বাংলা নববর্ষ বরণ
পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে নানা জনের নানা কথা পড়েছি। সবগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পড়ে, মনে হলো আমিও কিছু বলি। সে সব খুবই সাধারণ কিছু কথা এখানে বলতে চাই।
পোশাক প্রসঙ্গে শুরু করি। আমাদের গ্রামের মানুষদের প্রধান পোশাক লুঙ্গি। মেয়েদের শাড়ি। অবশ্য প্যান্ট, টি-শার্ট গ্রামের পথ চিনেনি, ভাবলে ভুল হবে। সালোয়ার কামিজ ও স্কার্ট সম্পর্কে গ্রামের মানুষ অবগত নয়, তা ভাবা ঠিক নয়। শিক্ষা, টেলিভিশনসহ নানা যোগাযোগ মাধ্যমের ফলে, এখন আর প্রাচিন কালের গ্রামের মতো গ্রাম খুঁজে পাওয়া মুশকিল। গ্রাম রূপান্তরিত হয়েছে মফস্বলে, মফস্বল শহরে। আচরণে, চিন্তায়।গ্রামের মানুষ সুযোগ সুবিধা পাক, তা আমি চাই। ভালো কথা,শহরের মানুষের অনেকরই ঘরের আরামদায়ক পোশাকের নাম, লুঙ্গি।
নদীমাতৃক এই ভূখণ্ডে এক সময় নদী-নালা-খাল-বিলের অভাব ছিলো না। রাস্তা ঘাটও এতো উন্নত ছিলো না। কাপড় না ভিজিয়ে চলাচলের জন্য লুঙ্গি, শাড়ি, ধুতির চেয়ে মামানসই পোশাক তখন আর কী হতে পারে। শুনতে খারাপ লাগতে পারে,তবু এটাই সত্য একটা দেশের পোশাক সেদেশের জলবায়ু, পরিবেশ, যোগাযোগের ধরনের ওপর নির্ভর করে নির্ধারণ হয়ে থাকে।
এখন কথা হলো, পহেলা বৈশাখে শহরের মানুষ একদিন লুঙ্গি-গামছা নিয়ে উৎসবে যোগ দিলে তাতে,গ্রামের কৃষকদের প্রতি অসম্মান জানানো হয় নাকি সম্মান? নাগরিক বেশভূষা ছেড়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে, তাতে আমার মনে হয় শ্রদ্ধাই জানানো হয়। যদি এটা শ্রদ্ধা জানানো না হয়, তবে স্টেডিয়ামে পছন্দের দলের জার্সি গায়ে দেয়াও সন্মানের নয়, বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার সময় পছন্দের দলের পতাকা ওড়ানোও সন্মানের নয়। পান্তা বিষয়ে একই কথা।
ইলিশ-পান্তা কে শুরু করেছিলো , এর পেছনে ব্যবসায়িক বুদ্ধি ছিল কি না, তা নিয়ে কিছু বলছি না। কেননা, পহেলা বৈশাখ অবশ্যই একটা বড় বিজনেস ইভেন্ট। দেশের সব থানাতেই এই দিনে এক বা একাধিক মেলা হয়। সেখানে পণ্য সরবরাহ, বিক্রী এ সবই বাণিজ্যিক বিষয়। শহরের চিন্তা ভাবনা বহুমুখি। তাই বৈশাখে লাল সাদা রঙের পোশাক, গ্রামের পান্তার সঙ্গে শহরের হিমায়িত ইলিশ, চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা, তাতে গ্রাম, ঐতিহ্য কখনো কখনো কোন দাবী উত্থাপন, এসবই শহরের মানুষের উদযাপনের নিজস্ব ঢং। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হলে, প্রভাতফেরির মতো প্রতিটি থানায় হয়তো মঙ্গল শোভাযাত্রা হতো। এখনতো পত্রিকা বা টেলিভিশনের জন্মদিনেও জেলা শহরে শোভা যাত্রা হয়।যাহোক, বলছিলাম, পহেলা বৈশাখ উদযাপনের কোন নিয়ম রাষ্ট্র দেয়নি, নাগরিকরা ধীরে ধীরে উদযাপনের কিছু অনুসঙ্গ করে নিয়েছে। ঢাকায় ছায়ানটের বর্ষবরণ, চট্টগ্রামে ডিসিহিলে বর্ষবরণে, গান কবিতা, জাতির সাহিত্য চিন্তা ভাবনার প্রতিফলনের একটা জায়গা করে নিয়েছে। সেখানে আসে মনের খোরাক। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে,ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড। ফলে, গ্রামের মেলা চলবে, শহরের জমায়েতও থাকবে, ইলিশ পান্তা থাকবে, নতুন নতুন পোশাক ডিজাইন হবে, চলচ্চিত্র, সাহিত্য গান পরিবেশনও থাকবে, এর পেছনে বিপুল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাংলা নববর্ষ উদযাপনকে টিকিয়ে রাখবে। যদিও, বাংলা সনের ব্যবহার শেষ হয়ে যেতে পারে। আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বাংলা তারিখের ব্যবহার খুব একটা নেই। অথচ, প্রচলিত মত হলো রাজস্ব আদায় মাথায় রেখে সম্রাট আকবর এই সন গণণা শুরু করেছিলেন।
সুন্দর কিছু কথা, সুন্দর কিছু গান, শুভ চিন্তা দিয়ে একটা বছর শুরু করতে চাই, সব শুরু সুন্দর হোক এটাইতো আমাদের চাওয়া, তাই না? কথা গুলো একজন সাধারণ গৃহিনী বলেছিলেন রমনার বটমূলে। আমি জানতে চেয়েছিলাম কেন এসেছেন এখানে? তার জাবাব আমার কানে লেগে আছে। একটা বছরকে সুন্দর করে শুরু করতে চাই। মনের ভেতরে আশা থাকে, বছরের বাকী দিনগুলো সুন্দর কাটবে। মানে আমরা হেসে খেলে জীবন পার করে দিতে চাই, আনন্দে। এই চাওয়ার সঙ্গে তার মিলিয়ে যে বা যারা বা যে সব অনুসঙ্গ সামনে আসবে, মানুষ তা গ্রহণ করবে, টিকে থাকবে। কিন্তু এবারে বৈশাখ উদযাপনে, কাবাবে হাড্ডির মতো উৎকট যন্ত্রণা ছিলো ভুভুজিলা। তার আসুরিক শব্দ, সুরের বারোটা বাজিয়েছে শহরের বিভিন্ন উদযাপনে। পরের বৈশাখে, আফ্রিকার এই বাঁশিটি নির্বাসনে গেলেই শান্তি। আমরা না হয় তালপাতার বাঁশিতেই মুগ্ধ থাকবো। হাজারো কাজ বা অকাজের ভিড়ে অন্তত একদিনের জন্য।
নটে গাছটি মুড়ালো, আমার কথা ফুরালো।
সুন্দর
:)ধন্যবাদ
মন্তব্য করুন