।
-বুঝিয়ে বলো-বোঝার চেষ্টা করি।
-থাক বুঝতে হবেনা-তুমি কই যাবা?
-আজকে কবি ফেরার কথা।
-ওহ মাই গড! হুমায়ূন ফিরছেন আজকে? গতকাল ফেরার কথা ছিলোনা? আমি তো ভাবলাম গত কালকেই ফিরেছেন কবি।
-না আজকেই ফিরেছেন!
-অরুপ তোমার কি মন খারাপ?
-আরে না মন খারাপ হবে কেনো?
-এই যে কবি যে শেষ যাত্রার জন্য ফিরলেন!
-মৃত্যু সুন্দর;
জীবনের মতোই সুন্দর
কিংবা বলা যায়
জীবন আছে বলেই মৃত্যু সুন্দর!
-অরুপ তোমার কথা অনেক ভারী শোনাচ্ছে।
-তুমি ডাক্তারের কাছে কবে যাবা?
-হাঁ বাদ দাও-তোমার সাথে একটু কথা বলি।
-সমস্যা নেই-আজকে আমার কাজকর্ম নেই-ঘুরবো শুধু; তুমি অনেকক্ষন কথা বলতে পারো।
-না আর কথা বলবোনা; আমি রাখছি-তুমি ভালো থেকো।
-তুমিও।
লাল দালানের এপার্টমেন্টে বামে রেখে রিক্সা করে সোজা এগিয়ে যায় অরুপ। পান্থপথ সিগনালে এসে ডানে মোড় নিয়ে গ্রীনরোডে ঢুকে পড়লো অরুপ। ল্যাবএইডের সামনে এসে রিক্সা ছেড়ে দিয়ে ফুটওভারব্রীজ দিয়ে রাস্তা ক্রস করে ঢাকা কলেজকে ডানে রেখে নীলক্ষেতের কোনায় এসে দাঁড়ালো অরুপ। চারদিকে হাজার-হাজার বই।রাস্তা বন্ধ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনারে আসছেন কবি। সবমানুষ যাচ্ছে শহীদ মিনারের দিকে।পাঁয়ে হেটে। অরুপ অনিশ্চিতভাবে হাঁটছে। আর ভাবছে হুমায়ুন আহমেদ নিয়ে। অরুপের এই এক সমস্যা যাকে খুব পছন্দ হয় তাকেই কবি বলা। অরুপের কাছে বঙ্ঘবন্ধু কবি-শহীদ তাজুদ্দিন কবি-শহীদ মাতা জাহানারা ইমাম কবি কিংবা লালন সাঁই-উকিল মুন্সী তো আসলেই কবি।
টি এস সি’র কোনায় এসে অরুপের নাম শুনে ডানে তাকাতেই দেখলো পলাশ দাঁড়িয়ে আছে-মেয়েকে হাতে নিয়ে। হাতে কয়েকটা কদম ফুল।
-অরুপ ভাই কই যান?
-না একটু হাঁটা-হাঁটি করছি।
-তোমার কি মন খারাপ অরুপ ভাই?
-আরে না-শুধু দেখতে আসলাম মানুষ-এখানে তো অনেক মানুষ!
-তুমি যাবানা ফুল দিতে?
-না আমি যাবোনা-প্রিয় মৃত মানুষের কাছে যেতে নেই।
-তুমি কি বাসায় যাবা? রোজা আছো?
-হা রোজা আছি-আজকে পানি খাইনি-অন্যদিন পানি-চা-সিগারেট খেয়ে রোজা রাখি।
-মানে কি?
-মানে হইলো লিকুইড খাইলে রোজা ভাঙ্গেনা!
-আজকেও তাই?
-আরে না আজকে সলিড রোজা।
-তোমার আসলে মন খারাপ; তোমার চোখ বিষন্ন হয়ে আছে।
-তুমি ভুল দেখছো-আমার চোখে আনন্দ খেলা করছে।
-অরুপ ভাই তুমি বাসায় যাও; তুমি অস্থির হয়ে আছো।
অরুপ ফিরে যাচ্ছে শহরের উত্তরে। সব মানুষ শহীদ মিনার মুখী আর অরুপ উত্তরমুখী। মনে ঘুরছে একটা গান; অনেকক্ষন মনে করার চেষ্টা করেও মনে আসছেনা-হঠাত মনে পড়লো কবির লেখা সেই গানঃ
যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো
চলে এসো
এক বরষায়এসো ঝরো ঝরো বৃষ্টিতে
জল ভরা দৃষ্টিতে
এসো কমলো শ্যামলো ছায়
চলে এসো
এক বরষায়যদিও তখনো আকাশ থাকবে বৈরি
কদমও গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরী
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো
ঝলকে ঝলকে নাচিবে বজলি আলো
তুমি চলে এসো
চলে এসো
এক বরষায়নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার পরে
মেঘমল্লার বৃষ্টিরো মনে মনে
কদমও গুচ্ছ খোপায় জড়ায়ে নিয়ে
জল ভরা মাঠে নাচিব তোমায় নিয়ে
চলে এসো
তুমি চলে এসো
এক বরষায়
২৩ জুলাই ২০১২ মধ্যাহ্ন
যদি মন কাঁদেঃ নেট থেকে
অরূপের মন খারাপ না হলেও এই লেখা পড়ে আমার মন খারাপ~
যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো
চলে এসো
এক বরষায়!
অরুপের মন খুব খারাপ ছিলো;
বেশী খারাপ।
( (
এত খারাপ লাগে ক্যান লোকটার জন্য, বুঝি না।
চিনি না জানি না একটা মানুষ, তাকে হারিয়ে ফেলার ব্যাথা এত তীব্র হয়ে বাজে। অদ্ভুত।
বিষন্ন দিন এবং রাত!!
সত্যিই, মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। বড় অসময়ে বিদায় !
বড় অসময়ে!!
লেখাটা পইড়া চোখের ভিতর বালি টাইপের কিছু একটা পড়ছে বলে মনে হইতেছে
অনেক কষ্টদিন।
চমৎকার লেখনী।
অনেক অনেক মুগ্ধতা।
{ফ্লাইওভার পাইলেন কই ওইখানে ? নাকি (ফুট)ওভারব্রীজ ?}
আপনার লেখার ভক্ত...
( ( (
মন্তব্য করুন