ইউজার লগইন

শেষ দিন (গল্প লিখার অপচেষ্টা)

পকেটে টাকা নাই কি যে করি? এদিকে সোহাগ ভাইয়ের কাছে দুদিনের বাঁকি আছে, আজ আবার চাইলে পাওয়ার কোন চান্সই নাই। শালা বাপ্পি আর রাজুর সাথে ক্যাচাল না লাগলে একটা কিছু ব্যাবস্থা করা যেত। মার কাছে চাইলেও পামুনা আর পাওয়ার মত কিছু বাঁকিও তো রাখি নাই।
বাপটা অকালে মারা যাওয়ার পর লেখাপড়ার পাট প্রায় চুকেই যায়। তারপর বাপ্পির সাথ ধরে প্রথম এই স্বাদ পাওয়া তারপর থেকে চলছেই আমার এই অধঃপতন।
তার আগে একটা প্রিয়জনও ছিল কিন্তু আজ তারে আরেকজনের সাথে পথে চলতে দেখি, চিন্তাটা করতেই মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কই শরীরে আগের মত বলটা তো পাচ্ছিনা। শালার নেশা শেষ রক্তটুকুও শুষে নিচ্ছে।
না আর চলছে না এখন বের হতেই হবে দেখাই যাক কি করা যায়। বের হতেই হোসেন চাচার সাথে দেখা। সালাম দিলাম উনি চোখ কুঁচকে তার জবাব নিলেন মনে হল যেন একটা ক্লিব দেখছেন।
কথা না বলে হাটা ধরলাম, মনে হল এই চাচা আমি এইটে বৃত্তি পেলে বাবাকে বলেছিল দেখিস তোর এই রতন তোকে একদিন রাজার হালে রাখবে। হায়রে সেই রতন!

রাস্তা দিয়ে হাটতে স্কুলের বন্ধু প্রবীরের সাথে দেখা, সে কিন্তু না দেখার ভান করে দ্রুত পদচালন শুরু করেছিল। ভাবলাম থাক আর ধার চামু না কিন্তু পকেটের কথা চিন্তা করে আর থাকতে পারলাম না। প্রবীররে ডাক দিতেই থমকে দাঁড়াল, ওর হার্ট যে দুএকটা বীট মিস করেছে তা নিশ্চিত।
বললাম ৫০ টাকা দেতো কালকেই তোর বাসায় গিয়া দিয়া আসব। শুনে কসম খেয়ে বললো ধার দেওয়ার মত টাকায় নাই তবে ১০ টাকা এমনিই দিতে পারে। মনে পরে এই সেই প্রবীর যে মেট্রিক পরীক্ষায় আমার দেখে পাশ করেছে আর রেজাল্টের দিন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল আমার ঋন কোনদিন শোধ করতে পারবেনা। আর আজ মনে হচ্ছে সেই ঋন শোধ হয়ে গেছে। মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কিছু বলার মত জোর পাচ্ছি না কেন? একি হাত পাও কুকড়ে যাচ্ছে কেন?
তাই আর কিছু না বলে ঐ ১০ টাকা নিয়েই সোহাগ ভাইয়ের কাছে গেলাম। কিন্তু আমার কথা শুনেই কলার চেপে বাইরে ছুড়ে দিয়ে বলল আগে টাকা নিয়ে আসতে। কি ভাবে যেন মুখ দিয়ে কিছু খিস্তি বেরিয়ে আসল আর তা শুনেই সে এলোপাথারি কিল ঘুষি মারতে লাগলো। তাকে আটকানোর নূন্যতম শক্তিও দেহের কোথাও নেই তাই কোনমতে রেহাই পেয়েই বাড়ির দিকে ছুট লাগালাম।
ঘরের ভেতর হুরমুর করে ঢুকতে গিয়ে পড়লাম দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের পায়ের উপর। কথা বলতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল তবুও অনেক কষ্টে টাকার কথা বলাতে বিরক্ত মা এটা আরেক অভিনয় ভেবে অগ্নিদৃষ্টি হেনে বলল এই জির্ন সাদা শাড়ি বাদে কি আর রেখেছিস, বলে পা টেনে নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু একি আমার কন্ঠ যেন কোন এক তরলে রূদ্ধ করে রেখেছে। চারিদিক যেন ঝাপসা হয়ে আসছে। শরীরের ভেতর থেকে যেন কিছু উঠে আসতে চাইছে, ভয়ে চিত্‍কার করে উঠলাম। মা দৌড়ে এসে মাথাটা কোলে তুলে নিল। তার সেই অগ্নিশর্মা মুখোস উধাও, সেখানে যেন কোন কিছু হারানোর বেদনা ফুটে উঠছে। অনেকদিন পর তাঁর কাছ থেকে সেই ছোট বেলায় শোনা ঘুম পাড়ানীর গান শুনতে চাইলাম কিন্তু কিছুই বলতে পারলাম না শুধু আমার রক্তে তাঁর সাদা শাড়ী রঙ্গিন হয়ে উঠতে দেখলাম। কিছুক্ষন পর তাও রইল না, শুধুই অন্ধকার।

পোস্টটি ৮ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

তানবীরা's picture


এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি অত্যন্ত দুখী হয়ে আছি আজ অনেক দিন। আমি হলাম সেই পদার্থ যে ঘাড়ে না পড়লে বুঝি না। এতোদিন শুধু পত্রিকায় পড়তাম। আজকাল নিজেদের মাঝেও দেখতে পাচ্ছি। আর কষ্টে রিক্ত হয়ে যাচ্ছি।

এরা শুধু নিজেকে শেষ করে না সাথে পরিবারটাকেও শেষ করে দিয়ে যায়।

আত্তদ্বিপ's picture


এটা গল্প বললেও আসলে সত্য। আমার পাড়ার বছর তিনেক বড় এক ভাইয়ের এভাবে কিছুদিন আগে মারা গেল। আমি বাইরে থাকায় আম্মু ফোনে বেশ স্বস্তির সাথে খবরটা জানায় আমাকে, কিন্তু আমি কেন যেন স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। তার সাথে স্কুল লাইফে কতদিন একসাথে খেলাধূলা মজা করছি কিন্তু বিগত ৫ বছরে তার এই অধঃপতন আমাদের সেই আনন্দময় অতীতকে মলীন করতে পারেনি। চিন্তা করতে পারেন পাড়ার ক্লাব থেকে এস এস সি তে ভাল করায় তাঁকে সম্বর্ধনা দেয়েছিল কিন্তু আজ সেই পাড়ায় তার মৃত্যুতে স্বস্তির নিঃস্বাস নেয়।

পদ্মলোচন's picture


আপনে না বলে লেকখতারেন না মিয়া? ফাটান্তি হৈছে

আত্তদ্বিপ's picture


আর লজ্জা দিয়ননা ভাইডি

সাঈদ's picture


বাহ বাহ বেশ বেশ

আত্তদ্বিপ's picture


ধন্যবাদ

অতিথি পাখি's picture


মারহাবা টাইপ হইছে ।। চালিয়ে যান ভ্রাতঃ।

আত্তদ্বিপ's picture


কি যে কন না, এইডা কিছু হয়ছে নাকি!

নীড় সন্ধানী's picture


করুন লাগলো গল্পটা! বাংলাদেশে এই রকম দৃশ্যের সংখ্যা বাড়ছে :(

১০

আত্তদ্বিপ's picture


হুমম বাংলাদেশে এরকম কত যে প্রান ধ্বংস হচ্ছে তার জরিপ চালানো গেলে শিওরে উঠতে হবে।

১১

বিহঙ্গ's picture


ভাইডি মারাত্নক অইছে.........

১২

আত্তদ্বিপ's picture


ধন্যবাদ পড়ার জন্য

১৩

সোহেল কাজী's picture


গল্প লিখার অপচেষ্টা হয়নাই, দারুন একটা অনুগল্প হৈছে।

শেষের দিকে আইসা শিউরে উঠলাম।
এই রকম চেষ্ঠা ঘন ঘন চালাইয়া যান। Laughing

১৪

আত্তদ্বিপ's picture


এটা অনুগল্প তাই ই জানা ছিলনা আর আমারে কন চেষ্টা চালাইয়ে যাইতে? ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য, এই পোড়া হাত যে কিছুই বের করতে পারেনা কি যে করি!

১৫

হাসান রায়হান's picture


ভালো লেগেছে লেখাটা।

১৬

আত্তদ্বিপ's picture


অসংক্ষ্য ধন্যবাদ আপনাকে এই নাদানের লিখা ভালা বলায়।

১৭

নুশেরা's picture


বাস্তবতাটা বীভৎস তবে লেখাটা ভালো লেগেছে। সত্য-কল্পনা যাই হোক, আরও গল্প চাই।

১৮

আত্তদ্বিপ's picture


বাস্তবতাকে আসলে বিভৎস বললেও বোধকরি কম বলা হবে। ধন্যবাদ এবং চেষ্টা করব।

১৯

টুটুল's picture


ফাটান্তিস

২০

কাঁকন's picture


খারাপ মন আরো খারাপ হয়ে গেলো

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.