ছুডুলোক কিংবা ভদ্রলোক বয়ান
‘রাজনীতি’ কাহাকে বলে? ইহা কি নীতির রাজা না রাজার নীতি। আমি আসলে অনেক আগে থেকেই কনফিউজ ছিলাম-এখোনো আছি। রাজনীতিসচেতনতা কি একটা দেশের মানুষের যোগ্যতা কিংবা অযোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে? হাঁ মাপকাঠি হইতেই পারে। রাজনীতির সবচাইতে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হলো দেশ সম্পর্কে ভাবা। কি করলে কি হতে পারে? কি না করলে কি হতে পারতো? এই যে ভাবা-ভাবি তার নাম রাজনীতি দেওন যায়। অন্ততঃ আমার মতো খুব সাধারন মানুষের কাছে। আর সাধারন মানুষের এই রাজনৈতিক ভাবনায় প্রথমেই চলে আসে গনতান্ত্রিক রাজনীতির কথা। অর্থাৎ যারা রাজনীতি নিয়ে ভাবেন-তারা চান কিংবা না চান তাদের চিন্তা চেতনায় জেগে থাকে গনতন্ত্র। যাক গনতন্ত্র নিয়ে ভাবার আগে রাজনীতি নিয়ে বহুল প্রচলিত জোক্স শুনে নেই-
স্কুল টিচার বাড়ির কাজ হিসেবে রাজনীতির সংজ্ঞা শিখে আসতে বললেন। এক ছাত্র তাই সেটা জানতে তার বাবাকে প্রশ্ন করল।
ছেলে: আচ্ছা বাবা রাজনীতি কি?
বাবা: রাজনীতি হচ্ছে সরকারী দল বা সরকার, বিরোধী দল, শ্রমিকশ্রেনী এবং জনগণকে সাথে নিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জল করা।
ছেলে: বাবা, সরকার, বিরোধী দল, শ্রমিকশ্রেনী- জনগণ এবং ভবিষ্যতটা একটা খোলাসা করে বুঝিয়ে দাও।
বাবা: মনে কর আমি সরকার চালাই, আমি হচ্ছি সরকার। তোমার মা সবকাজে আমার বিরোধিতা করে সে হচ্ছে বিরোধী দল। তুমি সবকিছু অবজার্ভ করো তাই তুমি হচ্ছো জনগণ। আমাদের বুয়া আমাদের যাবতীয় কাজ করে-সে হলো শ্রমিক শ্রেনীর প্রতিনিধি আর আমরা সবাই তোমার ছোটভাই সেন্টুর আগামী দিনগুলো ভাল চাই। সে হচ্ছে ভবিষ্যত।
ছেলে বাবার কাছ থেকে রাজনীতি জ্ঞান নিয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করলো। সে অনেক কিছু জেনে ফেলেছে এ আনন্দে মধ্য রাতেও তার ঘুম আসছিলনা। তাই সে সরকার, বিরোধী দল, শ্রমিকশ্রেনী, ভবিষ্যত সবাই কী করছে দেখতে বের হল। প্রথম উকি দিল মা-বাবার ঘরে। সে দেখল তার বাবা বুয়ার সাথে শুয়ে আছে, মা নিজের সাজগোজ নিয়েই ঘুমিয়ে আছে। তারপর গেল সে তার ছোটভাইয়ের রুমের দিকে। সেখানে গিয়ে দেখল তার ছোটভাই প্রশ্রাব করে বিছানা ভিজিয়ে ফেলেছে। ভবিষ্যতের এ অবস্থা দেখে তার খুব খারাপ লাগল।
পরদিন সে স্কুলে যাবার পর স্কুল টিচার প্রশ্ন করলেন-
টিচার: বলতো রাজনীতির সংজ্ঞা কী?
ছাত্র: (ছাত্রতার বাবার সংজ্ঞাটা ভুলে গেল। তাই রাতে যা দেখেছিল তার উদাহরণ দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করল।) স্যার, রাজনীতি মানে হচ্ছে-সরকার গরীব শ্রকিককে প্রতিদিন ধর্ষন করে, বিরোধী দল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, আর জনগণ চেয়ে চেয়ে দেখে আর আর যে তার ভবিষ্যত প্রশ্রাব (ময়লা) -এ পরিপূর্ণ। কিন্তু সে কিছুই করতে পারেনা!
এইবার আসেন রাজনীতির সুশীল ধারনা নিয়ে আলুচনা করি।রাজনীতি আসলে কি? এইটা খায় না পিন্দে? যারা রাজনীতি করেন তারা ঠিক কিভাবে রাজনীতি নামক বস্তুটা করে থাকেন!
রাজনীতি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত কোন গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যদিও রাজনীতি বলতে সাধারণত নাগরিক সরকারের রাজনীতিকেই বোঝানো হয়, তবে অন্যান্য অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেখান মানুষের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বিদ্যমান, সেখানে রাজনীতি চর্চা করা হয়।
রাজনীতি কতৃত্ব ও ক্ষমতার ভিত্তিতে গঠিত সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে গঠিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে শিক্ষার এমন একটি শাখা যা রাজনৈতিক আচরণ শেখায় এবং ক্ষমতা গ্রহণ ও ব্যবহারের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করে।
অর্থাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য রাজনীতির উদ্ভব। আরো সহজভাবে বলা যায়-জনগন সকল ক্ষমতার উতস। তো বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ যদি সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য এক জায়গায় জড়ো করা কিংবা তাদের মতামত শোনা কঠিন সুতরাং তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। যারা তাদের কথাগুলোই বলবেন। সাধারন মানুষ কি ভাবছেন কিংবা তাঁরা কিভাবে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।সুতরাং আম জনতা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। তারপরেই শুরু হয়-আসল খেইল! ভোট দেওয়া জনতা ফার্মগেটে দাঁড়িয়ে থাকেন-রাস্তা বন্ধ! কেন? ভি আই পি যাইবেন! ভি আই পি কিডা? ভি আই পি হইলেন তিনি যিনারে আমি ভোট দিয়েছিলাম। যিনি বলেছিলেন-তিনি নির্বাচিত হইলে আমাদের জীবন যাপন সহজ করে দেবেন। তিনি তাঁর শপথ নিবার সময় তাঁর যাবতীয় সম্পদের হিসেব দিবেন এবং যেদিন তাঁর ক্ষমতা শেষ হবে সেদিন তিনি তাঁর সম্পত্তির হিসেব দিয়ে বিদায় নিবেন। এর ভিতরে অবশ্য একজন হিসেব দিবার চেষ্টা করতেছেন-উনি ৪০০০ কোটি মুরগী আন্ডা চুরি হয়ে যাওয়া ‘সরকার কা মাল’ ব্যাঙ্কের একজন পরিচালক। যিনি মাত্র ১০০০০ টেকা দামের স্কুল মাষ্টার থেইক্কা এখুন মোটামুটি ১০০ কোটি টেকার সিঁড়িতে বসে আছেন। আর তিনি যদিও সেই আন্ডাখানার পরিচালক তবুও তিনি জানেননা সেই ‘সরকার কা আন্ডা’ কুথায় গেলু?
সেই অনেকদিন আগে আমার প্রিয় একজন মানুষ এবং প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারাকাত বলেছিলেন-আপনি যদি কাওরানবাজারে দোকানদারি করেন তাইলে আপনার লাভ হবে ধরেন ৩০% থেকে ৪০%, আপনি যদি গার্মেন্টস ব্যবসা করেন আপনার লাভ হবে ১০% থেকে ২০% এমনকি আপনি যদি স্মাগ্লিং করেন তার লাভ হতে পারে ১০০% থেকে ২০০% কিন্তু রাজনীতিতে লাভের কুনু সীমা-পরিসীমা নাইক্কা। ইহা হইলো ‘ইনফিনিটি’। যত চান-ততো। (ডঃ আবুল বারাকাতের বক্তব্যের মুল ভাব এই ছিলো-যেহেতু স্মৃতি থেকে লিখেছি-তাই একটু উলটা পালটা কইলে নিজগুনে ক্ষমা কইরা দিয়েন)।
রাজনীতির শুরুতেই সবাইকে যেকোনো দলের সমর্থক কিংবা নেতা হতে হয়। এই ধরনের সমর্থক কিংবা নেতা য়াবার দুই প্রকার হয়ে থাকেঃ
০১। রাজনৈতিক কর্মী।
০২। রাজনৈতিক দালাল।
রাজনৈতিক কর্মী সাধারন মানুষের সুখে-দুঃখে থাকবেন। দেশ কিংবা দশের কথা ভাববেন এবং স্বাভাবিকভাবেই সৎ এবং সহজ কাজ দিয়ে মানুষের মনোযোগ আকর্ষন করে নেতৃত্বে আসার চেষ্টা করবেন। এটাই মোটামুটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।এটা অনেকটা সার্বক্ষনিক কাজ! তবে উনার সংসার কিভাবে চলবে কিংবা উনার তামাক বিড়ির টেকা কে যোগান দিবে-তা আলোচনার দাবী রাখলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখবেন-তারা এক ধরনের অটো এরেঞ্জমেন্ট করে রাখেন কিংবা করে থাকেন (বঙ্গবন্ধু’র অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ুন)।
রাজনৈতিক দালাল হইলো সবচাইতে ভয়ংকর শ্রেনী। তারা কর্তার ইচ্ছাইয় কর্ম করেন এবং তিনাদের অনেক হিডেন এজেন্ডা থাকে। ইনারা খুবি উত্তেজিত থাকেন এবং নেতাকে এতো ভালোবাসেন যে নেতা কোনো কারনে বিপদে পড়লে কিংবা বলা যায় তিনি নিজের আখের গোঁছানোর জন্য নেতাকে কিংবা নীতিকে কোরবান দিতেও দ্বীধাবোধ করেননা। যার চমতকার প্রমান হলেনঃ খোন্দকার মোশ্তাক আহমেদ। তারা সব সময় কিছু না কিছু জু জু সামনে রাখেন। যেমনঃ মোশ্তাক বলেছিলোঃ মুস্লিম বিশ্বের সাথে ভালো যোগাযোগ না রাখলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত তামা তামা।
অনেক জটিল কথা কইয়া ফেলছি এখুন আসেন মাথা ঠান্ডা করে একটা অংক করিঃ
৩৫০০০ টাকা বেতনে চাকুরী করে পারিবারিক খরচ মিটিয়ে কতো বছরে ৫০/৬০ লাখ টেকা দিয়া একটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ী কেনা সম্ভব?
(প্রশ্নসুত্রঃ সাপ্তাহিক ২০০০,২১ সেপ্টেম্বর)
অনেকদিন থেইক্কা ছুডুলোক-বড়লোক নিয়ে কনফিউশনে ছিলাম। হাতে নাতে প্রমান পেলাম। চুরির অভিযোগ কিংবা চুরিতে যাদের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ আছে তাদের মান ইজ্জত রক্ষার জন্য গোপনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়-অবশ্যই তারা ভদ্রলোক আর আমরা হইলাম ছুডুলোক। অবশ্যই যাদের বিরুদ্ধে ২০০০ কোটী কিংবা ৪০০০০ কোটি আন্ডা সরানোর অভিযোগ আছে তাদের সহযোগীরাও ভদ্রলোক।
অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইনা-অনির্বাচিত 'মহান উপদেষ্টা' চাই। আরেকটা কথা কানাকে কানা বলিওনা-কানা বলিলে তুমাকে ভদ্রলোক উপাধি দেওয়া হইবেক-মাগার তোমার দিন যায় নুনহীন কিংবা পান্তাহীন।
হ্যাপি ব্লগিং।
সম্ভব, যদি তিনি হন একজন রাজনীতি করা ভদ্রলোক।
পোষ্টে পাঁচতারা ।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
রাজনীতির মজ্জাই মজ্জা। টেকাই টেকা।
ঠিক বলেছেন।
সেদিন একটা কার্টুন দেখলাম, যার মূল বক্তব্য হইতেছে
'গনতন্ত্র হইতেছে এমন একটা জিনিস, যার মাধ্যমে আমরা ভোট দিয়ে স্বৈরাচার চুজ করি'
ঠিক কইছেন।
আনন্দচিত্তে এই কামডা আমরা করি।
ইয়ে পলিটিক্স হ্যায় ইয়ে মামুলী বাত নেহি হ্যায়!
আপ সহি বোলা শান্ত ভাইজান।
সরকার, বিরোধী দল, শ্রমিকশ্রেনী এবং জনগন ও দেশের ভবিষ্যৎ উদাহরণটা ভাল হয়েছে
ধন্যবাদ !!
বস কি রাজনীতিতে নামপেন?
আমরা অনেক বেশী রাজনীতি সচেতন... আর এইটাই আমাগের ক্রেজী বানাইতাছে দিন দিন.. উগ্রতা তৈরী হচ্ছে আমাদের অস্থিমজ্জায়... আম্রা ভালো মন্দের বিবেচনা বাদ দিয়ে নিজের মতকেই প্রতিষ্ঠায় কঠিন অবস্থা গ্রহন করি। এটাও কি এক ধরনের মৌলবাদ নয়?
না গুরু!
আমার বাপ আছিলেন খুব সাধারন মানুষ। অনেক কষ্ট কইরা অল্প স্বল্প লেখাপড়া শিখাইছে-মানুষের 'ইয়ে' মারার লাইগ্যা না।
মন্তব্য করুন