পায়ের ধুলো নেই-১২
ওটা কি বল? নাতো ওটা দেখি শক্ত। বা রে, গায়ে আবার প্যাঁচানো আছে ট্যাপ। লাল রঙের। এই ট্যাপ দিয়েই টেনিস বলকে ট্যাপ-টেনিস বানানো যাবে। দারুণ আনন্দ হয় ছেলেটির। সে আনন্দ বিজয়ের। টেনিস বল একটা থাকলেও তাকে ট্যাপ -টেনিস বানানোর শখ পূরণ করা যাচ্ছিল না কোনভাবেই। হাসিতে উজ্জল হয় দিন।
অবশ্য দিনটা একটু অন্যরকম। গাড়ির প্যা পো খুব একটা নেই। মাঠেও জমছে না খেলা। অনেক মানুষ নেই বলে মাঠটিকে লাগছে বেশ বড়। এটা ছেলেটির কাছে এক বিস্ময়। মানুষ কম থাকলে মাঠ কেন বড় হয়ে যায়! আবার কেউতো মাঠের কোন অংশ বাড়ি নিয়ে যায় না।তাহলে বেশি মানুষ হলে মাঠ কেন ছোট লাগে! যাহোক, শক্ত কৌটাটা আপাতত বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাক।
লাল রঙ দেখে ছোট বোনটা ঘুর ঘুর করে ভাইয়ের পাশে।সে পড়ে টু-তে।তোমার হাতে ওইটা কী ভাই?
কী জানি। এইটা থেকে ট্যাপ এনে টেনিস বলে লাগাবো। ট্যাপ টেনিস হবে।
আমারে খেলতে দিবা।
দিমুনে। বাবা কাজে গেলে আসিস।
বাবা কাজে যায়।মা রান্নায় ব্যস্ত হয়। ঘরের দরজা বন্ধ করে ভাইয়ের কাছে আসে মেয়েটি।সে টু-তে পড়ে। জানালা দিয়ে আসা রোদ ঘরকে যথেষ্ট আলোকিত রাখে।
কই ভাই, ট্যাপ-টেনিস বল বানানো শেষ?
এই তো, ট্যাপ খুলে নিলাম। ধর । এইবার কৌটাটা জানালা দিয়ে ফেলে দে।
দাও ভাই।
মেয়েটা হাতে নেয় কৌটা।এগোয় জানালার দিকে। তখনি বিস্ফোরণ। কেঁপে উঠে মেয়েটির দুনিয়া।
ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে এটা কোন গল্পের শুরু বা গল্পাংশ নয়। এমন একটা ঘটনা হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে।হাতের তালুতে গর্ত হয়ে গেছে তার। প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে হাতটি বাঁচাবে বলে আশা ডাক্তারদের। ডাক্তাররা যখন প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে তখন বিষয়টা কতটুকু গুরুতর, তা বুঝার বাকী থাকে না। ১০ বছরের শিশুটির নাম তানিয়া আক্তার।এতটুকু পড়ে অনেকেরই হয়তো সুমনের সেই গানটি মনে পড়ছে,
বাহবা শাবাশ বড়দের দল এইতো চাই
ছোটরা খেলবে আসুন আমরা বোমা বানাই।
আমার শুধু মনে হচ্ছে মেয়েটার হাত কেটে ফেলতে হবে নাতো?
ককটেল বোমারু
বাংলাভিশনে ককটেল নিয়ে রিপোর্ট করেছে দীপন দেওয়ান। সেখানে ডিএমপির একজন কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার দেখানো হয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন জানান, এতদিন যারা ককটেল বানানোতে সহায়তা করেছে তারা এখন বোমারুতে পরিণত হয়েছে। তারা ককটেল বানিয়ে সরবরাহ করছে। বিস্ফোরণের আট-দশ গজের ভেতর যারা থাকবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর খুব কাছাকাছি থাকলে মারাত্মক আহত হবে।ককটেল বানাতে জর্দার কৌটা ব্যবহার করা হয়।টিনের কৌটার পরিবর্তে প্লাস্টিকের কৌটায় জর্দা বাজারজাত করলে ককটেলের সহজলভ্যতা কমতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
জর্দার কৌটায় রাসায়নিকের সঙ্গে থাকে কাঁচের গুড়া, তারকাটা বা প্যারেক।মেয়েটা কতটুকু কষ্ট পেল ককটেল বিস্ফোরণে তা একটু অনুমান করা যাচ্ছে এখন।
সাহিত্য ও সাহিত্য
হাসনাত আব্দুল হাই এর লেখা গল্প টিভি ক্যামেরার সামনে মেয়ে্টি ও তা প্রকাশ করে প্রথম আলো শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থকদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েছেন তা এখন খুবই পুরান তথ্য। গল্পটি প্রত্যাহার ও ক্ষমা প্রার্থণা ও করেছে গল্পের প্রকাশক ও লেখক। লেখক অবশ্য গল্পের বিষয়বস্তুর জন্য ক্ষমা চাননি। প্রকাশক বলেছেন, পত্রিকার আদর্শের সঙ্গে গল্পটি যায় না বলে প্রত্যাহার করা হলো। হাসনাত আব্দুল হাই এখন শাহবাগ আন্দোলনের বিরোধীদের কাছে অনেক সম্মান পাবেন। তারা তাঁকে মাথায় করে রাখবে। কিন্তু শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থকরা কতোটা ভালোবেসে পড়বেন হাসনাত আব্দুল হাইয়ের সাহিত্য? মন্তব্য নেই।
হাসনাত আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে গেছেন একজন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি। যাহোক, আজিজ মার্কেটে চা খেতে খেতে একজন কবি বললেন, বুঝলে বলার কিছু নাই। সাহিত্যের মাধ্যমে কেউ কেউ সমাজ পচায়।আরেক জন বললেন, শাহবাগ মঞ্চ দীর্ঘায়িত না হলে হেফাজতের এই শো ডাউন হতো না।
যাহোক, শাহবাগ আন্দোলনের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার পত্রিকা করবেন বলে শুনা যাচ্ছে। নাম হবে গণজাগরণ। এটা জনপ্রিয় পত্রিকাগুলোর জন্য আনন্দের না বেদনার খবর বুঝতে পারছি না।
আবারো লাশের মিছিল
এটাও গল্প নয়, বাস্তব। কিন্তু গল্পের চেয়ে ভয়াবহ। ঘটনার শুরু মঙ্গলবার। বিকট শব্দে ফাটল ধরে সাভারের একটি আটতলা ভবনে। এতে আছে বেশ কিছু দোকান,একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা, তিনটি গার্মেন্টস। স্থানীয় প্রকৌশলীরা এই ভবন পরিত্যক্ত করার ঘোষণা দেয়।পরদিন বুধবার সকাল নয়টায় ধসে পড়ে তা। এসময় মালিকের সিদ্ধান্তে চালু ছিল গার্মেন্টস।সংবাদে এই সব তথ্য প্রচার হয়েছে সারাদিন। বুধবার রাত পর্যন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ১১৪টি। যারা মারা গেছে,ধারণা করা যায় তাদের অধিকাংশই শ্রমিক। চাকরি হারানোর ভয় না থাকলে হয়তো তারা ওই ভবনে যেতো না। হায়রে জীবন!!! বাস্তবতা যেখানে কল্পনাকে হার মানায়।
বেশ কিছু দিন আগে "স্বর্গ-নরকের হাইফেন" শিরোনামে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম । দেশের নারকীয় রাজনীতির যন্ত্রণায় প্রবাসীদের মানসিক যাতনা প্রকাশ করতে লেখাটি লিখেছিলাম । এ যন্ত্রণা জ্যামিতিকহারে বাড়ছে প্রতিদিন । আসলে জাতি হিসাবে আমরা এত পচে গেছি যে জাতিগত পরিচয় দিতে লজ্জা হয় এখন। আমাদের পৃথীবি কি কোনদি সুন্দর হবে ! কে জানে !
লেখক সমাজের খারাপ দিক সম্পর্কে লিখেন সমাজকে অস্বীকার করার জন্যে নয়। বরং সমাজের খারাপ দিকটি ভালো করার সুযোগ তৈরি করতে।
নির্বাক টুটুল ভাই!!!!
"পায়ের ধুলো নেই-১১" য় আমার একটি মন্তব্য ছিল । আপনার প্রতিমন্তব্য আশা করেছিলাম, এখনো অপেক্ষায় । ভাল থাকুন ।
এই যে এখানে দুটো কমেন্টেই জবাব দিলাম। আমি ভাই সাহিত্যিক বেশি ব্লগার কম। তাই মন্তব্য লিখতে খুব একটা সাবলীল নই। কিছু মনে করবেন না আশা করি।
মন খারাপ.......
বড়ই দু:খ
হায়রে জীবন!!! বাস্তবতা যেখানে কল্পনাকে হার মানায়।
আপনার বইয়ের রিভিও করে শেরিফ রকমারির পুরষ্কার পেয়েছে।জানেন নিশ্চয়ই। রিভিও পড়েছি , রিভিও এখনো পড়া হয় নাই।
জ্বী, শেরিফ আমাকে জানিয়েছে। আমি কিনতু কিছুই পাইনি
রিভিও পড়েছি, বইটা এখনো পড়া হয় নাই।
খুবই জঘন্য একটা অবস্থা চারিদিকে!
মন খারাপ করার উপাদান বেশি
মন্তব্য করুন