ইউজার লগইন
গল্প
গল্প: তুমি আমার কাছে তুমি যা বলবা তাই (পর্ব-৫)
সেবার বেশিদিন দেশে থাকার সুযোগ ছিল না। প্রায় বিনা নোটিশেই গিয়েছিলাম দুই সপ্তাহের চিকন একটা ছুটি নিয়ে। সেই দুই সপ্তাহের প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি তাড়িয়ে তাড়িয়ে। মিসিসিপি জানতো আমি জল আর পর্বত সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি, পূর্ণিমার রাতে কাকচক্ষু দীঘির জলে পা ডুবিয়ে বসে থেকে হালকা কোন সুর আর সঙ্গীর কথার মূচ্ছর্নায় হারিয়ে যেতে পছন্দ করি।
আমরা দু'জন দু'জনের সবরকম পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে জানতাম। এমনকি এটাও জানতাম, কার কখন কোন কাজটা কিভাবে করতে ভাল লাগে। কেন যে একজন মানুষকে এতটা বেশি জেনে ফেলেছিলাম, তা বলতে পারি না। দু'জনেরই এর পেছনে নির্জলা ভাললাগা কাজ করেছিল; সেটাই হয়তো একমাত্র কারণ। মুঠো মুঠো কথা তাই শেয়ার করেছিলাম আমরা। জেনে গিয়েছিলাম অনেক কিছুই একে অপরের সম্পর্কে।
গল্প: তুমি আমার কাছে তুমি যা বলবা তাই (পর্ব- ৩)
কলেজ ছেড়ে চলে আসতে অবশ্য আমার খুব একটা খারাপ লাগছিল না। শুধু মিসিসিপির সঙ্গে কোনো কলেজের এক ক্লাসে বসে আর সময় কাটানো হবে না কিংবা একই ক্যান্টিনে সিঙ্গারা, চা-সমুচা'র অর্ডার দেয়া হবে না, অথবা কলেজের বাস স্ট্যান্ড থেকে ক্লাসরুমের ছোট্ট যে পথটুকু, সে পথে হয়তো এরপর থেকে ওকে বুঝতে না দিয়ে ওর কাছাকাছি হেঁটে যাওয়ার অভিনয়টুকু অন্য কেউ করবে- আমি না; এমন কিছু ছোট-খাটো খারাপ লাগা ছাড়া বেশি কিছু মনেও হচ্ছিল না। তবে কলেজের ক্লাসে যে আমরা ছেলে আর মেয়ে একসাথে বসতাম- এমন না। কিংবা ক্যান্টিনেও কখনো আমরা একই টেবিলে বসি নি। আসলে দূরেই ছিল মেয়েটি। দূরেই রয়ে গেল আজীবন।
গল্প: তুমি আমার কাছে তুমি যা বলবা তাই (পর্ব-২)
মিসিসিপি নামটা শুনে এক লহমায় অনেক কথা মনে পড়ে গেল। কিশোর বেলায় একটি বিশেষ-বাহিনী পরিচালিত কলেজে এক বছর পড়েছিলাম। সেই কলেজের নিয়ম-নীতির বাড়াবাড়ির সঙ্গে তাল মিলাতে পারি নি বলে, পরে আমায় অন্যত্র ভর্তি হতে হয়। তবে যে এক বছর ওখানে ছিলাম, সেখানেই দেখা হয়েছিল মিসিসিপির সাথে।
গল্প: কষ্টের রেলগাড়ি
অনেক দিন চিকন চালের ভাত আর মুরগির মাংসের পাতলা ঝোল দিয়ে রাতে খাওয়া হয় না। ভাবতে ভাবতে যেই না মুরগির তাকের দিকে তাকিয়েছেন মুর্শেদ সাহেব, ভিমড়ি খাবার জোগাড় হলো তার।
এমনিতে দোকানটার তাকগুলো খুব সাজানো-গোছানো, যেকোন কিছু যাতে ক্রেতারা সহজে খুঁজে পেতে পারে, সেদিকে পূর্ণ খেয়াল রেখে বিন্যস্ত; সেটা তার জানাই। নিত্যদিন যে আসা-যাওয়া পেনি নামের সেই ছোট্ট ২৪ ঘন্টার স্টোরটায়। যেটা সপ্তাহে সাত দিন আর বছরে ৩৬৫ দিন খোলা থাকে। শুধু যেসব বছর লীপ ইয়ার অর্থাত ৩৬৬ দিনে হয়, সেসব বছর ২৯ ফেব্রুয়ারি বন্ধ।
গল্প: এক এক্লিপস্-এ আটকে পড়া কালে ব্লু মুন খুব হেল্প করেছিল
সেবার ভালো না লাগার ব্যামোটা বেশ ভালো ভাবে আমাকে পেয়ে বসেছিল। কোনোকিছু ভালো লাগে না। সকালে ঘুম থেকে উঠতে ভালো লাগে না। বিছানায় গড়াগড়ি দিতে ভালো লাগে না। কারো সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে না। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালো লাগে না। ভাজা-পোড়া খেতে ভালো লাগে না। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে ভালো লাগে না, চ্যাটিং করতে ভালো লাগে না। টরেন্ট দিয়ে মুভি নামাতে ভালো লাগে না। লাগে না তো লাগেই না। মাথাভর্তি সাইকেডেলিক জ্যাম। ঘরের স্পিকারে পিংক ফ্লয়েডের এক্লিপস্ বাজতে থাকে টানা। দিনের পর দিন কেটে যায়। আশপাশের মানুষ আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। আমি তাদের জন্য কিছুই করতে পারি না।
গল্প: বার্লিনে প্রথমবার খুব মন খারাপ হয়েছিল
১.
বার্লিন মেইন স্টেশন থেকে বের হয়ে আনমনে হাঁটছিলাম স্প্রি নদীর পাড় ধরে ধরে। মনটি ভীষণ খারাপ হয়ে ছিল বিশেষ একটা কারণে। বেশি একটা পাত্তা দিতে চাচ্ছিলামও না, কিন্তু ঘুরে ঘুরে মনে পড়ছিল।
আহা, একজন বিদেশে আসার স্বপ্ন কত যত্নে বুকে লালন করে রেখেছিল! আর আমার কোনো ইচ্ছাই ছিল না দেশ থেকে কখনও বাইরে আসার। অথচ আমার জীবনটাই আজ মিশে গিয়েছে বিদেশের অচেনা আকাশ, অজানা বাতাসে। আজীবন পরিবারের সাথে থাকতে চাওয়া সেই আমি আজ বাবা, মা সবাইকে হারিয়ে একা। যার জন্য সবাইকে হারাতে বাধ্য হয়েছিলাম, সেও ছেড়ে চলে গেছে বহু আগে। তাই আজকাল সবকিছুর ভেতরেও ঘাপটি মেরে বসে থাকে এক অব্যক্ত শুন্যতা। কথাটি সাধারণত সবসময় মনে পড়ে না, কিন্তু যখনই মনে পড়ে তখনই আমার অনেক খারাপ লাগে। তাই ভাবলাম বিষয়টিকে একটি গল্পের রূপ দেয়া যায় কিনা।
গল্প: শঙ্খচিলেরা যেভাবে বকাবকি করতো আমাদের
১.
বিকেলের মাঝামাঝি সময়ে লাল আর সবুজ রং দেখতে দেখতে মাথা খারাপ হয়ে যাবার মুহুর্তে একবার আকাশী নীল রং চোখে পড়েছিলো। বহুদিন পর প্রিয় রংয়ের শাড়ি চোখে পড়লো। আবারও সেই ছিপছিপে লম্বা মেয়েটি। উবায়েদ ভাইয়ের দোকানে যাকে দেখেছিলাম। আমি ভেবেছিলাম এবার ওর সাথে কয়েকটা কথা বলবো। অথচ ভিড় আমাদের দু'জনকে কাছাকাছি হতে দিলো না।
-নাম্ব সময়ের দিনলিপি, ১৭/১২/২০১৩ ইং
ছিপছিপে লম্বা সেই মেয়েটির সাথে পরে আমার আরও দেখা হয়েছিল। প্রথমে একবার দেখা হয়েছিল ২০১৬ সালের দিকে, কিন্তু অনলাইনে। ২০১৯-এ গিয়ে আমাদের দেখা হয় সামনাসামনি।
গল্প: গরিবের অসুখ
আমার বাপজান হইলো গিয়া কাঠ মিসতিরি। এই ধরেন, আপনাগো বাসা-বাড়িতে যেই টেবিল-চেয়ার আছে এসব বেবাক বাপজান বানাইয়া দিতে পারবো। বাপজান মাঝে মইধ্যে কয়, চলতে চলতে বলে কাম করে। এই ধরেন, কাঠের যে দোকানগুলা থাহে না? ওইহানে হুটহাট কামের লোক লাগলে বাপজান কইরা দেয়। আমারে কয়, হে-য় টেবিল-চেয়ার বানাইতে পারে। আসলে কচুডাও পারে না। পোলার কাছে ভালা হওনের লাইগা এসব কয়। তয় ওই যে চেয়ার টেবিলে যে রঙ করে এইডা ভালো পারে। আমি নেজ চোহে দ্যাখছি, এর জইন্যেই কইতে পারি।
ভাবতে পারেন, পোলায় এত বাপ বাপ করে ক্যা? মায়ে কই? মা কাম করে মাইনষের বাড়ি। কার বাড়িত কাম করে কেমনে কমু? মায়ে খালি সকালে ঘুম থেকা উইঠা দেয় দৌড় আর আহে হেই সন্ধায়। আমগার জইন্যে ভাত আর বাসি তরকারি লইয়া আহে। এট্টু গন্ধ লাগলেও প্যাট ভইরা খাই। প্যাট ভরন দিয়া কথা।
মাঝে মইধ্যে মায়েরে জিগাই, আম্মা তুমি বাসি খাওন আনো ক্যান? হেরাও কি বাসি খায়?
কালো কার্বন ফাইবার ফ্রেমের চশমা
কালো কার্বন ফাইবার ফ্রেমের চশমাটার গায়ে আলো পড়ে না সহজে। কালো গায়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার চেপে থাকে কখনো, কখনো এক চিলতে আলো ছুঁয়ে যায় ধুলো জমা কাঁচে। কখনো মানে যখন যেখানে চশমাটার বাস- ড্রয়ারটা খোলে।
নিজে থেকে তো আর হয় না- কেউ খোলে যখন, তখন। আলো আসে, ধুলোজমা কাঁচে আবছা প্রতিচ্ছবি ভাসে। কখনো কোন হাত, কখনো কপাল, কখনো দুটো চোখ- কখনো কাছাকাছি আসতে থাকা হাত।
শেষবারের হাতের স্পর্শে চশমাটা সরে গেছিল একটু, ওর নিয়মের জায়গা থেকে। মাঝারি আকারের খাতা একটা, বাঁধাই করা, পেপারব্যাক বাঁধাই- অত শক্ত কিছু না, আবার চট করে ছিঁড়ে যায় অমনও না।
উপরে সুন্দর করে লেখা- “লেখার খাতা”। সেটা লেখা না অবশ্য- ছাপা। কিন্তু ছাপাটা আবার লেখার মত দেখতে, কী একটা ঝঞ্ঝাট, বোঝানোও তো মুশকিল।
কিছু কথা কিছু অনুভূতি
অনেকদিন পর এবি তে ফিরে আসলাম। এসে দেখি পাঁচ বছর হয়ে গেছে। কেমন করে পাঁচটি বছর জীবন থেকে হারিয়ে গেল বুঝতেই পারিনি। অথচ এই 5 বছরে কত কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে, পাঁচ বছর আগে আমার এখানে ফোরজি ছিল না এমনকি থ্রিজি ছিল না টু'জি তে এবি চালাইতাম খুব কষ্ট করে। বেঁচে আছি তাই আবার ফিরে আসলাম জানিনা কত বন্ধু এই 5 বছরে মারা গিয়েছে। আমিও হয়তো একদিন তাদের মতো চলে যাব পৃথিবী ছেড়ে 5 বছর না 10 বছর না 100 বছরেও আর ফিরে আসবো না এ বি তে। সত্যি খুব অবাক লাগে। আজ বড় একা লাগে, আছে সব কিছু তবুও একা লাগে সেই কফি হাউজের আড্ডাটা আজ আর নেই তাই একা মনে হয়। জানিনা আমার মত আর কারো এমন হয় কিনা। জানাবেন বন্ধুরা।
গল্প: ফ্রাউ ভের্নার আর ফর্কলিফটের সাথে জড়িয়ে থাকা স্মৃতিটা
১.
বেঞ্জামিন দুলালের মৃত্যু
যারা গল্পটা পাঠ করছেন তাদের জন্য বলে রাখা ভালো, যা লিখছি তা গল্প না বাস্তব, আবার সেরকম বাস্তবও না যা ভালো গল্প হয়ে উঠে। ভালো গল্প খালি ভালো বাস্তব ঘটনার উপরে নির্ভর করে না, নির্ভর করে লেখকের ভাষা দক্ষতা ও নির্মাণ শৈলীর উপর। এই একুশ শতকে এসে আসলে ছোট গল্পের ভুমিকা কতটুকু তাও আলোচনার ব্যাপার। তার ভেতরে আমার মত লেখক যার নাম কেউ শুনে নাই তার লেখা কেন পাঠক পড়বে, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তাও গল্পটা লিখি তা গল্প হয়ে উঠবে কিনা জানি না, আগামী দিনের কোনও পাঠক গল্পটা যদি একবারের জন্যেও পড়ে তা হলেও গল্পটা লেখা আজকের জন্য দোষের কিছু হবে না।
একটি অ্যাপল কিংবা আপেলের গল্প অথবা “আমার কাজের মাঝে-মাঝে/ কান্না ধারার দোলা তুমি থামতে দিলে না যে”
[দীর্ঘদিন পরে লেখা। তাই নিজের ঘরে জমিয়ে রাখা।]
গল্প: সম্ভব শুধু প্রাণপনে পোকার ফেস ধরে রাখার চেষ্টা করা
১.
ইয়াহু মেইলের ভক্ত ছিলাম অনেকদিন। সম্ভবত ২০০১-০২ থেকে নিয়ে ১১-১২ পর্যন্ত। তারপর একদিন জিমেইলে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়েছিল, একটা জরুরি দরকারে। এক সন্ধ্যায় একটা গুরুত্বপূর্ণ ই-মেইল পাঠাতে হয়েছিল, কিন্তু যেকোন কারণেই হোক সে সময় ইয়াহু'র সার্ভার ভীষণ ব্যস্ত ছিল। অনেক চেষ্টা করেও ইয়াহু খুলতে না পেরে, শেষমেষ একটা জিমেইল অ্যাকাউন্ট খুলে মেইলটা পাঠাতে হয়েছিল। পাঠানোর পাঁচ মিনিটের মাথায় উত্তর এসেছিলো- ধন্যবাদ, যথাসময়ে ই-মেইল পাঠানোর জন্য আপনাকে আমাদের পরবর্তী পর্যায়ের যাচাই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভূক্ত করা হলো।
এমন যদি হত
- সারাদিন আজ কি করলে?
; এই তো, ঘুম থেকে উঠে চা বানিয়ে বিস্কুট দিয়ে খেলাম। তার পর একটা রেসিপি লিখার চেষ্টা করলাম, জানো আজ গল্প ও রান্না’য় তেইশ লক্ষ হিট হয়ে গেল!
- আমরা বাসায় নেই এখন তো তোমাকে লেখায় আর কেহ বাধা দিচ্ছে না!
; না, এখন তোমরা না থাকলেও আর লিখতে পারি না, না লিখতে লিখতে অভ্যাস হয়ে গেছে, তার পর ফেসবুকে এতটা অসক্ত হয়ে পড়ছি যে, লেখার চেয়ে ফেসবুকে থাকতেই আনন্দ পাই। অন্যের লেখা পড়ি আর লাইক কমেন্ট করি! ওহ, আর ফেসবুকের ওয়ালে শুধু সেলফি দেখি!
- আজ নামাজ পড়োনি?
; হ্যাঁ, পড়েছি, সেই পুরানো সপ্তাহের মতই। বাসার কাছে মসজিদ, এই ঢাকা শহরে।
- দুপুরে খাবার খাও নাই?